মনসুর আহমদ
বাংলার মুসলিম রাজনীতিবিদদের মধ্যে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ছিলেন মুসলিম স্বার্থরক্ষা ও সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তিদাতাদের শীর্ষে। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সামান্য মাত্র অংশ নিয়ে আলোচনা করলেই এ দাবির সত্যতা প্রমাণিত হবে। তার রাজনৈতিক আদর্শ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ঐতিহাসিক ড. এ বি এম মাহমুদ বলেনÑ ‘মুসলিম রাজনীতির এ সন্ধিক্ষণে বাংলার রাজনীতিক মঞ্চে এ কে ফজলুল হকের প্রবেশ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। তার জন্ম ১৮৭৩ সালে পূর্ববাংলার বরিশালে, এক উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরে। বাংলার কৃষক-শ্রমিক ও গণমানুষের সঙ্গে তার নিবীড় সম্পর্ক ছিল। ফলে বাংলার রাজনীতিতে তিনি নতুন প্রগতিশীল ধারার সূচনা করেন। কৃষক প্রজার মতো অধিকার আদায়ও তার রাজনীতির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। তিনি ছিলেন জনমানুষের বিশ্বস্ত প্রতিনিধি। সে জন্য তার রাজনীতি ও কর্মকাণ্ড প্রচলিত নবাব নাইট হতে স্বতন্ত্র ও ব্যতিক্রমধর্মী ছিল। ১৯১২ সালে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হন। প্রায় অর্ধ শতাব্দী তিনি ছিলেন বাংলার রাজনীতির মুকুটহীন সম্রাট ও মধ্যমণি। ফজলুল হক সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ঊর্ধ্বে ছিলেন; কিন্তু বঙ্গভঙ্গ রদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সিদ্ধান্তে মুসলমানদের মতামতের প্রতি অশ্রদ্ধা ও তাচ্ছিল্য তাহাকে মর্মাহত করে। ফজলুল হক আইন পরিষদে প্রবেশ করেই তার প্রথম বক্তৃতাতে অত্যন্ত জোরালো ভাষায় সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন এবং মুসলমানদের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। ফজলুল হকের নেতৃত্বে বাংলার মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার জোয়ার আসে। বাংলার মুসলিম মধ্যবিত্ত সৃষ্টি ও তাদের আত্মপ্রতিষ্ঠার পেছনে ফজলুল হকের অবদান সবচেয়ে বেশি।’
ফজলুল হক ছিলেন হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির অগ্রদূত। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে তুরস্ক স্বীয় স্বার্থে জার্মানির পক্ষ গ্রহণ করে। মিত্রশক্তি বৃটিশ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।এ সময় উপমহাদেশের মুসলমানদেরকে খুশি রাখার জন্য চতুর ব্রিটিশ সরকার স্বীয় স্বার্থে প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হয় যে, যুদ্ধের ফলাফলে খিলাফতের কোন ক্ষতি হবে না। ফলে কংগ্রেস ও লীগের মধ্যে সমঝোতা শুরু হয়। লীগ ও কংগ্রেস নেতারা সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে জনগণের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক মুক্তির জন্য নতুন প্রগতিশীল কর্মসূচী গ্রহণ করে। উভয় দলই শাসন সংস্কার দাবি করে। কেন্দ্রীয় লীগ নেতা জিন্নাহ ও বাংলার ফজলুল হক প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতাদের সক্রিয় সহযোগিতার ফলে ১৯১৬ সালে লীগ- কংগ্রেসের মধ্যে ঐতিহাসিক লক্ষেèৗ চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তি ভারতের হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
লক্ষেèৗ চুক্তির ফলে কংগ্রেস রাজনীতি ক্ষেত্রে মুসলমানদের স্বাতন্ত্র অধিকারের দাবি স্বীকার করে লয় এবং পরোক্ষভাবে পাকিস্তান আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। ফজলুল হক , মওলানা আজাদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ দেশের ভবিষ্যত ও সার্বিক কল্যাণের কথা চিন্তা করে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন এবং দীর্ঘদিন হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতির প্রবাহকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করেন।
