পথিক মোস্তফা
কবি নয়ন আহমেদের কবিতার গভীরে যতো বেশি প্রবেশ করা যায়, ততোই তাঁর অনির্বচনীয় স্বাদ আস্বাদন করা যায়। তিনি কবিতার ভাষা নির্মাণ করেন অসম্ভব গভীর কবিতার মসলা দিয়ে। তিনি কোনো সাধারণ মানের ছান্দসিক বা কাব্যরসিকের ন্যায় দু-চারটা ছন্দের মিলতালে কবিতার শরীর গঠন করেন না। তাঁর শব্দচয়ন আর বাক্যবয়নের মধ্যে থাকে সামুদ্রিক গভীর বুদ্ধিমত্তা। তিনি একেকটি শব্দকে তৈরি করেন, একটি ইতিহাসের আস্ত উপাখ্যান। ইসলামের নান্দনিক বোধ ও শান্তির অপরিসীম বার্তা এ পৃথিবীর অবিশ্বাসীরা গ্রহণ না করে যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে তা কবি বলেন রূপকের আবরণে। তবে কবিতার আভরণে তিনি ব্যবহার করেন উজ্জ্বল জরিদার কারুকাজ। কবি এ শাশ্বত সৌন্দর্যকে নির্মাণ করেন উত্তমপুরুষে। নিজের ব্যক্তিত্বের কথনে কবি সকল সৌন্দর্যের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলেনÑ
নিজেকে প্রচার করতে ইচ্ছুক হলাম আমি।
বিশুদ্ধতার মতো কবিতা নাজিল করে দিলাম, তাদের।
বললাম:
শেখো আমাকে।
বানান করে করে আমার অবয়ব তৈরি করে নাও।
আল্লাহর কসম, তুমি দৃষ্টি হয়ে যাও।
প্রেম ও দৃষ্টি ছাড়া আমাকে পাবে না!
কবি এ কবিতায় কাব্যের রূপকের আড়ালে ইসলাম ধর্মের সৌন্দর্য অনুভূতি যা বিশ্বময় ব্যাপ্ত হলে সকল বিবেধ হানাহানি দূরীভূত হতো; পৃথিবীতে বিরাজিত হতো কেবল শান্তি আর শান্তি। তাই নিজের মধ্যে সেই ইসলামকে প্রতিষ্ঠার আহ্বান কবির। মহান আল্লাহ মহাগ্রন্থ কুরআনের বিভিন্ন সাথে বলেছেন, ‘দৃষ্টি ছড়াতে’ বা ‘চক্ষুষ্মানদের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন’ এমন বাক্য। অর্থাৎ নিজের বোধশক্তি প্রসারিত করে, জাগ্রত করে সত্যকে স্বীকার ও গ্রহণ করে নেয়ার উপদেশ। কবিও তাই বলেন, ‘ আল্লাহর কসম, তুমি দৃষ্টি হয়ে যাও।/ প্রেম ও দৃষ্টি ছাড়া আমাকে পাবে না!’ পৃথিবীর হিংসা-বিদ্বেষ আর জিঘাংসার অবসানের জন্য ইসলাম এসেছে শান্তির অমোঘ বিধান নিয়ে। মহান রবের বাণী হলো- ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে।’ সেই পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ইসলামকে যারা না মেনে হানাহানিতে লিপ্ত কবি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন-
নিজেকে প্রচার করতে আমি
স্রোতের মতো বহমান হলাম।
আদেশ করলাম:
গড়ে যাও পৃথিবীকে।
জিঘাংসার দরজাগুলো বন্ধ করে দাও।
এক্ষুণি ডিভোর্স দাও রাস্কেলটাকে।
আমার নাম প্রতিবেশীর মতো মুখস্থ করে নাও।
প্রভুর কসম, আমাকে না চিনলে স্বাধীন হবে না!
আমাকে পোশাকের মতো অনিবার্য করা হলো।
হায়, তবু ইহুদিরা আমাকে নিলো না!
ইসলামী জীবন বিধানকে মানা পোশাকের মতোই অপরিহার্য। এর থেকে স্খলিত হলেই বিপদ। এ কবিতার শেষ চরণটিই কবিতার আলো-আঁধারির ভাষাকে স্পষ্ট আলোকে নিয়ে আসে।
ইহুদিদের এখানে বিবাদ-বিভাজনের হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারাই পৃথিবীর সকল সাম্য আর শান্তির বিনষ্টকারী। তারাই ইসলামের সৌন্দর্যকে গ্রহণ না-করে বিভাজিত করে রেখেছে সকল শান্তিকামী মানুষকে। (চলবে)