ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর বাংলাদেশে এক নতুন আশার সঞ্চার হয়েছিল। দীর্ঘদিনের দমন-পীড়ন, গ্রেফতার-নির্যাতন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্মূল করার কালো অধ্যায় অতিক্রম করার পর মানুষ ভেবেছিল-এবার হয়তো একটি নতুন সূচনা হবে। দেশ গড়ার রাজনীতি শুরু হবে, দলীয় হিসাবের বাইরে গিয়ে সবাই মিলে ভবিষ্যতের পথ খুঁজবে। সে প্রত্যাশা থেকেই গঠিত হয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল বিভক্ত রাজনীতিকে একত্র করা, ন্যায্য নির্বাচন ও সুশাসনের জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করা, এবং জনগণকে আশ্বস্ত করা যে এবার আর ক্ষমতার জন্য লড়াই নয়-দেশের জন্য ঐক্যই হবে মূল মন্ত্র। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, কমিশন শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়াল কেবল কাগুজে প্রতিশ্রুতির দলিল; ফলে মানুষের স্বপ্ন যেন অনেকটাই ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এমন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কমিশন যতটা ঐক্য আনতে চেয়েছিল, ঠিক ততটাই যেন বিভাজনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনার টেবিলে বসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত হলেও, যখন বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ এলো তখনই শুরু হলো মতবিরোধের খেলা। বিএনপি কিছু প্রস্তাব সরাসরি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাল এবং লিখিতভাবে নোট অব ডিসেন্ট জমা দিল। তাছাড়া প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন কে করবে, কখন করবে- এসব প্রশ্ন ঘিরেই হঠাৎ করেই রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে বিভাজন ও দূরত্ব যেন আরো প্রকট হয়ে উঠছে। কমিশনের সুপারিশগুলো জনমনে আশার আলো জ্বালালেও, রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থান গোটা প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ অন্তত ৩৬টি দল ঐকমত্য কমিশনের ব্যানারে একই টেবিলে বসেছিল। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। স্বাভাবিকভাবেই এ তৎপরতা পুরো জাতিকে আশাবাদি করে তুলেছিল। আলোচনার শুরুতে মনে হয়েছিল, অন্তত বড় কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এবার একমত হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকারের নিশ্চয়তা-এসব সুপারিশে সবাই সম্মতিও দিয়েছিল। কিন্তু যখন বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণের প্রসঙ্গ এলো, তখনই দেখা দিল দলীয় হিসাবের ভয়ানক কষাঘাত। বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির আপত্তি ও নোট অব ডিসেন্ট দেয়ার নেপথ্যে ছিল এ আশঙ্কা যে, কমিশনের রূপরেখা মানলে তাদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সুবিধা শংকার মুখে পড়ে যেতে পারে।
বিএনপির অবস্থান এক অর্থে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের ফল। তারা বুঝতে পারছিল, কমিশনের অনেক প্রস্তাব মানলে তাদের সাংগঠনিক ও নির্বাচনী সুবিধা বিনষ্ট করবে। বিশেষ করে সংবিধানের মৌলিক কিছু সংশোধনী, বিচার বিভাগের কিছু সংস্কার এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ-এসব প্রস্তাব বিএনপির কাছে সুবিধাজনক মনে হয়নি। অন্যদিকে জামায়াত ও নাগরিক পার্টি চাইছিল সুপারিশমালার দ্রুত বাস্তবায়ন। তারা বিশ্বাস করছিল, দেরি করলে জনগণের আশা ভেঙে যাবে এবং গণঅসন্তোষ তৈরি হবে। এ দ্বন্দ্বই কমিশনের টেবিলে আস্থার পরিবেশকে সংকটে ফেলে দেয়।
পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে সাম্প্রতিক ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন। ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের অভাবনীয় সাফল্য বিএনপির জন্য ছিল এক প্রকার ধাক্কা। এতদিন যে জামায়াতকে তারা সহযোগী ভেবেছিল, এখন সে সহযোগীকেই হঠাৎ করে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতে শুরু করল। শিবিরের বিজয় কেবল ছাত্ররাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; এটি একটি বার্তা দিয়েছে আর তাহলো জামায়াত মাঠপর্যায়ে আবারও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। বিএনপির আশঙ্কা, জাতীয় নির্বাচনের ময়দানেও জামায়াতের এ উত্থান তাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। ফলে বিএনপি কমিশনের আলোচনায় আগের চেয়ে আরও যেন কৌশলী, আরও রক্ষণশীল হয়ে উঠল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি এ অবস্থাকে নিজেদের সুবিধায় কাজে লাগাতে চাইল। তারা কমিশনের ভেতরে সবসময় ঐকমত্যের পক্ষে থাকার চেষ্টা করেছে। একইসাথে তারা বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে গিয়ে নিজেদের বিকল্প শক্তি হিসেবে তুলে ধরারও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মাঠপর্যায়ে তাদের প্রভাব সীমিত থাকায় এ কৌশল খুব কার্যকর হয়নি।
বাংলাদেশের এ অভিজ্ঞতাগুলোকে তুলনা করা যায় দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। সেখানে বর্ণবিদ্বেষী শাসনের পতনের পর সত্য ও পুনর্মিলন কমিশন গঠিত হয়েছিল। সে কমিশন নিখুঁত ছিল না, কিন্তু অন্তত একটি মৌলিক বিষয় সবাই মেনে নিয়েছিলÑআর তাহলো অতীতের ক্ষত নিরাময় করতে হলে স্বচ্ছতা, সত্য প্রকাশ ও ন্যায্যতার প্রয়োজন আছে। শাসক ও ভুক্তভোগী উভয় পক্ষই সে প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিল। চিলির উদাহরণও ভিন্ন কিছু নয়। সামরিক শাসন শেষে গণতন্ত্রে ফেরার পথে চিলির রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ করলেও শেষ পর্যন্ত ন্যূনতম কিছু শর্তে ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছিল। ফলে তাদের গণতন্ত্র, নানা ওঠানামা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত টিকে যায়।
বাংলাদেশে তা হয়নি। এখানে ঐকমত্যের জায়গায় দলীয় স্বার্থ প্রাধান্য পেল। বিএনপি ভেবেছে, কমিশনের প্রস্তাব মানলে তাদের দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হবে। জামায়াত ভেবেছে, দ্রুত বাস্তবায়ন করলে তারা রাজনৈতিক বৈধতা পাবে। নাগরিক পার্টি চেয়েছে, দ্বন্দ্বকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে। ফলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন পরিণত হলো পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সন্দেহের প্রতীকে। জনগণও ক্রমান্বয়ে এ প্রক্রিয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলল। সাধারণ মানুষের চোখে কমিশন হয়ে গেল এলিট রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার খেলাÑযেখানে দেশের ভবিষ্যৎ নয়, বরং দলীয় স্বার্থই মুখ্য।
