বাংলাদেশ সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল গত ৯ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছে। আলোচনাকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বিভিন্ন দেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্ক কমিয়ে আনার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের ওপর আরোপিত ৩৭ শতাংশ বর্ধিত শুল্ক কিভাবে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায় তার পন্থা ও কৌশল নির্ধারণ করা। কিন্তু আলোচনা সভার আলোচনা থেকে বাংলাদেশ খুব একটা সন্তুষ্ট হয়েছে বলে মনে হয় না। আলোচনা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনাকালে কিছু বিষয়ে মতৈক্য সৃষ্টি হলেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এখনো দূরত্ব রয়ে গেছে। তার অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ যে আশা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য প্রতিনিধিদল প্রেরণ করেছিল তা সফল হয়নি। এর মধ্যে আলোচনা চলাকালেই মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের রপ্তানি আমদানির ওপর সংশোধিত বাড়তি শুল্ক হার নির্ধারণ করে চিঠি দিয়েছে। ভারত, চীনসহ অন্যান্য দেশের সংশোধিত বাড়তি শুল্ক হার এখনো প্রকাশ করা হয়নি। সংশোধিত বাড়তি শুল্ক হার আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। সংশোধিত এবং নতুন করে নির্ধারিত বাড়তি শুল্ক হার হবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ। আগে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের উপর ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্কারোপ করা হয়েছিল। ফলে আগামীতে বাংলাদেশকে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ শুল্কসহ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানি করতে হবে। ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বাড়তি শুুল্কহার ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ আগামীতে ভিয়েতনামকে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে আরো ২০ শতাংশ অর্থাৎ মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। প্রতিটি দেশের পণ্য রপ্তানির সময় বিদ্যমান ১৫ শতাংশ শুল্ক এবং বর্ধিত শুল্ক হার যোগ করে মোট শুল্ক নির্ধারিত হবে। মিয়ানমারের বর্ধিত শুল্ক হার ৪০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। জাপানের ক্ষেত্রে বর্ধিত শুল্ক হার এক শতাংশ কমিয়ে ২৪ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বাড়তি শুল্ক হার ২৫ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। থাইল্যান্ডে বাড়তি শুল্ক হার ৩৬ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার বর্ধিত শুল্ক হার ৩২ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ধিত শুল্ক হার ৩০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অন্যান্য দেশের বর্ধিত শুল্ক হার সামান্য এদিক ওদিক করা হয়েছে। খুব একটা পরিবর্তন করা হয়নি।

চীন, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ইত্যাদি দেশের ওপর কি পরিমাণ বাড়তি শুল্কারোপ করা হবে তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর বর্তমানে আরোপিত ১৫ শতাংশ গড় শুল্ক বাহাল থাকবে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির জন্য সার্বিকভাবে ৫০ (৩৫+১৫=৫০ শতাংশ) শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হবে। আর ভিয়েতনামকে মোট শুল্ক প্রদান করতে হবে ৩৫ (২০+১৫=৩৫ শতাংশ) শতাংশ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বিভিন্ন দেশের উপর বর্ধিত শুল্কারোপের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে বর্ধিত শুল্ক কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম যেভাবে সফলতা প্রদর্শন করেছে বাংলাদেশ তা পারেনি। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ বিষয়টি কিভাবে ডিল করেছে? গত এপ্রিল মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের ওপর বর্ধিত শুল্ক হার আরোপ করে। এরপর তারা তিন মাস বর্ধিত শুল্কহার কার্যকর করা স্থগিত রাখে। তারা হয়তো ধারণা করেছিল, এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হবে এবং সমঝোতায় উপনীত হওয়া সম্ভব হবে। বাংলাদেশ যখন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে তার আগেই সময় শেষ হয়ে গেছে। আলোচনা চলাকালেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের ওপর বাড়তি শুল্কারোপ করে। ফলে আলোচনার গুরুত্ব অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। ভিয়েতনাম যদি বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করে তাদের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্ক হার অর্ধেকেরই বেশি কমিয়ে আনতে পারে তাহলে বাংলাদেশ কেনো পারলো না প্রশ্নটি উত্থাপিত হওয়া স্বাভাবিক। বাংলাদেশ কোনো উপযুক্ত সময়ে আলোচনা শুরু করতে পারলো না এবং আলোচনার জন্য গঠিত কমিটিতে দক্ষ এবং উপযুক্ত প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল কি? বাংলাদেশ যদি শুরুতেই আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করতো তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারতো। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এখনো আলোচনার সুযোগ রয়েছে। আলোচনার সুযোগ রয়েছে এটা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু উপযুক্ত সময়ে আলোচনা না করে বিলম্বিত আলোচনা কি ভালো রেজাল্ট বয়ে আনবে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দেশ যার সঙ্গে অধিকাংশ দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্য প্রতিকূলে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ৫৮টি দেশের আমদানি পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্কারোপের প্রস্তাব করেছে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই দেশটির দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ঘাটতি রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই মূলত বাড়তি শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা নিয়ে বাংলাদেশকে উদ্বিগ্ন হবার বা উল্লসিত হবার কারণ রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ঐহিত্য দীর্ঘ দিনের। এ দীর্ঘ পথপক্রিমায় বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্য বরাবরই বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে তৈরি পোশাক সামগ্রি। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বিকাশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক সময় বাংলাদেশের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা প্রদান করতো। কোটা সুবিধার আওতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করতো। ২০০৫সালে বিশ্বব্যাপী মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু হবার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোটা সুবিধা প্রত্যাহার করে। তৎস্থলে দেশটি বাংলাদেশি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে শুল্কমুক্ত জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা প্রদান করে। কিন্তু পরবর্তীতে শ্রম আইন লঙ্ঘন এবং আরো কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দেয়া জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা দিয়ে আসছে। মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেয়া জিএসপি সুবিধা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোটা সুবিধা এবং পরবর্তীতে সীমিত পরিসরে দেয়া জিএসপি সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বিকশিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে একক অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক। আর একক দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের সর্ববৃহৎ ক্রেতা।

