গত মঙ্গলবার এ স্তম্ভে আমি রাজাকারের হাকিকত নিয়ে আলোচনা করেছিলাম এবং এ সংখ্যায় আল বদর, আল সামছ ও বুদ্ধিজীবী হত্যা প্রসঙ্গে কিছু তথ্য তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম।

এখানে বলা নিষ্প্রয়োজন যে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের পতন ও পলায়নের পর গণতান্ত্রিক জনবান্ধব দল হিসেবে জামায়াত তার বাস্তব ও কল্যাণমুখী তৎপরতার মাধ্যমে মানুষের মনে যথেষ্ট আশার সঞ্চার করতে সক্ষম হয়েছে। দলটির এ সম্ভাবনা ও উত্থানকে রাম-বাম-দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু শক্তি সহ্য করতে পারছে না। তারা অতীতের ন্যায় মিথ্যা ও বানোয়াট কিছু ইস্যুকে সামনে তুলে এনে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হচ্ছে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও সমালোচিত দল। ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন বিষয়ে দলটি বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। অনেকের মতে, ‘ইসলাম কোনো ধর্ম নয়, একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান’ দলের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদীর এ দর্শনের সঙ্গে অনেক আলেম ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাদের মতে, ইসলামে রাজনীতি নেই এবং তাদের এ বিশ্বাস হচ্ছে ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীদের শক্তির উৎস। ধর্ম থাকবে মসজিদে; সমাজ বা রাষ্ট্র ধর্মের বিচরণস্থল হতে পারে না। এটাই তাদের বিশ্বাস এবং তারা আরো মনে করে যে, রাজনীতি অপবিত্র, মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত। রাজনীতিতে ধর্মকে টেনে আনলে ধর্ম কলুষিত হবে। আবার ধার্মিক লোকরা রাজনীতি করে ক্ষমতায় এলে জনগণের জন্য কিছুই করতে পারবে না। কেননা তারা অবৈধভাবে খাবেও না, খাওয়াবেও না। ইসলামী আইন চালু হলে চোরের হাত কাটা যাবে, ব্যাভিচারী-জেনাকারীরা দোররা খাবে বা তাদের সঙ্গেছার হবে, যা অমানবিক। তারা কথাগুলো প্রকাশ্যে বলতে পারে না, তাই জামায়াতের ওপর নানা অপবাদ চাপিয়ে লোকচক্ষে দলটিকে হেয়প্রতিপন্ন ও অজনপ্রিয় করে মানুষের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। জামায়াত পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিল না। অনেক রাজনীতিবিদ এ অভিযোগ করেছেন। কথাটি সত্য, তবে জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত মাওলানা মওদূদীর বিশাল সাহিত্যসম্ভারকে দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারণা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মুসলিম লীগ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে, যে দ্বিজাতিতত্ত্বের (Two Nation Theory) ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

মাওলানা মওদূদী ও জামায়াত পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যে আপত্তি করেছিলেন সেটা ছিল নীতি-নৈতিকতা ও ইলমি চরিত্র সংক্রান্ত। ইসলামী জীবনব্যবস্থা, ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত শরয়ী বিষয়সমূহের ওপর অজ্ঞতা, ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সমাজ জীবনকে ইসলামী চরিত্র সম্পর্কে সম্পূর্ণ মুক্ত রেখে এবং পাশ্চাত্য আইন ও সংস্কৃতির দাসত্ব করে ইসলামী রাষ্ট্র বা মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র কায়েম ফলপ্রসূ হবে নাÑ এটাই ছিল জামায়াতের অবস্থান। উপমহাদেশের মুসলমানদের জান, মাল, সম্পদ ও সময়ের কুরবানির বিনিময়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ২৪ বছর টিকে ছিল। কিন্তু এ দেশটির শাসনব্যবস্থার দায়িত্বে যারা ছিলেন এবং যে আইন দিয়ে তারা দেশ শাসন করেছেন তার মধ্যে ইসলামী অনুশাসন, চরিত্র ও আদলের লেশমাত্র না থাকায় অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন ও ক্ষমতা-লিপ্সার দিক থেকে দেশটির অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে এবং দেশটিরই একশ্রেণির নেতৃত্ব (তারাও মুসলমান ছিল) একটি আধিপত্যবাদী অমুসলিম দেশের সহযোগিতায় নতুন করে মানুষকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখায়। জামায়াত এ উদ্যোগকেও সক্রিয়ভাবে সমর্থন জানায়নি, ফলে নতুনভাবে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে জামায়াতের অবস্থান ছিল পরিষ্কার। একটি আধিপত্যবাদী মুসলিম বিদ্বেষী দেশের অর্থ ও সামরিক সহযোগিতায় আরেকটি দেশের একটি অংশকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন করে দেয়ার বিষয়টি নিঃস্বার্থ হতে পারে না।

