সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি সম্পাদিত এবং গত অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলে হামলার পর হামাসের সাথে ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি এটিই প্রথম নয় বরং চলতি বছরেরর জানুয়ারি মাসে আরও একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিলো। কিন্তু দখলদার ইসরাইলী বাহিনীর হঠকারীতার কারণে তা টেকসই হয়নি বরং তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেই গাজায় ব্যাপক নিধনযজ্ঞ ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।
তবে নতুন করে হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পর বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ একে স্বাগত জানিয়েছে। হামাস এবং ইসরাইল স্ব-স্ব পক্ষ থেকে আশাবাদের কথা জানানো হয়েছে। এখন গাজায় চলছে আনন্দ উৎসব। ইসরাইলে এমনটি না হলেও হামাসের হাতে জিম্মিদের স্বজনদেরকে উল্লাস করতে দেখা দেছে। এদিকে ‘গাজা যুদ্ধ শেষ হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্য স্বাভাবিক হতে চলেছে’ গত ১২ অক্টোবর ইসরায়েলের পথে যাত্রা করার আগে এমন আশাবাদই ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন থেকে ইসরায়েল রওনা হওয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ যুদ্ধ শেষ, আপনারা এটা বুঝতে পারছেন।’ এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়, সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর হাজার হাজার ফিলিস্তিনী গাজা নগরীতে নিজ নিজ ঘরে ফিরছেন। মূলত, তারা নতুন করে আশাবাধী হয়ে উঠেছেন। যদিও দু’বছর ধরে চলা যুদ্ধে গাজা নগরীর বেশির ভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নগরীর ৯০ শতাংশ ইমারত। তবে নতুন যুদ্ধবিরতির পর আশা করা হচ্ছে, এ যুদ্ধ শেষ হবে এবং গাজা নগরী পুনর্গঠিত হবে। গত ১২ অক্টোবর টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আগামীকাল থেকে নতুন পথের যাত্রা শুরু হবে। একটি নির্মাণের পথ, একটি সৃষ্টির পথ এবং আমি আশা করছি, এটি হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের মিলনের পথ হবে।’ চুক্তির শর্ত মোতাবেক হামাস ইতোমধ্যেই সকল ইসরাইলী বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। ইসরাইলও বন্দী মুক্তি দেওয়া শুরু করেছে। একথা কারো অজানা নয় যে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একসময় ‘বর্ণবাদী’, ‘অরাজকতার জনক’ এবং গাজা নিয়ে ‘অযৌক্তিক পরিকল্পনা’ পোষণকারী ব্যক্তি বলে আখ্যা দিয়েছিল। তবু গত মাসে এক অবিশ্বাস্য ফোনকল হামাসকে এমন বিশ্বাসে রাজি করিয়েছে যে, যুদ্ধের জিম্মিদের সবাইকে ছেড়ে দিলে ট্রাম্প ইসরায়েলকে শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করতে পারবেন। উল্লেখ্য, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সঙ্গে নিয়ে কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন দেন। উদ্দেশ্য ছিল দোহায় হামাসের রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত একটি আবাসিক কমপ্লেক্সে ইসরায়েলি হামলার জন্য ক্ষমা চাওয়া।
এরপর গত ৮ অক্টোবর ট্রাম্প-সমর্থিত এক যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে হামাস। চুক্তি অনুযায়ী, গত ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া এ যুদ্ধবিরতিতে হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি হয় এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারা ইতোমধ্যেই জিম্মিদের মুক্তিও দিয়েছে। বিনিময়ে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী পূর্ণ প্রত্যাহারের কোনো নিশ্চয়তা তারা পাননি। যা নতুন চুক্তির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। তবে হামাসের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, এটি বড় ধরনের এক ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ। কারণ, এর পুরোটাই নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ড ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর; তিনি যেন চুক্তি ভেস্তে যেতে না দেন। হামাস সূত্র বলছে, সংগঠনটি জানে তাদের এ ঝুঁকি উল্টো ফলও দিতে পারে। তাদের আশঙ্কা, জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার পর ইসরাইল আবারও সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে যেমনটা হয়েছিল চলতি বছরে জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির পর। তবুও মিসরের শারম আল-শেখে ইসরায়েলের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনায় অংশ নিতে যাওয়া হামাস নেতারা যথেষ্ট আশ্বস্ত বোধ করছেন; তবে তা অবশ্যই পুরোপুরি নয়, বরং সবকিছুই রয়েছে আশা-নিরাশার দোলাচলেই রয়ে গেছে এখনো। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা এবং আঞ্চলিক শক্তিধর দেশগুলোর উপস্থিতি তাদের চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে উদ্বুদ্ধ করে, যদিও এতে ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ তাদের বহু গুরুত্বপূর্ণ দাবি অপূর্ণ রয়ে গেছে।
হামাসের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ‘ওই কনফারেন্স সেন্টারে ট্রাম্পের আগ্রহ খুব স্পষ্ট ছিল।’ এক মার্কিন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ওই ম্যারাথন বৈঠকের সময় ট্রাম্প নিজে তিনবার ফোন করেন। তবে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন যে, এ চুক্তি যুদ্ধের অবসান ঘটানোর পথ তৈরি করতে পারে যা শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের মাধ্যমে। তবে ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা গাজা পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপগুলো আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে কাতার হামলা ও জুনে ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধ বন্ধে ভূমিকা দু’ঘটনাতেই ট্রাম্পের দৃঢ় পদক্ষেপে হামাস নেতারা মনে করেছেন, তিনি জিম্মি মুক্তির পরও ইসরায়েলকে যুদ্ধ চালাতে দেবেন না বরং এক্ষেত্রে তিনি ইরাইলকে রীতিমত চাপে রাখবেন। এমন মন্তব্য করেছেন দু’ফিলিস্তিনী কর্মকর্তা এবং আলোচনায় যুক্ত এক সূত্র। ওয়াশিংটনের এক সূত্র জানিয়েছে, কাতার হামলা নিয়ে নেতানিয়াহুর ওপর ট্রাম্পের ক্ষোভই তাঁর দলের কাছে এক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, যা কাজে লাগিয়ে ইসরায়েলকে শান্তিচুক্তির কাঠামোয় আনতে চাপ দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক চুক্তি এরই ফলাফল বলে মনে করা হচ্ছে। হোয়াইট হাউস সূত্র জানাচ্ছে, ট্রাম্প উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখেন এবং কাতারের আমিরকে ব্যক্তিগতভাবে বন্ধু মনে করেন। তাই টেলিভিশনে হামলার ছবি দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হন। যা দখলদার ইসরাইলকে কিছুটা ব্যাকফুফে ফেলে দেয়। ওই হামলাকে তিনি ‘আরব বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মোড় ঘোরানো মুহূর্ত’ হিসেবে দেখেছিলেন। ট্রাম্প প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন যে, কাতারে আর কোনো ইসরাইলী হামলা হতে দেওয়া হবে না। তার একথা বেশ তাৎপর্য বহন করে। হামাসসহ অন্যান্য আঞ্চলিক পক্ষের চোখে এতে তার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে। গাজার এক ফিলিস্তিনী কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি কাতারকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছেন এতে হামাসের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে, যুদ্ধবিরতি টিকে থাকবে।’
গত দু’বছর ধরে গাজায় নির্বিচারে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে দখলদার ইসরাইলী বাহিনী। জায়নবাদীরা পুরো নগরীই এখন মৃত্যুপুরী ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারস এ জাতিগত নিধনের কথা স্বীকার করে বলেছে, ইসরায়েল গাজায় জীবনের প্রায় প্রতিটি উৎস ধ্বংস করে দিয়েছে। হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও পুরো পাড়া গুঁড়িয়ে দিয়ে ৯০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করেছে তারা। ইসরায়েল নির্বিচার হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৬৭ হাজার ১৬০ জন ফিলিস্তিনীকে হত্যা করেছে। হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৬৯ হাজার। হাজার হাজার মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে, যাঁদের সংখ্যা অজানা। তবে গাজার বেসামরিক নাগরিকেরা এ আশায় বুক বাঁধছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে মিসরে আলোচনা শেষে হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এখন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অনেকটাই হাতের নাগালে চলে এসেছে। আর সে আশায় বুক বেঁধে তারা এখন গাজায় ফিরতে শুরু করেছেন।
