যখন কলামটি লিখছি তখন রবিউল আউয়াল মাস চলছে। আরো নির্দিষ্ট করে বললে মাত্রই আমরা ১২ রবিউল আউয়াল পার করলাম। রবিউল আউয়াল নবীজি (সা.) এর জন্ম এবং ওফাত দিবসের স্মৃতি বিজড়িত মাস। এ সপ্তাহে অন্য কিছু লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মনে হলো, এ মুহূর্তে রাসূল (সা.)-কে নিয়েই কিছু লেখা উচিত। বিশেষ করে তার নেতৃত্বসুলভ ভূমিকাকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। কেননা আমরা এ মুহূর্তে এমন একটি পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি যখন জাতীয়ভাবে আমরা নানা ধরনের সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। নানা ধরনের শঙ্কা আমাদের গ্রাস করছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি অনুভূত হচ্ছে তাহলো জাতিকে দিক নির্দেশনা দেয়ার মতো একটি নেতৃত্ব। বিশ্বমানবতার ইতিহাসে রাসূল (সা.) নেতা হিসেবে যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন কিংবা রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকার অবস্থান থেকে তিনি যে ভূমিকা রেখে গেছেন তার দ্বিতীয় কোনো নজির নেই। হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।

মহানবী (সা.) এর আগমনের পূর্বে আরব সমাজ ছিল অরাজকতা, কুসংস্কার ও অবিচারে ভরপুর। ইতিহাসে এ সময়কে বলা হয় আইয়্যামে জাহেলিয়াত বা অজ্ঞতার যুগ। ধর্মীয় অবক্ষয়, সামাজিক বৈষম্য, নারী বিদ্বেষ, গোত্রীয় দ্বন্দ্ব এবং নৈতিক অধঃপতন ছিল চরম পর্যায়ে। এ পরিস্থিতিতে নবীজি (সা.) মানুষের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে আবির্ভূত হন। মহানবী (সা.) এর নেতৃত্ব ছিল আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক তিন-স্তরের। আধ্যাত্মিক দাওয়াতে তিনি মানুষকে তাওহিদের পথে আহ্বান করেন। সামাজিক নেতৃত্বের অংশ হিসেবে তিনি দাস, অনাথ, নারী ও গরিবদের অধিকার নিশ্চিত করেন। আর রাজনৈতিক নেতৃত্ব হিসেবে তিনি মদিনা সনদ প্রণয়ন করে বহুধর্মীয় ও বহুগোত্রীয় এবং বহুধা বিভক্ত সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) কেবল একজন ধর্মপ্রচারক ছিলেন না। তিনি ছিলেন পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রনায়ক। তাঁর নেতৃত্ব, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রশাসনিক নীতি, সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সামরিক কৌশল এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্মাণে দক্ষতা সবকিছু মিলে একটি আদর্শ রাষ্ট্র পরিচালনার মডেল তৈরি করেছে। নবীজি (সা.) এর জীবন থেকে বোঝা যায়, প্রকৃত নেতৃত্ব কেবল ক্ষমতার অধিকারী হওয়াই নয়; বরং প্রকৃত নেতৃত্ব মানুষের কল্যাণ, ন্যায়বিচার, শান্তি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রতি অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। নবীজি (সা.) এর রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকায় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় আরেকটি বিষয় হলো তাঁর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি কখনো নিজের স্বার্থ বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনের জন্য সিদ্ধান্ত নিতেন না। বরং প্রতিটি নীতি ও সিদ্ধান্ত সমাজের দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণ, শান্তি এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই তিনি গ্রহণ করতেন।

