আরিফুল ইসলাম রাজিন
গত বছরের ২৬ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনা জুলাই আন্দোলনে আহতদের দেখতে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে যান। সেখানে জুলাই আন্দোলনে গুলীবিদ্ধ এক আহত যোদ্ধার সাথে শেখ হাসিনা কথা বলতে গেলে তিনি শেখ হাসিনাকে ম্যাডাম বলে সম্মোধন করেন। শেখ হাসিনা তাকে ‘আপা’ বলতে বলেন। কিন্তু সে যোদ্ধা বীরদর্পে, প্রতিবাদী কণ্ঠে বলেন, ‘আপনি কখনোই আমাদের আপা হতে পারেন না। আপনি আমাদের আপা হলে কখনোই আমাদের বুকে গুলী চালাতে পারতেন না। আপনার নির্দেশেই আপনার পুলিশ প্রশাসন নির্বিচারে মানুষ মারছে। আমি আপনাকে কখনোই আপা ডাকবো না।’ এমন সাহসী কথা শুনে শেখ হাসিনা ক্রোধের অনলে ফেটে পড়ে এবং নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ আদেশ দিয়ে সে আহত যোদ্ধার অঘোষিত মৃত্যুর পরোয়ানা জারি করেন শেখ হাসিনা। হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যু প্রহর গুনতে থাকার মুহূর্তেও স্বৈরাচারের সাথে আপোস না করে, জীবনের মায়া না করে, দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে শেখ হাসিনাকে খুনি বলা সে বীরযোদ্ধা হচ্ছেন ঢাকা কলেজের ফিলোসফি বিভাগের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ইমরান।
ইমরান ঢাকা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই দেশের মানুষের মুক্তির আন্দোলনে এবং সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। জুলাইয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সম্মুখ সারির আন্দোলনকারী ছিলেন তিনি। ১৬ জুলাই সারাদেশে শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে দেশের তরে প্রাণ দিতে পুলিশের গুলির বিপরীতে বুক ভরা সাহস নিয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় রাজপথে। ১৯ জুলাই ২০২৪ রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় আন্দোলন করার সময় পুলিশ তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালায়। গুলি তার হাঁটু ছিঁড়ে বের হয়ে যায় এবং হাঁটুতে ৬ ইঞ্চি গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তিনি সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার সহপাঠী ও আন্দোলনকারীরা তাকে ধরে প্রথমে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আন্দোলনে আহত হওয়ায় তাকে ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে অ্যাম্বুলেন্সে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা পাননি। অ্যাম্বুলেন্স পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার সময় ধানমণ্ডি থানা পুলিশ অ্যাম্বুলেন্স আটকিয়ে ইমরানের সহায়তাকারী পাঁচজন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং এম্বুলেন্সকে হাসপাতালে যেতে দেয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৪ জনকে পুলিশ ছেড়ে দিলেও ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের নেতা রিফাত হোসেনকে চিনতে পারে পুলিশের সাথে থাকা ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। ছাত্রলীগ তাকে তাদের কার্যালয়ে নিয়ে দিনভর অমানবিক নির্যাতন চালায় এবং আধমরা অবস্থায় আবারো পুলিশে সোপর্দ করে।
পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে ২৬ জুলাই শেখ হাসিনা ইমরানের নো ট্রিটমেন্ট নো রিলিজ আদেশ দেয়ায় চিকিৎসার অভাবে তার পায়ের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর পঙ্গু হাসপাতালে পুনরায় তার চিকিৎসা শুরু হয়। তবে ততদিনে তার পায়ে ইনফেকশন দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত মোট ২৫ বার তার পায়ের অপারেশন করা হয় তবুও পায়ে নিত্যদিন ইনফেকশন দেখা দিচ্ছে। দেশপ্রেমে বলিয়ান দেশপ্রেমিক ইমরান বারবার অপারেশন ও ইনফেকশনের দুঃখ কষ্টে ভুগছে সেটা আমাদের সকলের হৃদয়কে ব্যথিত করছে। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তার পা আগের মতো হবে সেই স্বপ্ন বুনছেন ইমরান, তার পরিবার ও তার সহপাঠীরা। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার অভাবে বারবার ইনফেকশন দেখা দিচ্ছে ফলে তার পা কেটে ফেলার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ করতে ইমরানের পরিবার সরকারের কাছে আবেদন জানালেও সরকারের কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।
