ওমর বিশ্বাস
আসিফ কিছুই জানে না। তার জানার কোনো আগ্রহ ছিল না। রিফাতে কথা তার মনে পড়ে। সে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে আসলে কিছু ঘটছে কি? ওই লালবাতির সাথে এর কোনো সম্পর্ক আছে কি? আসিফের এখন ভাবনা অনেক। যত বেশি সে চিন্তা করতে যায় তার কোনোকিছুই মাথায় যায় না। খেই হারিয়ে ফেলে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেছে সে জানে না। যথারীতি সকালে ওঠে। রোজকার মতো রুটিন কাজ শেষ করে স্কুলের যাওয়ার জন্য বাসায় থেকে বের হয়েছে। গলির মাথায় দোকানটার সামনে একটা জটলা দেখা যাচ্ছে। ওদিকেও তার মন নাই। তবু কি মনে করে অন্যমনস্ক হয়ে থামে জটলার কাছে গিয়ে। একজন মুরুব্বী কথা বলছে। তাকে ঘিরে আছে অনেকে। কেউ কেউ মুরুব্বীকে প্রশ্ন করছে আর তিনি উত্তর দিচ্ছেন। কি নিয়ে কথা হচ্ছে জানতে আসিফ ভিড়ের পিছন থেকে কল্লা উঁচু করে লোকটার দিকে তাকানোর চেষ্টা করে।
প্রথমে লোকটাকে আগে এখানে দেখেছে বলে মনে পড়ল না। একটু পর মনে হয়েছে তার হুঁশ হলো এই লোককে সে আসলে দেখেছে। হ্যাঁ, মনে পড়ছে, এই দোকানের পিছনেই বাসা। আরে ইনি তো রশিদ কাকা। সে চেনে মানে ভালো করেই চেনে। অথচ তার কেন মনে হচ্ছে সে রশিদ কাকাকে আগে কখনো দেখেনি। তাহলে সে কি বেখেয়ালি হয়ে পড়ছে?
আসিফ বুঝতে পারে না তার মনের ভিতর অন্য একটা বিষয় বাসা বাঁধতে শুরু করেছে।
আসিফের শরীরে একটা বিদ্যুৎ খেলে যায়। সে নিজেই অবাক হয়। ইনি তো সত্যি রশিদ কাকা। সে চিনতে পারে উনাকে। আসিফ বুঝতে পারে সে কেমন যেন একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে। সে কান খাড়া করে। সে কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করে।
আমি বুঝলাম না তারা কোথা থেকে আসলো? রশিদ কাকা বলছেন। দেখলাম কয়েকজন। হঠাৎ দেখি আমার সামনে মাত্র দুজন। বাকিরা গেলো কোথায়? নাকি আমি ভুল দেখলাম?
একথাগুলো শুনতে লোকজন তাকে ঘিরে ধরেছে। নানান রকম প্রশ্ন তাকে শুনতে হচ্ছে। একজন তো বলেই বসল, আপনে কেন গিয়েছিলেন? তিনি খুব কষ্টে হজম করে যান। কোনো উত্তর দেন না। তিনি ভাবেন, তিনি তো যাবেনই। তিনি যে রোজ মনিংওয়ার্ক করতে বের হন।
রশিদ কাকা সকালে নামাজ শেষে হাঁটতে বের হয়েছেন। আজ তিনি একাই ছিলেন। হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে চলে গেছেন। আবহাওয়াটা বৃষ্টি হওয়াতে ঠান্ডা ঠান্ডা। তিনি ধরে নিয়েছেন আজকে আর কেউ আসবে না। কালও তিনি একাই হেঁটেছেন। গত দুইদিন ভোরে বৃষ্টি হওয়াতে তার সঙ্গীরা কেউ বের হননি। তার হাঁটতে ভালোই লাগছিল। হাঁটতে হাঁটতে তিনি ওই মাঠটার কাছে গিয়েছেন। সাধারণত প্রতিদিন মাঠটার আরেকটু আগে থেকে ফিরে আসেন। আজ তিনি আরো সামনের দিকে যাচ্ছেন। তার সামনে পিছনে কেউ ছিল না। হঠাৎ কাউকে দেখলেন বলে মনে হলো। সংখ্যায় কয়েকজন হবে? অবচেতন মনে তিনি দেখছিলেন। একটু দৃষ্টি ভালো করার চেষ্টা করলেন। তিনি কয়েকজন দেখেছেন। কই তারা এখন? এই তো মনে হলো দেখলেন সামনে দিয়ে আসতে। তার খটকা লাগলো। ভীষণ অবাক হলেন? ভালো করে খেয়াল করে দেখেন দুজন লোক হাঁটতে হাঁটতে উল্টা দিক থেকে আসছে। উনার খটকা বাড়লো। অন্যরা গেলো কই?
তাহলে কি তিনি ভুল কিছু দেখেছেন? না এখন ভুল দেখছেন?
এমনিভাবে তিনি কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন আবার কোনোটার দিচ্ছেন না।
এই কথাগুলো তিনি এতক্ষণ ধরে বলছেন। অনেক কথাই বারবার তাকে বলতে হচ্ছে। যেই নতুন আসে তাকেই আবার নতুন করে বলতে হয়। নতুন জন আবার পুরাতন প্রশ্ন করে। আসিফ কোনো কথা বলে না। সে শুধু শুনে যায়। তিনি বলছেন, গড়নে গাড়নে কেমন জানি? গায়ের রং প্রায় এক। মনে হলো চলাফেরায় একটু টানটান ভাব আছে।
শেষে তিনি বলেছিলেন, ওই দুইজনকে দেখে তার কেমন যেন লেগেছিল। আসলে কেমনটা যে কিরকম তা তিনি স্পষ্ট করে বুঝতেও পারছেন না কাউকে বোঝাতেও পারছেন না। ওইখানেই ঝামেলা। তাই তাকে বারবার এই বিষয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আসিফ ভাবে, কোথাও একটা খটকা নিশ্চয় লেগেছে উনার। কিন্তু কোথায়?
(চলবে)