রফিক মুহাম্মদ

কে- কে ওই হানে? কি অইলো কথা কও না কেরে? অন্ধকারে স্পষ্ট দেখা না গেলেও জাহিদ মাস্টার আবছা আবছা দেখতে পাচ্ছেন। বারান্দার এক দিকে মাধবীলতার ঝোপের পাশে আলো-আঁধারিতে একটি মানুষের অবয়ব তিনি দেখতে পাচ্ছেন। মনে হচ্ছে কোনো মেয়ে মানুষ। শাড়ির আঁচলটা কাঁধ থেকে নিচে পড়ে আছে। বারান্দার গ্রিল ধরে কিছুটা উপুর হয়ে মহিলা হাঁপাচ্ছে। জাহিদ মাস্টার রাতের খাবার খেয়ে বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করছিলেন। বত্রিশ হাত লম্বা বরান্দায় রাতের খাবারের পর একটু হাঁটাহাঁটি করা তার প্রতিদিনের অভ্যাস। খাওয়ার পর আজও তিনি রুটিন মতো তাই করছিলেন। ছোট্ট জেলা শহরের এক প্রান্তে নতুন বাড়ি করেছেন জাহিদ মাস্টার। এলাকাটাকে অনেকটা শহরতলী বলা যায়। প্রায় সব সময় নিরিবিলি থাকে। শুনশান নীরবতার মধ্যে হেঁটে বারান্দার এক প্রান্তে যেতে অপর প্রান্তে হঠাৎ একটা শব্দ পেলেন। কেউ যেন গ্রিল ধরে একটা ঝাঁকি দিল এমনটা মনে হলো। পিছন ফিরে তাকিয়ে একটা নারীর ছায়ার মতো দেখতে পেয়ে কিছুটা আঁতকে উঠেন। এই রাতের বেলা মেয়ে মানুষ কোত্থেকে এলো? বারান্দার ওই মাথা থেকে মনে হচ্ছে মহিলাটা যেন হাঁপাচ্ছে। কোথা থেকে দৌড়ে এসেছে। তাহলে কি বাড়ি থেকে পালিয়ে-টালিয়ে এসেছে নাকি? আজকালতো প্রায়ই এমন ঘটনা শোনা যায়। আসলে বুঝি না বাপু ছেলে মেয়ে একজন আরেকজনরে যদি পছন্দ কইরা থাহে তাইলে বাপ-মার তাতে আপত্তি কেরে? বিয়া দিয়া দেও, সব ঝামেলা শেষ। না, তা না কইরা বাধা দিবো। আর তাতেই দেহা দেয় যত বিপত্তি। বাড়ি থাইক্যা পালায়, তা না অইলে গলায় দড়ি...। না না জাহিদ মাস্টার আর ভাবতে পারেন না, কন্ঠে কিছুটা জোর দিয়েই বলেন- এই কেরে ওই হানে...। তিনি হেঁটে বারান্দার মাঝখানে গ্রিলের দরজাটা খোলেন। এ সময় মেয়েটি দৌড়ে এসে তার দু’পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে, আপনে আমারে বাঁচাইন, ওরা আমারে ধইরা নিয়া যাইবো, আমারে আপনে বাঁচাইন...।

আরে আরে.. কি অইছে ...ছাড় ছাড়..। কেলা তুমি কইতে আইছো...।

কি অইছে.. জারার আব্বা। অইহানে কান্দে কেলা..। মহিলা কন্ঠের কান্না শুনে ঘরের ভিতর থেকে জাহিদ মাস্টারের স্ত্রী ফরিদা বেরিয়ে আসেন। জাহিদ মাস্টার তখনও মেয়েটাকে পা থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

আরে আরে ছাড়তো দেহি...। কেলা তুমি, কইতে আইছো, কি অইছে তোমার... কিছুইতো কইতাছ না?

মেয়েটি বাসায় ঢোকার গেইটের দিকে বার বার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় আর কান্না জড়িত কন্ঠে বলে, ওদের হাত থাইক্ক্যা আমারে বাঁচাইন...। ওরা আমারে...

