১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার একটি ছোট্ট শহর সেবরেনিসায় নারকীয় এক হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সংঘটিত সবচেয়ে বড় গণহত্যা হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে, অন্তত ৮,৩৭২ নিরস্ত্র মুসলিম পুরুষ ও কিশোরকে পদ্ধতিগতভাবে হত্যা করে সার্ব বাহিনী। জাতিসংঘ ঘোষিত ‘নিরাপদ এলাকা’ সত্ত্বেও এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের চোখের সামনে, কার্যত তাদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতার কারণেই। এ ভয়াবহ ট্র‍্যাজেডি শুধু বসনিয়ার মুসলিম জনগণের জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বমানবতার জন্য একটি অমোচনীয় কলঙ্কচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ১১ জুলাই ছিল সেবরেনিসা হত্যাকান্ডের ৩০তম দিবস। এ গণহত্যাকে আমাদের স্মরণ করা উচিত দুটো কারণে। প্রথমত, ১৯৯৫ সালের এ সময়টায় মুসলিম উম্মাহ’র উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য জালেমদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। আর দ্বিতীয়ত সেবরেনিসা আজকের সময়ে এসেও ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। হয়তো জায়গা বদলেছে, দৃশ্যপট পাল্টেছে; কিন্তু নতুন কোনো নামে বিশ্ব এখনো একাধিক স্থানে যেন সেবরেনিসার প্রতিচ্ছবিই প্রত্যক্ষ করছে।

সেবরেনিসার ঘটনা বোঝার জন্য ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র যুগোস্লাভিয়ার পতনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়। যুগোশ্লোভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোর মৃত্যুর পরপরই যুগোস্লাভিয়া রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জাতিগত দিক থেকে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ১৯৯১-৯২ সালে স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা একে একে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। বসনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা ছিল সবচেয়ে জটিল ও রক্তাক্ত, কারণ এ অঞ্চলে বসবাসকারী তিনটি বড় জাতিগোষ্ঠীÑবোসনিয়াক মুসলিম, ক্রোয়েট ক্যাথলিক ও সার্ব অর্থোডক্সÑতিনটি আলাদা রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। সার্বদের লক্ষ্য ছিল বসনিয়া থেকে মুসলিম ও ক্রোয়েট জনগণকে উচ্ছেদ করে ‘গ্রেট সার্বিয়া’ প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য তারা ‘এথনিক ক্লিনজিং’ বা জাতিগত নির্মূলনীতির পথে হাঁটে। বর্তমানে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যাকাতেও ইসরাইল এ নীতিই অনুসরণ করছে। যা হোক, সার্বদের এ জাতিগত নিধন প্রক্রিয়ায় মুসলিমদের ওপর চলে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া ও জোরপূর্বক স্থানান্তরের মতো গুরুতর সব অপরাধ।

সেবরেনিসা ছিল পূর্ব বসনিয়ার একটি মুসলিম অধ্যুষিত ছোট শহর। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ এটিকে “নিরাপদ এলাকা” ঘোষণা করে এবং সেখানে ডাচ ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে একদল শান্তিরক্ষী মোতায়েন করে। ওই সময় সার্ব বাহিনী আশপাশের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে ফেলেছিল, ফলে হাজার হাজার মুসলিম উদ্বাস্তু এ নিরাপদ অঞ্চলে এসে আশ্রয় নেন। ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে সেবরেনিসায় আশ্রিত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪০,০০০ ছাড়িয়ে যায়। ১১ জুলাই ১৯৯৫Ñইতিহাসের সেই ভীতিকর দিন। এদিনে বসনিয়ান সার্ব বাহিনী রতকো ম্লাদিচের নেতৃত্বে সেবরেনিসায় প্রবেশ করে। তারা জাতিসংঘের ডাচ শান্তিরক্ষীদের হুমকি দিয়ে কার্যত তাদের নিরস্ত করে এবং শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর পুরুষ ও কিশোরদের আলাদা করে ফেলানো হয় নারীদের থেকে। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের ট্রাকে করে পাঠানো হয় পাশের শহর তুজলার দিকে, আর পুরুষ ও কিশোরদের ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের গুলী করে হত্যা করা হয়।