এতে তাদের স্বার্থ ছিল প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে দুর্বল করা, নবসৃষ্ট দেশটি থেকে ট্রানজিট করিডোর বন্দর ও অন্যান্য সুবিধা আদায় করা এবং বিপুল জনসংখ্যার এ দেশটিকে তাদের পণ্যের বাজার হিসেবে দখল করা। এ বাজারটি জনসংখ্যার দিক থেকে সমগ্র ইউরোপ থেকে অনেক বড়। পাকিস্তানে ২৪ বছর এবং বাংলাদেশের বিগত চুয়ান্ন বছরের ঘটনাপ্রবাহ প্রমাণ করেছে যে, উভয় ক্ষেত্রে জামায়াতের অবস্থান সঠিক ছিল। কিন্তু সত্যকে সত্য বলে গ্রহণ করার মনমানসিকতা না থাকায় আদর্শ নির্বিশেষে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতাকর্মীরা জামায়াত বিরোধিতা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার সাধারণ মানুষও অভিযোগসমূহের সত্যাসত্য যাচাই না করেই তাদের অপপ্রচারকে বিশ্বাস করছেন। যদিও পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা এ ক্ষেত্রে পরিষ্কার। এতে বলা হয়েছে, ‘ওয়ালা তানবেসুল হাক্কা বিল বাতেলে, ওয়া তাকতুমুল হাক্কা ওয়া আনতুম তায়া’লামুন। আকিমুসসালাতা ওয়া আ’তুজ জাকাতা ওয়ার কাউ মা’আর রাকেয়ুন’। অর্থাৎ ‘মিথ্যার আবরণে সত্যকে সন্দেহযুক্ত করে তুলো না, আর জেনে-শুনে তোমরা সত্যের বিরোধিতা করো না, নামাজ কায়েম কর, জাকাত দাও এবং যারা আমার সামনে নত হয়, তোমরাও তাদের সাথে আমার নতি স্বীকার কর।’ কিন্তু ধর্মের কাহিনী কারা শোনে না তা তো অনেকেই জানে না। প্রবল বিরোধিতা, অত্যাচার-নিপীড়ন ও হুমকি-ধামকি সত্ত্বেও আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা রেখে জামায়াত একটি ইসলামী আন্দোলন হিসেবে ইসলামী জ্ঞানে সমৃদ্ধ সৎ ও চরিত্রবান মানুষ তৈরি ও সমাজ গঠনে নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। জামায়াতের হাতে কোনো গণমাধ্যমে বা নিজস্ব মুখপাত্র নেই, যা আছে তা নিবু নিবু, শক্তিশালী কলামিস্ট ও লেখক বুদ্ধিজীবীও তার হাতে খুবই নগণ্য এবং এ প্রেক্ষিতে তাকে কিছু দুর্ভোগও পোহাতে হচ্ছে এবং হবে। অপপ্রচারের জবাব দেয়ার জন্য শক্তিশালী প্রচার মাধ্যমে থাকা যেমন জরুরি তেমনি সত্যের দাওয়া সম্প্রসারণের জন্যও তা অপরিহার্য। এখন আল বদর ও আল সামছ বাহিনী গঠন ও বুদ্ধিজীবী হত্যা প্রসঙ্গে আসি।

