ফিলিস্তিনের গাজায় এখন মানবেতর পরিস্থিতি বিদ্যমান। সেখানে একদিকে খাদ্যাভাব অন্যদিকে ইসরাইলী সেনাদের হামলা ও পৈশাচিক হত্যা চলমান। যুদ্ধবিরতির সব সম্ভাবনাকে নাকচ করে এসব চলছে। আর তাদের আরো ভয়ংকর পরিকল্পনার খবর দৈনিক সংগ্রাসহ পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে।

এতে বলা হয়, ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর গাজা সিটিকে দখলে নেয়ার পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। দেশটির নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে, যার মাধ্যমে ইসরাইলী বাহিনীকে গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রস্তুতি শুরুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত ৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও অ্যাক্সিওস-এর প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি। সূত্র জানায়, ইসরাইলের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা নেতানিয়াহুর ‘হামাস পরাজয়’ পরিকল্পনাকে অনুমোদন করেছে। এর অংশ হিসেবে আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে গাজা শহর থেকে বেসামরিক ফিলিস্তিনীদের সরিয়ে নেয়া হবে। এরপর হামাস যোদ্ধাদের ঘিরে রেখে সেখানে স্থল অভিযানে যাবে ইসরাইলী সেনাবাহিনী। গাজা দখলের প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এটি ইসরাইলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এমন মন্তব্য নেতানিয়াহুর পরিকল্পনায় একপ্রকার কূটনৈতিক সমর্থন হিসেবেই ধরা হচ্ছে। তবে ইসরাইলী সেনাপ্রধান লে: জেনারেল ইয়ায়েল জামির গাজা দখলের বিষয়ে ভিন্নমত দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা একটা ভুল পদক্ষেপ হবে। পুরো গাজা দখল করলে আমাদের সেনাবাহিনীকে সেখানে স্থায়ীভাবে থাকতে হবে, যা আসলে হবে একটি ফাঁদের মতো। কারণ হামাস এখনও সম্পূর্ণ দুর্বল হয়নি। তাছাড়া হামাসের কব্জায় এখনও যেসব পণবন্দি আছেন, তাদের ঝুঁকিও বেড়ে যাবে। অন্যদিকে গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলের সম্ভাব্য সামরিক নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া। গত ৮ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং এক বিবৃতিতে জানান, গাজার বর্তমান পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় গাজা দখলের মতো পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে। তিনি বলেন, “স্থায়ীভাবে মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা, নিরবচ্ছিন্নভাবে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাস কর্তৃক আটক জিম্মিদের মুক্তির জন্য অস্ট্রেলিয়া বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছে।’’ ইসরাইলের এ পরিকল্পনা শুধু ভয়ংকরই নয় সকল আন্তর্জাাতিক রীতি নীতির চরম লংঘন। আমরা মনে করি অস্ট্রেলিয়া যা বলেছে তা যথার্থ।

একই দিনে অপর খবরে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বর্বর ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় প্রাণহানি বাড়ছেই। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলী হামলায় ২২ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। অপুষ্টিজনিত কারণে আরও দুই শিশু মারা গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে আরও চার ফিলিস্তিনী মারা গেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনাহারজনিত প্রাণহানি বেড়ে ১৯৭ জনে দাঁড়িয়েছে, এর মধ্যে ৯৬ জনই শিশু। জাতিসংঘ বলছে, ইসরাইলের অবরোধের কারণে গাজার শতাধিক অপরিণত শিশুর জীবন এখন বিপদের মুখে। ইউরোপীয় কমিশনের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তেরেসা রিবেরা বলেন, এ যুদ্ধ অনেকাংশেই গণহত্যার সংজ্ঞায় রূপ নিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলী আগ্রাসন শুরু হয়। সে থেকে এ পর্যন্ত ৬১ হাজার ১৫৮ ফিলিস্তিনীর প্রাণ গেছে।

আমরা মনে করি জাতিসংঘ ও বিশ্ব সম্প্রদায়কে এই ভয়ংকর পরিকল্পনা থেকে ইসরাইলকে সরিয়ে আনা ও সেখানকার শিশু ও নারীসহ অসহায় নিরপরাধ লোকগুলোর প্রাণ বাঁচাতে যথাযোগ্য চেষ্টা চালাতে হবে। স্থায়ীভাবে মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার ইসরাইলের এ অপকর্ম চলতে দেয়া উচিৎ নয়। আমরা মনে করি যে কোন মূল্যে একটি যুদ্ধ বিরতিতে ইসরাইলকে সম্মত করানোই হবে একটি বড় কাজ। যুদ্ধ বিরতি আলোচনায় জড়িত সকল দেশের প্রতি এ বিষয়ে উদাত্ত আহ্বান জানাই।