গত দু’বছরে ইসরাইল অসংখ্য মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তবে গাজায় একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি অর্জিত হলেও গাজার ফিলিস্তিনীদের স্বদেশ এবং বাড়িঘর ও মহল্লা পুনর্গঠনের মতো এক দুরূহ কাজের মুখোমুখি হতে হবে। জাতিসংঘের অনুমান, গাজার পুনর্গঠনের জন্য পাঁচ হাজার কোটি ডলারের বেশি প্রয়োজন হবে। এ উপত্যকাকে আবার বাসযোগ্য করে তুলতে কমপক্ষে ১৫ বছর সময় লাগতে পারে। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ২০১৭ সালের একটি নীতিপত্র অনুসারে, এ অনুমান এ শর্তে করা হয়েছে যে, ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ পুনর্গঠনে বড় বাধা সৃষ্টি করবে না। বর্তমানে দোহায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের সঙ্গে কর্মরত গাজার বিশেষজ্ঞ আজমি কেশাওয়ি ব্যাখ্যা করে বলেন, যুদ্ধ-পরবর্তী যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্মাণসামগ্রী প্রবেশের অনুমতি দেয়ার জন্য ইসরাইলের ওপর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োজন। কেশাওয়ি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ফিলিস্তিনীরা তাদের জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে সক্ষম। কিন্তু পুনর্গঠনের ইচ্ছা থাকাই যথেষ্ট নয়... এটি শুধু তাঁদের ওপর নির্ভর করে না।’
গাজার ভবিষ্যতের জন্য পুনর্গঠন অপরিহার্য হলেও এমন আশঙ্কাও রয়েছে যে, হামাস ক্ষমতা ছেড়ে দিলে এ ভূখণ্ড সংঘাত ও অরাজকতায় ডুবে যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘গাজায় হামাসের শাসনের একটি সুবিধা হলো তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।’ এ গণহত্যার সময় ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার নিরাপত্তা বাহিনীকে হত্যা করেছে এবং কুখ্যাত অপরাধী গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দিয়েছে, যারা গাজায় আসা সামান্য ত্রাণ চুরি করে সর্বোচ্চ লাভে বিক্রি করেছে।
ফাতাহ পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের (পিএ) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্যদিকে হামাস ইসরাইলের সঙ্গে লড়াইয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও গাজার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। ২০০৬ সালের নির্বাচনে হামাস জয়ী হওয়ার পরপরই ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। এ ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ ১৯৯৩ সালের অসলো শান্তিচুক্তির মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল।
এ নির্বাচনী ফলাফল যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে হতবাক করে দিয়েছিল। মূলত, এ নির্বাচনী ফলাফল তাদের কাছে মোটেই প্রত্যাশিত ছিলো না। কারণ, তারা হামাসকে একটি ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ফাতাহকে সমর্থন দেয়। এর ফলে সংক্ষিপ্ত একটি গৃহযুদ্ধ হয়। ২০০৭ সালের জুনের মধ্যে হামাস গাজা থেকে ফাতাহকে বিতাড়িত করে, যা ফিলিস্তিনী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিভেদকে আরও পাকা করে তোলে। আর এ বিভক্তির পুরোপুরি সুযোগ গ্রহণ করে দখলদার ইসরাইল।
তবে গাজায় দীর্ঘ সময় ধরে চলমান হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের নতুন করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এ চুক্তির সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে বলার কোন সময় আসনি। তবে
