॥ আলী আহমাদ মাবরুর ॥
বাংলাদেশে পতিত ফ্যাসিবাদী শাসক শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলটি কতটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ও বর্বর ছিল তা এদেশের মানুষ বিশেষ করে ভিকটিমরা হাড়ে হাড়ে বুঝেছে। কাউকে জীবন দিয়ে, কাউকে আপনজন হারিয়ে, কাউকে এতিম হয়ে, কাউকে বিধবা হয়ে কিংবা কাউকে শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ বা মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে এ অপশাসনের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে, হচ্ছে। এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে, পত্রিকায় বা মিডিয়ায় বহু ভিকটিমের বিবরণী প্রকাশিত হচ্ছে। তবে এ সবকিছুর বাইরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে বিশেষ করে জাতিসংঘের মতো একটি বিশ্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার একটি পর্যবেক্ষণ জরুরি ছিল। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রই শুধু নয়, জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংস্থাগুলোর সদস্যরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ প্রণীত বিভিন্ন আইন ও সনদেও সাক্ষরকারী দেশ। তাই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ আমলে যেসব অন্যায় হয়েছে বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছে তা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য জাতিসংঘের একটি অবজারভেশন বা প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
প্রত্যাশিত এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের হাইকমিশনারের অফিস, যা ওএইচসিএইচআর নামে পরিচিত। প্রতিবেদনের শুরুতেই খোলাসা করা হয় যে, বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের আমন্ত্রণে, বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মাদ ইউনুসের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ওএইচসিআর ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট ২০২৪ সালের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অপব্যবহারের বিষয়ে একটি স্বাধীন তথ্য অনুসন্ধানের তদন্ত পরিচালনা করেছে। একটানা প্রায় ৬ মাস কাজ করে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে যা গত বুধবার সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভা থেকে প্রকাশ করা হয়। রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন অনলাইনে ব্রিফিংয়ের আয়োজনও করেছিল।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় বলেন, গণবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে একটি পরিকল্পিত এবং সুসমন্বিত কৌশল হিসেবে এমন নৃশংস পদক্ষেপ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। বিক্ষোভ দমন করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাঁদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে। ওএইচসিএইচআর দাবি করেছে, তাদের হাতে এমন সব তথ্য রয়েছে যা ব্যাপকমাত্রার রাষ্ট্রীয় সহিংসতা, টার্গেটেড মার্ডার এবং শুট এ্যাট সাইটের উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। এ ঘটনাগুলো সবচেয়ে গুরুতর পর্যায়ের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল বলেও তারা জানান।
প্রতিবেদনে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের কারণ হিসেবে বলা হয়, বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল উচ্চ আদালতের সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। তবে ওএইচসিএইচআরের মতে, বাহ্যত এ কারণটি বলা হলেও গণবিক্ষোভের মূল কারণ ছিল ধ্বংসাত্মক ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থার ফলে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক বৈষম্য। ক্ষমতা ধরে রাখতে আওয়ামী সরকার এ বিক্ষোভ দমন করতে ধারাবাহিকভাবে আরও সহিংস পন্থা অবলম্বন করেছিল। যা শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্ব ইতিহাসেই নজীরবিহীন।
প্রতিবেদনটি সামনে আসায় সবচেয়ে ভালো যে বিষয়টি হলো, তা হচ্ছে এতদিন যেগুলো আওয়ামী বিরোধী বলয়ের রাজনৈতিক দল বা বুদ্ধিজীবীরা বলে এসেছেন এবার তা আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যারেটিভ ও ঐতিহাসিক নথি হিসেবে স্বীকৃত হলো। জাতিসংঘ প্রতিবেদন দেয়ার কারণে জুলাই বিপ্লবের সময়কালীন গণহত্যাকে ভবিষ্যতে আর কেউ বানোয়াট বা মনগড়া বলতে পারবে না। এর আগে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আওয়ামী লীগ পরিচালিত গণহত্যা বা বিচার বহির্ভুত হত্যা বা গুমের ঘটনাকে তৎকালীন সরকার ও প্রশাসন যেভাবে এড়িয়ে যেতে পেরেছিল এবার আর তা সম্ভব হবে না। কেননা, খোদ জাতিসংঘের ওএইচসিএইচআর আনুষ্ঠানিক তদন্ত পরবর্তী এ প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে যে, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বিক্ষোভে কয়েক হাজার মানুষ গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন, এর মধ্যে অনেকেই আবার স্থায়ীভাবে আজীবনের জন্য কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন।’
জাতিসংঘ আরো সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়েছে যে, বিক্ষোভ চলাকালে নিহতদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ মিলিটারি রাইফেলসে, ১২ শতাংশ শটগানের গুলিতে এবং ২ শতাংশ পিস্তলের গুলিতে প্রাণ হারান। এর মধ্যে মিলিটারি রাইফেলস হলো এমন ধরনের মারণাস্ত্র যা সশস্ত্র বাহিনী যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার করে। নিজ দেশের ভেতরে জনগণের বিরুদ্ধে এ ধরনের মারণাস্ত্র ব্যবহারের কোনো নজির সাম্প্রতিক ইতিহাসে নেই। এ ধরনের মারণাস্ত্রের ব্যবহারের অভিযোগ এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশনও তুলেছিল। তবে জাতিসংঘ বিষয়টি সামনে নিয়ে আসায় অভিযোগগুলো সত্য বলে প্রমাণিত হলো। জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহারের যে নজির আওয়ামী লীগ রেখে গেল তা বিশে^র রাজনৈতিক ইতিহাসে দলটিকে খুনী হিসেবেই স্থায়ী স্বীকৃতি দিয়ে যাবে।
ওএইচসিএইচআর-এর প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, যারা গণহত্যায় নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে ১২ শতাংশ ছিল শিশু। যদি মোট হতাহতের সংখ্যা ১৪শ ধরে নেই তাহলে জাতিসংঘ প্রতিবেদন অনুযায়ী শিশুর সংখ্যা ১৫০ এরও বেশি-যা একটি ভয়াবহ চিত্র। এ ছাড়া সে সময় ১১ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়েছিল। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দল প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, সিলেট ও গাজীপুর এই আট শহরে অনুসন্ধান চালিয়েছে বলে জানিয়েছে। মূলত যে শহরগুলোতে বেশি মাত্রায় বিক্ষোভ হয়েছিল, সেসব স্থানে সরেজমিন কাজ করে জাতিসংঘের দলটি। তারা ২৬৬ জনের বেশি ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছে।
রিপোর্টে ওএইচসিএইচআর বলছে, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সাবেক সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাঠামো, আওয়ামী লীগের সহিংস গোষ্ঠীগুলোর সাথে একত্রিত হয়ে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে পদ্ধতিগতভাবে জড়িয়ে পড়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে কয়েকশ’ বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে মারাত্মক শারীরিক নিপীড়ন ও বলপ্রয়োগ, ব্যাপকহারে নির্বিচারে গ্রেফতার, আটক ও নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন।
রিপোর্টে ভয়ংকর কিছু তথ্যও বেরিয়ে এসেছে। বলা হয়েছে, বিজিবি, র্যাব, ডিজিএফআই, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সরাসরি অপারেশন বিষয়ে আদেশ ও অন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যা তাদের বিক্ষোভকারী ও অন্য বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত করেছিল। এর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও নির্বিচারে গ্রেফতারের মতো ঘটনাও ছিল।’ এক্ষেত্রে রিপোর্টে দুটো বৈঠকের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে একটি হয়েছিল ১৮ জুলাই সন্ধ্যায়। সেদিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি ‘কোর কমিটি’র বৈঠক হয়। বৈঠকে পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির প্রধান ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিজিবির কমান্ডারকে আরও বেশি ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের নির্দেশ দেন। এর পরদিন অর্থাৎ ১৯ জুলাই অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিক্ষোভ দমনের জন্য বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে বলেছিলেন এবং বিশেষভাবে ‘বিক্ষোভের মূল হোতা, গ-গোল সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তার, হত্যা এমনকী হত্যার পর লাশ লুকিয়ে রাখা’র নির্দেশ দিয়েছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকেই প্রতিটি ঘটনাই ঘটেছে যার ভিডিও চিত্রও তদন্তকারীদের হাতে রয়েছে। তাই শেখ হাসিনাকে উস্কানি, প্ররোচনা ও সম্পৃক্ততার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এবং অবৈধ উপায়ে বিক্ষোভকারীদের হত্যা বা পঙ্গু করে দেওয়ার কৌশল নিয়েছিল। এমনকি কিছু ঘটনায় লোকজনকে খুব কাছ থেকে গুলি করার বা শুট এ্যাট সাইটেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন তথ্যানুসন্ধানের সময় বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এই সংস্থাকে পুলিশ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের ৯৫ জন সদস্যের নাম এবং তাঁদের ভূমিকা কী ছিল, তার বিস্তারিত সরবরাহ করেছে পুলিশ। ওই ব্যক্তিরা বিক্ষোভের সময় সহিংস হামলায় ব্যবহারের জন্য দলীয় লোকজনকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন। অস্ত্র সরবরাহ যাঁরা করেছিলেন, তাদের মধ্যে ১০ জন তৎকালীন সংসদ সদস্য, ১৪ জন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, ১৬ জন যুবলীগ নেতা, ১৬ জন ছাত্রলীগ নেতা এবং ৭ জন পুলিশ সদস্য।
