ফ্লোটিলা বলতে সাধারণভাবে অসংখ্য নৌযানের বহরকেই বোঝানো হয়। এসব নৌযান সম্মিলিতভাবে সংগঠিত হয়ে সংকটাপন্ন অঞ্চলে খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রী পৌঁছে দেয়। সাধারণত যখন কোনো অঞ্চলে বা দেশে আকাশপথ বা স্থলপথে সরবরাহের পথ বন্ধ হয়ে যায়, তখন ফ্লোটিলা যাত্রার আয়োজন করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল ফিলিস্তিনের গাজার আকাশসীমা ও সমুদ্রসীমা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, পণ্য ও মানুষের চলাচল সীমিত করছে। এখানে আরো বলা দরকার, চলমান যুদ্ধের আগেও গাজায় কার্যকর কোনো বিমানবন্দর ছিল না। গাজায় ২০০১ সালে একটি বিমান বন্দর চালু করা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু চালু করার মাত্র তিন বছর পরই ইসরাইল গাজার সে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি বোমার আঘাতে ধ্বংস করে দেয়।

মানবিক ও তৃণমূল পর্যায়ের ফ্লোটিলা সাধারণত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অধীন পরিচালিত হয়। ফ্লোটিলা বরাবরই নৌ আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। গত সপ্তাহে বিশ্বের সকল গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম ছিল গাজামুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার দুঃসাহসিক অভিযাত্রা। যদিও এ বহরে অংশ নেয়া নৌযানগুলো সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও গাজা উপকূলে নামতে পারেনি। গাজার কাছাকাছি এলাকায় পৌঁছানো মাত্রই সবগুলো নৌযানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ইসরাইলি বাহিনী। পাশাপাশি, এ নৌবহর থেকে প্রায় ৫০০ অধিকারকর্মীকে আটকও করা হয়।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মূলত ইসরাইলের নৌ-অবরোধ ভেঙে সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। এটি অন্যতম বৃহৎ নৌ-সহায়তা অভিযান। এ কারণে এবার এ বহরটি পুরো বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন নামে গাজায় ইসরাইলি অবরোধ ভাঙার উদ্দেশ্যে ফ্লোটিলা যাত্রা করেছিল। এবার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুমুদ’। এটি আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে অবিচল বা দৃঢ়তাÑ যা ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রামী জীবনদর্শনের প্রতীক। সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরে সর্বমোট ৫০ টির বেশি বেসামরিক নৌযান ছিল। এ বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০-এর বেশি মানুষ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক অন্যতম।

ইসরাইল আগেই জানিয়েছিল, গাজার উদ্দেশে যাওয়া কোনো নৌযানকে থামাতে যা করা দরকার, তারা তাই করবে। তাদের দাবি, ‘আইনসম্মত নৌ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা’ আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাস্তবেও তারা তাই করেছে। ফ্লোটিলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এক বিবৃতিতে জানান, ইসরাইল ত্রাণসহায়তা বহনকারী পুরো নৌবহরকে আটকে দিয়েছে। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ৩৭টি দেশের ২০১ জনের বেশি মানুষ আটক জাহাজগুলোতে ছিলেন। এর মধ্যে স্পেনের ৩০ জন, ইতালির ২২ জন, তুরস্কের ২১ জন ও মালয়েশিয়া থেকে ১২ জন ছিলেন। গাজা উপকূল থেকে প্রায় ৭০ নটিক্যাল মাইল (১৩০ কিলোমিটার) দূরে আন্তর্জাতিক নৌ-সীমায় থাকা অবস্থাতেই ইসরাইলি নৌবাহিনী ফ্লোটিলার নৌযান থামিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও জ্যামার ব্যবস্থা চালু করে দেয়। এর আগে বহরের নৌ-যানগুলো থেকে লাইভস্ট্রিম বন্ধ করতে ইসরাইলি নৌবাহিনীর জাহাজ ইচ্ছাকৃতভাবে নৌযানগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ভূমধ্যসাগরে ফ্লোটিলার অগ্রযাত্রা ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মনোযোগ কেড়েছে। আর অধিকারকর্মীদের আটকের খবরে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ হয়েছে।

২০০৭ সালে হামাস গাজা দখল করার পর থেকে সেখানে ইসরাইলের অবরোধ চলছে। তখন থেকেই গাজার মানুষ কার্যত আটকে আছেন। আর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। বিগত প্রায় দু’বছরে ইসরাইলের নৃংশস হামলায় সেখানে ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি গাজা অবরোধ করে উপত্যকাটিতে তীব্র খাদ্যসংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে অনাহার-অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে গাজার বাসিন্দাদের। ফ্লোটিলা যাত্রার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল গাজার মানুষের জন্য যৎসামান্য ত্রাণ নিয়ে যাওয়া। পাশাপাশি, গাজার মানুষগুলোকে এমনটা অনুভব করানো যে, তারা একা নয়। বিশ্বের শান্তিকামী মানুষেরা তাদের সাথে আছেন। একইসঙ্গে বেশ কিছু সাংবাদিককেও এ বহরে নেয়া হয় যাদের উদ্দেশ্য ছিল গাজার বর্তমান দুঃসহ পরিস্থিতি সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করা এবং সে চিত্রগুলো আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচারের মাধ্যমে ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তোলা। কিন্তু ইসরাইল সে সুযোগও দেয়নি। তারা ফ্লোটিলা সুমুদ বহর থেকে ২০জনেরও বেশি নানা দেশের সাংবাদিককে গ্রেফতার করে।