হিজরতের পর মহানবী (সা.) মদিনায় এসে একটি বহুধর্মীয় ও বহুজাতিক রাষ্ট্র স্থাপন করেন। মদিনা সনদ বা Charter of Medina ছিল মানবজাতির জন্য প্রথম লিখিত সংবিধান। এটি মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য গোত্রের অধিবাসীদের মধ্যে শান্তি, সহযোগিতা ও সমতা নিশ্চিত করেছিল। চুক্তিতে প্রতিটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা এবং সামাজিক দায়িত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল। মদিনা রাষ্ট্রে নবীজি (সা.) এর লক্ষ্য ছিল সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের জন্য ন্যায়বিচার ও সমতা নিশ্চিত করা। তিনি দারিদ্র‍্য, বৈষম্য, নারী বিদ্বেষ এবং গোত্রীয় সংঘাত দূর করতে নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। প্রশাসনিক কাঠামো, আইন এবং শাসন ধর্মীয় নৈতিকতার ওপর ভিত্তি করেই পরিচালিত হতো। উদাহরণস্বরূপ, সনদে উল্লেখিত ছিল যে, মুসলিম ও নন-মুসলিম সম্প্রদায়রা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করবে না, একে অপরের সম্পত্তি রক্ষা করবে এবং বিপর্যয় বা প্রতিপক্ষের আক্রমনের সময় একে অপরকে সাহায্য করবে। এ দৃষ্টান্ত মধ্যযুগের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় যুগান্তকারী ছিল।

নেতৃত্বের মানদণ্ড এবং নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি : পশ্চিমা সভ্যতা ও নেতৃত্বের প্রক্রিয়াটি ভীষণভাবে দার্শনিক ম্যাকিয়াভেলীর মাধ্যমে প্রভাবিত। আর ম্যাকিয়াভেলী যেভাবে রাজনীতি ও নেতৃত্বের কথা বলেছেন তাতে নৈতিকতার কোনো অবস্থান নেই। ম্যাকিয়াভেলীর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম ‘দ্য প্রিন্স’ এবং সেখানে বলা হয়েছে যে, একজন শাসক দেশ পরিচালনা করার জন্য কিংবা দেশের মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তার সক্ষমতার আলোকে সবটুকুই করবেন, এমনকী প্রয়োজনে নৈতিকতা উপেক্ষা করে হলেও। সেখানে ইসলাম নেতৃত্ব সম্পর্কে সম্পুর্ণ বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে।

নবীজি (সা.) এর নেতৃত্ব কেবল ক্ষমতার প্রয়োগ নয়, বরং জনগণের কল্যাণে নিবেদিত ছিল। তিনি নিজেকে জনগণের সেবক হিসেবে বিবেচনা করতেন। হাদিসে এসেছে, “নেতা হলো জনগণের খেদমতকারী, এবং প্রত্যেক নেতা তার জনগণের প্রতি জবাবদিহি করবে।” (সহীহ বুখারি, সহীহ মুসলিম) নবীজি (সা.) এর নেতৃত্বের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল সততা, ধৈর্য, ন্যায়বিচার, পরহেজগারিতা এবং জনগণের কল্যাণে আত্মনিবেদন। উদাহরণস্বরূপ, মদিনার বাজার ব্যবস্থায় নবীজি (সা.) সরাসরি হস্তক্ষেপ করে প্রতারণা প্রতিরোধ করতেন এবং বাজারে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেন। এছাড়া, নবীজি (সা.) সাহাবাদের সঙ্গে সম্পর্কের মাধ্যমে নেতৃত্বের মানবিক দিক প্রদর্শন করতেন। তিনি কাউকে কোনো ভুলের জন্য প্রকাশ্যভাবে লজ্জিত করতেন না, বরং ব্যক্তিগতভাবে সংশোধনমূলক পরামর্শ দিতেন। এ ধরনের নেতৃত্ব আধুনিক প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকেও একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

প্রশাসনিক দক্ষতা ও বিচারব্যবস্থা : নবীজি (সা.) প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নজিরবিহীন দক্ষতা প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি বিচার প্রক্রিয়ায় প্রমাণ, সাক্ষ্য এবং ন্যায়নীতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতেন। তিনি স্থানীয় নেতাদের নিয়োগ, কর ব্যবস্থা, জনকল্যাণমূলক নীতি এবং আইন প্রয়োগের ওপর গুরুত্ব দিতেন। উদাহরণস্বরূপ, খাজনা (কর) সংগ্রহের ক্ষেত্রে তিনি নিশ্চিত করতেন যাতে এটি দরিদ্রদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা সৃষ্টি না করে। প্রতিটি নাগরিকের জন্য সুশাসন নিশ্চিত করতে তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রশাসনিক কাঠামো কার্যকরভাবে কাজ করতো। নবীজি (সা.) এর প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি ‘আধুনিক সুশাসন ধারণার’ সাথেও ভীষণভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। তিনি জনকল্যাণের নীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন এবং সরকারের প্রতিটি শাখাকে জনগণের নিকট দায়বদ্ধ রাখতেন।

কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক : নবীজি (সা.) রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে কূটনীতিতে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সম্রাট ও শাসকদের কাছে দূত প্রেরণ করে শান্তি, সমঝোতা এবং ইসলামের বার্তা প্রচার করেছিলেন। হেরাক্লিয়াস (বাইজেন্টাইন সম্রাট), খসরু (পারস্য সম্রাট) এবং মুকাওকিস (মিশর) প্রমুখের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কৌশলী ও মানবিক ছিল। অন্যদিকে, হুদায়বিয়ার চুক্তি নবীজি (সা.) এর কূটনৈতিক কৌশলের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। চুক্তির শর্তগুলো প্রাথমিকভাবে মুসলিমদের জন্য কঠিন ও কিছুটা নেতিবাচক মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ চুক্তি মুসলিমদের জন্য মক্কা বিজয়ের সুযোগ তৈরি করে দেয়। সবচেয়ে বড়ো কথা, হুদাইবিয়ার চুক্তি প্রমাণ করে যে, সমঝোতা ও কূটনীতির মাধ্যমেও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। নবীজি (সা.) যেমন যুদ্ধ করার মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন, নিজের মুসলিম জনশক্তিকে সুরক্ষিত করেছেন তেমনি যুদ্ধবিহীন পরিস্থিতির ফায়দা নিয়েও ময়দানে অনেক বেশি মাত্রায় দাওয়াতি কাজ করার মাধ্যমে মুসলিমদেরকে আরব ভূখন্ডে সবচেয়ে জনবহুল সম্প্রদায়ে পরিণত করতে পেরেছিলেন।

অর্থনৈতিক নীতি ও সামাজিক সমতা : নবীজি (সা.) অর্থনীতি ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিলেন। সুদ নিষিদ্ধ, যাকাত ও দান বাধ্যতামূলক এবং বায়তুল মাল স্থাপনÑএসব নীতি সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য নিশ্চিত করেছিল। দরিদ্র, এতিম, নারী এবং সমাজের প্রান্তিক অংশের অধিকার সুরক্ষিত থাকত। তিনি বাণিজ্য ও শ্রমের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে নানা নীতি গ্রহণ করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, বাণিজ্যিক লেনদেনের সময় প্রতারণা ও মিথ্যা ওজন-বলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। অর্থনৈতিক ন্যায় এবং সামাজিক সমতা নিশ্চিত করে তিনি একটি সমৃদ্ধিশালী ও স্থিতিশীল রাষ্ট্রের ভিত্তি গড়েছিলেন।

সামরিক কৌশল ও নিরাপত্তা নীতি : নবীজি (সা.) রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে যুদ্ধ নীতি সম্পূর্ণ মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক ছিল। নিরীহ মানুষ, নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং উপাসনালয় বরাবরই মুসলিম বাহিনীর আক্রমন থেকে সুরক্ষিত থাকত। যুদ্ধ ছিল আত্মরক্ষার মাধ্যম, কখনো দখল বা লুণ্ঠনের উদ্দেশ্যে নয়। তিনি সামরিক কৌশল, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী দক্ষতা প্রদর্শন করেছিলেন। এ কারণেই বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সদস্যসংখ্যা কাফেরদের তুলনায় অনেকটাই কম হওয়ার পরও তারা কৌশলগতভাবে এগিয়ে থেকে কাফের বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। নবীজি (সা.) যুদ্ধবন্দীদের ক্ষেত্রেও মানবিকতা প্রদর্শনের যে নজির স্থাপন করেছেন তা বিশ্বে আর কোথাও দেখা যায়নি।

