॥ জসিম উদ্দিন মনছুরি ॥
আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের জনগণ ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে তুমুল আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। চায়ের টেবিল থেকে ঘরের আড্ডায় পর্যন্ত আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সম্পন্ন করার। রাজনৈতিক দলগুলীও ইতোমধ্যে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী অনুমোদন শুরু করেছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রাচীন রীতি নীতি বাদ দিয়ে নতুনদের জয়যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলীর মধ্যেও ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিজেদের দল থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। ভোটারদের কাছে গিয়ে তারা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে দলীয় ইশতেহার বাস্তবায়ন ও সরকার গঠনের পর তাদের কর্মপরিকল্পনা ব্যক্ত করছেন। সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে সবখানেই এখন নির্বাচনী আমেজ। অনেক আগে থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিজেদের প্রার্থী চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে রেখেছেন। নির্বাচিত প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিও ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭ আসনে নিজেদের প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বঞ্চিত প্রার্থীদের মধ্যে হতাশার জের ধরে বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামের আলোচিত নেতা আসলাম চৌধুরী মনোনয়ন না পাওয়ায় তার কর্মী সমর্থকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে ব্যাপক গাড়ি ভাঙচুর করে।
এছাড়া বিভিন্ন স্থানে মারামারির খবরও চাউর হচ্ছে। চট্টগ্রামের বায়েজিদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এরশাদুল্লাহর গণসংযোগে বিএনপি’র দু’গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলীতে একজন নিহত এবং এরশাদুল্লাহ গুলীবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। বিএনপি’র একাধিক প্রার্থী নমিনেশন পাওয়ার আশায় দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। ফাইনালি ২৩৭ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেন বিএনপি। মনোনয়ন বঞ্চিতরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ফলে শুরু হয়েছে দলীয় কোন্দল ও অন্তর্দ্বন্দ্ব। এনসিপি শাপলা কলি নিবন্ধন পাওয়ায় এনসিপিও নিজেদের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছেন। রাজনীতির মাঠে এনসিপি সম্পূর্ণ নতুন দল হওয়ায় ভোটযুদ্ধে এনসিপির প্রভাব তেমন একটা না থাকলেও তারাও রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছে। ভোট যুদ্ধে মূলত বাংলাদেশের রাজনীতি দু’ধারায় বিভক্ত বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর বাংলাদেশে মূলত বড় রাজনৈতিক দল রয়েছে বিএনপি ও জামায়াত।
ঐক্যমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে আলাপ-আলোচনা করে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও গণভোট নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মতানৈক্য সুস্পষ্ট হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ৮টি সমমনা ইসলামী দল নির্বাচনের আগে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজনের জন্য সরকারকে চাপ দিয়ে আসছে। অন্যদিকে বিএনপির দাবি গণভোট ও নির্বাচন একই সাথে হওয়ার। অন্তর্বর্তী সরকার গণভোট কখন হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত এখনো দেননি। নির্বাচনের আগে নভেম্বরে গণভোটের বিষয়ে অনড় রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ঘোষণা দিয়েছেন তারা নির্বাচনের আগেই নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আদায় করে ছাড়বেন। গণমাধ্যম প্রচারণায় ইতোপূর্বে দেখা গেছে বিএনপি জুলাই সনদকে না বলার জন্য প্রচারণা চালায়। জামায়াতে ইসলামীসহ সমমানা দলগুলো জুলাই সনদকে হ্যাঁ বলার জন্য জোরালো অবস্থান নেন। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে প্রায় ৭১ লাখ প্লাস জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে মত দিয়েছেন। ১৮ লাখ প্লাস জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না করার পক্ষে মত দিয়েছেন। সাম্প্রতিক ডাকসু থেকে রাকসু নির্বাচনে ছাত্র শিবিরের কাছে বিএনপি’র ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের চরম ভরাডুবি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের উশৃঙ্খল আচরণ, ক্ষমতার দাপট, চাঁদাবাজি, ঠেন্ডারবাজি, মারামারি ও নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বকে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জামায়াতে ইসলামীসহ সমমানা দলগুলো লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য সরকারকে দাবি জানিয়ে আসছেন।