ফরিদা অনুমান করে মেয়েটি কোন বিপদে পড়েছে। কেউ হয়তো ওকে তাড়া করেছে। তাইতো বার বার বাসার গেইটের দিকে তাকাচ্ছে। ভাবছে পিছন থেকে ওরা আবার এসে পড়ে কি না।

ফরিদা এবার মেয়েটিকে দু’হাতে ধরে বলেন, তোমার অহন আর কোনো ভয় নাই। যাও ভিতরে যাও। এইহান থাইক্যা তোমারে কেউ নিয়া যাইতে পারবো না। জারার আব্বা আফনে বাসার গেইটটা ভালা কইরা বন্ধ কইরা দেওহাইন। বাঘের তাড়া খাওয়া এক ভীতসন্ত্রস্ত হরিণীর মতো কাঁপতে কাঁপতে ফরিদার আঁচল ধরে মেয়েটি ঘরের ভিতরে ঢুকে।

বিশ-বাইশ বছরের এক যুবতী। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রঙ। ডাগর দুটি মায়া ভরা চোখে এখনো ভয়ের ছাপ। স্নিগ্ধ মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে ফরিদার খুব মায়া হয়। বেতের মোড়াটায় মেয়েটাকে বসিয়ে পাশে একটা চেয়ার টেনে বসেন ফরিদা। তার কাছেই আর একটি চেয়ার টেনে বসেন জাহিদ মাস্টার। ফরিদা দরদ মাখা কন্ঠে বলেন, এইবার কওতো কেলা তুমি, কইতে আইছো? কারা তোমারে ধইরা নিয়া যাইবো? কওতো হুনি?

মেয়েটি এবার একটু নড়ে চড়ে বসে। নিচু মাথাটা একটু উপরে তুলে তাকায়। ওর দু’চোখ বেয়ে তখনো অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। হাতের তালুতে অশ্রুধারা মুছে নিয়ে মেয়েটি আস্তে আস্তে বলে, আমার নাম চম্পা। এইহান থাইক্যা সাত আট মাইল দূরা রহমতপুর গেরামে আমরার বাড়ি। ছোডু বেলা বাবা-মা মইরা গেছে। চাচার কাছেই বড় অইছি। চাচাও খুব গরীব আছিলো। রিসকা (রিকশা) চালাইয়া চাইর পোলা মাইয়া চাচী আর আমারে নিয়া কোন রহমে সংসার চালাইতো। খাইয়া না খাইয়া দিন যাইতো। হেই চাচাও তিন চাইর মাস আগে হঠাৎ জ্বর অইয়া মইরা গেছে। অহনতো আর আমরার দিন চলে না। চাচী মাইনষের বাড়িত কাম করে। আমারেও কামে দিছিল, কিন্তু যেহানেই কামে যাই হেই হানেই বেডারা আমারে কু-পস্তাব দেয়...। চম্পা হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।

জাহিদ মাস্টার বলেন, কাইন্দো না, কাইন্দো না তুমি। কি করবা কও, এই সমাজেতো অহন মানুষ নামের পশুতে ভইরা গেছে।

হাতের তালুতে চোখের পাতা আবার মুছে নিয়ে চম্পা বলে, আমারে একটু পানি দিবাইন। খুব তিরাস লাগছে।

ফরিদা উঠে ডাইনিং টেবিল রাখা জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে নিয়ে আসেন। চম্পাকে দিয়ে বলেন, এই নাও পানি খাও। রাইতে কিছু খাইছো? চম্পা পানি খেতে খেতে ফ্যাল ফ্যাল করে ফরিদার দিকে তাকায়। ফরিদা বুঝতে পারেন যে চম্পার কিছুই খাওয়া হয়নি। ফরিদা বলেন, তোমার তো মনে অয় কিছুই খাওয়া অয় নাই। ঠিক আছে আইয়ো, আমরা খাইয়া অল্প কিছু ভাত রইছে এইডি অহন খাইয়া নেও। এরপর তোমার সব কথা হুনবাম।

দুই.

এত রাতে ফোন করলো কে?

রিং হচ্ছে শুনে মোবাইলটা মাথার পাশ থেকে হাতে নেয় জারা। মনিটরে মা লেখা দেখে সে আঁতকে ওঠে। সাড়ে এগারটা বাজে। এখন মায়ের ফোন! কোন বিপদ হয়নি তো। বাবার কিছু হয়নি তো। সন্ধ্যার পরেও তো বাবা-মায়ের সাথে কথা হয়েছে। তাহলে এত রাতে আবার...। ভাবতে ভাবতে ফোনটা রিসিভ করে জারা। অন্য সময় হলে ফোন কেটে সে কলব্যাক করে। এখন আর সেটা মনে নেই। এক অজানা আশংকায় ফোনটা রিসিভ করে উদ্বেগের স্বরে জারা জিজ্ঞেস করে, হ্যাঁ মা কি হয়েছে? এত রাতে ফোন করেছো? আব্বার শরীর ঠিক আছে তো? তোমার কিছু হয়নি তো?

মেয়ের কন্ঠে উদ্বেগ শুনে ফরিদা তাড়াতাড়ি বলেন, আরে না না, আমরা ভালা আছি, চিন্তার কিছু নাই।

-তাহলে এত রাতে ফোন করেছো কেন? তোমার মন খারাপ? আব্বা কি তোমায় কিছু বলেছে?

-আরে না না তেমন কিছু না। তয় একটা বিরাট ঘটনা ঘটছে। অহন কি যে করবাম কিছুই বুঝতে পারতাছি না। তাইতো তরে ফোন দিছি।

- কি অইছে! কি ঘটনা ঘটছে?

- আর কইছ না, বিশ বাইশ বছর বয়সী একটা মাইয়া একটু আগে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরার বাসাত আইয়া ঢুকছে। তর বাপ তহন বারিন্দায় হাঁটতেছিল। মাইয়াডা আইসা তর বাপের পাও ধইরা কান্না-কাটি শুরু করছে। আমারে আপনে বাঁচাইন, ওরা আমারে ধইরা নিয়া যাইবো...। এইসব হুইন্যা..

- হয়েছে, বুঝেছি। এই মেয়ের কান্না শুনে তোমাদের মন গলে গেছে। আর মেয়েটিকে বাসায় তুলেছো, তাইতো?

- হরে মা। মাইয়াডার নাম কইছে চম্পা। সাত আট মাইল দূরের গ্রাম রহমতপুরে বাড়ি। ছোডবেলা বাবা-মা হারইছে। চাচার সংসারে বড় অইছে। রিকশা চালক চাচাও তিন চাইর মাস আগে মইরা গেছে।

-হয়েছে- হয়েছে, মা-বাবা নাই, বড় কষ্টে আছি, এইসব বানানো গল্প বলে প্রথমে সহানুভূতি আদায় করে প্রতারকরা আশ্রয় নেয়। তোমরা বুঝতেছ না মা এখন কত রকমে যে মানুষ প্রতারণা করে।

- নারে মা মাইয়াডারে দেইখ্যা এমন মনে অইতাছে না। সোমত্ত একটা মাইয়া। কি মায়াভরা মুখটা। আর এই মাইয়াডারে ওর চাচী কিছু টেকা নিয়া পাশের গ্রামের এক জোয়ান বেডার লগে দিয়া দিছে। ওই বেডা হেরে বিদেশে পাডাইবো কইয়া গত দুই দিন ধইরা শহরে এক হোটেলে আইন্যা রাখছে। দুইদিন ধইরা ওরে নির্যাতন করছে।

বল কি মা! এই সব...

-মাইয়াডা মিছা কয় নাই। গতকাইল হুনছে ওই বেডায় মোবাইলে কইতাছে, বর্ডারের সব ঠিক আছে। পাঁচ লাখ টেহা লইয়া আইতে। আগামীকাইল রাইতেই বর্ডার পার কইরা ভারতে পৌঁছাইয়া দিব। কাতারে পাডাইবো কইয়া আনছে...। এরপর মাইয়াডা হোটেলের এক ছোডু ছেরারে বাও কইরা অনেক কষ্টে পলাইয়া আছে। অহন তুই কও কি করতাম। এই সোমত্ত মাইয়াডারে এত রাইতে বাসা থাইক্যা কেমনে বাইর কইরা দেই?

-হুম, তাতো ঠিকই বলছো। কিন্তু আজকাল তো কাউকে বিশ্বাস করা কঠিন। কে যে সত্য বলছে আর কে যে মিথ্যা বলছে।

- এই মাইয়াডা মিছা কইতাছে না।

- সত্যি হলেও তো এটা খুব ভয়ানক মা। ওতো এক নারী পাচারকারী চক্রের হাতে পড়েছে। এই চক্র সহজে ওকে ছাড়বে না। খোঁজে বের করবে। এখন আমাদের বাসায় যদি থাকে তাহলে...। না না মা রাতটা ওকে থাকতে দিয়েছো দাও, খুব ভোরে ওকে চলে যেতে বলবে।

-এইডা কি কস মা। একটা সেয়ান মাইয়া এমন বিপদে পড়ছে, আমরা ওরে বাইর কইরা দিয়াম। থানায় জাইলে অয় না।

- না না মা, থানায় ভুলেও যাবে না। ওরা সব একটি সিন্ডিকেট। এসব পাচারকারীদের সাথে থানার ভালো যোগাযোগ থাকে। ওরা সব একটা চক্র বুঝলে?

-তাইলে কি করবাম মা। এই মাইয়াডার একটা বিহিত...

-আচ্ছা.. আচ্ছা.. ঠিক আছে, আব্বার মতো তুমিও মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে না পড়লে চলে না। এই যুবতি মেয়েকে তোমরা কি ভাবে বাসায় রাখবে বল? এই পাচারকারী চক্রতো মেয়েটাকে খুঁজে বের করার জন্য ইতোমধ্যে লোক লাগিয়ে দিয়েছে। কি করা যায় বলো-তো? হুম.. এক কাজ কর মা জাফর চাচাকে দিয়ে কাল পরশুর মধ্যে মেয়েটাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দাও। আমার বাসায় কয়েকদিন রেখে তারপর ওকে না হয় কোথাও কাজে লাগিয়ে দেব। ব্যারিস্টার সাহেবের-মানে তোমাদের জামাইয়েরতো অনেক জানাশোনা আছে, কোথাও না কোথাও একটা কাজ জুটিয়ে দিতে পারবে। এখন আর চিন্তা করো না। ঘুমিয়ে পড়, ঠিক আছে? আর শোন মেয়েটাকে খুব সাবধানে রাখবে। বাসার বাইরে বের হতে দেবে না। আর জাফর চাচাকে দিয়ে যত দ্রুত পার আমার কাছে পাঠিয়ে দেবে, কেমন?

- ঠিক আছে মা। বুকের মধ্য থাইক্যা একটা পাথর নামলো।

তিন.

জারার আব্বা, জাফর তো আইজও আইলো না। তিন চাইর দিন অইয়া গেছে মাইয়াডারে অহনো পাডাইতে পারি নাই। আমার বড় চিন্তা অইতাছে। জারাতো কইছে ওরা একটা চক্র, পুলিশের লগেও নাকি ওদের খায়-খাতির আছে? অহন যদি...

-তুমি খামাকা অত চিন্তা কইরো না তো। অত বড় অন্যায় অপরাধ কইরাও আবার সাহস অইবো এই হানে আইবো মাইয়াডারে নিতে?

সকালের নাস্তা খেতে খেতে দু’জনের কথা হচ্ছিল। জাহিদ মাস্টার স্ত্রীকে প্রবোধ দিলেও ভিতরে ভিতরে তিনি নিজেও বেশ চিন্তায় আছেন। পাচারকারী চক্র নাকি খুব ভয়ংকর হয়। মেয়েটাকে খুঁজে যদি ওরা এখানে চলে আসে। একটা অসহায় মেয়েকে আশ্রয় দিয়েছে। এখন যদি এই আশ্রয় থেকে মেয়েটাকে...। না না জাহিদ মাস্টার আর কিছু ভাবতে পারছেন না। জাফর যে কেন আসছে না। গতকালইতো ওর আসার কথা ছিল।

জাফর জাহিদ মাস্টারের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। ছোট বেলা থেকে জাহিদ মাস্টারদের বাড়িতে কাজ করে জাফর। জাহিদ মাস্টার শহরে বাড়ি করার পর জাফর এখন ওদের গ্রামের বাড়ি দেখা শোনা করে। অনেকটা নিজের লোকের মতোই জাফর তাদের বাড়িতে আছে। জাহিদ মাস্টার মনে মনে ভাবেন, ওর আবার কোনো অসুখ বিসুখ হয়নি তো। অসুখ হলেও একটা ফোন করে তো জানাতে পারে। আসলে কোনো দায়িত্ব জ্ঞান নেই।

এ সময় হঠাৎ কলিংবেল বেজে ওঠে। কলিংবেলের শব্দ শুনে জাহিদ মাস্টার চা খেতে খেতে বললেন-এই যে মনে অয় জাফর আইছে। চম্পা গেইটটা খুলে দে তো।

গেইট খুলেই চম্পা আঁতকে ওঠে। একি! এতো সেই লোকটা। বাঘ দেখে হরিণ যেমন ছুটে পালায় গেইট থেকে চম্পা ঠিক সেইভাবে এক দৌড়ে ভিতরে ছুটে যায়। কাঁপতে কাঁপতে বলে চাচাজিগো আমারে বাঁচাহুয়াইন, ওই শয়তানডা আমারে নিয়া যাইবো...।

চম্পাকে এভাবে ভয়ে কাঁপতে দেখে জাহিদ মাস্টার চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলেন, এই কি, কি অইছে তর। এইরহম ডরাইচস কেরে?

চম্পার গলা দিয়ে স্বর বেরুচ্ছে না। সে হাত দিয়ে ইশারা করে দরজার দিকে দেখায় এবং কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে, হেই শয়তান লো....ক...টা..

জাহিদ মাস্টার পিছন ফিরে তাকিয়ে চমকে উঠেন। চল্লিশের বেশি বয়সের প্যান্ট-শার্ট পরা একটা লোক সাথে কয়েকজন পুলিশ। জাহিদ মাস্টার বলেন, এইকি আপনেরা কারা? এইহানে কি চাইন?

-জাহিদ মাস্টারের কথার কোন উত্তর না দিয়ে লোকটা বলে, দারোগা সাব এই যে এই মেয়েটাই চম্পা।

মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি। পান চিবাতে চিবাতে হাতের ছড়ি দিয়ে অন্য হাতের মুঠোয় টোকা দিয়ে দারোগা এগিয়ে যায়। জাহিদ মাস্টার পাশ কাটিয়ে চম্পার পাশে দাঁড়িয়ে বলে, এই তোমার নাম চম্পা?

চম্পা একটা ঢোক গিলে মাথাটা উপর-নিচে ঝাঁকিয়ে দারগোর কথার হ্যাঁ-সূচক সায় দেয়। আমার চল্লিশ হাজার টাকা চুরি কইরা পালাইয়া এইখানে আইসা আশ্রয় নিচ্ছে। লোকটা দারোগাকে উদ্দেশ্য করে বলে।

দারোগা এবার সঙ্গে আসা দু’জন মহিলা পুলিশকে বলেন, এই ওকে নিয়ে চল।

জাহিদ মাস্টার এবার কিছুটা প্রতিবাদের সুরে বলেন, নিয়া যাইবাইন মানে। ও কি অপরাধ করছে?

-এই যে এই ভদ্র লোকের চল্লিশ হাজার টাকা চুরি কইরা পালাইছে। উনি থানায় মামলা করেছে, তার ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

- দেখেন দারোগা সাব, এই লোকটারে আপনে ভদ্র লোক কইতাছেন? এই লোকতো একটা অমানুষ, নারী পাচারকারী। এই মাইয়াডারে পাচার কইরা ...

-থামুন আপনি। আপনাকে দেখে ভালো মানুষ বলে মনে হচ্ছে। চুরি করে পালিয়ে আসা একটা মেয়েকে আশ্রয় দিয়ে আপনি কিন্তু অপরাধ করেছেন। এই তোমরা দাঁড়িয়ে আছ কেন চল...। দার্গোা বেশ উত্তেজিত হয়ে যায়।

চার.

চম্পার হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে। ওদের পিছনে ওই লোকটা দারাগোর সাথে হাসতে হাসতে কথা বলছে আর যাচ্ছে। দারোগা হাতের ছড়িটা আলতো ঘোরাতে ঘোরাতে লোকটাকে বলছে..আপনি কিছুক্ষণ পর থানায় আসুন। সেখান থেকে আপনার জিম্মায় নিয়ে যেতে পারবেন।

জাহিদ মাস্টার নিজেও ওদের পিছন পিছন থানার দিকে হাঁটতে থাকেন।