সামাজিক ন্যায় ও মানবাধিকার : নবীজি (সা.) সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ও যুগশ্রেষ্ঠ ভাষণে তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “একজন আরবের উপর কোনো অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, আবার কোনো অনারবের উপরও আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সে, যে সর্বাধিক পরহেজগার।” (মুসনাদে আহমাদ) জাতিগত বৈষম্য, দাসপ্রথা, নারী-শিশু অধিকার এবং সামাজিক ও ধর্মীয় ন্যায়ের ক্ষেত্রে নবীজি (সা.) এর দৃষ্টিভঙ্গি আধুনিক মানবাধিকার ও সমতার ধারণার সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। জাতিসংঘসহ মানবাধিকার বিভিন্ন সংস্থা এখন মানবাধিকার নিশ্চিতে যেসব সনদ ও আইন প্রনয়ন করেছে এর অনেকগুলোর তাত্বিক ধারনাই নেয়া হয়েছে বিদায় হজ্জের এই ভাষণ থেকে। যদিও অমুসলিমরা তা স্বীকার করে না আর মুসলিমরা দুর্ভাগ্যবশত এ বিষয়ে ততটা সচেতনও নয়।

অস্থির এ সময়ে হজরত মুহাম্মাদ (সা:)-এর রাষ্ট্রনায়কত্ব বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। প্রথমত, ন্যায়ভিত্তিক শাসন এখনো প্রতিটি সমাজ ও রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় চাহিদা। বর্তমান বিশ্ব দুর্নীতি, বৈষম্য ও স্বজনপ্রীতির সমস্যায় জর্জরিত। নবী করিম (সা.) দেখিয়েছেন, নেতৃত্বের আসল ভিত্তি হলো ন্যায়, জবাবদিহিতা ও সুশাসন। তাই তাঁর মডেল আজকের রাষ্ট্রনেতাদের জন্য অনুকরণীয়। দ্বিতীয়ত, আধুনিক বিশ্ব বহুধর্মী ও বহুজাতিগত সমাজে বিভক্ত। নানা ধর্ম, বর্ণ ও মতাদর্শের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করছে। এ বাস্তবতায় মদিনা সনদ বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। নবী করিম (সা.) মুসলিম, ইহুদি ও অন্য সম্প্রদায়ের অধিকার স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করেছিলেন। এটি প্রমাণ করে, ভিন্ন বিশ্বাসের মানুষদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতার মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

তৃতীয়ত, আজকের রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রায়শই নৈতিক সংকটে ভোগে। ক্ষমতার জন্য স্বার্থের দ্বন্দ্ব, দুর্নীতি, লোভ ও যুদ্ধ প্রবণতা বেড়ে গেছে। অথচ নবী করিম (সা.)-এর নেতৃত্বের মূল শিক্ষা ছিল নৈতিকতা ও সচ্চরিত্র। তিনি প্রমাণ করেছেন, নেতৃত্ব যদি আদর্শ, সততা ও আত্মত্যাগের ভিত্তিতে হয়, তবে তা মানুষের আস্থা অর্জন করে স্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। চতুর্থত, বিশ্বজুড়ে দারিদ্র‍্য, শরণার্থী সংকট ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নবী করিম (সা.) শাসক হিসেবে সর্বদা মানবিক মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এতিম, বিধবা, দরিদ্র ও নিপীড়িতদের অধিকার নিশ্চিত করা ছিল তাঁর রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। তাই আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্র গঠনের জন্য তাঁর নীতিগুলো আজও কার্যকর। গোটা বিশ্ব এখন বিভাজন, যুদ্ধ ও সংঘাতের শিকার। নবী করিম (সা.) গোত্রভিত্তিক বিভক্ত আরব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন এবং একটি শান্তিপূর্ণ, সংগঠিত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করেছিলেন। তাঁর এই ঐক্যের দর্শন আজকের বিভক্ত পৃথিবীর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মূলত হজরত মুহাম্মাদ (সা:)-এর রাষ্ট্রনায়কত্ব কেবল ইতিহাসের বিষয় নয়; বরং এটি বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক সংকট সমাধানের জন্য অনন্য এক পথনির্দেশ।