বিএনপি’র দাবি কয়েকজন উপদেষ্টা জামায়াতের হয়ে কাজ করছেন। জামায়াতে ইসলামীও দাবি করছেন কয়েকজন উপদেষ্টা একটি নির্দিষ্ট দলের হয়ে কাজ করছে। বিএনপি দু’জন ছাত্র উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টাদের নাম বললেও জামায়াতে ইসলামী উপদেষ্টাদের নাম জনসমক্ষে বলেন নি। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এই পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রাণহানি হয়েছে প্রায় ২৮১জন ব্যক্তির। এর মধ্যে ১৫৩ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে। ৪০ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইন-শৃঙ্খলার উন্নতির বিকল্প নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। সরকার চেষ্টা চালিয়ে আসলেও প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি, ডাকাতি, টেন্ডারবাজি দেদারসে চলছে। বিএনপি’র ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজির পরিমাণ বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। সরকারের দাবি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
নির্বাচনের মাঠে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনগণ কোন দলকে বেছে নেয় দেখার বিষয়। স্বাধীন মত প্রকাশে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার। ১৫ বছর নির্বাচনের নামে প্রহসন করে তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। দিনের ভোট রাতে করে জনগণকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করে জনগণের অধিকার হরণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাগ গ্রহণের পর থেকে জনগণের প্রত্যাশা ছিল একটি সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার হস্তান্তর। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারবার বলে আসছেন ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। তারা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করে সরকার গঠন করতে পারবেন। এ আশ্বাসে জনগণ কতটা বিশ্বাসী তা বলা মুশকিল। কারণ এখনো সংশ্লিষ্টদের মতে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। দিন দুপুরে পর্যন্ত হত্যাকা-ের মত মারাত্মক অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। অপরাধের সুষ্ঠু বিচার এবং অপরাধীরা যথাযথ শাস্তি না হওয়ায় অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান এজেন্ডা ছিলো জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া, যুদ্ধাহত জুলাই যোদ্ধাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, জুলাই যোদ্ধাদের অধিকার সংরক্ষণ করা এবং জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকা-ের যথাযথ বিচার সম্পন্ন করা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংঘঠিত হত্যা ও গুমের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচারসহ কয়েকটি বিচারের রায় অপেক্ষ্যমান রয়েছে। হত্যা ও গুমের সাথে জড়িত সেনা সদস্যদের পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর এডভোকেট তাজুল ইসলামের প্রসিকিউশন টিমের সাহসী উদ্যোগে এটুকু সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন বোদ্ধামহল।
ঐক্যমত্য কমিশনে পিআর পদ্ধতি নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। তবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এবং উচ্চকক্ষকে পিয়ারের বিধান রেখে নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবি সাংবিধানিকভাবে যদি নির্বাচন হয় তাহলে সেই নির্বাচন বৈধ হবে না। কেননা সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৯ সালে। মূলত গণঅভ্যুত্থানে গঠিত সরকার জনগণের অভিপ্রায়ে সরকার। সংবিধান যেহেতু জনগণের জন্য সুতরাং জনমতের প্রতিফলনে গণঅভুত্থান সংঘটিত হয়েছে সুতরাং জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়া যুক্তিযুক্ত। সাংবিধানিক সরকারের পতন হয়েছে সেহেতু সংবিধানও আপনা আপনি স্থগিত রয়েছে বলে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের অভিমত। জুলাই সনদকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি দল দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে। জুলাই সনদের স্বাক্ষর হয়েছে বটে। জুলাই সনদের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য গণভোটেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু গণভোট কখন হবে সে বিষয় নিয়ে বিভাজনে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলী। জুলাই সনদ বাস্তবায়নকারীদের দাবি গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদকে বাস্তবায়ন করা। জুলাই সনদের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা।
বিএনপির দাবি যেহেতু পরবর্তী সংসদে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে; সে দিক দিয়ে নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে। পরবর্তী সরকার এসে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে সংসদীয় পদ্ধতিতে। জামায়াতে ইসলামীর দাবি ছিলো, অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে অথবা সুপ্রিমকোর্টের রেফারেন্ডামের মাধ্যমে অথবা গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা। দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্য রাজনৈতিক দলগেুলার চরম অনৈক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার একই দিনে গণভোট ও সংসদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জামায়াত এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে জোরালোভাবে। এরপরেও নির্বাচনী প্রচারণা থেমে নেই। প্রার্থীরা নিজেদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী জোয়ারে কোন দল কতটা এগিয়ে সঠিক পরিসংখ্যান নিরূপণ করা সম্ভব না হলেও অনেক আগে থেকে জামায়াত নিজেদের পছন্দের প্রার্থী অনুমোদন দিয়েছেন। তারা ৩০০ আসনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। প্রায় সব আসনেই জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা দিনরাত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে যেহেতু জামায়াতে ইসলামীর তেমন একটা মন্দ রেকর্ড না থাকায় অনেক ভোটার জামায়াতে ইসলামীর প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা জামায়াতে ইসলামীকে বেছে নিচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামীও নিজেদের প্রচারণায় জোর দিয়ে বলছেন দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও সাম্যের সমাজ গঠনের অভিপ্রায়ের কথা।
স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী সুদৃঢ অবস্থানে রয়েছে। আগে নারী ভোটাররা জামায়াতে ইসলামীকে ভোট না দিলেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডাকসু থেকে রাকসু নির্বাচনে নারীরা ব্যাপকভাবে ছাত্রশিবিরকে সমর্থন দিয়েছেন। আগে মনে করা হতো হিন্দুরা এককভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে থাকে কিন্তু খুলনায় জামায়েত ইসলামীর হিন্দু সমাবেশে এ ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন। হিদু সম্প্রদায়ের লোকেরাও জমায়েত ইসলামীকে সমর্থন দিচ্ছেন। তাদের দুর্গোৎসবে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা নিরাপত্তা দেওয়ায় বড় ধরনের কোন সমস্যা ছাড়া তারা পূজা পালন করতে পেরেছেন। স্বাধীনতার পর বিগত বছরগুলোর মধ্যে ২০২৫ সালের দুর্গাপূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং বিশৃঙ্খল ঘটনা ছাড়া সম্পন্ন হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু শাখায় ব্যাপক হিন্দু সমর্থক রয়েছে বলে জামায়াতে ইসলামীর দাবি। দলটি নির্বাচনী মাঠে ভিন্ন রকমের কৌশলের পন্থা অবলম্বন করেছেন সেটা দেখা গেছে ডাকসু থেকে রাকসু নির্বাচনে তাদের প্যানেলের হিন্দু-বৌদ্ধ ও সংখ্যালঘু প্রার্থীও ছিল।
যার ফলে তারা পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হয়েছেন। জামায়াত আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনেও নিজেদের রক্ষণশীলতা পরিহার করে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী এমনকি যোগ্য হলে অমুসলিমদেরও নমিনেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। এতদিন ধরে তাদের রক্ষণশীলতার কারণে হাতেগোনা কর্মী সমর্থক ভোট দিত। এখন দেখা যাচ্ছে মাঠে ময়দানে জামায়াতে ইসলামীর প্রতি ব্যাপক গণজোয়ার। তাদের কর্মকা- দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার তাদের প্রতি ব্যাপক সমর্থন বেড়েছে। বিভিন্ন জরিপেও জামায়াতে ইসলামীর জনসমর্থন বাড়ার কথা প্রকাশিত হয়েছে। তাদের নেতারা কোন কথা বললে তার বিরোধিতা করার মতো কোনো নেতা কিংবা কর্মী থাকে না। ফলে তাদের অন্তর্দ্বন্দ্বের পরিবর্তে তারা সুসংঘটিত দল হিসেবে জনগণের কাছে পরিচিতি পেয়েছে। এদিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের মাঠে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বে বিভাজনের কারণে তাদের একক প্রার্থী নির্বাচন করা সম্ভব না হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে অনৈতিক কর্মকা-, বিশৃঙ্খল পরিবেশ, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির কারণে জনগণ তাদের কাছ থেকে বিমুখ হচ্ছে। এবার দেখার বিষয় আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে কোন দল কতটা আসন পায়। ইতোপূর্বে বিএনপি ১৯৯১ সালে জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। দ্বিতীয়বার ২০০১ সালে বিএনপি ও জামাত চারদলীয় জোট গঠন করে সরকার গঠন করে। এদিক বিবেচনা করলে বিএনপি কখনো এককভাবে সরকার গঠন করতে পারেনি।
এতদিন ধরে জামায়াতে ইসলামীর রক্ষণশীলতার কারণে তরুণ প্রজন্মের সাথে তাদের যোজন যোজন ফারাক ছিল। দলটি ঘোষণা করেছে তারা আসনসমঝোতার মাধ্যমে ইসলামি দলগুলো একটি বাক্সে দেওয়ার চিন্তাভাবনা কথা। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ ৮টি সমমানা দল আসন সমঝোতার ব্যাপারে ঐক্যমতের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলে সূত্রমতে জানা যায়। এবারের নির্বাচন বিএনপির জন্য এতটা সহজ হবে না। মনে করা হচ্ছে জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা। এ লড়াইয়ে কোন দল এগিয়ে থাকে তা শেষ সময় বলে দিবে। তবে তরুণ সমাজ যেভাবে জামায়াতে ইসলামীর প্রতি ঝুঁকে পড়েছে সেদিক বিবেচনা করলে নির্দ্বিধায় বলা যায় জমায়াতে ইসলামী নির্বাচনী মাঠে বিএনপি’র চেয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন, জনগণ যাতে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে। স্বাধীনভাবে নিজেদের মত প্রকাশের অধিকার পায়। জনগণের সমর্থনে এমন একটি সরকার গঠিত হোক দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হয়ে তারা জনগণের জন্য কাজ করবে। জমায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে সরকার হোক কিংবা বিএনপির নেতৃত্বে সরকার গঠন করা হোক না কেন।
লেখক : প্রাবন্ধিক।