ওমর বিশ্বাস
এদের কারোরই নিজের মোবাইল সেট নাই শুধু রাজিবের ছাড়া। ওর বাসা থেকে ওকে মোবাইল ফোন দিয়েছে। সাথে একটা দামি সেটও। ওরা এবার ঠিক করেছে যে যখনই বাসায় থাকবে একটা একটা করে মোবাইল সেট নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তবে পড়ায় যেন কারো কোনো সমস্যা না হয়। কারোর যদি সুযোগ থাকে দুটা বা তিনটা সেট ব্যবহার করবে। কেউ যেন পড়ার ক্ষতির জন্য বাসায় বকা না শোনে। এব্যাপারে তারা নিজেরা একমত।
বিপত্তি এর আগেই ঘটে গেছে। আসিফ কিছুদিন আগে এরকমভাবে একটা সংযোগ যেদিন প্রথমবারের মতো পেয়েছিল সেদিনই। সেদিন একটা ‘টু’ শব্দ শুনেছিল আসিফ তার মোবাইলে। এলিয়েনরা সেদিন আসিফকে লাইনে পেয়ে যায়। ওর সাথে সরাসরি সংযোগ ঘটেছে। ওরা সেদিন দারুণ উৎফুল্ল হয়েছিল। অবশেষে তাদের টার্গেটে তাদের কাছে ধরা পড়েছে। একটা অন্তত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সফলতার সাথে অর্জন করতে পেরেছে তারা এতোদিন পর। এতে তাদের একটা বড় দুশ্চিন্তার অবসান হলো।
ওই সংযোগের সমস্ত খুঁটিনাটি তাদের জানতে হবে। এলিয়েনরা সেই ছিদ্র পথ ধরে বাতাসের গতির সাথে তালমিলিয়ে তরঙ্গ নিয়ে কাজ করতে করতে বের করে ফেলে অপর প্রান্ত। ধরা পড়ে আসিফ। এতোদিন কোথায় এই সংযোগ ছিল তা তাদের হিসাবের বাইরে ছিল। এখন এই সংযোগ তাদের হিসাবের নতুন অংক করাচ্ছে। অনেক দিন লেগেছিল কোথা থেকে নিরাপত্তাবলয়ে এই ছিদ্র হয়েছে বের করতে। কোনো কূলকিনারা পাওয়া যাচ্ছিল না। তারা তো জানে না আসিফের কাজটা ছিল দৈব। আসিফ নিজেও জানে না। আসিফ জানে না তার জন্য ওদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়ে গেছে।
বহু চেষ্টার পর তারা বের করতে পেরেছে রহস্য। কিন্তু এতোদিন কোথাও কিছু পাওয়া যাচ্ছিল না। এরকম হওয়ারও কথা না। একবার অপরপ্রান্তের কাছাকাছি আসে আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরকম যতবার এসেছে ততবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আর পাওয়া যায় না। সবশেষে যখন পাওয়া গেলো মিলে গেল আসিফের জানালা বরাবর। সবগুলো রেখা সোজা সিগন্যাল দিলো একসাথে নিখুঁতভাবে। তারা ধরে নিলো ওখানেই কিছু আছে। এর আগেই ওদের হেডকোয়ার্টার থেকে জানানো হয়েছিল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মিশন অব্যাহত থাকবে। তারা সেদিন টানা ষাটঘন্টা অবস্থান করে। একনাগাড়ে কাজ করে তারা আসিফের মোবাইল সেটের সাথে সংযোগ ঘটাতে পেরেছে।
এলিয়েনরা অনবরত চেষ্টা চালিয়ে গেছে। আসিফরা যেদিন থেকে নিজেরা তাদের কাজ শুরু করে সেদিন থেকে এলিয়েনরা কয়েক দফা ওদের সংযোগের কাছাকাছি চলে এসেছিল। কিন্তু আসিফরা তো কৌতূহলবশত এলোমেলো কাজ করছিল। শেষমেষ ওভাবেই সংযোগ ঘটে তাদের সাথে আসিফের।
তারা আসিফের নাম যে আসিফ এবং সেই যে এই কাজ করেছে তা বের করে ফেলেছে। টানা ষাট ঘন্টা লেগেছে তাদের এই কাজে। এখন তারা দারুণ খুশি। সংকেত পাঠানো হয়েছে আসিফ টার্গেট।
তবে তাদের কোনো ধারণা নাই, আসিফ তাদের কথা শুনতে পায় কি না। এটা তারা এখনো বের করতে পারেনি। সেরকম কোনো ফিডব্যাক বা সিগন্যাল এখনো পায়নি। এটা নিয়ে কাজ চলছে। তাদের কাজে এখন দুটো বাধা। এগুলো একটার সাথে আরেকটা জড়িত। যদি আসিফ কিছু তথ্য তাদের কাছ থেকে জেনে যায় তাহলে সমস্যা। এটা তাদে জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। একই সঙ্গে অপমানজনক। এরজন্য প্রথমে ছিদ্র বন্ধ করতে হবে। সেক্ষেত্রে নতুন করে আবার বলয় তৈরি করতে হবে। সেটার জন্য অনেক সময় লাগবে। অন্যদিকে একবার ছিদ্র তৈরি হয়েছে নিশ্চয় একই কায়দায় বারবার ছিদ্র তৈরি হতে পারে যদি আসিফ সেটা করতে চায়। এটা নির্ভর করছে বাস্তবে আসিফ কতটা জেনে গেছে তাদের সম্বন্ধে তার উপর। সেটাও তাদের জন্য একটা সমস্যা। কিন্তু ছিদ্র বন্ধ করলে কিছু কাজের জন্য সমস্যা হবে। আসিফকে এখন থেকেই নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। না হলে সুযোগ মতো সে তাদের আরো বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। ভেসে যেতে পারে তাদের পরিকল্পনা। (চলবে)