জাতিসংঘের ফিলিস্তিনী শরণার্থী সংস্থ ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজায় প্রতিদিন কমপক্ষে ১শ’ শিশুকে হত্যা করছে ইসরাইল। গত ১৮ মার্চ ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের পর থেকে গড়ে প্রতিদিন এ হারেই শিশুদের হত্যা করেছে জায়নবাদীরা। গাজায় এখন নিরপরাধ শিশুসহ কারোই কোনো নিরাপত্তা নেই, কোনো নীরবতা নেই, কোনো বিরতি নেই। আছে শুধু একটানা চলাচল, এখান থেকে ওখানে ছুটে যাওয়া, কবর দেওয়া, আবার সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে ছুটে পাওয়া। পুরো গাজা উপত্যাকা জুড়েই ইসরাইলীরা বোমা হামলা চালাচ্ছে। পাশাপাশি, গাজার গলিতে, সড়কে ট্যাঙ্কগুলো ওত পেতে আছে। ড্রোনগুলো ওপর থেকে গুঞ্জন তুলে উড়ে বেড়ায় যেন এগুলো আঘাত হানার জন্য অপেক্ষা করছে। গাজার শিশুদের মুখগুলো এখন ছাই আর ধুলোয় ঢাকা। কিন্তু কেন ইসরাইল জেনেবুঝে সজ্ঞানে গাজার শিশুদের হত্যা করছে?
গাজায় অনেক শিশুরই এখন আর কোনো নাম নেই, শুধু একটি চিহ্ন বা একটি সংখ্যা দিয়ে তাদের শরীরে একটি লেবেল লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য এসব যে, যদি তারা মারাও যায়, তাহলে অন্তত এটুকু যেন জানা যায় যে তারা কে ছিল। ইসরাইল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর প্রথম যে হামলাটি করে তাতেই প্রায় শ দুয়েক শিশু নিহত হয়েছে। নিহত এসব শিশুরা যুদ্ধক্ষেত্রে ছিল না। আর ইসরাইলও তাদের ভুল করে হত্যা করেনি। বরং এসব অসহায় শিশুগুলো মারা গেছে নিজেদের ঘরে, তাঁবুর ভেতরে, ঘুমের মধ্যে; কম্বল জড়িয়ে, সেই ছাদের নিচে, যা তাদের ওপর দ্বিতীয় আকাশের মতো ধসে পড়েছিল। অথচ শিশুদের এ গণহত্যা সম্পর্কে কখনোই ইসরাইলীদের অনুতপ্ত হতে দেখা যায়নি।
ইসরাইলের অভ্যন্তরে, এসব হত্যাযজ্ঞকে আরও নির্মমভাবে উপস্থাপন করা হয়। নিহতদের “সন্ত্রাসী” বলে বর্ণনা করা হয়। ইসরাইলী মিডিয়াগুলো বলে বেড়ায় যে, ‘গাজার কেউ নির্দোষ নয়’। এ ধরনের পরিভাষা তারা এখন নিয়মিতই ব্যবহার করছে যাতে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সেনাবাহিনী গাজায় চলমান গণহত্যা অব্যাহত রাখতে পারে। আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রগুলো এসব গণহত্যা তুলে ধরছে না, উল্টো তারা পরিকল্পিতভাবে এসব নির্মমতা ধামাচাপা দিচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ১৮,০০০-এর বেশি শিশু নিহত হয়েছে, এবং আরও অনেকে এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এগুলোর কোনোটাই দুর্ঘটনা নয় বরং ইসরাইলী কৌশল।
এক বছর আগে, ইউনিসেফ জানিয়েছিল যে, উত্তর গাজায় দুবছরের কম বয়সী প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে একটিকে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতে হচ্ছে। খান ইউনিসে, ২৮ শতাংশ শিশু ক্ষুধার্ত আর ১০ শতাংশেরও বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। তাদের পেট ফুলে ওঠেছে; হাত-পা শুকিয়ে গিয়েছে। বৈশ্বিক নেতারা গাজায় ‘সহায়তা পাঠানোর রাস্তা বের করতে কেবল আলোচনাই করে যাচ্ছেন আর অন্যদিকে শিশুরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। শিশুরা অসুস্থ হয়ে গেলে তাদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই; কোনো হাসপাতাল নেই, কোনো ওষুধ নেই, এমনকি বিশুদ্ধ পানিও নেই। গাজার শিশুদের কেবলমাত্র বোমা হামলায় হত্যা করা হয় না; তাদের অনাহারে রেখে, সংক্রমণে আক্রান্ত করে বরং চিকিৎসাহীন অবস্থায় ফেলে রেখে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।