সবচেয়ে বড়ো বিতর্ক দেখা দিল নির্বাচনব্যবস্থাকে সংস্কার নিয়ে। কমিশনের ভেতরে আলোচনায় প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচন নিয়ে যে ঐক্যমত তৈরি হচ্ছিল, বিএনপি তাতে শেষ পর্যন্ত রাজি হলো না। অথচ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের অন্তত একটি কক্ষে পিআর ব্যবস্থা চালু হলে ক্ষমতার একচেটিয়া দখলদারিত্ব ভেঙে যেত, বড় দলগুলোর কাছে ছোট দলগুলোর জিম্মিদশার অবসান ঘটতো, এবং জাতীয় রাজনীতিতে বহুমাত্রিক কণ্ঠস্বর জায়গা পেত। কিন্তু বিএনপি পিআরকে বরাবরই তাদের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের জন্য ঝুঁকি হিসেবেই বিবেচনা করেছে।
এর সঙ্গে যুক্ত হলো একই ব্যক্তির দল ও সরকারের প্রধান হিসেবে না থাকার বিষয়টি। কমিশন চাইছিল, দলীয় প্রধান ও সরকারপ্রধানের পদ আলাদা করে দিতে। এতে ব্যক্তির একক ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনীতি ভেঙে পড়ত, যা বারবার ফ্যাসিবাদের প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে। এমনটা করতে পারলে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতিও শক্তিশালী হতো। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দু’মেয়াদের সীমা নির্ধারণের প্রস্তাবও ছিল, যা ক্ষমতার একচেটিয়াকরণকে ঠেকাতে কার্যকর হতে পারত। কিন্তু বিএনপির এক্ষেতেও আপত্তি ছিল। কেননা তাদের শংকা- এই ধরনের সংস্কার তাদের রাজনৈতিক সুবিধা খর্ব করবে।
সবচেয়ে বড়ো বিভাজন তৈরি হলো বাস্তবায়নের সময়সূচি নিয়ে। বিএনপির অবস্থান ছিল, নতুন নির্বাচিত সরকার পরবর্তী দু’বছরের মধ্যে সব সংস্কার বাস্তবায়ন করবে। কারণ তাদের মনে বিদ্যমান স্থায়ী বিশ্বাস যেÑতাদের হাতেই আবার ক্ষমতা আসছে। অন্যদিকে জামায়াত ও নাগরিক পার্টির বক্তব্য ছিল, যদি সবকিছু নির্বাচিত সরকারের ওপর ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে এত মাস ধরে কমিশনের মিটিং, আলোচনা, বিতর্কÑএসবের কী প্রয়োজন ছিল? তাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারেরই দায়িত্ব ছিল অন্তত সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া।
এ প্রেক্ষাপটে গণপরিষদ গঠন বা সেকেন্ড রিপাবলিক সংক্রান্ত নাগরিক পার্টির প্রস্তাবও কার্যত হারিয়ে গেল। অথচ নাগরিক সমাজভিত্তিক এ পরিষদ একটি বিকল্প শক্তি হয়ে উঠতে পারত, যা দলীয় মেরুকরণকে কিছুটা হলেও ভাঙত। কিন্তু কমিশনের দোদুল্যমান অবস্থায়, আর বিএনপির অস্বীকৃতির কারণে এ ধারণাটি কার্যত কাগজেই রয়ে গেল। এখন প্রশ্ন হলো, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য গণভোট আয়োজন কি সম্ভব ছিল না? জামায়াতসহ অনেক দলই গণভোটের সুপারিশ করেছিল কেননা গণভোটে জনগণকে সরাসরি মতামত প্রতিফলিত হয়। কিন্তু সেখানেও বিএনপি আপত্তি তুলল। তাদের আশঙ্কা, জনগণের সরাসরি রায়ের মাধ্যমে তারা যেসব সংস্কারের বিরোধিতা করছে, সেগুলো বৈধতা পেয়ে যেতে পারে।
তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, লাতিন আমেরিকার বহু দেশ ফ্যাসিবাদী শাসন শেষে গণতন্ত্রে ফিরতে গিয়ে একই ধরনের সংকটে পড়েছিল। সেখানে বড় দলগুলো একে অপরের প্রতি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়েছে, ফলে সংস্কারের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। বাংলাদেশেও ইতিহাস যেন সে একই পথেই হাঁটছে। চিলির অগাস্তো পিনোশের পতনে বিরোধী দলগুলো একসাথে আন্দোলন করলেও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ব্রাজিলে সামরিক শাসনের অবসানের পরও বড়ো রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলোকে দীর্ঘসূত্রতায় ফেলে দেয়। আর্জেন্টিনাতেও সামরিক জান্তার পতনের পর গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করার জন্য বিচারব্যবস্থা ও নির্বাচনব্যবস্থায় সংস্কারের প্রস্তাব উঠেছিল, কিন্তু বড় দলগুলোর দ্বন্দ্ব এবং ক্ষমতার হিসাব-নিকাশে সেগুলোর অনেকই বাস্তবায়িত হয়নি।
