মো: রুহুল আমীন খান
আজকে যারা শিক্ষার্থী, আগামীদিনে তারাই জাতির কর্ণধার। জাতির কর্ণধারদের সৎ, যোগ্য ও দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। দুঃখের সাথে বলতে হয়, জাতির ভবিষ্যৎকর্ণধারেরা বর্তমানে অনলাইনে নিমজ্জিত। পড়াশোনায় তাদের মন নেই। পড়াশোনার প্রতি তাদের অনীহা দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে পাঠ্যবইয়ের প্রতি অস্বাভাবিক দূরত্ব। অনলাইন ব্যবহার করতে করতে তারা মোহগ্রস্ত। শ্রেণিকক্ষে তাদের মন বসে না। পাঠদান শেষে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করলে, অনেক শিক্ষার্থীই তার সঠিক উত্তর দিতে পারে না। পাঠদানকালে শিক্ষক কোন বিষয়ে পাঠদান করেছেন, অনেক শিক্ষার্থী তা বলতে পারে না। কেন এমনটা হয়। পড়াশোনার প্রতি শিক্ষার্থীদের এত অনীহা কেন? বাস্তব অভিজ্ঞতায় বোঝা যায়, পাঠ্যবইয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের দূরত্ব বাড়ার প্রধান কারণ হলো অনলাইন আসক্তি।
বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ফেইসবুক, ইউটিউব, টিকটিক, চ্যাটিং, অনলাইন গেমে সর্বদা ডুবে থাকে। অনলাইন আসক্তির কারণে পাঠ্যবই তাদের নিকট নীরস ও বোঝা মনে হয়। পড়াশোনায় তারা মনোযোগ দিতে পারে না। ক্লাসে তাদের কথাবার্তায় মানসিক অস্থিরতার বিষয়টা ফুটে উঠে । ক্লাস থেকে কখন বের হবে সেই চিন্তায় মগ্ন থাকে। ফলে শিক্ষকদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা তাদের মনে তেমন রেখাপাত করতে পারে না। এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে তাদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে এ নিয়ে শিক্ষকরা উদ্বিগ্ন। অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি । খেয়াল রাখা দরকার তার সন্তান কখন কী করে।
শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসের দোহাই দিয়ে অধিকাংশ সময় অনলাইনে ব্যয় করে। অনলাইনে ক্লাস করে অনেক কিছু বুঝা যায়। তবে সকল বিষয়ে অনলাইনের উপর নির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ নেই। আর অনলাইনক্লাস কখনো অধ্যয়নের বিকল্প হতে পারে না। অভিজ্ঞ ও খ্যাতনামা শিক্ষাবিদের গবেষণার আলোকে পাঠ্যবই লিপিবদ্ধ করা হয়। নির্ভুল তথ্য জানা , জ্ঞানার্জন ও ভালো ফলাফলের জন্য পাঠ্যবই অধ্যয়নের বিকল্প নেই। সন্তান পাঠ্যবই অধ্যয়নের সময় দিচ্ছে কী না, দিলে কতটুকু দিচ্ছে থ সে বিষয়টাও অভিভাবকদের খেয়াল রাখা দরকার।
অনলাইন আসক্তির বিষয়টা ‘একাদশ এবং দ্বাদশ’ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ‘একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণী’ ছাত্রজীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়ে পরিশ্রম ও পরিকল্পিত পড়াশোনা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে করে দিতে পারে। ভালো ভার্সিটিতে অধ্যয়নের দুয়ার খুলে দিতে পারে। আর এ সময়টা অনলাইনে উদ্দেশ্যহীনভাবে ব্যয় করলে মূলস্রোত থেকে হারিয়ে যেতে হবে। তাই একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের কোন অবস্থাতেই অনলাইনে অধিক সময় ব্যয় করা ঠিক হবে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিক সময় ব্যয় করা, অনলাইনে পরিচিতি বাড়ানোর লিপ্সা পরিত্যাগ করা দরকার। পড়াশোনা ও ভালো ফলাফলের জন্য বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে হবে। তা হলে পড়াশোনার গতি বাড়বে।
শ্রেণিকক্ষে অনর্থক কথা বলা, পড়া না শিখে আসা, ক্লাস ফাঁকি দেওয়া কখনো ভালো ছাত্রের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। ভালোছাত্র হতে হলে এ অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করতে হবে। ক্লাসে ফাঁকি দেওয়া মানে শিক্ষককে ফাঁকি দেওয়া নয় বরং নিজেকে ফাঁকি দেওয়া। যার প্রতিফল পাওয়া যাবে কর্মসন্ধানের সময় বা কর্মক্ষেত্রে। এটা জীবনের পরবর্তী পথকে কণ্টকাকীর্ণ করে দিবে। জীবনে উন্নতি করতে হলে শিক্ষকদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। শিক্ষকদের আলোচনার মাধ্যমে পাঠ্য বইয়ের বাইরে আরও অনেক অজানা বিষয় জানা যায়। পরিশেষে প্রযুক্তির এই যুগে অনলাইন আসক্তির কবল থেকে মুক্ত থাকতে হলে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই সচেতন, সময়ানুবর্তি ও কর্তব্যপরায়ণ হতে হবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে।
লেখক : প্রভাষক, ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজ, গাজীপুর সদর।