ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেতের একটি পোস্ট আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে তিনি বলেন, আমেরিকায় ইসরাইলের সম্মান ধসে পড়েছে। আমেরিকার চোখে ইসরাইল এখন ‘অচ্ছুত’ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ১০ দিন আমেরিকা সফরের পর দেশে ফিরে এসে এমন মন্তব্য করলেন ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, নাফতালি বেনেত ২০২১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বেনেত তাঁর পোস্টে বলেন, সম্প্রতি আমেরিকা সফরে গিয়ে তিনি ইহুদিবিদ্বেষের ভয়াবহ মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে এসেছেন। ইসরাইলি সরকারের কর্মকাণ্ডে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং তারা আমেরিকার সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক বিনষ্ট করেছে। তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় সব সমস্যা, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য আমাদের দায়ী করা হচ্ছে। দুই রাজনৈতিক পক্ষ থেকেই এ দায় দেওয়া হচ্ছে। বেনেত বলেন, তাঁর জীবনে আমেরিকায় এমন ইহুদিবিদ্বেষ দেখেননি। ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দু’দলের পক্ষ থেকেই ইসরাইলের প্রতি সমর্থন হ্রাস পাচ্ছে।

সাবেক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ আন্দোলনের সদস্যরাও ইসরাইলের সাথে দূরত্ব বজায় রাখছে। আমেরিকায় ইসরাইলের বন্ধুরাও তেলআবিবের পক্ষাবলম্বন করতে গিয়ে কঠিন বিরোধিতার মুখে পড়ছে। তবে এর জন্য গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা নয়, বরং ইসরাইলের পক্ষে নিখুঁত প্রচার-প্রচারণা যন্ত্র স্থাপনে ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন বেনেত। ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনেত এবার আমেরিকা সফরে গিয়ে উপলব্ধি করলেন ইহুদী বিদ্বেষের চিত্র। আমেরিকানদের চোখে ইসরাইল এখন অচ্ছুত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমেরিকার সব সমস্যা বিশেষ করে অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করা হচ্ছে। দুই রাজনৈতিক দল থেকেই এ দায় দেয়া হচ্ছে। তবে আমরা মনে করি, সাবেক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর এমন উপলব্ধি বহু আগেই হওয়া প্রয়োজন ছিল। তিনি চোখ খোলা রাখলে এ বিষয়টিও উপলব্ধি করতে পারবেন যে, শুধু আমেরিকানদের চোখে নয়, বিশ্ববাসীর চোখেও ইসরাইল এখন একটি অচ্ছুত রাষ্ট্র। আরো লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনেতের চোখের কালো পর্দা এখনও সরে যায়নি, নাহলে তিনি কি করে বলেন, আমেরিকায় ইসরাইল বিরোধিতার কারণ গাজায় গণহত্যা নয়; বরং ইসরাইলের পক্ষে নিখুঁত প্রচার-প্রচারণার যন্ত্র স্থাপনের ব্যর্থতাই এজন্য দায়ী। বেনেতের এই বিশ্লেষণ মোটেও যৌক্তিক নয়।

ইসরাইলের বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতি বেনেতের বক্তব্যকে নাকচ করে দেয়। গাজায় চলমান নৃশংসতা বন্ধ না করলে ইসরাইলের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসরাইলের ৩১ জন বিশিষ্ট নাগরিক। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার বৃটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানকে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান তাঁরা। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন শিল্পী, কবি, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, সাংবাদিক ও অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা। বিবৃতিতে ইসরাইলের এই বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, ‘গাজার বাসিন্দাদের অনাহারে রেখে মেরে ফেলতে চাইছে ইসরাইল। পাশাপাশি উপত্যকাটির লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোর করে গাজা থেকে সরিয়ে দেয়ার কথা ভাবছে। গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর এ নৃশংসতা বন্ধ না হলে এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর না করলে ইসরাইলের উপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।’ ইসরাইলের বিশিষ্ট নাগরকিদের বক্তব্য থেকে উপলব্ধি করা যায় ইসরাইল সরকারের নৃশংসতার চিত্র। এত পাপের পর ইসরাইল পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে কেমন করে, বরং অচ্ছুত রাষ্ট্র হিসেবেই ইসরাইলকে এখন বিবেচনা করছে বিশ্ববাসী। এখনও কি বোধোদয় ঘটবে না নেতানিয়াহু সরকারের? পাপের পথ পরিহার করে ন্যায়ের পথে ফিরে না আসলে কর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করতে হবে ইসরাইলকে।