বাংলাদেশের অবস্থার সঙ্গে এ দেশগুলোর অভিজ্ঞতাগুলো মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আমাদের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও মূলত একটি “ট্রানজিশনাল জাস্টিস” বা সংক্রমণকালীন গণতন্ত্রের প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারত। কিন্তু বিএনপি যখন পিআর পদ্ধতি, প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদসীমা বা দল ও সরকারের প্রধান আলাদা করার মতো সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিল, তখন বোঝা গেল তারা ক্ষমতার সম্ভাব্য পুনরাগমনের নিশ্চয়তায় সংস্কার বিলম্বিত করতে চাইছে। এ পরিস্থিতি অনেকটাই লাতিন আমেরিকার অভিজ্ঞতার মতো, যেখানে বড় দলগুলো জনগণের আকাক্সক্ষার চেয়ে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানকে বড়ো করে বিবেচনা করেছে।
চিলিতে গণভোট গণতন্ত্রের পথ খুলে দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে গণভোটের মতো প্রস্তাব বিএনপি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। আর্জেন্টিনায় সামরিক শাসনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিল, যদিও পরে দলীয় দ্বন্দ্ব তার অনেকটাই ভেস্তে দেয়। অথচ বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার এখনো সে সাহস দেখাতে পারছে না। এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছেÑঅন্তর্বর্তী সরকার কি চলমান অচলায়তন থেকে উত্তরণের নিমিত্তে গণভোট আয়োজনের সাহস দেখাবে? যদি না দেখায়, তবে ঐকমত্য কমিশনের মাসের পর মাসের আলোচনা নিছক সময়ক্ষেপণ হিসেবেই গণ্য হবে। এর বিপরীতে যদি সাহসী পদক্ষেপ ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার নিতে পারেন তাহলে অন্তত কিছু সংস্কারের ভিত রচিত হবে। নইলে দলীয় স্বার্থের বেড়াজালে বন্দি এ জাতি আবারও এক নতুন রাজনৈতিক স্থবিরতার দিকে পতিত হবে।
এরই মধ্যে অনেকেই মনে করছেন যে, ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর বাংলাদেশের সামনে যে বিরল সুযোগ এসেছিল, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থে তা অনেকটাই নষ্ট করে ফেলেছে। দলগুলো যেন বুঝতেই পারেনি যে, ঐকমত্য ছাড়া গণতন্ত্র টেকসই হয় না। দলীয় রাজনীতি যদি দেশের স্বার্থের চেয়ে বড় হয়ে যায়, তবে কোনো ঐকমত্যই সম্ভব নয়। আর ঐকমত্য না থাকলে জনগণের প্রত্যাশা চূর্ণবিচূর্ণ হয়, রাষ্ট্র দুর্বল হয়, গণতন্ত্র ঝুঁকির মুখে পড়ে। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে বারবার প্রমাণিত হয়েছে যে, কেবল ক্ষমতার লড়াই দিয়ে কোনো জাতির ভবিষ্যৎ গড়া যায় না। সবচেয়ে বড়ো কথা, এ যাত্রায় ঐকমত্য না হলে জুলাই বিপ্লবের চেতনা ও বিপ্লব পরবর্তী সম্ভাবনাগুলো হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। পাশাপাশি, জাতির অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শংকা রয়েছে। বিভিন্ন পরাশক্তি যারা বাংলাদেশের ওপর শকুনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারা রাজনৈতিক অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে বড়ো কোনো পদক্ষেপ নেয়ার সাহস দেখাতে পারে। আর তেমনটা হলে তা কারো জন্যই ভালো হবে না।