বিশ্বযুদ্ধ শেষে বৃটিশ সেভার্স চুক্তি সম্পন্ন করে। এ চুক্তি অনুসারে ব্রিটিশ ও অন্যান্য মিত্র শক্তি পরাজিত তুরস্ককে নিজদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ভারতীয় মুসলমানদের মনে তাতে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কারণ তুর্কী খেলাফত তৎকালীন বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব, একতা , ও আশা আকাক্সক্ষার প্রতীক রূপে গণ্য ছিল। মুসলমানরা খেলাফতের সম্মান ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়। মওলানা মুহম্মদ আলী, শওকত আলী প্রমুখ নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে দুর্বার খেলাফত আন্দেলন গড়ে উঠে। বাংলায় এ. কে. ফজলুল হক ও মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে খেলাফত আন্দোলন গড়ে ওঠে। ফজলুল হক প্রথম থেকেই এ আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন এবং ১৯১৯ সালের নভেম্বরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত খিলাফত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯২০ সালের ১ জুন এলাহাবাদে খিলাফত কমিটির আহ্বানে হিন্দু মুসলিম নেতাদের মিলিত একটি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম নেতারা হিন্দু নেতাদের অসহযোগ নীতিতে উদ্বুদ্ধ করেন। অসহযোগ আন্দোলন বাংলাদেশে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল।
অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি হিসাবে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ ছাত্রদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ও বিলাতি পোষাক বর্জনের আহ্বান জানায়। ফজলুল হকের নিকট অনগ্রসর মুসলিম সমাজের জন্য শিক্ষা প্রসার ছিল প্রথম ও প্রধান কর্তব্য। সেজন্য তিনি কংগ্রেসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বর্জন নীতিকে সমর্থন করতে পারেননি। ১৯২০ সালের ১২ ডিসেম্বর ঢাকার নর্থব্রুক হলে নওয়াব হাবিবুল্লার আহ্বানে বংগীয় মুসলমান সম্মিলনীর বিশেষ এক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল স্কুল-কলেজ ইত্যাদি বর্জনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা। ঐ সভার সভাপতি ছিলেন ফজলুল হক। এ. কে ফজলুল হক সভাপতির ভাষণে বলেন :
মুসলমান সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক স্বার্থে সভা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে যে, ইংল্যান্ড ও মিত্রশক্তি খিলাফত প্রশ্নে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে মুসলমান ধর্মের অবমাননা হয়েছে। এর প্রতিবিধানের জন্য কোন বৈধ উপায় অবলম্বন করা হলে এই সভা তা সমর্থন করে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বর্জনের যে আন্দোলন চলছে, এ সভা তার তীব্র প্রতিবাদ করেছ। সরকার স্কুলে যে অর্থ দিয়ে থাকেন তা আমাদেরই প্রদত্ত। জাতীয় বিদ্যালয় সমূহ গড়তে ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। এ অর্থ কারা দেবে? কাজেই স্কুল কলেজ ত্যাগ করে ভবিষ্যৎ জীবন নষ্ট করার কোন মানে নেই।’(১) এ ভাষণে রয়েছে মুসলিম জাতির স্বার্থ সংরক্ষণের তার এক মহান প্রয়াস। মুসলমানদের শিক্ষা উন্নয়নেও ফজলুল হক ছিলেন নিরলস নেতা। বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলমানদের অসন্তুষ্টি দূরী করণের জন্য তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকায় এলে কয়েক জন মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে ফজলুল হক তার সাথে দেখা করে বিভিন্ন আলোচনার মাঝে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তড়িত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।‘ ফজলুল হক এ সত্য উপলদ্ধি করেছিলেন যে, মুসলিম জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির চাবি কাঠি হচ্ছে শিক্ষা। এ কারণে তার কোয়ালিশন মন্ত্রী সভায় নিজে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ’