গাজায় নতুন করে য্দ্ধুবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর এবং তা কার্যকর হওয়ার পর মধ্যস্থকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা নিয়ে বেশ উচ্চাশা পোষণ করেছেন। তিনি গাজা সহ পুরো ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বেশ প্রত্যয়ী বলেই মনে হচ্ছে। হামাস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করলেও তারা আগের তুলনায় কিছুটা হলেও আশাবাদী। দৃশ্যত ইসলাইলের মনোভাবও ইতিবাচক বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, তারা সাম্প্রতিক সময়ে হামাস যোদ্ধাদের সাথে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। কিন্তু এর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলার সময় আসেনি। কারণ, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেও উভয় পক্ষই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হয়েছিলো। কিন্তু দখলদার বাহিনী সে চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছে। হত্যা করেছে হাজার হাজার নিরাপরাধ গাজাবাসীকে। এদের অধিকাংশই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।
এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলেও উত্তর গাজায় ইসরাইলী সেনাদের গুলিতে ছয় ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের সেনাবাহিনীর কাছাকাছি এসেছিলেন কয়েকজন। সন্দেহভাজন হিসেবে তাদের গুলি করা হয়েছে। ফিলিস্তিনী স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ছয়জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। হামাসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে ইসরাইলী সেনাবাহিনী জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় করা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে ইসরাইলী সেনারা নির্ধারিত সীমায় অবস্থান করছেন। সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা ওই সীমা অতিক্রম করেছিলেন, যা যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন। গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ গাজা উপত্যকার দুটি পৃথক ঘটনায় ইসরাইলী সেনারা ছয়জন ফিলিস্তিনীকে হত্যা করেছেন। এমন ন্যাক্কারজনক হত্যাকাণ্ডকে ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ যুদ্ধবিরতি চুক্তির মারাত্মক লংঘন হিসাবেই বিবেচনা করছে। যা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায় বলেই মনে করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যেই শান্তিচুক্তির মধ্যমনি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও নিজের খোলস বদলাতে শুরু করেছেন। সম্প্রতি গাজা যুদ্ধের অবসান প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হামাসকে নিরস্ত্র হতে বাধ্য করা হবে। প্রয়োজন হলে সহিংস উপায় অবলম্বন করা হবে। গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। ট্রাম্প বলেন, ‘যদি হামাস অস্ত্র নামিয়ে না রাখে, তাহলে আমরাই তাদের নিরস্ত্র করব; প্রয়োজনে সহিংসভাবেও। মার্কিন প্রেসিডেন্টের পূর্বের বক্তব্যগুলো থেকে ধারণা পাওয়া যায়, গাজায় হামাসকে সীমিত ভূমিকায় থাকতে দেয়া হতে পারে। যা সম্প্রতি স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তির সাথে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এবং সম্প্রতি সম্পাদিত শান্তিচুক্তি নিয়ে ইতোমধ্যেই কিছুটা হলেও অনিশ্চতা দেখা দিয়েছে।
আন্তজার্তিক বোদ্ধামহল মনে করছে, হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্ত করার পরই ইসরাইল আবার গাজায় পুরোদমে হামলা শুরু করতে পারে। যেমনটি করেছিলো চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। এছাড়াও ইসরাইল অতীতে কোনো চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলেনি। তাই নতুন করে শান্তিচুক্তি কার্যকরের পর গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন নিশ্চিত করে কিছু বলার সময় আসেনি। তাই এ নতুন শান্তিচুক্তির প্রভাব ও ফলাফল দেখার বিশ্ববাসীকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে হবে। তবে ভালো কিছু হোক এটাই বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের প্রত্যাশা। তবে গত ১৪ অক্টোবর ঘাতক বাহিনী কর্তৃক ৬ ফিলিস্তিনীতে হত্যা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক হামাসকে নিরস্ত্র করার হুঁশিয়ারি কোনোভাবেই ইতিবাচক নয়, বরং নতুন সংঘাতের ইঙ্গিত বহন করে।