শেখ বিপ্লব হোসেন
আকমল আর মালিহা। ওরা ভাই বোন। দু’জনেই খুব মিষ্টি আর ভীষণ দুষ্টু। ভীষণ কৌতূহলী মন তাদের । নতুন কিছু দেখলেই তার রহস্য জানতে মন চনমনে ওঠে দুজনের।
একদিন সকালে দুই ভাই বোন ঘুম থেকে উঠে দেখে, সূর্যটা এখনো জেগে উঠেনি। হয়তো আর কিছুক্ষণ পরেই হাসি হাসি মুখ করে হেসে উঠবে। শান্ত পৃথিবীটা। খোলা আকাশ যেন নীলের শহর! সাদা মেঘেপরিরা যেন মনের আনন্দে ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশে। চারদিকে শিউলি ফুলের মৌ মৌ গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। আকমল হাসিখুশি মনে বলল, ‘মালিহা! তুই কিছু বুঝতে পারছিস? এখন কোন ঋতু?’
মালিহা বিস্ময় নিয়ে বলল, ‘এখন কোন ঋতু, ভাইয়া?’
‘এখন, শরৎ ঋতু এসে গেছে!’ বলল আকমল। সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘শরৎ! এই ঋতুতে কী হয়?
আলকম বাড়ির উঠনে গিয়ে বলল, দেখ্ না, কত সুন্দর খোলা আকাশ! যেন আকাশটাকে কেউ নীল রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে। সাদা সাদা মেঘ, মনের সুখে হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। এ সময় নদীর তীরে সাদা কাশফুলে ভরে যায়, নানারকমের পাখিদের মেলা বসে নদীর ওই কূলে । আর আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বকের দল উড়ে বেড়ায়। এটা শরতের বিশেষ সৌন্দর্য। চল্ দুজনে বিলের ধারে যাই! শরতে শাপলা ও পদ্মফুলে ভরে ওঠে বিল। এমন দৃশ্য দেখতে অসাধারণ লাগে! সেখানে বিলের ধারে কাশফুলের দেখা মিলতে পারে।
যেই কথা সেই কাজ! দু’জনে বেরিয়ে পড়ে বাড়ি থেকে। সবুজ মাঠ পেরিয়ে দুই ভাইবোন যেন প্রজাপ্রতির মতো উড়ে উড়ে ছুটে চলছে শরতের সৌন্দর্য দেখতে ।
চারপাশ সবুজ ধানের ক্ষেত। আহ্! কী অপরূপ দৃশ্য! দেখলেই মনটা ভরে যায়। প্রাণ ভরে যায় মৃদু মিষ্টি বাতাসে!
ওরা কিছু দূর যেতেই দেখলো একজন মধ্য বয়স্ক কৃষক ধানক্ষেতে কাজ করছেন। তিনি ওদের দেখে হাসিমুখে বললেন, ‘এই ভোরবেলা কোথায় চললে সোনামানিকরা!’
মালিহা বলল, ‘চাচ্চু, আমরা বিলের ধারে যাচ্ছি। শরৎ ফুলের মেলা দেখতে। সাদা বকের সারি।’
তিনি হাসি হাসি মুখ করে বললেন, ও আচ্ছা! সেতো ভালো কথা। তবে, শরতে শধু কাশফুল আর শাপলা ফুলই ফোটে না, শরৎ এলে ধানসহ নানারকম ফসল ফলে। শরৎ ঋতু এলে সবুজে ভরে ওঠে সমস্ত ফসলের মাঠ । এই দিগন্তজোড়া মাঠ সবুজের ঢেউ খেলে যায় বাতাসে। প্রকৃতি হয়ে ওঠে আরো সুন্দর ও মনোহর! এ ঋতু আমাদের কৃষকের মনেও আনন্দের জোয়ার বয়ে আনে।’
আকমল আনন্দিত দিয়ে বলল, ‘বাহ্! দারুণ তো! শরৎ ঋতু মানে শুধু সাদা কাশফুল, সাদামেঘের ভেলা আর নীল আকাশেই সীমাবন্ধ নয়, ফসল ফলানোরও মৌসুম! অসাধারণ!’
কৃষকের সাথে কথা শেষ করে ভাইবোন দুজনে মিলে আবারও হাঁটতে শুরু করে। বিলের পারে দাঁড়িয়ে চোখ জুড়িয়ে যায় মালিহার। সে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বলে, ‘ভাইয়া, কত্ত শাপলা ফুল ফুটেছে ওই দেখো! সাদা বক, মাছরাঙাও আছে দেখছি! বিলের ওই পারে কাশফুলও ফুটেছে কত! চল ভাইয়া চল! আমরা বিলের ওই পারে যাই!’
ফড়িং এর মতো এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ায় আকমল আর মালিহা। এভাবে অনেক সময় কাটিয়ে দিলো দু’জনে। বাড়ি ফেরার নাম যেন ভুলেই গেছে ওরা আজ। আকমল এবার বলল, ‘চল মালিহা! এবার বাড়ি চল! মা হয়তো খুঁজছে আমাদের। তোকে আবার একদিন নিয়ে আসবো এখানে।’ ভাইয়ের কথায় সায় দিয়ে দু’জনে বাড়িতে ফিরে যায়।
রাতের খোলা আকাশে সাদা মেঘকন্যাদের লুকোচুরি খেলা। সাদা মেঘের ফাঁকে ফাঁকে চাঁদের আলো উঁকি দেয় মাঝে মাঝে। ঝিরিঝিরি বাতাসে ভেসে আসছে বকুল আর বেলি ফুলের সুঘ্রাণ। ঘরের বারান্দায় বসে দাদির সাথে গল্প জুড়ে দেয় মালিহা। মালিহার মজার গল্প শুনে দাদি মা হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি যখন তোমার মতোই ছোট্টটি ছিলাম, তখন আমরাও দল বেঁধে ঘুরে বেড়াতাম বিলের ধারে, নদীর কূলে। আর শরৎ ঋতু মানেই এক অপরূপ সৌন্দর্য যা মানব হৃদয়কে বিমোহিত করে। আনন্দ দেয়। শরৎ এলে প্রকৃতি সাজে নতুন রূপে, নতুন করে। প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য আমাদের জন্য মহান রবের এক সোনালি উপহার। আমাদেরও উচিত ওই মহান সত্তার প্রশংসা করা। তাঁর গুনগান করা। মানে তাঁর হুকুম মেনে চলা।’
দাদির সাথে মালিহার গল্প যেন শেষই হয় না। দু’জনের গল্প চলতে থাকে এভাবেই।