সাংবাদিক আটকের এ ঘটনায় ইসরাইলের নিন্দা করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। এক বিবৃতিতে আরএসএফ জানিয়েছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ২০ জনেরও বেশি বিদেশি সাংবাদিক ছিলেন। এতে বলা হয়, বুধবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ইসরাইলি নৌবাহিনী গাজা অভিমুখে রাজনীতিবিদ ও অধিকারকর্মীদের বহনকারী নৌকাগুলোকে আটকাতে শুরু করলে সাংবাদিকদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। ৪৫০ জনের বেশি লোক বহনকারী জাহাজগুলোকে ইসরাইলি নৌবাহিনী গাজা উপত্যকায় পৌঁছাতে বাধা দিয়েছে। সাংবাদিকদের গ্রুপটির ক্রাইসিস ডেস্কের প্রধান মার্টিন রক্স বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা এবং তাদের কাজ করতে বাধা দেওয়া তথ্য প্রদান এবং অবহিত হওয়ার অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।’ তিনি বলেন, ‘আরএসএফ অভূতপূর্ব মাত্রার মানবিক অভিযান কভার করার জন্য এ জাহাজগুলোতে থাকা সংবাদ পেশাদারদের অবৈধ গ্রেপ্তারের নিন্দা জানায়।’ অন্যদিকে, ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যায়, সামরিক পোশাক পরা একজন নারী ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলার সময় নিজেকে ইসরাইলি নৌবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। ওই ফোনকলে নারী সেনা ফ্লোটিলাকে সতর্ক করে বলেন, তারা একটি সীমিত ও অবরুদ্ধ এলাকায় ঢুকছে। গাজায় যেকোনো সহায়তা অবশ্যই ইসরাইল অনুমোদিত চ্যানেলগুলোর মাধ্যমেই পাঠাতে হবে। আটক ফ্লোটিলা যাত্রীদের ব্যাপারে ইসরাইল সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, আটক অধিকারকর্মীদের ইসরাইলের আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

ইতোমধ্যে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক ইতালির চারজন অধিকারকর্মীকে ফেরত পাঠিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ফ্লোটিলা থেকে আটক ‘অন্যদেরও ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তবে গাজামুখী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহর থেকে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়া শত শত অধিকারকর্মীদের মেঝেতে বসিয়ে ইসরাইলের অতি-ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ‘সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করে ভর্ৎসনা করছেনÑ এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ভিডিওটির অনানুষ্ঠানিক অনুবাদ অনুসারে, বেন-গভির দাবি করেন ফ্লোটিলার জাহাজগুলোকে ‘সম্পূর্ণ খালি’ পাওয়া গেছে এবং তারা গাজার জন্য কোনো ত্রাণ সহায়তা নিয়ে আসেনি। মন্ত্রী কটাক্ষ করে বলেন, ‘তারা আসলে সাহায্য করতে আসেনি। তারা এসেছিল সন্ত্রাসীদের জন্য। এরা সন্ত্রাসী।’

এবার গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রথম বহর ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া ও ইতালির সিসিলি দ্বীপ থেকে আরও নৌযান এ বহরে যুক্ত হয়। এ ছাড়া গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে পরবর্তী সময়ে আরও কিছু নৌযান ত্রাণ নিয়ে বহরে যুক্ত হয়। শুরুতে এ নৌবহরে ৫০ টির বেশি জাহাজ ও অন্তত ৪৪টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী শত শত আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক, কর্মী ও আইনপ্রণেতা ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৪ জন মার্কিন নাগরিকসহ কয়েকজন সামরিক অভিজ্ঞ ব্যক্তিও আছেন। নৌযানগুলোতে প্রতীকী হলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মানবিক কার্গোয় খাদ্য, চিকিৎসাসামগ্রী ও গাজার জনগণের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছিল। এবারের এ অভিযানে চারটি প্রধান জোট অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো: গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা (জিএমটিজি): এটি আগে গ্লোবাল মার্চ টু গাজা নামে পরিচিত ছিল। এটি একটি তৃণমূল পর্যায়ের আন্দোলন। এরা গাজার প্রতি বিশ্ব সংহতির কর্মসূচি আয়োজন করে এবং অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করে। দ্বিতীয় জোটটি হলো ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)। ১৫ বছরের সমুদ্র অভিযানের অভিজ্ঞতা আছে এফএফসির। এর আগে এফএফসি মাদলিন ও হান্দালা ফ্লোটিলায় অংশ নিয়েছিল। এফএফসি এবার অবরোধ ভাঙতে ব্যবহারিক পরামর্শ, দিকনির্দেশনা ও কার্যক্রমগত সহায়তা দিয়েছে। তৃতীয় জোটের নাম মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা। এটি আগে ‘সুমুদ কনভয়’ নামে পরিচিত ছিল। এটি উত্তর আফ্রিকাভিত্তিক একটি উদ্যোগ, যা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ত্রাণ ও সহায়তা পৌঁছে দিতে সংহতির মিশন পরিচালনা করে। আর সর্বশেষ জোটটি হলো সুমুদ নুসান্তারা। এটি মালয়েশিয়াসহ আরও আটটি দেশের জনগণের নেতৃত্বাধীন বহর, যা গাজার অবরোধ ভাঙতে এবং গ্লোবাল সাউথ দেশগুলোর মধ্যে সংহতি জোরদার করতে চায়। ফ্লোটিলা অগ্রসর হতে থাকলে আন্তর্জাতিক মনোযোগ বেড়ে যায়, তখন এর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনে সহায়তা দেওয়ার জন্য স্পেন ও ইতালি নৌবাহিনীর জাহাজ মোতায়েন করে। অন্যদিকে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানায়।