এ হত্যাকাণ্ড ছিল একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিকল্পনার ফসল। বসনিয়ান সার্ব বাহিনী বেশ কিছুদিন ধরেই সেবরেনিসা ঘিরে রেখেছিল, যাতে করে খাবার, ওষুধ ও সাহায্যসামগ্রী ঢুকতে না পারে। ১১ জুলাই শহর দখলের পর মাত্র ৫-৬ দিনের মধ্যেই সংঘটিত হয় গণহত্যা। সার্ব বাহিনী অনেককে ট্রাকে করে নিয়ে গিয়ে স্কুল, গ্যারেজ, খামারবাড়ি কিংবা জঙ্গলে গুলী করে হত্যা করে। লাশ গোপনে ফেলে দেওয়া হয় গণকবরে। পরে হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ মুছে ফেলতে লাশ আবার তুলে এনে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ফেলা হয়। বর্তমানে এ হত্যাকাণ্ডের ৩০ বছর পর এসে আমরা গাজায় যেন সেবরেনিসা হত্যাকান্ডেরই পুনরাবৃত্তি দেখতে পারছি। ইসরাইলের প্রশাসনও একইভাবে বোমা হামলার পাশাপাশি খাবার ও ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে গাজাবাসীকে হত্যা করছে।

সেবরেনিসা হত্যাকাণ্ডের সময় শুধু পুরুষদের নয়, নারীদের উপরেও চলে ভয়াবহ যৌন সহিংসতা। জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, এ ধর্ষণ ছিল যুদ্ধের একটি কৌশল, যাতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভেতর মানসিক ভীতি তৈরি হয় এবং তারা স্থায়ীভাবে স্থানত্যাগে বাধ্য হয়। সেবরেনিসা গণহত্যা ছিল একেবারেই ধর্মীয় পরিচয়-ভিত্তিক সহিংসতা। যাদের হত্যা করা হয়েছিল, তারা সবাই ছিলেন মুসলিম এবং তাদের অপরাধ ছিল কেবলমাত্র মুসলিম হওয়া। বসনিয়ান সার্বদের জাতীয়তাবাদী চেতনার সঙ্গে যুক্ত ছিল ক্রিশ্চিয়ান সার্বিয় নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্বের বিশ্বাস। তারা ইসলামকে দেখত ‘বিদেশি ধর্ম’ হিসেবে এবং বসনিয়াক মুসলিমদের তুর্কি আমলের উত্তরসূরি হিসেবে ঘৃণা করত। এ ধারণা থেকেই বসনিয়াক মুসলিমদের অস্তিত্ব মুছে ফেলাকে সার্বদের অনেক নেতা ‘জাতির পুনর্জাগরণ’ বলে উল্লেখ করেছেন। গণহত্যার সময় ম্লাদিচের একটি বক্তব্য ছিল, “আমরা অবশেষে এ শহরকে মুসলমানদের হাত থেকে মুক্ত করলাম”Ñএ বাক্যটি ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।

সেবরেনিসা ছিল জাতিসংঘ ঘোষিত “নিরাপদ এলাকা”। এখানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী থাকা সত্ত্বেও তারা কোনোরকম প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হয়। ডাচ ব্যাটালিয়ন অস্ত্র দিয়ে রক্ষা করার পরিবর্তে কার্যত আত্মসমর্পণ করে এবং মুসলিম পুরুষদের সার্ব বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। জাতিসংঘ থেকে একাধিকবার ন্যাটোর বিমান সহায়তার আবেদন জানানো হলেও সেই সহায়তা যথাসময়ে পৌঁছায়নি। অবশেষে যখন ন্যাটো সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করে, তখন সেবরেনিসায় হত্যাযজ্ঞ শেষ হয়ে গেছে। এ ব্যর্থতা জাতিসংঘের নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে। বহু বিশ্লেষকের মতে, এ ব্যর্থতার পেছনে পশ্চিমা বিশ্বের ‘ইচ্ছাকৃত নিষ্ক্রিয়তা’ও কাজ করেছিল, যেহেতু তারা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণকে ততটা গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি।

