জসীম উদ্দীন মুহম্মদ

মঙ্গলের ছিল অদ্ভুত একটা শখ সে দিয়াবাড়ির সব চেয়ে ভালো ক্যান্ডি দোকান থেকে প্রতিদিন একটা করে ললিপপ কিনত। তার লাল রঙের একটা সাইকেল ছিল। আর সেই সাইকেলে চেপে সে রোজ স্কুলে যেত আর আসার পথে ক্যান্ডির দোকানে ঢুঁ মারত।

একদিন মঙ্গলের সাইকেলের চাকা ফেটে গেল। মন খারাপ করে সে স্কুল থেকে ফিরছিল, কারণ আজ আর তার ললিপপ কেনা হবে না। পথে তার দেখা হলো রকির সাথে। রকি তাদের স্কুলের দারোয়ান কাকুর ছেলে। সে একটা ছোট্ট পাখি পুষত, যার নাম ছিল ‘মিষ্টি’।

রকি দেখল মঙ্গল মন খারাপ করে আছে। সে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে মঙ্গল? আজ বুঝি তোমার সাইকেল নষ্ট?

মঙ্গল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, হ্যাঁ, আর তাই আজ আমি ললিপপ কিনতে পারব না।

রকি একটু ভাবল। তারপর তার পকেট থেকে ছোট্ট একটা চকলেটের টুকরো বের করে মঙ্গলের দিকে বাড়িয়ে দিল। বলল, এটা নাও। আমার মিষ্টির জন্য রেখেছিলাম, কিন্তু আজ তুমি এটা খাও।

মঙ্গল খুব অবাক হয়ে গেল। রকি তো খুব গরীব ঘরের ছেলে, অথচ সে তার নিজের জিনিসটা তাকে দিয়ে দিচ্ছে! মঙ্গল চকলেটের টুকরোটা হাতে নিয়ে হাসল। চকলেটের স্বাদ ললিপপের মতো না হলেও সেদিনের সেই চকলেটের স্বাদ তার কাছে সবচেয়ে মিষ্টি মনে হলো।

পরদিন সকালে মঙ্গল তার বাবার কাছে বায়না ধরে রকির জন্য একটা নতুন ফুটবল কিনল। স্কুল ছুটির পর রকিকে ফুটবলটা উপহার দিয়ে মঙ্গল বলল, এই নাও রকি, এটা তোমার জন্য। তুমি আমার বন্ধু আর বন্ধুরা এভাবেই একে অপরের পাশে থাকে।

রকি ফুটবলটা পেয়ে আনন্দে লাফিয়ে উঠল। সেদিন দিয়াবাড়ির আকাশে যেমন সুন্দর আলো ছিল, তেমনি মঙ্গল আর রকির বন্ধুত্বও যেন সেই আলোর মতোই উজ্জ্বল হয়ে উঠল। মঙ্গলের সাইকেল মেরামত হলো। সে আবার ক্যান্ডি কিনল, কিন্তু সেদিন থেকে সে জানল, ললিপপের চেয়েও মিষ্টি হলো বন্ধুত্বের স্বাদ।