নুশরাত রুমু

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই চায় না মাহাপারা। কিন্তু দুদিন হলো বাবা প্রতিদিন সকালে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়। চার বছর বয়স হয়ে গেল এখনও সে দাঁত মাজতে চায় না। মুখ না ধুয়ে বসার ঘরে গিয়ে সোফায় শুয়ে সে টিভি চালিয়ে দিল। আরে বাহ্। সকালে এত সুন্দর কার্টুন দেখায় সে তো আগে দেখেনি। হঠাৎ মা এসে কান ধরে তাকে বাথরুমে নিয়ে গেল। ইস্ কী সুন্দর পেঙ্গুইনের কার্টুনটা দেখছিল সে। নাস্তা খেতে বসেও সে ভাবছিল কীভাবে আবার টিভি দেখতে পারবে। মা ওকে নাস্তা খাইয়ে দিচ্ছে কিন্তু সে মুখ খুলছে না। ভয়ে ভয়ে মাকে বলল, মা মোবাইল দাও। মা একটু রেগে তাকাতেই সে দৌড়ে বাবার কাছে চলে গেল। বাবা এতদিন বিদেশে ছিল। কয়েকদিন হলো দেশে এসেছে। বাবা ওকে কোলে নিয়ে বসল। তারপর মিষ্টি করে বলল, মোবাইল দেখে খাবার খেতে হয় না। গাল ফুলিয়ে মাহাপারা বলল, কেন বাবা ?

খাবার হলো আল্লাহর দান। তাই প্রথমে বিসমিল্লাহ্ বলে খাওয়া শুরু করবে। খেতে মজা হলে মাকে ধন্যবাদ দেবে। মা প্রতিদিন কত কষ্ট করে আমাদের জন্য খাবার তৈরি করে। দেখ কত গরম পড়েছে। নাস্তা বানাতে গিয়ে তোমার মা কত ঘেমে গেছে।

মাহাপারা ভাবল, ঠিকই তো। এটাতো সে ভাবেনি। সে সবসময় মোবাইল দেখে খাবার খায়। সেজন্য সবাই বকে। বাবার মতো কেউ তাকে বুঝিয়ে বলেনি। আজ সে বাবার হাতে মোবাইল না দেখেই খেতে শুরু করল।

মাহাপারার বাবা কবুতর খুব ভালোবাসে। এবার দেশে এসে ভাবল কবুতর পুষবে। তাই কাঠমিস্ত্রিকে কবুতরের জন্য কাঠের ঘর তৈরি করতে দিল। কিন্তু মাহাপারার দাদাভাই কবুতর পুষতে চান না। কবুতর উড়ে গেলে খুঁজে পাওয়া যায় না। ঘর নোংরা করে তাই তিনি কবুতর পছন্দ করেন না। তিনদিন পর মাহাপারার বাবা কবুতরের ঘর তৈরি করে নিয়ে এলো। ভাবল একবার ঘরগুলো ছাদে বসিয়ে ফেললে তার বাবা আর নিষেধ করবে না।

মাহাপারা ঘরের ভেতর থেকে দৌড়ে এলো। বাবা ওকে কানে কানে বলল , আমি যে কবুতরের ঘর এনেছি সেটা এখন দাদাভাইকে বলবে না। মাহাপারা ঘাড় নেড়ে বলল, ঠিক আছে। তারপর মায়ের কাছে গিয়ে কানে কানে বলল, বাবা কবুতরের ঘর বানিয়ে এনেছে, কাউকে বলবে না। তারপর দাদির কাছে গিয়েও কানে কানে একই কথা বলল। সবশেষে দাদাভাইয়ের কাছে গিয়েও কথাটা বলে বলল, কাউকে বলবে না। ওর কাণ্ড দেখে সবাই হাসতে শুরু করল। লজ্জায় মাহাপারা গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরল।