ওমর বিশ্বাস
একবার ওরা আসিফকে ঘিরে ফেলে। আসিফ সন্ধ্যার পর বাসায় যাচ্ছিল। ওরা কয়েকজন ছিল। আসিফ যেদিকে যায় তারা সেদিকে যায়। রশিদ সাহেবকে এরমধ্যে একজন গল্পে গল্পে বলেছিল মানুষের শরীর এতো ঠান্ডা হয় তা তার জানা ছিল না। বাজারে একজনের গায়ে তার শরীরটা লেগেছিল। একে তো শক্ত তার উপর ঠান্ডা। লোকটা চমকে ওর দিকে তাকালেও সে নির্বিকারভাবে হেঁটে চলে যায়। এই গল্পটা আবার আসিফের আব্বার কাছ থেকে আসিফ শুনেছিল। ঠান্ডা শরীরের লোকটা কে ছিল তা কেউ বলেনি।
একদিন আসিফকে তারা ঘিরে ফেলেছে সেটা সে জানে না। সে ওদেরকে কোনো সন্দেহ করেনি। কারা তার পিছে পিছে আসছে তাও সে মাথা ঘামায়নি। কিন্তু একটা চিপায় গিয়ে সে ব্যাপারটা টের পায়। দুইটা বাড়ির মাঝখান দিয়ে যেতে হয়। ওই চিপা দিয়ে ঢুকলেই সামনে বড় রাস্তা। সেখান থেকে ডানে একটু সামনে গেলে তার বাসা। ওরা সুবিধা করতে পারছিল না। যেই দেখে আসিফ চিপা গলির মুখে চলে এসেছে ওমনি দুজন দ্রুত পিছন দিক দিয়ে সামনে চলে আসে। এমন সময় অসাবধানবশত তাদের পায়ে একটা প্লাস্টিকের ঠোঙা কোত্থেকে উড়ে আসল। শুরু হলো খসখস শব্দ। এ জন্য দ্রুত কাজ সারতে চাইল। তখন বাতাসের বেগের সাথে ওটার খসখস শব্দ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আসিফের সন্দেহ হয় তার পায়ে কিছু লাগলো কিনা। সে ঘুরে তাকালো। ওরা বিব্রত। ওরা অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। পলিথিন সরাতে পারছে না। সময়ও কম। ওদের চেহারা দেখে আসিফ আঁতকে উঠলো। হঠাৎ একটা ভয় তাকে তাড়া করলো যেন। সে দ্রুত ঝাটকা মেরে লাফ দিয়ে ওই দুইজনের ফাঁক দিয়ে সামনে চলে যায়। এতো দ্রুত ঘটনাটা ঘটবে তারা ভাবতে পারেনি।
আসিফ বুঝতে পারেনি কি হয়েছে। দুজনকে দ্রুত কিছু একটা করতে দেখেছে। আবার এটা তার মনের ভুলও হতে পারে। কয়েক সেকেন্ডের দেখা। তার বুক ঢিবঢিব করে। দে দ্রুত পা চালায় সামনের দিকে।
ওই চিপা পথ দিয়ে দুইজন পাশাপাশি যাওয়া যায় না। কিছু করতে না পেরে তারা পিছনে সরে যায়। আসিফ দেখলো তার পায়ে কিছু নাই। সে সোজা হাঁটছে। সে বুঝতে পারছে না ওই দুইজন কোথা থেকে আসলো। তাকে নিশ্চয় অনেকক্ষণ ধরে ফলো করছিল। তারা তো তার সামনেই এসে পড়েছিল। ধরতে না পেরে পিছনের দিকেই চলে গেছে। কি জানি, কে তারা? সে ভাবে, তারাও হয়তো এই চিপা পথ ব্যবহার করতে চেয়েছিল। মেইন রাস্তা উঠে যার যার জায়গায় চলে যাবে। হতে পারে সে যা ভাবছে ওসব কিছু না। সবই স্বাভাবিক ছিল।
আসিফ জানে না তাকে ওরা গত কয়েকদিন ধরে ফলো করছে। সে ওদের কাজে বিরাট ক্ষতি করেছে। এসব ওর জানারও কথা না। তাদের ধারণা আসিফ অনেক বুদ্ধিমান আর জ্ঞানী। তার মেধা অনেক। সে ওদের উপস্থিতি টের পেয়েছে। ওদের সম্পর্কে জেনে গেছে। আসিফই যে তাদের বলয়ে ছিদ্র করেছে এটা তারা বের করতে পেরে বেশ স্বস্তি বোধ করে। তাকে নিয়ে চিন্তিতও। ওরা ধরে নেয় আসিফ ওদের কাজে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাদের ধারণা ছিল এই ব্যূহবলয় আবিষ্কার যেমন অত্যাধুনিক ও লেটেস্ট তেমনি এটা ভেদ করে নষ্ট করার মতো কোনোকিছু এখনো আবিষ্কার হয়নি। পৃথিবীর সন্তানরা তো এই আবিষ্কার সম্পর্কেই জানে না।
আসিফই পেরেছে তাদের ব্যূহ ভাঙতে। মেধা ছাড়া এই কাজ করা যার তার পক্ষে সম্ভব না। তার মানে ওর কাছে নিশ্চয় এর টেকনোলজি আছে। সে আমাদের থেকেও অনেক বেশি এডভান্স। এই ধারণা থেকেই এখন তাদের টার্গেট আসিফ। এব্যাপারে তারা দ্রুত সিগন্যাল পেয়েছে। এমনিই মানবসন্তনরা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের উপর দিয়ে তারা অভিযান চালাচ্ছে। ওদের টার্গেট গ্রুপ মানুষ। তার উপর আসিফের মেধা তাদের একে তো বিস্মিত করেছেই তার উপর ভীষণ রাগেরও কারণ হয়েছে তাদের কাজে ক্ষতি করার জন্য। অথচ আসিফ এসবের কিছুই জানে না। তার পিছনে যে ওরা লেগেছে তা সে সূত্র মিলাতে গিয়ে অনুমান করেছে। তার মনে পড়ে সেদিনের সেই চিপা দিয়ে যাওয়ার ঘটনা। ওরা আসলে কে? হঠাৎ নিজেকে নার্ভাস মনে হয়। একধরনের শঙ্কা তার উপর ভর করে। আসিফ ঘাবড়ে যায়।
কিন্তু কেন! আসিফ জানতে চায় এর উত্তর। (চলবে)