কৃষক-প্রজা আন্দোলন বাংলাদেশে শুরু হয় বিগত বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে। এ আন্দোলন ছিল খিলাফত-স্বরাজ আন্দোলনের ১০ বছর আগেকার আন্দোলন। প্রকৃতিগতভাবেই এ আন্দোলনটি ছিল ধর্মনিরপেক্ষ। কারণ কৃষক প্রজা হিন্দু হোক আর মুসলমান হোক, তারা ছিল ভূক্তভোগী। কিন্তু পরবর্তী সময় এ আন্দোলনটি অনেকটা সাম্প্রদায়িক আকার ধারণ করে। কৃষক -প্রজার বেশির ভাগই ছিল মুসলমান। সে কারণে জমিদারেরা প্রজা সংক্রান্ত আইন কানুন প্রণয়নের সময় জমিদারের স্বার্থটাই বেশি করে দেখতেন।
১৯২৮ সালে প্রজাসত্ত আইনের প্রশ্নে দল নির্বিশেষে সব হিন্দু সদস্য জমিদারের পক্ষে এবং দল নির্বিশেষে সব মুসলমান প্রজার পক্ষে ভোট দেন। তা ছাড়া ঐ বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কংগ্রেসের উদ্যোগে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় কনভেনশনে নেহেরু রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় এবং তাতে স্বতন্ত্র নির্বাচন সহ মুসলমানদের অন্যান্য দাবি-দাওয়া উপেক্ষিত হয়। ফলে মুসলিম নেৃবৃন্দ কংগ্রেস ত্যাগ করতে শুরু করেন। তখন এক ফজলুল হক, মওলানা আকরাম খা প্রমূখদের উদ্যোগে ১৯২৯ সালে কলকাতায় ‘নিখিল বংগ প্রজা সমিতি’ গঠিত হয়। স্যার আবদুর রহীম ঐ সভার সভাপতি এবং মওলানা আকরাম খাঁ সেক্রেটারী নির্বাচিত হন। ১৯৩৫ সালে সমিতির ময়মনসিংহ অধিবেশনে এ. কে. ফজলুল হক সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় বাংলার রাজনীতিতে মধ্যবিত্তের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারত উপমহাদেশে মুসলিম নেতাদের মধ্যে তিনি সর্বাগ্রে উপলদ্ধি করেছিলেন যে, জনসমর্থন ছাড়া কোন রাজনৈতিক আন্দেলনের পক্ষে দেশের সার্বিক মঙ্গল সাধন সম্ভব নয়। তাই তিনি কৃষক, প্রজা ও মধ্যবিত্তদেরকে একত্রে সংঘবদ্ধ করেন। শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের নেতৃত্বে প্রজা সমিতি নবজীবন লাভ করেএবং ১৯৩৬ সালে তা কৃষক-প্রজা পার্টি নাম ধারণ করে।(২)
কংগ্রেসের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফজলুল হক ছিলেন এক সাহসী কন্ঠস্বর। ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ১৯৩৭ সালে প্রাদেশিক আইন সভার নির্বাচন নুষ্ঠিত হয়। যে সমস্ত প্রদেশ গুলিতে কংগ্রেস সরকার গঠন করেছিল সে সমস্ত প্রদেশে স্থানীয় কংগ্রেস কমিটি গুলি সমান্তরাল সরকার হিসাবে কাজ করতে থাকে। কংগ্রেস শাসিত প্রদেশে মুসলমানদের উপর যে নির্যাতন চালানো হচ্ছিল তার বিস্তারিত একটি ফিরিস্তি দিয়ে তৎকালীন বংগদেশের প্রধান মন্ত্রী জনাব এ.কে. ফজলুল হক কংগ্রেস নেতা জওহর লাল নেহেরুর কাছে এক সুদীর্ঘ পত্র লেখেন এবং এ সমস্ত জোর জুলুমের অবসান ঘটানের জন্য অনুরোধ জানান।(৪) কংগ্রেস মন্ত্রীসভা গুলির পদত্যাগের পরপরই বাংলার প্রধান মন্ত্রী ফজলুল হক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দেয়ার উদ্দেশ্যে কংগ্রেস মার মুখো হিন্দুদেরকে চরম ঔদ্ধত্য প্রদর্শনের জন্য মাঠে নামিয়েছে। সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর কংগ্রেস তার ইচ্ছা ও সংকল্প চাপিয়ে দেয়ার জন্য এ কাজ শুরু করেছে।’ এ.কে. ফজলুল হক ‘কংগ্রেস শাসনে মুসলমানদের দুর্ভোগ’ শীর্ষক পুস্তিকা প্রণয়ন করে কংগ্রেসী অত্যাচারের পরিমাপ লিপিবদ্ধ করেন।(৩)
