রবার্ট রিখ

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশাল, সুন্দর শুল্ক আরোপ বিল আটকে দেওয়ায় এবং তার মাল্টি-বিলিয়নিয়ার প্রযুক্তি ভাই ইলন মাস্ক তার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করায় তিনি কীভাবে তার ক্ষমতা দেখাবেন?

শুক্রবার সকালে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস), ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস), এফবিআই এবং ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিইএ)-এর ফেডারেল এজেন্টরা লস অ্যাঞ্জেলেস জুড়ে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অভিবাসী সন্দেহে ১২১ জনকে গ্রেফতার করে।

অভিযানকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো বিক্ষোভকারীরা শ্লোগান দিচ্ছিল এবং ডিম ছুঁড়ছিল। জবাবে পুরোদস্তুর দাঙ্গার পোশাক পরা পুলিশ লাঠি, গোলমরিচের বল, রাবার বুলেট, টিয়ারগ্যাস এবং ফ্ল্যাশ-ব্যাং গ্রেনেড ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

শনিবার, ট্রাম্প সংঘর্ষ আরও তীব্র করে তোলেন। বিক্ষোভ দমনে সাহায্য করার জন্য লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে কমপক্ষে ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সৈন্য মোতায়েনের নির্দেশ দেন।

তিনি জানিয়ে দেন, অভিবাসন কর্মকর্তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো যেকোনো বিক্ষোভকে “বিদ্রোহের একটি ধরণ” হিসেবে বিবেচনা করা হবে। হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ স্টিফেন মিলার বিক্ষোভকে “বিদ্রোহ” বলে অভিহিত করেছেন।

শনিবার সন্ধ্যায়, প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ মেরিন সেনা মোতায়েনের হুমকি দিয়ে বলেছেন: “আইস এবং ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর সহিংস জনতার আক্রমণ আমাদের মাটি থেকে অপরাধী অবৈধ এলিয়েনদের অপসারণ রোধের জন্য করা হয়েছে। এ ঘটনা একটি বিশাল জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং একটি বিপজ্জনক আক্রমণ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনে, ফেডারেল এজেন্ট এবং ফেডারেল সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং ধ্বংস সহ্য করা হবে না।”

এটা হলো ট্রাম্পের পুলিশী রাষ্ট্র তৈরির প্রথম পর্যায়।

ইতিহাস দেখায় যে একবার একজন কর্তৃত্ববাদী শাসক পুলিশী রাষ্ট্রের অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা করলে, সেই একই অবকাঠামো যে কারও উপর চাপিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার শাসনব্যবস্থা দ্রুত পাঁচটি ধাপে এই ধরণের অবকাঠামো তৈরি করছে:

১. তথাকথিত “বিপ্লব”, “বিদ্রোহ” বা “আক্রমণের” ভিত্তিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা;

২. দেশের অভ্যন্তরে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের একচেটিয়া অধিকারী ফেডারেল এজেন্টদের (আইস, এফবিআই, ডিইএ এবং ন্যাশনাল গার্ড) আনার ন্যায্যতা প্রমাণ করার জন্য সেই “জরুরি অবস্থা” ব্যবহার করা;

৩. সামরিকীকরণ করা এজেন্টদের হাতে অপহরণ এবং পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করার অনুমতি দেওয়া এবং যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই মানুষকে আটক করা;

৪. আটককৃতদের জন্য অতিরিক্ত কারাগারের জায়গা এবং আটক শিবির তৈরি করা, এবং

৫. অবশেষে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সাথে সাথে সামরিক আইন ঘোষণা করা।

সৌভাগ্যক্রমে, যুক্তরাষ্ট্রে এখনও সামরিক আইনের অধীনে নেই। কিন্তু একবার তা জারি হলে, একটি পুলিশী রাষ্ট্রের অবকাঠামো তারা নিজেই গড়ে তুলতে পারে।

বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ সামরিক নিয়ন্ত্রণের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, যাদের জন্য এটা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং যারা এটিকে সমর্থন করে; জাতি তাদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। একনায়কতন্ত্র উভয় পক্ষের মধ্যে ভয় এবং ক্ষোভ উস্কে দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।

এই মুহূর্তে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পুলিশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধান বাধা হল ফেডারেল আদালত এবং ব্যাপক ভিত্তিক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ। বিক্ষোভের অংশ হিসাবে অনেকেই আসন্ন ১৪ জুন, নো কিংস ডে অফ অ্যাকশনে অংশগ্রহণ করবেন।

বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ রাখা, এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াইর জন্য অহিংসভাবে সবার সংকল্প প্রদর্শন করা এবং আমেরিকাকে ট্রাম্পের পুলিশী রাষ্ট্রের উদীয়মান অবকাঠামো ও তা প্রতিরোধের গুরুত্ব সম্পর্কে জানান দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।

এই সময়টা ভীতিকর এবং হতাশাজনক। কিন্তু মনে রাখতে হবে: যদিও একজন স্বৈরাচারী পুলিশী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়, তাকে উৎখাত করতে এবং এ ব্যবস্থা শেষ করতে জনসংখ্যার মাত্র ৩.৫% প্রয়োজন হয়।

লেখক : রবার্ট রিখ, সাবেক মার্কিন শ্রম সচিব

দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর: তাইয়েব তালহা