ল্যানসেট-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালে গাজায় প্রতি ২২০ জন মানুষের জন্য মাত্র একটি শৌচাগার ছিল, এবং প্রতি ৪,৫০০ জনের গোসল করার জন্য ছিল একটি স্থাপনা। পাঁচ বছরের কম বয়সী এমন শিশুদের মধ্যে প্রায় লক্ষাধিক শিশু এখন তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত। যেসব শিশুরা বোমা হামলা এবং অনাহারে থেকেও বেঁচে যায়, তাদের অনেকেই অঙ্গহানি নিয়ে বেঁচে থাকে। প্রতিদিন গড়ে ১০ শিশুর কোনো না কোনো অঙ্গ কেটে ফেলতে হচ্ছে। বিদ্যুৎহীন অন্ধকার কক্ষে, কোনো রকমের এনেসথেসিয়া ছাড়া, শুধুমাত্র টর্চলাইটের আলোয় সার্জনরা তাদের আক্রান্ত অঙ্গগুলো কেটে ফেলছেন। এ মুহূর্তে গোটা বিশ্বের মধ্যে গাজায় মাথাপিছু শিশু অঙ্গহানির হার সর্বোচ্চ। ইসরাইলের এবারের বর্বরতম যুদ্ধের জেরে এমন একটি প্রজন্ম তৈরি হয়ে যাচ্ছে যাদের পা নেই।
ইসরাইল যুদ্ধকে নিজেদের আত্মরক্ষার কৌশল বলে দাবি করছে। অথচ গাজার হাসপাতালগুলোতে এখন একটি নতুন সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি হলো ডব্লিউসিএনএসএফ: অর্থাৎ ওউনডেড চাইল্ড- নো সারভাইভিং ফ্যামিলি। অর্থাৎ যেসব শিশু আহত কিন্তু তাদের যাওয়ার মতো কোনো পরিবার নেই। গাজায় শিশুদের দাফন করা হচ্ছে আর অধিকৃত পশ্চিম তীরের শিশুদেরকে আটক করে নিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। প্রতিবছর, পশ্চিম তীরে ৫০০ থেকে ৭০০ ফিলিস্তিনী শিশু ইসরাইলী সামরিক আদালতে গ্রেপ্তার ও বিচারের সম্মুখীন হয়- যাদের কারো কারো বয়স ১২ বছরেরও কম। এসব আটককৃত শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ অভিযোগ হলো তারা ইসরাইলী সেনাদের যানবাহনের দিকে পাথর নিক্ষেপ করেছে। এমন সামান্য কারণে অনেক শিশুকে রাতে তাদের ঘর থেকে টেনে বের করা হয়, চোখ বেঁধে, হাত পিছমোড়া করে বাঁধা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়। আটকের পর তাদের বাবা-মা বা আইনজীবী ছাড়াই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের মারধর করা হয়, হুমকি দেওয়া হয়, এবং জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিতে সই করানো হয় আর তাও হয় হিব্রু ভাষায়, যা তারা বুঝতেই পারে না।
গত মাসে, ১৪ বছর বয়সী মইন ঘাসসান ফাহাদ সালাহাত নামে একটি ফিলিস্তিনী শিশুর নাম জানা যায় যাকে কোনো অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই প্রশাসনিক আটকাদেশের আওতায় রাখা হয়েছে। গোপন প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়। এমন কিছু অভিযোগ যা সে নিজেও জানে না, এমনকি তার আইনজীবীরও দেখার অনুমতি নেই। অথচ তার আটকের মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের জন্য কেবল বাড়ানোই হচ্ছে। এটি কোনো ব্যতিক্রম নয়; বরং এটিই ইসরাইলীদের প্রতিষ্ঠিত নিয়ম। দ্বিতীয় ইন্তিফাদার শুরু থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৩,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনী শিশুকে ইসরাইলী বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। এর বাইরেও হাজার হাজার শিশু নিহত হয়েছে। ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল- প্যালেস্টাইন এর তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় ইন্তিফাদা থেকে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইসরাইলী বাহিনী কমপক্ষে ২,৪২৭ ফিলিস্তিনী শিশুকে হত্যা করেছে। চেকপয়েন্ট, শরণার্থী শিবির বা শহরের নানা এলাকায় ইসরাইল এই হত্যাকাণ্ডগুলো চালিয়েছে। ইসরাইলের এসব শিশুহত্যাকে কেবল “যুদ্ধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া” হিসেবে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। বরং এটি একটি পরিকল্পিত অপকৌশল যা ইসরাইল বারবারই ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেছে।
নিষ্ঠুরতা কেবল সহিংসতায় সীমাবদ্ধ নয়, এটি ভাষার মধ্য দিয়েও ব্যবহৃত হয়। ২০২৩ সালের শেষ দিকে, বন্দী বিনিময়ের সময়, ইসরাইলী জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনী যেসব বন্দীদের ছেড়ে দিয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল নাবালক। অথচ বিবিসি বা দ্য গার্ডিয়ানের মতো প্রভাবশালী পশ্চিমা মিডিয়াগুলো তাদের “শিশু” বলতে অস্বীকৃতি জানায়। এর পরিবর্তে, তারা তাদের উল্লেখ করেছিল “কিশোর” বা “১৮ বছর বয়সী ও তার কম বয়সী ব্যক্তি” হিসেবে। এ ধরনের সচেতন শব্দচয়ন মূলত একটি অন্যায়কে সচেতনভাবে মুছে ফেলার কৌশল প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনী শিশুদের “হুমকি” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। কেননা কাউকে শিশু নয় এমনটা প্রমাণ করতে পারলেই তাদের হত্যা করা বৈধ হয়ে যায় আর তাদের জন্য শোক পালনও অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়। প্রথম ইন্তিফাদার (১৯৮৭-১৯৯৩) সময়, শিশুরা হাতে পাথর তুলে বিদ্রোহে সামিল হয়েছিল। আর ইসরাইল তখনও খুব বর্বরভাবে এর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। সে সময়ের ইসরাইলী প্রতিরক্ষামন্ত্রী আইজ্যাক রবিন সেনাদের আদেশ দিয়েছিলেন: “ওদের হাড় ভেঙে দাও” আর ইসরাইলী সেনারা তা-ই করেছিল। ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল, শিশুদের মাটিতে ফেলে রাখা হচ্ছে, আর ইসরাইলী সেনারা তাদের হাত-পা পাথর দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। বরং এটি ছিল একটি পরিকল্পিত নির্দেশ।
সে একই নীতি এখনো চলছে। ইসরাইলী সেনারা এখন লাঠির বদলে ব্যবহার করছে ক্ষেপণাস্ত্র ও হোয়াইট ফসফরাস। একসময় হাড় ভাঙার নীতি ছিল, এখন তা পরিণত হয়েছে গণ-অঙ্গহানিতে। উদ্দেশ্য একই: ফিলিস্তিনের ভবিষ্যতকে বিকল করে দেওয়া। ফিলিস্তিনী শিশুদের ইসরাইল বারবারই টার্গেট বানিয়েছে কারণ শিশুরাই আগামীর ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি। আর ইসরাইল এ প্রতিবন্ধকতা সহ্য করতেও রাজি নয়। ১৯৪৮ সালের দেইর ইয়াসিন গণহত্যা, ১৯৭০ সালে মিশরের বাহর আল-বাকার স্কুলে বিমান হামলা, কিংবা ২০০৬ সালে লেবাননের কানা শহরে বোমা হামলায় ডজনখানেক শিশু হত্যা- এসব ঘটনা এক দীর্ঘ ধারাবাহিকতারই অংশ। যুদ্ধকালীন সময় তো বটেই; যুদ্ধবিরতিতেও ইসরাইল শিশু হত্যা বন্ধ করে না। এর কারণ হলো, ইসরাইলী রাজনীতিবিদ ও রাব্বিরা ফিলিস্তিনী শিশুদেরকে বরাবরই ‘শত্রু’ হিসেবে চিত্রিত করছে। একজন রাব্বি প্রকাশ্যেই বলেছিলেন যে, ‘ফিলিস্তিনী শিশুদের হত্যা করতে কোনো দ্বিধা করা উচিত নয়।’ ইসরাইলী সংসদ (নেসেট)-এর এক সদস্য ঘোষণা করেছিলেন, ‘গাজায় জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশুই একেকজন সন্ত্রাসী।’ তাছাড়া ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিজেও একাধিকবার বাইবেলের আমালেক জাতির গল্প উল্লেখ করে গণহত্যাকে ঐশ্বরিক কর্তব্য হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি টার্গেটকৃত গণহত্যার মধ্যে শিশুদেরও শামিল করাকে যৌক্তিক বলে মনে করেন। এমন বাস্তবতায় জাতিসংঘের শিশু অধিকার কমিটির এক কর্মকর্তা গাজার পরিস্থিতি বলতে গিয়ে সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে, ‘শিশুদের এমন ভয়াবহ মৃত্যু মানব ইতিহাসে প্রায় নজিরবিহীন। এগুলো অত্যন্ত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, যা সচরাচর দেখা যায় না।’
ইসরাইলের এ অপরাধটি কেবলই শিশু হত্যা বা শিশুদের অঙ্গহানি করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। মূলত এর মাধ্যমে ইসরাইল একটি প্রজন্মের স্মৃতি ও কল্পনাকেও ধ্বংস করছে। গাজায় যে শিশুরা এখনো বেঁচে আছে, তারা শৈশব হারিয়েছে। তাদের স্কুল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, তাদের শিক্ষকরা চকের বোর্ডের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন। গাজার ৮০ শতাংশের বেশি স্কুল এখন ধ্বংস বা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। এমনকি খেলার মাঠ পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাচ্চাদের দোলনাগুলো স্ক্র্যাপে পরিণত হয়েছে, ফুটবল মাঠগুলো ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে গর্তে পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনী শিশুদের ভবিষ্যৎ, তাদের পরিবার এমনকি স্বপ্ন দেখার ক্ষমতাও ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবুও তারা অদম্য জীবনীশক্তি নিয়ে এখনো পর্যন্ত টিকে আছে। এত কিছুর পরও এখনও এমন কিছু ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায় যেখানে গাজার ছেলেদেরকে দেখা যায় তারা ধুলোয় মোড়ানো কাপড়ের বল নিয়ে ফুটবল খেলছে। মেয়েরা তাবুর মধ্যে বসে একে অন্যের চুল বেঁধে দিচ্ছে। শিশুরা সে ঘরগুলোর ছবি আঁকছে, যেগুলো আর বাস্তবে নেই। এরপরও তারা বাঁকানো ধাতব টুকরো দিয়ে খেলনা বাড়ি বানায়। তারা অশ্রুপাতের মাঝেও হাসে। তারা এখনো স্বপ্ন দেখে।
ইসরাইলের ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন গোল্ডা মেইর। যিনি নিজে ইউক্রেনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং একসময় ফিলিস্তিনী পাসপোর্টধারীও ছিলেন। তিনি ফিলিস্তিনী শিশু ও তরুণদের হত্যার বিষয়টির সূত্রপাত করেছিলেন। তিনি তার সহকর্মী উপনিবেশবাদীদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন: “বুড়োরা মারা যাবে, আর তরুণেরা ভুলে যাবে।” কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। শিশুরা ইতিহাস ভুলে যায়নি। বৃদ্ধরা মারা গেছে, তবে তার আগে তারা ফিলিস্তিনের গ্রামগুলোর নাম, গাছগুলোর গল্প, তালাবন্ধ দরজার চাবি, মনের ভেতর আঁকা মানচিত্র- সবকিছু পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়ে গেছে। ফিলিস্তিনের তরুণেরা, বিশেষ করে শিশুরা উত্তরাধিকার সূত্রে তাই নিজ ভূখণ্ডকে ভালোবাসতে শিখেছে, নিজেদের জন্মভূমিকে ফিরে পাওয়ার অধিকার চেয়েছে। আর এ কারণেই ইসরাইল অনুভব করেছে যে, শিশু ও তরুণদের যে কোনো মূল্যে নিশ্চিহ্ন করা প্রয়োজন। ইসরাইলের চোখে, ফিলিস্তিনী শিশুরাই এখন তাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। কারণ যতদিন শিশু থাকবে, ফিলিস্তিনীদের গল্পগুলো বেঁচে থাকবে। যতদিন শিশু থাকবে, ততদিন ফিলিস্তিন থাকবে।