ফ্লোটিলা যাত্রায় ইসরাইলের প্রতিবন্ধকতা তৈরির দৃষ্টান্ত এবারই প্রথম নয়। ২০১০ সালের মাভি মারমারা ঘটনা সে সময়ে খুব সমালোচিত হয়েছিল। ওই সময় ইসরাইলি কমান্ডোরা গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলার তুরস্কের একটি জাহাজ মাভি মারমারায় ওঠে পড়েন। এতে দু’পক্ষের সংঘর্ষ বাধলে ১০ জন অধিকারকর্মী নিহত হন। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী নিন্দা জানানো হয় এবং ইসরাইল-তুরস্ক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরে ২০১৩ সালে ওই অভিযানে ‘কার্যকর ভুল’ করার জন্য ক্ষমা চায় ইসরাইল। ক্ষতিপূরণ চুক্তি এখনো দু’দেশের মধ্যে আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। এরপর ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৮ সালে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি ফ্লোটিলা আটক করে ইসরাইল আশদোদ বন্দরে নিয়ে যায়। সেখানে কর্মীদের আটক করে এবং কার্গো বাজেয়াপ্ত করে। ২০১৮ সালে কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় গ্রেপ্তার অনেক কর্মী নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছিলেন। ২০২৪ সালে ইসরাইল বিদেশি বন্দর থেকে যাত্রা শুরুর আগেই বেশ কিছু ফ্লোটিলার যাত্রা থামিয়ে দেয়। এ ছাড়া কিছু ফ্লোটিলা গাজা পৌঁছানোর আগেই আটক করে।

এবারের গ্লোবাল সুমুদ যাত্রার পুরো বিষয়টি একটি আন্তর্জাতিক ও বৈশ্বিক সংহতির রূপ পেয়েছিল। এর একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, বিশ্বের নানা দেশের নানা প্রান্ত থেকে পরিচিত মানবাধিকার কর্মীরা এ ফ্লোটিলায় অংশ নিয়েছেন। প্রসিদ্ধ সব ব্যক্তিরা অংশ নেয়ায় তাদের গতিবিধি নিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের আগ্রহ ছিল। আরেকটি বিষয় হলো, এবারের নৌ যাত্রায় কয়েকশ লোক অংশ নিলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আন্তর্জাতিক একাধিক মিডিয়ার লাইভ স্ট্রিমিং-এর কারণে আরো অসংখ্য মানুষ এ অভিযাত্রার সাথে আত্মিকভাবে অংশ নিয়েছিল। আমি অগনিত মানুষকে দেখেছি যারা ফেসবুকে তাদের টাইম লাইনে দেশের বা আঞ্চলিক সব ইস্যু বাদ দিয়ে কেবল গ্লোবাল ফ্লোটিলা যাত্রার লাইভ সম্প্রচার করেছেন। কোনো একটি নৌযাত্রায় শারীরিক ও আত্মিকভাবে এত বেশি সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণের দৃষ্টান্ত সত্যিই বিরল। ফ্লোটিলা হয়তো গাজায় পৌঁছতে পারেনি কিন্তু গাজার মানুষ অনুধাবন করেছে যে তারা একা নন। হাজার হাজার গাজাবাসী ফ্লোটিলাগুলো রিসিভ করার জন্য সাগরতীরে দাঁড়িয়েছিল। তাদের মতো করে তা না হওয়ায় তারা সাময়িকভাবে হতাশ হলেও তারা বুঝতে পেরেছেন, বিশ্ববাসী তাদের পাশে আছেন। আর সুমুদ ফ্লোটিলা গাজায় পৌঁছতে না পারায় তুরস্ক থেকে আরো একটি ফ্লোটিলা গাজা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে। সার্বিকভাবে এবারের ফ্লোটিলার প্রতি বৈশ্বিক জনমত তৈরি হওয়ায় এটি অনস্বীকার্য যে, বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ ইসরাইলের বর্বরোচিত যুদ্ধাপরাধ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন এখন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের প্রাণের দাবি।