আশরাফ পিন্টু
‘‘তুমি আর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে না।’’
কবিতার কথা শুনে সন্ধান হতভম্ব হয়ে যায়। হৃদয়ে ভাঙচুর হতে শুরু করে। ভগ্নহৃদয়ে বলে, এভাবে বলছো কেনো কবিতা?
-আমি একজনের বাগদত্তা। আগামী চৌদ্দ তারিখে আমার বিয়ে ।
: তাতে কী।
-আশ্চর্য! আমার বিয়ে হচ্ছে তবু তুমি আমার পিছু ছাড়ছো না। আবার বলছো কি না তাতে কী! কবিতা হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
: আমি তো তোমাকে বিয়ে করার জন্য ভালোবাসি নি কবিতা। সন্ধান শান্তস্বরে বলে।
-হ্যাঁ, তাই তো আমি কামালকে বিয়ে করছি।
: তুমি আমাকে ভালোবাসো না কবিতা? সন্ধানের কণ্ঠ বাষ্পরুদ্ধ হয়ে আসে।
-না।
: এটাই তোমার শেষ কথা।
-হ্যাঁ। কবিতা দৃঢ়কণ্ঠে জবাব দেয়।
: তাহলে...
সন্ধান আর কথা বাড়ায় না। পার্কের বেঞ্চ থেকে উঠে দাাঁড়িয়্ েদ্রুত হাঁটতে থাকে।
সন্ধান গলিপথ পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রাজপথে চলে আসে। রাস্তায় সারি সারি বাস চলছে। কোনটিতে উঠবে, কোথায় যাবে? কিছুই ভাবতে পারে না। অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তার মাঝদিয়ে চলতে থাকে। আচমকা একটি ট্রাক সন্ধানকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত গতিতে চলে যায়।
২. হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রুমের সামনে উপচেপড়া ভিড়। বৃত্তশালী পরিবারের এক যুবকের মাথা ট্রাকে থেতলে দিয়েছে। মাথা থেকে মগজ বেরিয়ে পড়েছে। যুবকটিকে দ্রুত ওটিতে ঢোকানো হয়।
যুবকটিকে ওটিতে ঢোকানোর পর পরই স্ট্রেচারে করে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত আরেকটি রোগী ইমার্জেন্সিতে আসে। এর মাথাও থেতলে গিয়েছে। কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা করার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রোগীটির নাম সন্ধান।
ওটি থেকে বেডে আনার পর বৃত্তশালী পরিবারের যুবকটির যখন জ্ঞান ফেরে তখন সে কাউকে চিনতে পারে না। নিকট আত্মীয়-স্বজন হা-হুতাশ করতে থাকেÑ কদিন পরেই ওর বিয়ে, আর সে কি না স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলল!
বন্ধু কাজল জিজ্ঞেস করে, কামাল; আমাকে চিনতে পারছিস না?
কামাল মাথা নেড়ে না-বোধক জবাব দেয়। কামালের বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়।
৩. কামাল এখন প্রায় সুস্থ। সে কাউকে চিনতে পারছে, আবার কাউকে পারছে না। তবে ও এমন কিছু লোকজনের কথা বলছে যারা এ পরিবারের সঙ্গে পরিচিত নয়।
এরপর একদিন কামালের সাথে কবিতা নামের মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। অনেক দিন ধরেই বিয়ের কথা চলছিল। কামাল বিত্তশালী পরিবারের ছেলে, বিদেশ থাকত। বিয়ে পাকাপাকি হবার পর দুজনে ভিডিও কলে কথাও বলেছে। বেশ কয়েকবার। বাস্তবে কেউ কাউকে দেখেনি কখনো।
বাসর রাতে যখন দুজনের দেখা হয় তখন মনে হয় অনেক পরিচিত দু’জন। ভিডিও কলের কল্যাণে তাদের চেহারা অতি পরিচিত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু খটকা লাগে কামাল যখন বাস্তবে কথা বলা শুরু করে। কবিতার কাছে মনে হয় এমন ভালোবাসার কথা সে আগে অন্যকারো কাছে থেকে শুনেছে। ওর সাথে ভিডিও কলে এমন অন্তরঙ্গ কথা হয় নি কখনো। হ্যাঁ মনে পড়েছে, ও সন্ধানের মতো করে ভালোবাসার কথাগুলো বলছে; শুধু কণ্ঠস্বর ভিন্ন। কিন্তু
এ কেমন করে হয়? কবিতা ভাবতে থাকে।
-কী ভাবছো? হঠাৎ অন্যমনস্ক কবিতাকে সন্ধান দু’বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে।
: না, কিছু না। কবিতা দ্রুত নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়।
-দ্যাখো, বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দেবার একটি কারণ ছিল। কথাটি তোমাদের বলা হয় নি। দেশে আসার দুদিন পরেই আমি কার অ্যাকসিডেন্ট করি। নিজে ড্রাইভ করছিলাম। পেছন থেকে একটি ট্রাক এসে সজোরে ধাক্কা মারে। আমি রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলছিলাম। যেদিন তুমি আমাকে ডিনাই করলে সেদিনের কথা। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম আত্মহত্যা করব কিন্তু বেঁচে গেলাম।
কামালের কথা শুনে কবিতা মনে মনে ভাবেÑ ও আত্মহত্যা করতে যাবে কেনো? ওর সাথে তো আমার প্রেম-বিরহ কিছুই হয় নি। সেটেল ম্যারেজ। এর আবার...
-বিশ্বাস করো, এই দ্যাখো আমার মাথা সেলাই করা। কামাল তার মাথাটা নুইয়ে কবিতার মুখের কাছে ধরে।
কবিতা সেদিকে না তাকিয়ে ভাবতে থাকেÑ কামাল কেনো সন্ধানের মতো করে কথা বলছে। ও বুঝতে পারে না কীভাবে এমন হলো?
কিন্তু কবিতা তো জানে না, চোখের কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের মতো কামালের মস্তিষ্কে সন্ধানের মস্তিষ্কের নিউরন সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই ‘ব্রেইন ট্রান্সপ্লান্টেশন’ আধুনিক বিজ্ঞানের এক অভিনব সাফল্য।
ব্রেইন ট্রান্সপ্লান্টেশন
আশরাফ পিন্টু
‘‘তুমি আর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে না।’’
কবিতার কথা শুনে সন্ধান হতভম্ব হয়ে যায়। হৃদয়ে ভাঙচুর হতে শুরু করে। ভগ্নহৃদয়ে বলে, এভাবে বলছো কেনো কবিতা?
-আমি একজনের বাগদত্তা। আগামী চৌদ্দ তারিখে আমার বিয়ে ।
: তাতে কী।
-আশ্চর্য! আমার বিয়ে হচ্ছে তবু তুমি আমার পিছু ছাড়ছো না। আবার বলছো কি না তাতে কী! কবিতা হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
: আমি তো তোমাকে বিয়ে করার জন্য ভালোবাসি নি কবিতা। সন্ধান শান্তস্বরে বলে।
-হ্যাঁ, তাই তো আমি কামালকে বিয়ে করছি।
: তুমি আমাকে ভালোবাসো না কবিতা? সন্ধানের কণ্ঠ বাষ্পরুদ্ধ হয়ে আসে।
-না।
: এটাই তোমার শেষ কথা।
-হ্যাঁ। কবিতা দৃঢ়কণ্ঠে জবাব দেয়।
: তাহলে...
সন্ধান আর কথা বাড়ায় না। পার্কের বেঞ্চ থেকে উঠে দাাঁড়িয়্ েদ্রুত হাঁটতে থাকে।
সন্ধান গলিপথ পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রাজপথে চলে আসে। রাস্তায় সারি সারি বাস চলছে। কোনটিতে উঠবে, কোথায় যাবে? কিছুই ভাবতে পারে না। অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তার মাঝদিয়ে চলতে থাকে। আচমকা একটি ট্রাক সন্ধানকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত গতিতে চলে যায়।
২. হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রুমের সামনে উপচেপড়া ভিড়। বৃত্তশালী পরিবারের এক যুবকের মাথা ট্রাকে থেতলে দিয়েছে। মাথা থেকে মগজ বেরিয়ে পড়েছে। যুবকটিকে দ্রুত ওটিতে ঢোকানো হয়।
যুবকটিকে ওটিতে ঢোকানোর পর পরই স্ট্রেচারে করে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত আরেকটি রোগী ইমার্জেন্সিতে আসে। এর মাথাও থেতলে গিয়েছে। কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা করার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রোগীটির নাম সন্ধান।
ওটি থেকে বেডে আনার পর বৃত্তশালী পরিবারের যুবকটির যখন জ্ঞান ফেরে তখন সে কাউকে চিনতে পারে না। নিকট আত্মীয়-স্বজন হা-হুতাশ করতে থাকেÑ কদিন পরেই ওর বিয়ে, আর সে কি না স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলল!