আগেই বলেছি, ১৯৭১ সালে আমি প্রত্যক্ষ সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলাম। যে কয়জন সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী নিহত হয়েছিলেন তার মধ্যে আমার ঘনিষ্ঠ তিন বন্ধু এবং একজন ঘনিষ্ঠ পরিচিত ব্যক্তিও ছিলেন। এদের একজন আ ন ম গোলাম মোস্তফা, দৈনিক পূর্ব দেশের ফিচার সম্পাদক ও অন্যজন পাকিস্তান অবজার্ভারের স্পোর্টস রিপোর্টার আবদুল মান্নান লাবু ভাই ছিলেন। আরেকজন ছিলেন শহীদুল্লাহ কায়সার, আমার এলাকা ফেনীর লোক এবং দৈনিক সংবাদের সহ-সম্পাদক। দৈনিক পূর্ব দেশে তৎকালীন বার্তা সম্পাদক এহতেশাম হায়দার চৌধুরীর ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীও ডিসেম্বর মাসে হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

এখানে বলে রাখি যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ নিহত হওয়ার যেমন দালিলিক প্রমাণ নেই, তালিকা নেই ঠিক তেমনি কতজন বুদ্ধিজীবী নিহত হয়েছিলেন তার সুনির্দিষ্ট তালিকাও নেই। ফলে শুরু থেকেই অসত্যনির্ভর ও অনুমানভিত্তিক একটি সংখ্যাতত্ত্ব প্রচার করে দলবিশেষকে এর জন্য দায়ী করার ব্যর্থ চেষ্টা চলে আসছে। এর অনুঘটক স্বয়ং আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা। শেখ মুজিবের আমলে ইসলামপন্থি ও পাকিস্তান আমলে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোকে শাসনতান্ত্রিকভাবে বেআইনি ঘোষণা করে সকল প্রকার হত্যা, ধর্ষণ অগ্নিসংযোগ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায় জামায়াতের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাদের প্রতিবাদের পথও ছিল বন্ধ। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ক্র্যাক ডাউনের পর এ দলের নেতাকর্মীরা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ৯ মাস ধরে বাংলার মানুষের হাল তারা জানতে চাননি। মাঝে মধ্যে এসে গেরিলা কায়দায় কিছু গ্রেনেড হামলা, অগ্নিসংযোগ ও স্থাপনা ধ্বংসের মতো কাজে তারা অংশ নিতেন বলে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও এম আর আখতার মুকুলের ‘চরমপত্রে’ জানা যেত। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার সাথে কারা জড়িত এ সম্পর্কে তিনটি তথ্য বাজারে প্রচলিত আছে। এগুলো হচ্ছে- ১. পাকিস্তান সামরিক বাহিনী, ২. আল বদর, আল সামছ, ৩. ভারতীয় ‘র’ সহ আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারী দল।

এখানে বলে রাখি, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি শেখ মুজিবের প্রত্যাবর্তনের আগে-পরে মুজিব বাহিনী সারা দেশে জামায়াতসহ প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলসমূহের লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে ধরে ধরে তাৎক্ষণিক হত্যা করে সারা দেশে হাজার হাজার গণকবরে মাটি চাপা দেয়। এদের জানাজা পড়তেও দেয়া হয়নি। রাজনৈতিক নেতাকর্মী তো বটেই, সাধারণ টুপি-দাড়িধারী নামাজি ব্যক্তিরা ভয়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকতে বাধ্য হন। অনেকে সীমান্ত পথ দিয়ে নেপাল, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশে পালিয়ে যান এবং পরে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন। সাবেক আমীরে জামায়াত মরহুম মকবুল আহমাদ তার গ্রামের দরিদ্র এক প্রতিবেশীর র্র্৫র্ ীর্৭ আয়তনের রান্নাঘরে জামায়াতের আরেকজন নেতা ও ব্যবসায়ী ফজলুর রহমানসহ পলাতক অবস্থায় ছিলেন। তারা যেকোনো অন্যায় করেছেন তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

একাত্তর সালের জুন মাস থেকে জাতিসংঘের পরামর্শ অনুযায়ী, তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ভারতে আশ্রয় প্রার্থী বাঙালিদের ফেরৎ আনার জন্য তাদের পুনর্বাসনের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এর মধ্যে একটি কর্মসূচি ছিল রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্র পরিচালিত ও সিলেট, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য কেন্দ্র থেকে রিলেকৃত ‘আপনজন’ অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানের আমি অন্যতম একজন স্ক্রিপট রাইটার ছিলাম এবং কথিকা প্রকাশ করতাম। ওই সময়ে কর্মরত অনেক সাংবাদিকই এটি করতেন। বাংলাদেশ হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৮ মার্চ যুগপৎভাবে দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক বাংলায় (সাবেক দৈনিক পাকিস্তান) ‘এদের ধরিয়ে দিন’ শিরোনামে ফার্স্ট লিড হিসেবে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, যাতে দৈনিক পূর্ব দেশের তৎকালীন সিনিয়র রিপোর্টার চৌধুরী মঈনউদ্দিনকে আল বদরের কমান্ডার ইন চিফ ও আমাকে জামায়াতে ইসলামীর পলিট ব্যুরোর সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়। তারা আজগুবি একটি গল্প সাজিয়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগ জামায়াত নেতাদের মধ্যে জামায়াত আমীর শহীদ মতিয়ুর রহমানের বিরুদ্ধেও আল বদরের কমান্ডার হবার অভিযোগ এনেছিল। জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহমদ মোহাম্মদ মুজাহিদ সাহেবের বিরুদ্ধে তাদের একই অভিযোগ ছিল। এত কথা বলছি এ জন্য যে, আল বদর কারা করেছে, তাদের সদস্য সংখ্যা কত ছিল এই তথ্য কোথাও পাওয়া যায়নি। বিবিসি টেলিভিশনের চ্যানেল ফোর-এর একটি সিনেমাই এর একমাত্র দলিল, যাতে বর্তমানে প্রবাসে বসবাসকারী আশ্রাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মঈনউদ্দিনকে আল বদরের ঘাতক হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে। ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে মঈনউদ্দিন উপরোক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে হাসিনা সরকার কর্তৃক আইসিটি আইনে তার বিচার ও শাস্তি প্রদান এবং তার ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার তাতে সায় দিয়ে তার মানহানি করার জন্য সে দেশের আদালতে মামলা করেন এবং ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট তার পক্ষে সর্বসম্মত রায় দেন।

কথা হচ্ছে, পাকিস্তানের সামরিক সরকার আল বদর বাহিনী গঠন করেছে এমন প্রমাণ নেই। বাহিনী গঠনের এখতিয়ার জামায়াতের ছিল না, তথাপিও তারা গঠন করেছেন, এ সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে একটা তথ্য পাওয়া গেছে, Nicholas Tomanil নামক একজন মার্কিন সাংবাদিক কর্তৃক ১৭/১২/১৯৭২ ‘Bangal’s elite dead in ditch’ সালে শিরোনামে লিখিত নিউইয়র্ক টাইমসের একটি রিপোর্টে। রিপোর্টে তিনি বলেছেন, বৃহস্পতিবার ঢাকায় আত্মসমর্পণের পূর্বে পাকিস্তান বাহিনী ৫০ জন বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী ও ব্যবসায়ীকে গুলী করে হত্যা করে। ধারণা করা হয়, মঙ্গলবার খুব সকালে পাঞ্জাবী সৈনিকরা নির্দিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে মহিলাদের বাদ দিয়ে পুরুষদের নিয়ে আসে। সম্ভবত তাদের রায়ের বাজারে ইটভাটায় নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলী করে হত্যা করে। তার রিপোর্টে ‘সম্ভবত’ শব্দটা ব্যবহার করে এর বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনেকেই জানেন না, আওয়ামী লীগ সরকারকে বুদ্ধিজীবী হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য বারবার অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়ে বুদ্ধিজীবী নিজেরাই ২৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে জহির রায়হানের সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠন করেন। এর অন্য সদস্যরা ছিলেনÑ ১. এহতেশাম হায়দার চৌধুরী, ২. ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, ৩. ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ৪. এনায়েত উল্লাহ খান, ৫. সৈয়দ হাসান ইমাম ও ৬. সিরাজুল ইসলাম।

১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান। ফলে তথ্যানুসন্ধান কমিটির উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়। কমিটি এর মধ্যে যেসব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছিল কলকাতার একজন সাংবাদিক তা ভারতে নিয়ে চলে যান। তথ্যাভিজ্ঞ মহল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে এ হত্যাযজ্ঞের জন্য ভারতকে দায়ী করেন। পাঠকরা চাইলে এ ব্যাপারে ভবিষ্যতে আলোচনার আশা রাখি। তবে আমি বিশ্বাস করি, বাস্তবতার আলোকে আওয়ামী লীগের নব উত্তরসূরিদের জামায়াতকে নিয়ে ব্লেম গ্রেম বন্ধ করা উচিত।