নতুন বর্ধিত শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশ থেকে যে পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হবে তার উপর ৩৫ শতাংশ হারে বর্ধিত শুল্ক প্রদান করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্কহার কার্যকর হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প। বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সবার শীর্ষে রয়েছে চীন। তারা ২০২৪ সালে মোট ১৬৫ বিলিযন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। চীনের তৈরি পোশাক বিশ্ববাজারের ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ দখল করে আছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ২০২৪ সালে মোট ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশের বাজার হিস্যা হচ্ছে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। একই বছরে ভিয়েতনাম মোট ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের বাজার হিস্যা হচ্ছে ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ। চতুর্থ স্থানে রয়েছে তুরস্ক। তারা ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের বাজার হিস্যা হচ্ছে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ, আর ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাদের বাজার হিস্যা হচ্ছে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ৮৬৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি ৭৫৮ দশমিক ৫০ কোটি মার্কিন ডলার। বর্ধিত শুল্কের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রাপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে বাধ্য।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের উপর কী পরিমাণ বাড়তি শুল্কারোপ করলো সেটা ততটা উদ্বেগের ব্যাপার নয়। কারণ চীনের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর আগে ১২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্কারোপের কথা জানিয়েছিল। সেখান থেকে আলোচনার মাধ্যমে চীন বাড়তি শুল্ক কতটা কমিয়ে আনতে পারবে সেটা সময়ই বলতে পারবে। চীনের উপর বেশি পরিমাণে বাড়তি শুল্কারোপ করা হলে তা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হতে পারে। আরো সুনিদিষ্ট করে বললে বলতে হয় ভিয়েতনামের উপর বর্ধিত শুল্কহার ব্যাপকভাবে হ্রাসকরণ বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক সামগ্রির সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী হচ্ছে ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম বর্তমানে এমন অবস্থায় রয়েছে যে তারা কোনো সময় বাংলাদেশকে অতিক্রম করে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থান দখল করে নিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যকে যদি ভিয়েতনামের পণ্যের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি শুল্ক প্রদান করতে হয় তাহলে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হারানোর সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।

কারণ একই মানের বাংলাদেশি পণ্যের তুলনায় ভিয়েতনামি পণ্য অন্তত ১৫ শতাংশ কম মূল্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাওয়া যাবে। তুলনামূলক মূল্য তত্ত্বে¡র বিচারে বাংলাদেশি পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পিছিয়ে পড়বে। মার্কিন ভোক্তারা নিশ্চয় বেশি মূল্য দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য ক্রয় করতে চাইবে না। এতে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ভারত যদি তাদের উপর আরোপিত শুল্ক হার ভিয়েতনামের মতো কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারে তাহলে আগামীতে ভারতীয় রপ্তানি পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক আমাদের প্রতিযোগী হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা অনেকের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। কোনো কারণে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা শুরু হলেই একটি মহল তৈরি পোশাক শিল্পে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক প্রয়োগ শুরু হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এমনিতেই বিপর্যয়ের মুখে এসে দাঁড়াবে। একটি সূত্র মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ করা শুরু হলে বাংলাদেশের ৮০১টি কারখানা বিপর্যয়ের মুখে পতিত হতে পারে। এদের বেশির ভাগই তৈরি পোশাক শিল্প।

চীনের উপর বাড়তি শুল্ক বসানো হলে সে দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর একটি বড় অংশ শুল্ক সুবিধার প্রত্যাশায় বাংলাদেশে শিফট করার সম্ভাবনা ছিল। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের উপর প্রস্তাবিত বাড়তি শুল্ক হার ২ শতাংশ কমানোর পাশাপাশি ভিয়েতনামের বাড়তি শুল্ক হার ২৬ শতাংশ কমানোর ভিয়েতনাম এখন চীনা উদ্যোক্তাদের জন্য আকর্ষণীয় বিনিয়োগ স্থলে পরিণত হবে। যেসব চীনা শিল্প প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে শিফট করার সম্ভাবনা ছিল তা এখন ভিয়েতনামে চলে যেতে পারে। আগামী বছর থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তীর্ণ হবার পর ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের উপর শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধ সম্বলিত জিএসপি সুবিধা প্রদান করবে। তার পর বাংলাদেশকে নির্দিষ্ট পরিমাণ শুল্ক প্রদান করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মার্কেটে পণ্য রপ্তানি করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদিও সে সময় জিএসপি+ নামে এক ধরনের নতুন রপ্তানি সুবিধা প্রদান করবে। কিন্তু বাংলাদেশ সে সুবিধা ভোগ করতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ যেসব শর্ত পরিপালন করতে হবে বাংলাদেশ তার জন্য প্রস্তুত নয়। ফলে মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, আগামীতে বাংলাদেশ রপ্তানি বাণিজ্যে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। যথাসময়ে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হলে হয়তো এমন বিপর্যয় সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি নাও হতে পারতো।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।