পথিক মোস্তফা

০৭.

আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা. সবসময় বৈরাগ্যবাদের বিরোধী ছিলেন। এ পৃথিবীর সকল প্রকার বৈধ আমোদ-আহ্লাদ, বিয়ে-শাদির মধ্য দিয়েই জীবনের সৌন্দর্যকে বিকশিত করাই একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষের কাজ। প্রিয় নবী সা. তাঁর সাহাবীদেরকে (রা.) নির্দেশ প্রদান করতেন বিয়ে করতে এবং তাঁদের স্ত্রীদের হক আদায় করতে। বৈরাগ্যবাদ তিনি পছন্দ করতেন না। বৈরাগ্যবাদ সম্পর্কে মহান আল্লাহর বাণী হলো-‘আর বৈরাগ্যবাদ-তা তারা নিজেরাই নতুনভাবে চালু করেছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়। আমি তাদের উপর এ বিধান অপরিহার্য করিনি।’ আর রাসূল সা. বলেনÑ ‘আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি আমি বেশি আনুগত্যশীল; অথচ আমি রোজা পালন করি, আবার রোজা থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং ঘুমাই ও বিয়ে-শাদী করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ ভাব পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়।’ কবি নয়ন আহমেদের কবিতায়ও এমনই ইঙ্গিতময়তা প্রকাশিত। তিনি তাঁর কবিতায় জীবন-সংসারের সবকিছু ছেড়ে দিয়ে গাছতলায় গিয়ে ধ্যানমগ্ন হয়ে নির্বাণ লাভের ব্রত থেকে সরে এসে এ সংসারের মাঝেই মানুষের প্রেম-ভালোবাসায়ই বাঁচার মধ্যেই সার্থকতা খুঁজে পান। তাইতো তিনি বলেন-

আমি একটু দৌঁড়োতে চেয়েছিলাম খরগোশের মতো।

মহামতি গৌতম বললেন, “বন্ধু, এই বৃক্ষতলে কিছুটা জিরিয়ে নিন।’

আমি দীর্ঘলাফ বন্ধ করে থামলাম তার কাছে।

তিনি ধ্যানমগ্ন হলেন।

আর উঠলেন না।

আমি তার এই নির্বাণ সমর্থন করিনি।

দৌড়াতে দৌড়াতে আমি আবার এলাম লোকালয়ে।

দেখলামÑমানুষেরা শোকে অধীর হয় আর আনন্দে উচ্ছল।

আমি শোক ও আনন্দকে মাসতুতো বোনের মতোন

নিকট সম্পর্ক বানালাম।

তারপর কাটলো আরো কিছুদিন।

আমিও নির্বাণপ্রাপ্ত হলাম;

দৌড়োলাম কচ্ছপের মতো।

কচ্ছপ জানে-দেখতে দেখতে যেতে হয়।

...........................................

আমি যাবো ঘাসের হৃদয় দেখতে দেখতে

মানুষের প্রেম ও ভালোবাসার নিবিড় সান্নিধ্যে।

কবি নয়ন আহমেদ এগিয়ে চলেন জীবনের বিচিত্র সুখ, আনন্দ, ভালোবাসা আর দুঃখবিলাসী নদীতে সাঁতার কেটে। তিনি ভালোবাসেন মানুষকে; মানুষের বেড়ে ওঠার মতো ভালোবাসা চাষ করেন কবি। তিনি মহান রবের করুণা আর অপার মায়াময় মহাসমুদ্র থেকে মানুষের জন্য তুলে আনেন আজলা-আজলা আশা-বিশ্বাস। তিনি হতাশার দোকান খুলে বসেন, কিন্তু অসুখী মানুষের তীব্র আনাগোনা দেখে কবি ব্যথিত হন। অসুখী মানুষের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি, যা কখনো সারবে না। সে মানুষের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের অন্তরে আছে ব্যাধি, অতঃপর আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যেবাদী।’ কবি নিজেও এ ব্যাধিযুক্ত হতাশার জীবন থেকে ফিরে আসেন-

একদিন আমি দোকান খুলে বসি।

বেচি আর্তনাদ;

তীব্র অসুখ।

দেখি, অসুখী মানুষের প্রতিকৃতি।

শূন্যতার বিশাল গহ্বর।

আহা, আমি কাফের হয়ে গেছি!

একদিন তওবা পড়ে আমি রোদের ব্যবসা করি।

বেচি আশা ও আশ্বাস;

অবিনাশী প্রেম।

দেখি, মানুষের অপার সম্ভাবনা।

(চলবে)