সেবরেনিসা গণহত্যার পর বিশ্ববাসী ধীরে ধীরে এ ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন হয়। মিডিয়ার মাধ্যমে গণহত্যার ছবি, গণকবর, নিহত কিশোরদের কাপড়Ñসবকিছুই ধীরে ধীরে সামনে আসে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ ঘটনার নিন্দা জানালেও প্রশ্ন থেকেই যায়: তারা যদি সময়মতো ব্যবস্থা নিতো, তাহলে নিশ্চয়ই এই হত্যাকাণ্ড রোধ করা যেত। মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়াও ছিল আশানুরূপ নয়। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ এ ঘটনায় নীরব থাকে। একমাত্র তুরস্ক ও কিছু আরব দেশ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানায়, তবে কার্যকর কোনো কূটনৈতিক চাপ তৈরি হয়নি। এ গণহত্যার মূল দায়ী ছিল বসনিয়ান সার্ব বাহিনী ও তাদের প্যারামিলিটারি অংশ। আর এর নেতৃত্বে ছিলেন বসনিয়ান সার্ব বাহিনীর সেনাপ্রধান রতকো ম্লাদিচ যিনি প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব দেন সেবরেনিসায়। আরো ছিলেন বসনিয়ান সার্বদের রাজনৈতিক নেতা ও যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট রাদোভান কারাজিচ। তিনিই এথনিক ক্লিনজিং-এর মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে পরিচিত। আর ছিলেন সার্বিয়া রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মিলোসেভিচ: যিনি পরোক্ষভাবে এ নৃশংসতাকে সহায়তা করেন।

১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইবুনাল ফর দ্য ফর্মার যুগোশ্লোভিয়া বা আইসিটিআই প্রতিষ্ঠা করে। এ আদালত দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু শীর্ষ অপরাধীকে শাস্তি দেয়। এর মধ্যে রতকো ম্লাদিচকে ২০১৭ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২০১৬ সালে রাদোভান কারাজিচকে গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আর স্লোবোদান মিলোসেভিচ বিচারের মাঝপথেই ২০০৬ সালে কারাগারে মারা যান। তবে বসনিয়ায় বহু সার্ব যুদ্ধাপরাধী আজও বিচার এড়িয়ে গেছে। অনেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন, কেউবা নিরাপত্তা বাহিনীতে বড়ো দায়িত্ব পালন করেছেন। এ বিচারহীনতা আজও বসনিয়ার মুসলিমদের ক্ষোভ ও বেদনার কেন্দ্রবিন্দু।

সেবরেনিসা গণহত্যার পর ডেটন শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে। এ চুক্তি বসনিয়াকে কার্যত দুটি অংশে ভাগ করে দেয়। এর একটি হলো ফেডারেশন অব বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা যা মুসলিম ও ক্রোয়েট নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল এবং অপরটি হলো রেপাবলিকা সারপস্কা যা সার্ব নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল। এ কাঠামো বসনিয়ায় স্থায়ী বিভাজন তৈরি করে, যেখানে মুসলিমরা তাদের শহর সেবরেনিসা থেকেও বহুক্ষেত্রেই বিতাড়িত হয়ে গেছে। সেবরেনিসা শহর এখন রেপাবলিকা সারপস্কার নিয়ন্ত্রণে, যেখানে আজও মুসলিমদের বসবাস করতে হলে ভয়, বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হতে হয়। অনেক সময়ই স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ এই গণহত্যাকে অস্বীকার করে, স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান বাধা দেয়।