১৯৩৭ সালের নির্বাচন বাংলার ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা। এ নির্বাচন যুদ্ধ অসাম্প্রদায়িক কৃষক প্রজাপার্টি ও এবং মুসলিম লীগ এ দু’দলের পার্লামেন্টারি সংগ্রাম হলেও এর প্রভাব ছিল সুদূর প্রসারী। এ নির্বাচনে উভয় দলের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা হয়। ১১৯ টি সংরক্ষিত মুসলমান আসনের মধ্যে মুসলিম লীগ ৪০ টি আসন পায় এবং কৃষক প্রজাপার্টি পায় ৩৮ টি আসন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪১ টি আসন পায়। নির্বাচনের পর স্বতন্ত্র মুসলমসান প্রার্থদের কেউ কেউ মুসলিমলীগে এবংকৃষক প্রজাপার্টিতে যোগ দেয় । এর ফলে ব্যবস্থাপক সভায় কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০ এবং মুসলিম লীগ ও কৃষক প্রজাপার্টির সদস্য সংখ্যা যথাক্রমে ৫৯ ও ৫৫ জন।(৫)
কোন দলই একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে সমস্যা দেখা দিল। গভর্ণর প্রথমে শরৎ বসুকে মন্ত্রী সভা গঠন করতে ডাকেন কিন্তু তিনি কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠন করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। হিন্দু নেতাদের অদূরদর্শিতা ও অনুদারতা হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক দূরত্ব আরও প্রসারিত করে। কংগ্রেস নেতাদের অনমনীয় মনোভাবই শেষ পর্যন্ত ফজলুল হককে মুসলিম লীগের সঙ্গে কোয়ালিশন গঠনে বাধ্য করে।(৬) মুসলিম লীগও কংগ্রেস প্রজাপার্টি কোয়ালিশন গঠিত হলে মুসলিম স্বার্থ পরিপন্থী হতে পারে ভেবে ফজলুল হককে প্রধানমন্ত্রীসহ কৃষক প্রজা পার্টির কার্যসূচী অনেকটা গ্রহণে করতে রাজি হল। অতঃপর ফজলুল হকের নেতৃত্বে কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়। মন্ত্রীসভা গঠনের অল্প দিনের মধ্যে মন্ত্রীসভার স্থিতিশীলতা ও সংহতির জন্য ফজলুল হক মুসলিম লীগে যোগদান করেন এবং সভাপতি নির্বাচিত হন। হক সাহেবের মন্ত্রী সভার তিন বছরে বাংলার অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে একটি শান্ত বিপ্লব সাধিত হয়। কৃষক প্রজা সাধারণ এবং বিশেষ ভাবে মুসলমানদের জন্য এ সময়কে স্বর্ণ যুগ বলা যেতে পারে। ফজলুল হক সাহেবের সাড়ে চার বছরের প্রধান মন্ত্রিত্ব তার জীবনে এবং অবিভক্ত বাংলার মুসলিম রাজনৈতিক শক্তিতে এক নব জোয়ার এনে দেয়।
ফজলুল হক ছিলেন পাকিস্তান সৃষ্টির সংগ্রামী পুরষদের মধ্যে অগ্রগণ্য। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ ’-এর ২৭তম অধিবেশনে এ.কে. ফজলুল হকের প্রস্তাব ক্রমে নিম্নলিখিত ভাষায় পাকিস্তান প্রস্তাব গৃহীত হয়Ñ ‘Resolved that it is the considered view of this session of All India Muslim Leage that no constitutional plan would workable in this country or acceptable to the Muslims unless it is designed on the following basic principles, viz, that geographically contiguous units are demarcated into regions which should be so constituted, with such territorial readjustments as may be necessary, that the areas in which the Muslims are numerically in majority as in the North–Western and Eastern zones of India, should be grouped to constitute independent States in which the constituent units shall be autonomous and sovereign (৭)’ বিপুল করতালি ও হর্ষধ্বণির দ্বারা প্রস্তাবটি অভিনন্দিত ও গৃহীত হয়। এ সামান্য আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, শেরেবাংলার রাজনীতি ছিল সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য, বিশেষ করে মুসলমানদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখাই ছিল তার জীবনের রাজনৈতিক মূল লক্ষ্য।
লেখক : প্রবীণ প্রকৌশলী ও প্রাবন্ধিক