এটি শুধু ইমরানের ক্ষেত্রেই নয়, অধিকাংশ আহত যোদ্ধারা উন্নত চিকিৎসার অভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছে না। এখনো হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটপট করছে। আমরা যখন স্বৈরাচার মুক্ত দেশে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করছি, তখন আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারীরা হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় মৃত্যু অথবা অঙ্গহানি ঘটার প্রহর গুনছেন। দিনের পর দিন একের পর এক অপারেশনে তাদের ক’ বেড়েই চলেছে। স্বৈরাচারের পতনের এক বছর পার হলেও এখনো আহতরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না, মৃত্যু অঙ্গহানির দুশ্চিন্তা থেকে বের হতে পারছে না। আন্দোলনে কেউ দু’চোখ হারিয়েছেন, কেউ এক চোখ, কেউ হারিয়েছে পা, কেউ হারিয়েছে হাত এবং প্রায় ২ হাজার ছাত্র জনতা হারিয়েছে তাদের জীবন। ১ বছর পরেও যদি সঠিক চিকিৎসার অভাবে কোনো যোদ্ধার অঙ্গহানি ঘটে তবে সেটা দেশের সকল মুক্তিকামী মানুষের জন্যে অপমান জনক। সেটা শহীদদের, আহতদের রক্তের সাথে, তাদের ত্যাগের সাথে বেইমানি করার শামিল।।
যাদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলো দেশ তাদের উন্নত চিকিৎসাতে সরকারের কৃপণতা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। উন্নত চিকিৎসা পাওয়া প্রতিটি আহত যোদ্ধার অধিকার। সরকার তাদের সেই অধিকার থেকে কোনোভাবেই বঞ্চিত করতে পারে না। আর কালক্ষেপণ না করে ইমরানকে এবং ইমরানের মতো গুরুতর আহত যোদ্ধাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।আহত জুলাই যোদ্ধাদের আর্তনাদ
॥ আরিফুল ইসলাম রাজিন ॥
গত বছরের ২৬ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনা জুলাই আন্দোলনে আহতদের দেখতে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে যান। সেখানে জুলাই আন্দোলনে গুলীবিদ্ধ এক আহত যোদ্ধার সাথে শেখ হাসিনা কথা বলতে গেলে তিনি শেখ হাসিনাকে ম্যাডাম বলে সম্মোধন করেন। শেখ হাসিনা তাকে ‘আপা’ বলতে বলেন। কিন্তু সে যোদ্ধা বীরদর্পে, প্রতিবাদী কণ্ঠে বলেন, ‘আপনি কখনোই আমাদের আপা হতে পারেন না। আপনি আমাদের আপা হলে কখনোই আমাদের বুকে গুলী চালাতে পারতেন না। আপনার নির্দেশেই আপনার পুলিশ প্রশাসন নির্বিচারে মানুষ মারছে। আমি আপনাকে কখনোই আপা ডাকবো না।’ এমন সাহসী কথা শুনে শেখ হাসিনা ক্রোধের অনলে ফেটে পড়ে এবং নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ আদেশ দিয়ে সে আহত যোদ্ধার অঘোষিত মৃত্যুর পরোয়ানা জারি করেন শেখ হাসিনা। হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যু প্রহর গুনতে থাকার মুহূর্তেও স্বৈরাচারের সাথে আপোস না করে, জীবনের মায়া না করে, দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে শেখ হাসিনাকে খুনি বলা সে বীরযোদ্ধা হচ্ছেন ঢাকা কলেজের ফিলোসফি বিভাগের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ইমরান।
ইমরান ঢাকা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই দেশের মানুষের মুক্তির আন্দোলনে এবং সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। জুলাইয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সম্মুখ সারির আন্দোলনকারী ছিলেন তিনি। ১৬ জুলাই সারাদেশে শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে দেশের তরে প্রাণ দিতে পুলিশের গুলির বিপরীতে বুক ভরা সাহস নিয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় রাজপথে। ১৯ জুলাই ২০২৪ রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় আন্দোলন করার সময় পুলিশ তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালায়। গুলি তার হাঁটু ছিঁড়ে বের হয়ে যায় এবং হাঁটুতে ৬ ইঞ্চি গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তিনি সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার সহপাঠী ও আন্দোলনকারীরা তাকে ধরে প্রথমে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আন্দোলনে আহত হওয়ায় তাকে ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে অ্যাম্বুলেন্সে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা পাননি। অ্যাম্বুলেন্স পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার সময় ধানমণ্ডি থানা পুলিশ অ্যাম্বুলেন্স আটকিয়ে ইমরানের সহায়তাকারী পাঁচজন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং এম্বুলেন্সকে হাসপাতালে যেতে দেয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৪ জনকে পুলিশ ছেড়ে দিলেও ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের নেতা রিফাত হোসেনকে চিনতে পারে পুলিশের সাথে থাকা ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। ছাত্রলীগ তাকে তাদের কার্যালয়ে নিয়ে দিনভর অমানবিক নির্যাতন চালায় এবং আধমরা অবস্থায় আবারো পুলিশে সোপর্দ করে।
পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে ২৬ জুলাই শেখ হাসিনা ইমরানের নো ট্রিটমেন্ট নো রিলিজ আদেশ দেয়ায় চিকিৎসার অভাবে তার পায়ের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর পঙ্গু হাসপাতালে পুনরায় তার চিকিৎসা শুরু হয়। তবে ততদিনে তার পায়ে ইনফেকশন দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত মোট ২৫ বার তার পায়ের অপারেশন করা হয় তবুও পায়ে নিত্যদিন ইনফেকশন দেখা দিচ্ছে। দেশপ্রেমে বলিয়ান দেশপ্রেমিক ইমরান বারবার অপারেশন ও ইনফেকশনের দুঃখ কষ্টে ভুগছে সেটা আমাদের সকলের হৃদয়কে ব্যথিত করছে। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তার পা আগের মতো হবে সেই স্বপ্ন বুনছেন ইমরান, তার পরিবার ও তার সহপাঠীরা। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার অভাবে বারবার ইনফেকশন দেখা দিচ্ছে ফলে তার পা কেটে ফেলার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ করতে ইমরানের পরিবার সরকারের কাছে আবেদন জানালেও সরকারের কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।
এটি শুধু ইমরানের ক্ষেত্রেই নয়, অধিকাংশ আহত যোদ্ধারা উন্নত চিকিৎসার অভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছে না। এখনো হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটপট করছে। আমরা যখন স্বৈরাচার মুক্ত দেশে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করছি, তখন আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারীরা হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় মৃত্যু অথবা অঙ্গহানি ঘটার প্রহর গুনছেন। দিনের পর দিন একের পর এক অপারেশনে তাদের ক’ বেড়েই চলেছে। স্বৈরাচারের পতনের এক বছর পার হলেও এখনো আহতরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না, মৃত্যু অঙ্গহানির দুশ্চিন্তা থেকে বের হতে পারছে না। আন্দোলনে কেউ দু’চোখ হারিয়েছেন, কেউ এক চোখ, কেউ হারিয়েছে পা, কেউ হারিয়েছে হাত এবং প্রায় ২ হাজার ছাত্র জনতা হারিয়েছে তাদের জীবন। ১ বছর পরেও যদি সঠিক চিকিৎসার অভাবে কোনো যোদ্ধার অঙ্গহানি ঘটে তবে সেটা দেশের সকল মুক্তিকামী মানুষের জন্যে অপমান জনক। সেটা শহীদদের, আহতদের রক্তের সাথে, তাদের ত্যাগের সাথে বেইমানি করার শামিল।।
যাদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলো দেশ তাদের উন্নত চিকিৎসাতে সরকারের কৃপণতা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। উন্নত চিকিৎসা পাওয়া প্রতিটি আহত যোদ্ধার অধিকার। সরকার তাদের সেই অধিকার থেকে কোনোভাবেই বঞ্চিত করতে পারে না। আর কালক্ষেপণ না করে ইমরানকে এবং ইমরানের মতো গুরুতর আহত যোদ্ধাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।