রিপোর্টে বলা হয়, পুলিশ ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর দ্বারা শিশুরা টার্গেট কিলিং -এর শিকার হয়েছে। এছাড়া অমানবিক পরিবেশে আটক, নির্যাতন ও বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর আচরণের শিকার হয়েছে। নারী ও মেয়ে শিশুরাও নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছে। ‘বিশেষত শুরুর দিকে বিক্ষোভের সম্মুখসারিতে থাকা নারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মারাত্মকভাবে আক্রমণ করেছে। নারীরা যৌন ও লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ছিল লিঙ্গ-ভিত্তিক শারীরিক সহিংসতা ও ধর্ষণের হুমকি। এমনকী কয়েকটি ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে।’
গোয়েন্দা বাহিনীগুলো শিশুসহ নির্বিচারে আটক, গুম, নির্যাতন, তথ্য বের করা, স্বীকারোক্তি আদায়ের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত ছিল। আহতদের চিকিৎসা পেতে বাধা, হাসপাতালে কর্মরত এবং ভর্তি থাকা আহতদের ভয়ভীতি দেখানোর মাধ্যমেও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গণমাধ্যমকে পুরো সত্য প্রকাশে বাধা দিয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য এবং ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর নিশ্চিত হয়েছে যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একটি সম্প্রসারিত দল পুলিশের সাথে যৌথভাবে বা ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। তারা বিক্ষোভ দমনের জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে ব্যাপকভাবে বেআইনি সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছিল। অভিযান শুরুর আগেই সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পুলিশের সাথে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল অথবা পুলিশ ফোর্সের পেছনে থেকে আক্রমণে অংশ নিয়েছিল। এছাড়া পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও বিভিন্ন জায়গায় লোকজনকে থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছিল, বিক্ষোভকারীদের আটক করেছিল এবং সংগঠিত ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছিল।
প্রতিবেদনে আবু সাঈদেও শাহাদাতের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, আবু সাঈদকে কমপক্ষে দুইবার শটগানের ধাতব গুলি দিয়ে প্রায় ১৪ মিটার দূর থেকে গুলি করা হয়। আবু সাঈদ পুলিশের পরিকল্পিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সর্বশেষ শেখ হাসিনা ভারত থেকে যে টেলিগ্রাম ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে তিনি আবু সাইদের ভাষণকে এআই নির্মিত বলে দাবি করেছিলেন। জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার ঐ মিথ্যাচারও খারিজ হয়ে গেল।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, জাতিসংঘের এ প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্য দিয়ে আওয়ামী কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হয়েছে। শুধু রাজনৈতিকভাবেই নয়, কালচারালি আওয়ামী লীগের অধ্যায় শেষ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো কী ভূমিকা পালন করেন। সময় এসেছে, এ প্রতিবেদনের সূত্র ধরে যে এভিডেন্সগুলো সামনে এসেছে, সেগুলো কাজে লাগিয়ে একের পর এক আওয়ামী বিরোধী ন্যারেটিভ তৈরি করার। আওয়ামী লীগ কত বিভৎস দানব ছিল, তা গণমানুষের সামনে তুলে ধরার এবং নিরন্তর সে কাজটি করে যাওয়ার। এবারও যদি আমরা অহেতুক বিষয় নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকি, নিজেরা নিজেরা বিতর্কে লিপ্ত হই কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য সুশীল ও তথাকথিত মানবিক আচরণ করি, কিংবা জরুরি কাজ না করে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে সফটনেস দেখাই, তাহলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। সুযোগ বারবার আসে না। কিন্তু আল্লাহ পাক দয়া করে আমাদের বারবারই সুযোগ দিচ্ছেন। আমরা যেন এর হক আদায় করতে পারি। এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল সকল মহলের সচেতন ভূমিকা কাম্য।