বন্ধু কাজল জিজ্ঞেস করে, কামাল; আমাকে চিনতে পারছিস না?
কামাল মাথা নেড়ে না-বোধক জবাব দেয়। কামালের বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়।
৩. কামাল এখন প্রায় সুস্থ। সে কাউকে চিনতে পারছে, আবার কাউকে পারছে না। তবে ও এমন কিছু লোকজনের কথা বলছে যারা এ পরিবারের সঙ্গে পরিচিত নয়।
এরপর একদিন কামালের সাথে কবিতা নামের মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। অনেক দিন ধরেই বিয়ের কথা চলছিল। কামাল বিত্তশালী পরিবারের ছেলে, বিদেশ থাকত। বিয়ে পাকাপাকি হবার পর দুজনে ভিডিও কলে কথাও বলেছে। বেশ কয়েকবার। বাস্তবে কেউ কাউকে দেখেনি কখনো।
বাসর রাতে যখন দুজনের দেখা হয় তখন মনে হয় অনেক পরিচিত দু’জন। ভিডিও কলের কল্যাণে তাদের চেহারা অতি পরিচিত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু খটকা লাগে কামাল যখন বাস্তবে কথা বলা শুরু করে। কবিতার কাছে মনে হয় এমন ভালোবাসার কথা সে আগে অন্যকারো কাছে থেকে শুনেছে। ওর সাথে ভিডিও কলে এমন অন্তরঙ্গ কথা হয় নি কখনো। হ্যাঁ মনে পড়েছে, ও সন্ধানের মতো করে ভালোবাসার কথাগুলো বলছে; শুধু কণ্ঠস্বর ভিন্ন। কিন্তু
এ কেমন করে হয়? কবিতা ভাবতে থাকে।
-কী ভাবছো? হঠাৎ অন্যমনস্ক কবিতাকে সন্ধান দু’বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে।
: না, কিছু না। কবিতা দ্রুত নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়।
-দ্যাখো, বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দেবার একটি কারণ ছিল। কথাটি তোমাদের বলা হয় নি। দেশে আসার দুদিন পরেই আমি কার অ্যাকসিডেন্ট করি। নিজে ড্রাইভ করছিলাম। পেছন থেকে একটি ট্রাক এসে সজোরে ধাক্কা মারে। আমি রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলছিলাম। যেদিন তুমি আমাকে ডিনাই করলে সেদিনের কথা। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম আত্মহত্যা করব কিন্তু বেঁচে গেলাম।
কামালের কথা শুনে কবিতা মনে মনে ভাবেÑ ও আত্মহত্যা করতে যাবে কেনো? ওর সাথে তো আমার প্রেম-বিরহ কিছুই হয় নি। সেটেল ম্যারেজ। এর আবার...
-বিশ্বাস করো, এই দ্যাখো আমার মাথা সেলাই করা। কামাল তার মাথাটা নুইয়ে কবিতার মুখের কাছে ধরে।
কবিতা সেদিকে না তাকিয়ে ভাবতে থাকেÑ কামাল কেনো সন্ধানের মতো করে কথা বলছে। ও বুঝতে পারে না কীভাবে এমন হলো?
কিন্তু কবিতা তো জানে না, চোখের কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের মতো কামালের মস্তিষ্কে সন্ধানের মস্তিষ্কের নিউরন সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই ‘ব্রেইন ট্রান্সপ্লান্টেশন’ আধুনিক বিজ্ঞানের এক অভিনব সাফল্য।