ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
বাংলাদেশে কওমি ঘরানায় ইসলামি রাজনীতির প্রবক্তা, বীর সিপাহসালার, আধ্যাত্মিক রাহবার, উপমহাদেশে অসংখ্য আলেমের উস্তাদ মুহাম্মদুল্লাহ্ হাফেজ্জী (রহ.) হুজুরের কনিষ্ঠ সন্তান আতাউল্লাহ হাফেজ্জী (জন্ম: ১০ জানুয়ারি ১৯৪৮, ইন্তিকাল: ০৪ এপ্রিল ২০২৫) ইন্তিকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী স্ত্রী, দুই পুত্র ও এক কন্যাসন্তান রেখে গেছেন। তিনি দেওবন্দি ধারার বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার, রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির, জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়ার পরিচালক এবং আম্বরশাহ শাহী জামে মসজিদের প্রধান খতিব ছিলেন তিনি।
আতাউল্লাহ হাফেজ্জী রহিমাহুল্লাহ্ লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর থানাধীন লুধুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী রহিমাহুল্লাহ্ এর ছোট ছেলে। তিনি কওমি মাদরাসা শিক্ষায় হাফেজে কুরআন, কারী, দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেছেন। তার মরহুম পিতার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি ইসলামী রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ফজলুল হক আমিনীর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির নেতা হিসেবেও দীর্ঘদিন দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালের ২৯ নবেম্বর বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রতিনিধি সম্মেলনে দলের আমির মনোনীত হন এবং ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়ার মুহতামিমের দায়িত্ব পান। ২০২০ সালের ২৯ নবেম্বর তিনি পুনরায় দলের আমির নির্বাচিত হন।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে, ১৯৯৪ সালে নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিনের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন ও ২০০১ সালের ফতোয়া বিরোধী রায়ের প্রতিবাদ আন্দোলনে তিনি সরাসরি নেতৃত্ব দেন। ২০০৭ সালে দৈনিক প্রথম আলো কর্তৃক রাসূল (সা.)কে ব্যঙ্গ করে কার্টুন ছাপা’র প্রতিবাদে সর্বপ্রথম তিনি ও তার বড় ভাইয়ের নেতৃত্বে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃত্ব দেন এবং পরবর্তীকালে এ আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৭ সালে নারী নীতিমালা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেছেন। ২০১৩ সালে নাস্তিক-মুরতাদ-ব্লগারদের বিরুদ্ধে খেলাফত আন্দোলনের ব্যানারে তিনিই প্রথম আন্দোলনের ডাক দেন। পরবর্তীকালে এ আন্দোলন ‘হেফাজতে ইসলামে’র নেতৃত্বে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়লে হেফাজতের ব্যানারেও তিনি নেতৃত্ব দেন। আল্লাহ তায়ালা আতাউল্লাহ্ হাফেজ্জী হুজুরকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান বানিয়ে নিক। শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালা পরিবার পরিজনকে ছবরে জামিল নসিব করুন। আমিন।
লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক।