মরুভূমিতে ‘পানি’ ও ইমারত শীর্ষে ‘উট’ অনুসন্ধান; চিকিৎসকের কবুতরের দুধের শর্তারোপ; বাতাসের অগ্রভাগ নিয়ে গবেষণা এক ধরনের মানসিক বিকৃতি ও উন্নাসিকতার পরিচয় বহন করে। কারণ পানিশূন্যতাই মরুভূমির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইমারতের ছাদে ‘উট’ খোঁজাও বাস্তবসম্মত নয়, ঠিক তেমনিভাবে কোন ভেষজ চিকিৎসক যদি চিকিৎসার জন্য কবুতরের দুধ অনুপান হিসাবে চাহিদাপত্র দেন, তাহলে বুঝতে হবে যে, চিকিৎসক তার অযোগ্যতা আড়াল করার জন্যই এমন অস্বাভাবিক শর্ত আরোপ করছেন। আর কেউ যদি বাতাসের অগ্রভাগ নিয়ে গবেষণা শুরু করে দেন, তাহলে ধরে নিতে হবে পৃথিবীর সবচেয়ে অথর্ব; ভণ্ড ও প্রতারক এ ব্যক্তি। তেমনিভাবে আওয়ামী লীগ বা দলটির নেতাদের ক্লিন ইমেজ খোঁজাও বাস্তবসম্মত নয়।
একথা কারো অজানা নয় যে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মুখে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর পর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী অপশাসন-দুঃশাসনের অবসান ঘটেছে। একই সাথে দলীয় শীর্ষনেতা সহ সকল সাবেক মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার পর্যন্ত দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। অবশ্য কেউ কেউ দেশেই গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে শোনা যায়। পলাতক অধিকাংশের সরব পদচারণা এখন তথাকথিত বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে। মূলত দেশটির সখ্য সব সময়ই ছিল গণবিরোধীদের অনুকূলে।
আমাদের দেশে গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ১৯৭৫ সালে এক রক্তাক্ত পট পরিবর্তনের মাধ্যমে আওয়ামী-বাকশালীদের প্রথম দফায় পতন হয়েছিলো। তখন বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া দেশ ছেড়ে গাট্টিগুট্টি বেঁধে পালানোর ঘটনা ঘটেনি। ৮ দল, ৭ দল ও ৫ দল তথা ৩ জোট এবং জামায়াতে ইসলামীর যুগপৎ আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী জেনারেল এরশাদের পতনের পর কেউ কেউ গণরোষ থেকে বাঁচার জন্য গা ঢাকা দিলেও সদলবলে পলায়নের দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়নি। এমনকি জেনারেল এরশাদ গ্রেফতারি বরণ করেছিলেন এবং সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ পরিসরে জেলও খেটেছেন। আবার মুক্ত হয়ে রাজনীতিও করেছেন। পৃষ্ঠপোষকতা করার সুযোগ পেয়েছেন স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসনের।
১৯৯৬ সালে বিএনপি বিরোধী দলের নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার দাবি মেনে নিয়ে সংবিধান সংশোধন করে কেয়ারটেকার সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলেও কাউকে পালাতে বা আত্মগোপনে থাকতে দেখা যায়নি বরং তারা পূর্ণশক্তি নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তবে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতা সহ প্রায় সকলকেই রীতিমতো গণপলায়নের মাধ্যমে দেশান্তরী হতে হয়েছে। যা বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর পতিত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানাবিধ আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। টকশো টেবিলে এ নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ আলোচনার অন্ত ছিলো না বা এখনো নেই। অবশ্য পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী পুত্র ৫ আগস্ট পরবর্তীতে বলেছিলেন, তার মা আর রাজনীতিতে ফিরতে চান না। তবে তিনি তার সে অবস্থানে বেশিদিন অটল থাকতে পারেন নি বরং তার মাকে বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দাবি করে এসেছেন বরাবরই। কিন্তু তার দাবির সাথে কেউ একমত হতে পারেননি। অবশ্য রাজনৈতিক বোদ্ধামহল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমত হতাশা ব্যক্ত করেছেন এবং বলেছেন যে, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আওয়ামী রাজনীতির রীতিমত অপমৃত্যু হয়েছে। যুক্তি হিসাবে তারা বলছেন, শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে তার দলের রীতিমতো দাফন-কাফন সুম্পন্ন করে গেছেন। তাদের দাবি দেশে থেকে কারাবরণ করলেও তার রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন সহজ হতো। যেমনটি হয়েছিলো জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সেনাপতির পলায়নের পর সার্বিক পরিস্থিতি যা হবার তাই হয়েছে। প্রতিপক্ষরা প্রায় বিনাযুদ্ধেই সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলেছেন। মূলত যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নের পর তাদের পক্ষে স্বাভাবিক রাজনীতের ফিরে আসার কোন সুযোগ নেই বলেই মনে করে করেন রাজনৈতিক বিশ্লষকরা। আবার কোন কোন আলোচক এও মন্তব্য করেছেন যে, আওয়ামী লীগ অতিদ্রুতার সাথেই রাজনীতিতে ফিরবে। এমনকি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বিজয়ীর বেশেই দেশে ফিরবেন। এখানেই শেষ নয় বরং খোদ শেখ হাসিনা নিজেই বলেছিলেন যে, তিনি যেকোন দিন ‘চট করে’ প্রধানমন্ত্রী হিসাবেই দেশে ফিরবেন। কিন্তু এসব বিষয় এখনো আলোচনা-পর্যালোচনার মধ্যেই রয়েছে। পলাতকরা এখনো পলাতকই রয়ে গেছেন। দেশে নির্বাচনী রোডম্যাড ঘোষিত হয়েছে এবং সে রোডম্যাপ ধরেই রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচনী কার্যক্রম পুরোদমে এগিয়ে চলেছে।
ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং সর্বস্তরের দলীয় নেতাদের গণপলায়নের পর তারা কিন্তু থেমে থাকে নি বরং নানাভাবে দৃশ্যপটে ফিরে আসার জন্য চেষ্টা করেছেন। এ বিষয়ে নানাবিধ ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিতেও তারা কসুর করেনি। তারা কখনো সংখ্যালঘু, কখনো আনসার, কখনো অকৃতকার্য শিক্ষার্থী, আবার কখনো গার্মেন্টস শ্রমিকসহ নানা ব্যানারে দেশে বিশৃঙ্খলা করার অপচেষ্টা চালিয়ে বিপ্লবকে বিতর্কিত ও অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার ইস্পাত কঠিন ঐক্যের ফলে সবকিছু বালির বাঁধের মতো ধসে গেছে। ফলে আওয়ামী ছাত্রলীগ এখন নিষিদ্ধ এবং পতিত আওয়ামী লীগের কার্যক্রমও সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে।
আওয়ামী-ফ্যাসিবাদের পতনের পর থেকে একটি কথা বাজারে ব্যাপক চাউর হতে শোনা গেছে যে, যেসব আওয়ামী লীগ নেতাদের ক্লিন ইমেজ রয়েছে তাদেরকে নিয়ে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠন করা হবে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, আওয়ামী লীগের এমন কেউ কী আছেন যারা ক্লিন ইমেজের অধিকারী ? যারা আগামীতে আওয়ামী লীগের কাণ্ডারী হবেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা যাওয়ার আগে আওয়ামী লীগের অতীত-বর্তমান নিয়ে চুম্বক ধারণা না দিলে আজকের আলোচনা অপূর্ণ থেকে যাবে।
এবার আসি আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজ প্রসঙ্গে। ‘আওয়ামী মুসিলম লীগ’ নামে দলটি ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হলেও পরবর্তীতে নামের ইষৎ সংশোধন করে করা হয় ‘আওয়ামী লীগ’। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দলটির বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য অবদানের ছদ্মাবরণে নানাবিধ অগণতান্ত্রিক আচরণও উল্লেখ করার মতো। খোদ শেখ মুজিব প্রাদেশিক পরিসরের মন্ত্রী থাকাকালে দুর্নীতি ও আত্মসাতের দায়ে ১৯৫৭ সালের ৭ আগস্ট পদত্যাগ করেন। ১৯৬০ সালে এ মামলার রায়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে ২ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ১৯৫৮ সালে শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার শাহেদ আলীকে হাউজেই রক্তাক্ত যখম এবং পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। দলের শীর্ষনেতার অবস্থা যদি এমন হয় তাহলে অন্যদের অবস্থা তো আরো খারাপ হওয়ার কথা।
আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দলের দাবিদার হলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী দলটির ভূমিকা ছিলো খুবই বিতর্কিত। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা ছিল উদার গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও আইনের শাসন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার এসব চেতনা নিয়ে ব্যবসা করলেও বাস্তবে এসবের প্রতি তাদের কোন শ্রদ্ধা ছিল না। কারণ তারাই সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র হত্যা করে দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিলো। গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করার জন্যই মাত্র ৪ টি রাষ্ট্রায়ত্ত পত্রিকা বাদে সকল পত্রিকার ডিক্লেরাশন বাতিল করা হয়েছিলো। ভিন্নমত কঠোরভাবে দমনের জন্য ৩০ হাজার ভিন্নমতাবলম্বীকে হত্যা করে নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী ও নিরঙ্কুশ করার স্থায়ী বন্দোবস্ত করা হয়েছিলো। দেশকে এক নেতা এবং দেশে পরিণত করা হয়েছিলো। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। ইতিহাসের নির্মম প্রতিশোধ হিসাবে ১৯৭৫ সালে তাদের অপমানজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছিলো। তারপর দীর্ঘ ২১ বছর অপেক্ষার পর ১৯৯৬ সালে অতীত ভুলের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে আবার ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হলেও তারা আবারো রীতিমতো সংহারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে ৪ দলীয় জোটের কাছে লজ্জাজনকভাবে পরাজয় বরণ করে আবারো ক্ষমতা হারায়।
তবে ২০০১ থেকে ২০০৬ চার দলীয় জোট সরকারের শাসনামলে তারা জনগণকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি বরং পূর্ণ মেয়াদে চলেছে জ¦ালাও-পোড়াও সহ লগী-বৈঠার অযৌক্তিক ধ্বংসাত্মক আন্দোলন। মেয়াদপূর্তিতে ৪ দলীয় জোট কেয়ারটেকার সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের জন্ম দেয়। প্রকাশ্য রাজপথে মানুষ পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যাকরে লাশের ওপর উদ্দাম ও পৈশাচিক নৃত্য করা হয়। যা আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ববাসী সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে। ফলে একটি সাংবিধানিক কেয়ারটেকার সরকারের পরিবর্তে অসাংবিধানিকভাবে জরুরি সরকার গঠিত হয়। আর এ সরকারের অধীনেই সাজানো ও পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অরক্ষিত করার জন্য ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কথিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকস ও মেধাবী সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। তাদের ক্ষমতা নির্বিঘ্ন করার জন্য জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়। দেশকে মেধা ও নেতৃত্বশূন্য করতেই কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে জনপ্রিয় জাতীয় নেতাদের একের পর এক হত্যা করে দেশের পবিত্র জমিনকে রক্তাক্ত ও কলঙ্কিত করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ রাজধানীর শাপলা চত্তরে আলেমদের ওপর চালানো হয় ইতিহাসের নিকৃষ্টতম হত্যাযজ্ঞ। দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়ে নির্বাচনগুলোতে রীতিমত প্রহসনে পরিণত করা হয়। বিরোধী দল দমনে চালানো হয় ইতিহাসের বর্বর ও নিষ্ঠুরতম জুলুম-নির্যাতন। কথিত ক্রস ফায়ারের নামে বিচারবহিভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা সর্বোপরি আয়নাঘর স্থাপন করে বিরোধী দল দমনে চালানো হয় নারকীয় তাণ্ডব।
এখানেই শেষ নয় বরং জুলাই আন্দোলন দমনের জন্য চালানো হয় ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। এতে দু’সহস্রাধিক মানুষ শাহাদাত বরণ করেন। আহত হন হাজার হাজার মানুষ। আন্দোলন চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলীতে অনেকেই হাত, পা, চোখ হারিয়ে স্থায়ীভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েন। নিহতদের স্বজনরা অনেক শহীদের লাশ পর্যন্ত পায়নি। আর এভাবেই গত বছরের ৫ জুলাই ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ ও জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মত চেয়ে বসা আওয়ামী বাকশালী সরকারের পতন ঘটে। কিন্তু তারা থেমে থাকে নি বরং অর্জিত বিপ্লব ও অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য তারা নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। মাঝে মাঝে অভিও বার্তার মাধ্যমে পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা উসকানি সৃষ্টির দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে কথিত রিফাইন্ড আওয়ামী নামে নতুন আওয়ামী লীগের ধারণার কথা আমরা গণমাধ্যমের কল্যাণে জানতে পেরেছি। এর প্রবক্তারা দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগের যেসব ক্লিন ইমেজের নেতা রয়েছেন তাদের নেতৃত্বে নতুন করে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন করা হবে। বিষয়টি নিয়ে এনসিপির শীর্ষনেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার বেফাঁস ও উসকানিমূলক কথাবার্তার কারণে ধামমণ্ডির ৩২ নং-এর ধ্বংস এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ বিদেশে চিকিৎসা নেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত হওয়ার পর সে উদ্যোগে ভাটার টান পড়েছে।
সম্প্রতি আবার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বিশেষ করে ৩ জন ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূত আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় বৈঠকের পর গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীকে সভাপতি এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজকে সাধারণ সম্পাদক করে ক্লিন ইমেজের নেতাদের দিয়ে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ গঠন এবং তাদের আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হবে।
তবে দলটির অতীত-বর্তমান পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, আওয়ামী লীগের কোন ক্লিন ইমেজের লোক থাকার সুযোগ নেই। কেউ ব্যক্তিগতভাবে দুর্নীতিমুক্ত, সৎ ও সজ্জন থাকতেই পারেন বা আছেন; কিন্তু যারা কখনো আওয়ামী লীগের অপশাসন-দুঃশাসনের প্রতিবাদ করেন নি বরং তারা অবৈধ দখলদারি শাসনের সুবিধাভোগী তাদের ইমেজ ক্লিন হয় কীভাবে? বিশেষ করে যারা জুলাই গণহত্যার প্রতিবাদ বা অনুশোচনা করেননি তাদের পতিত ফ্যাসিবাদের অপকর্মের দায় নিতেই হবে। আর সাবের হোসেন চৌধুরী তো সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। সবকিছু বাদ দিলেও তিনি ভোট ডাকাতির সাংসদ। কেউ কেউ সাবেক স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরীকে ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে উল্লেখ করতে চান; কিন্তু তিনিও তো ৩টি ভুয়া নির্বাচনের সুবিধাভাগী এবং সাজানো-পাতানো সংসদের অভিভাবক।
মূলত আওয়ামী অপশাসন-দুঃশাসনের দুর্গন্ধ থেকে নেতাকর্মীরা কেউই মুক্ত নন। তাই মরুভূমিতে পানি, ইমারতের শীর্ষ উট ও বাতাসের অগ্রভাগ নিয়ে গবেষণা যেমন বাস্তবসম্মত নয়, ঠিক তেমনিভাবে আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজের নেতা তালাশ করা পুঁথিগন্ধময় নর্দমার মধ্যে সুপেয় পানি খোঁজার নামান্তর। বিষয়টি এমন যে, মোটেই ৩ কলসি। তবে ‘এক কলসি ফাটা, অন্যটি ফুটা; অপরটির তো তলায় নেই’। ‘আকলমান্দ কিলিয়ে ইশারা কাফি’ নয় কি?