নুসরাত অপর্ণা

টুকটুকি ছিলো এক কৌতূহলী ছোট মেয়ে। ক্লাস থ্রি-তে পড়ে সে। পড়াশোনায় ভালো হলেও দুষ্টুমিতে তার জুড়ি মেলা ভার। সারাদিন শুধু নতুন কিছু শেখার আর দেখার আগ্রহে সে মেতে থাকত।

একদিন স্কুল থেকে ফিরে সে খেলতে গেলো পুকুরপাড়ে। হঠাৎ একটা পুরনো কলম খুঁজে পেলো ঝোপের মধ্যে। কলমটা দেখতে খুব সাধারণ, তবে একদিকে ছোট্ট করে লেখা-যা লিখবে, তাই হবে!”

টুকটুকি হেসে বললো, “তার মানে এটা জাদুর কলম!”

কৌতূহল থেকে সে কলমটা ব্যাগে রেখে দিল।

রাতে পড়ার সময় হঠাৎ সে ভাবলো, কলমটা দিয়ে একটু চেষ্টা করে দেখা যাক। সে খাতায় লিখলো- “কাল স্কুলে টিচার হোমওয়ার্ক চেক করবেন না।”

পরদিন সত্যি সত্যিই টিচার বললেন, “আজ হোমওয়ার্ক চেক করবো না।”

টুকটুকি তো অবাক!

তারপর সে বুঝলো, এটা সত্যি সত্যিই জাদুর কলম!

এরপর থেকে টুকটুকি শুরু করলো মজা করা। একদিন সে লিখলো- “আজ বৃষ্টি হবে, যাতে স্কুল যেতে না হয়।”

আকাশ পরিষ্কার ছিল, কিন্তু হঠাৎ মেঘ দেখা গেলো। বৃষ্টি পড়লো।

আরেকদিন লিখলো- “আমার পছন্দের মিষ্টি রসগোল্লা আজ বিকেলে বাড়িতে থাকবে।”

বাবা বিকেলে বাজার থেকে ফিরেই বললেন, “তোর খুব পছন্দ বলে আজ রসগোল্লা এনেছি!”

ধীরে ধীরে টুকটুকি জাদুর কলম ব্যবহার করে আরও অনেক কিছু লিখতে শুরু করলো- পরীক্ষা না হওয়া, খেলাধুলায় জয় পাওয়া, এমনকি খেলনার পাহাড়!

কিন্তু একদিন সে খাতায় লিখে ফেললো- “আমার বন্ধু রিমি স্কুলে না আসুক।”

সত্যি সত্যিই রিমি অসুস্থ হয়ে গেলো। স্কুলে না আসায় টুকটুকির খেলার সাথী হারিয়ে গেলো। মন খারাপ হয়ে গেল।

সে বুঝলো, খারাপ কিছু চাওয়া মানেই কাউকে কষ্ট দেওয়া। জাদুর কলম ভালো কাজে ব্যবহার না করলে সেটা আনন্দের পরিবর্তে দুঃখ হয়ে যায়।

সেদিন রাতে টুকটুকি কলমটা নিয়ে খাতায় লিখলো- “রিমি আবার সুস্থ হয়ে যাক। আমি আর কারো ক্ষতি চাই না। কলমটা যেন আবার তার প্রাপ্য মালিকের কাছে ফিরে যায়।”

পরদিন সকালে সে কলমটা নিয়ে পুকুরপাড়ে গেলো, যেখান থেকে পেয়েছিলো। কলমটা সেখানে রেখে বললো, “তুমি অনেক কিছু শিখিয়েছো আমাকে। এবার বিদায়।”

এরপর টুকটুকি আর কখনো জাদুর কলম ব্যবহার করেনি। সে নিজের চেষ্টা আর মেধা দিয়েই সবকিছু অর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। রিমিও আবার সুস্থ হয়ে স্কুলে আসে।

টুকটুকি বুঝেছিল- জাদু নয়, মন দিয়ে চাইলে সবই সম্ভব।