আব্দুস সাত্তার সুমন

সকালের অন্ধকার তখনো পুরোপুরি কাটেনি। খোকা দৌড়ে এল পুকুরপাড়ে।

চারদিকে ঘাস ভিজে আছে, হাওয়ায় মাটির মিষ্টি গন্ধ। পুকুরের জলে নড়াচড়া করছে ঝাঁকভর্তি হাঁসের ছানা। সব ছানাই আনন্দে ভাসছে, শুধু একটাই আলাদা। হলুদে ঝলমল করা ছোট্ট ছানাটা পুকুরের ধারে দাঁড়িয়ে কাঁপছে, যেন জলে নামলেই কিছু একটা ভয়ঙ্কর হবে।

খোকা তাকিয়ে রইল। তার মনে কৌতূহল,

এ কেন ভয় পাচ্ছে? বাকিরা তো কত মজা করছে!

খোকা হাত বাড়িয়ে ছানাটিকে নামাতে চাইলো। প্রথমে ভাবলো, হাত দিয়ে ঠেলে দিলেই তো নামবে।

সে তাই করল। কিন্তু মুহূর্তেই ছানাটা জলে ডুবে যেতে লাগল! আতঙ্কিত খোকা ঝাঁপিয়ে পড়ে হাত দিয়ে তাকে টেনে তুলল। ছানার ছোট্ট বুক হাঁপাচ্ছে, চোখে ভয় জমে আছে।

খোকা থমকে দাঁড়াল। বুঝতে পারল জোর করে কাউকে শেখানো মানে তাকে ডুবিয়ে দেওয়া।

পরদিন সকালে খোকা নতুন কিছু চেষ্টা করল। বাঁশ আর শুকনো খড় দিয়ে পুকুরপাড়ে ছোট্ট একটা পিড়ি বানাল। আধেক পিড়ি জলের ভেতর, আধেক বাইরে। ছানাটিকে সে আস্তে করে সেখানে রাখল।

প্রথমে ছানাটা শুধু ঠোঁট দিয়ে জল ছুঁয়ে দেখল। তারপর পা নামাল। খোকা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল, কোনোরকম তাড়া দিল না।

দু’দিন গেল। তৃতীয় দিন দেখা গেল আশ্চর্য ঘটনা। ছানাটা নিজের ইচ্ছায় পিড়ি থেকে নামল, আর বাকিদের সঙ্গে ধীরে ধীরে ভেসে চলল। তার চোখে আর ভয় নেই, বরং আনন্দ।

খোকা খুশিতে বুকটা ভরে গেল। সে বুঝল সাহায্য মানে জোর করা নয়, বোঝা আর সময় দেওয়া।

প্রতিটি প্রাণীর নিজের মতো বেড়ে ওঠার অধিকার আছে। ধৈর্যই আসল শিক্ষা।