প্রতিবছর ১১ জুলাই সেবরেনিসা গণহত্যা স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হয়। তুজলা শহরের পাশেই পোটোকারি অঞ্চলে নির্মিত হয়েছে সেবরেনিসা মেমোরিয়াল সেন্টার। এখানে প্রতি বছর গণকবর থেকে শনাক্ত হওয়া নতুন লাশ দাফন করা হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। এ স্মরণ শুধু একটি শোকদিবস নয়, এটি বিশ্বমানবতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়Ñকীভাবে জাতিসংঘ, উন্নত বিশ্ব এবং তথাকথিত মানবাধিকার রক্ষক রাষ্ট্রগুলো মুসলিম পরিচয়ের মানুষদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সেবরেনিসা গণহত্যার ৩০ বছর এসে গাজার গণহত্যা দেখে আবারও বিবেকবান মানুষের মাঝে প্রশ্ন জাগে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এই গণহত্যার মিছিল কবে থামবে?

সেবরেনিসা গণহত্যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ‘নিরাপদ অঞ্চল’ আর শান্তিরক্ষী বাহিনী থাকার কথা কেবল কাগজে থাকতে পারে, বাস্তবতা যদি অন্যরকম হয়। বসনিয়ার মাটি আজও সেই ৮,০০০ মুসলিম পুরুষ ও কিশোরের রক্ত ধারণ করে আছে, যাদের অপরাধ ছিল কেবল মুসলমান হওয়া। এ হত্যাকাণ্ড ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, কীভাবে একটি জাতিকে ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয়ের কারণে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সেই নীরবতা এবং নিষ্ক্রিয়তা মুসলিম বিশ্বে হতাশা, ক্ষোভ এবং একটি গভীর অনাস্থার জন্ম দিয়েছিল।

সেবরেনিসা নিয়ে আলোচনা তাই জারি রাখা প্রয়োজন। কেননা ৩০ বছর আগে বসনিয়ার সেবরেনিসায় যা ঘটেছিল, আজ তা যেন ফিরে এসেছে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি গাজায়। সেবরেনিসা ছিল মুসলিম গণহত্যার এক নির্মম প্রতিচ্ছবিÑজাতিসংঘের নিরাপদ ঘোষিত এলাকায় নৃশংসভাবে ৮ হাজারের বেশি নিরস্ত্র মুসলিম পুরুষ ও কিশোরকে হত্যা করা হয়েছিল। সে একই নির্লজ্জ নীরবতা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তা, এবং মুসলমানদের প্রাণের প্রতি অবজ্ঞার পুনরাবৃত্তি আমরা আজ গাজায় দেখছি। এরই মধ্যে গাজার ৫৯ হাজার মানুষকে ইসরাইলী বর্বর বাহিনী হত্যা করেছে যার অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত গাজাবাসীর সংখ্যা অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার। গাজায় শিশুরা মায়ের কোলে, চিকিৎসকরা হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপে, আর সাধারণ মানুষ খাদ্য, পানি ও আশ্রয়হীন অবস্থায় বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

কার্যত বিশ্ব মিডিয়া একপেশে ভূমিকা পালন করছে, জাতিসংঘ বোবা ও অকার্যকর হয়ে আছে, আর মানবাধিকারের বুলি আজ ক্ষমতাধরদের রাজনীতির খেলায় মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। একবিংশ শতাব্দীতেও সভ্যতার মুখে সজোরে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে গাজাÑ‘সেবরেনিসা’র মতো আর কত গুমরে কাঁদবে ইতিহাস? মুসলিম বিশ্ব কি কেবল শোকেই সাড়া দেবে, না কি ন্যায়বিচারের জন্য কার্যকর ঐক্য গড়বে? এটিই এখন সময়ের সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন।