কলাম
গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনের আবশ্যকতা
দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ চারটি সংগঠনের নেতৃবৃন্ধ জ¦ালানি উপদেষ্টাকে লেখা এক যৌথ পত্রের মাধ্যমে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগের ব্যাপারে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এ মুহূর্তে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে শিল্প-কারখানা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। পণ্য উৎপাদন ব্যয়
Printed Edition
॥ এম এ খালেক ॥
দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ চারটি সংগঠনের নেতৃবৃন্ধ জ¦ালানি উপদেষ্টাকে লেখা এক যৌথ পত্রের মাধ্যমে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগের ব্যাপারে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এ মুহূর্তে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে শিল্প-কারখানা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। পণ্য উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাতে পারে। ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দ তাদের পত্রে আরো উল্লেখ করেছেন, গত ৫ বছরে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে ২৮৬ শতাংশ, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে ৩৩দশমিক ৫০ শতাংশ, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে ৬৮ শতাংশ। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েছে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে ৫৬ শতাংশ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে শ্রমিকদের বার্ষিক বেতন বর্ধন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে ৯ শতাংশ। উচ্চমূল্য দিয়েও প্রয়োজনীয গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করেছে। অধিকাংশ শিল্প-কারখানায় উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় আগামীতে শিল্প সেক্টর, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে দুরবস্থা নেমে আসতে পারে।
জ¦ালানি সেক্টরে বিগত সরকারের গৃহীত ভুল নীতির মাশুল দিতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। জ¦ালানি খাতের চারটি প্রধান উৎস হচ্ছে, জ¦ালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও কয়লা। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও তার পরিমাণ চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। সীমিত পরিমাণে কয়লা উৎপাদিত হয়। কিন্তু জ¦ালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার বিশ্বব্যাপী নিরুৎসাহিত করা হয় পরিবেশ দূষণের কারণে। বাংলাদেশের শীর্ষ জ¦ালানি বলে গ্যাসকে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
বিশ্বের অন্যান্য ব-দ্বীপের মতো বাংলাদেশও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে জ¦ালানি তেল পাওয়া না গেলেও প্রচুর পরিমাণ গ্যাস আবিস্কৃত হয়েছে। আগামীতে স্থলভাগ এবং আন্তর্জাতিকভাবে চিহ্নিত সমুদ্র সীমায় প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ¦ালানি তেল পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে যতগুলো গ্যাস ক্ষেত্রে আবিস্কৃত হয়েছে তাতে প্রমাণিত গ্যাসের মজুতের পরিমাণ হচ্ছে ২৮ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট)। আমরা ইতিমাধ্যেই প্রমাণিত মজুত থেকে প্রায় ২০ টিসিএফ গ্যাস ব্যবহার করে ফেলেছি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনে প্রতি বছর গড়ে এক টিসিএফ বা তার কিছু বেশি গ্যাস ব্যবহার করে থাকে। নিকট ভবিষ্যতে যদি নতুন গ্যাস ক্ষেত্রে আবিস্কৃত না নয় তাহলে যে গ্যাস আছে তা দিয়ে সর্বোচ্চ ৮ বছরের চাহিদা মেটানো যেতে পারে। পতিত স্বৈরাচারি সরকার আমলে নিজস্ব উৎস থেকে জ¦ালানি অনুসন্ধান ও আহরণের তেমন কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। বরং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রতি বেশি জোর দেয়া হয়। এ ভুলনীতির কারণে বিদ্যুৎ খাতের ব্যাপক দুর্নীতি এবং অবৈধ অর্থ উপার্জনের সুযোগ তৈরি হয়। নীতি নির্ধারকগণ যে বিষয়টি বুঝতেন না তা নয়। তারা বুঝে-শুনেই তাদের আশির্বাদপুষ্ট মহলকে অবৈধ অর্থ কামানোর সুযোগ তৈরি করে দেবার জন্যই নিজস্ব উৎস থেকে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের উদ্যোগ গ্রহণের পরিবর্তে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে উচ্চ মূল্যে এলএনজি আমদানির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ জ¦ালানি চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা হয়। অভ্যন্তরীণ গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হলে তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হলেও এতে কমিশন ভোগের সুযোগ তেমন একটা থাকে না। তাই মহল বিশেষ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা করে।
দেশ যাতে ভবিষ্যতে গ্যাস সঙ্কটে পতিত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য এই মুহূর্তে জরুরিভিত্তিতে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দু’টি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। প্রথমত, ইতিমধ্যেই যেসব গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছে সেগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের পরিমাণ আরো বাড়ানোর সুযোগ আছে। নতুন কূপ খনন করা হলে সেখান থেকে গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে গ্যাস আহরণকে রিজার্ভ গ্রোথ বলা হয়। বর্তমান যেসব গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে তার সবগুলোতে এই পদ্ধতিতে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেসব গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমানে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে তার নতুন অংশে কূপ খনন করা হলে গ্যাস প্রাপ্তির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, দেশের সম্ভাবনাময় বিভিন্ন স্থানে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। দেশের অভ্যন্তরে এবং সমুদ্র সীমানায় অনুসন্ধান চালালে প্রচুর গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কৃত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে এটা স্বীকার করতেই হবে যে, এতদিন বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণে গ্যাস অনুসন্ধান করা হয়নি। অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করা হলে দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং সমুদ্রসীমায় প্রচুর গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের দেশে অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে গ্যাস প্রাপ্তির অনুপাত পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো। আগে বাংলাদেশে তিনটি স্থানে অনুসন্ধান চালালে একটি গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়া যেতো। এখন হয়তো ৫টি স্থানে অনুসন্ধান করলে একটি স্থানে গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কৃত হতে পারে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই ১০ থেকে ১৫টি স্থানে অনুসন্ধান চালালে একটি গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়া যায়।
আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সুমদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হবার পর মিয়ানমার তাদের সমুদ্র সীমায় অন্তত ১২টি গ্যাস ক্ষেত্রে আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে। ভারতও প্রায় সমপরিমাণ গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কার করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি। অথচ অবস্থানগত কারণে ভারত ও মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় গ্যাস পাবার সম্ভবনা আরো বেশি। ভারত এবং মিয়ানমার অনেক আগে থেকেই সমুদ্র সীমায় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ব্যাপারে খুবই তৎপর রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো সমুদ্র সীমায় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি। সমুদ্র বক্ষে সাঙ্গু গ্যাস ক্ষেত্র ছিল সেটা শেষ হয়ে গেছে। সমুদ্র সীমায় আরো যে গ্যাস ক্ষেত্র পাবার সম্ভাবনা ছিল তাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়নি। বাংলাদেশ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব-দ্বীপ। এসব এলাকায় জ¦ালানি তেল ও গ্যাস পাবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। কাজেই ভারত এবং মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানায় গ্যাস পাবার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি।
কিছুদিন আগে সমুদ্র সীমায় তেল-গ্যাস অনুন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করা হলেও তাতে কোনো বিদেশি কোম্পানি সাড়া দেয়নি। এর কারণ হচ্ছে, বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের উপর কিছুটা হলেও বিরক্ত। আগে একটা সময় ছিল যখন বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং সমুদ্র সীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য খুবই আগ্রহ প্রদর্শন করতো। কিন্তু বাংলাদেশ অজ্ঞাত কারণে এ ব্যাপারে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বিদেশি কোনো কোম্পানিকে আহ্বান জানানো হয়নি। বিদেশি কোম্পানিতে আর বাংলাদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের আহ্বানের জন্য বসে থাকবে না। তারা অন্য দেশে চলে গেছে। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে এ ধরনের বড় বিনিয়োগের কাজগুলো করানো হয়। বিদেশি কোম্পানিগুলো মিয়ানমারে চলে গেছে। এ ব্যর্থতার দায়টা সম্পূর্ণরূপেই আমাদের। কারণ বিদেশি কোম্পানিগুলো যখন বাংলাদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আসতে চেয়েছিল আমরা তাদের সাদর আমন্ত্রণ জানাইনি। বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে বিদেশি উদ্যোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক ধারনা রয়েছে। বিভিন্ন অন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে ভালো মন্তব্য করে না। বিদেশি উদ্যোক্তাগণ কোনো দেশে বিনিয়োগের আগে সেই দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে ভালো ভাবে অবহিত হতে চায়। বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়নে অহেতুক দীর্ঘ সূত্রিতার আশ্রয় গ্রহণ করা হয়। প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি ব্যাপক উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করা যায়। এসব কারণে বিদেশি উদ্যোক্তাগণ বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ক্রমশ নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছে। কোনো বিনিয়োগকারি একটি দেশে বিনিয়োগ করে স্থবির হয়ে বসে থাকাতে চাইবে না। জাতীয় স্বার্থেই আমাদের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত এবং আকর্ষণীয় করতে হবে। কোনোভাবেই যেনো বিনিয়োগকারিরা হয়রানির শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে হবে।
আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা নির্ধারিত হবার পর আমরা বেশ উল্লাস প্রকাশ করেছিলাম। সরকারিভাবে তখন বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ সমুদ্র সীমায় বিশাল এলাকার মালিকানা লাভ করেছে। আসলে তথ্যটি মোটেও সঠিক নয়। বরং বাংলাদেশ আগে যে পরিমাণ সমুদ্র সীমা নিজেদের বলে দাবি করতো তার থেকে বেশ কিছু অংশ মিয়ানমারের মালিকানায় চলে গেছে। আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্র সীমা নির্ধারিত হবার আগে বাংলাদেশ যেটুকু সমুদ্র সীমাকে নিজেদের বলে দাবি করতো তা থেকে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ এলাকা চলে বাংলাদেশের হাত ছাড়া হয়ে গেছে।
দেশে গ্যাসের চাহিদা এবং ব্যবহার দিনদিনই বাড়ছে। নিকট ভবিষ্যতে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কার এবং গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা করা না গেলে প্রমাণিত গ্যাস দিয়ে আগামী ৮ বছরের চাহিদা মেটানো যেতে পারে। তারপরই বাংলাদেশ পুরোপুরি গ্যাস শূন্য হয়ে পড়বে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দেশের অভ্যন্তরভাগে এবং সমুদ্র সীমায় নতুন গ্যাস ক্ষেত্রে অনুসন্ধান ও গ্যাস উত্তোলনের জন্য জোর চেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে জ¦ালানির বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি ব্যবহারের প্রতি আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। নবায়নযোগ্য জ¦ালানির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটা কখনোই নি:শেষ হয়ে যাবে না। বিশ্বের অনেক দেশই নবায়নযোগ্য জ¦ালানি ব্যবহার করে তাদের জ¦ালানি চাহিদা পূরণ করছে। বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি ব্যবহারের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। সূর্যের আলো এবং তাপকে আমরা যথেষ্ট পরিমাণে কাজে লাগাতে পারি। আমাদের রয়েছে বিস্তীর্ণ সমুদ্র সীমা। সমুদ্র সীমায় বাতাসের গতিবেগও বেশ ভালো। কাজেই সোলার এবং উইন্ড দু’ক্ষেত্রেই আমাদের সম্ভাবনা যথেষ্ট ভালো। এখন থেকেই যদি এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী হওয়া যায় তাহলে আগামীতে গ্যাসের সস্কট দেখা কোনো সমস্যা হবে না। এজন্য দীর্ঘ মেয়াদি জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। সরকারকে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল আহরণের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে যেসব ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আছে তারা এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারে। এমনকি বিদেশি কোম্পানিগুলোও এ খাতে অর্থ বিনিয়োগ করতে পারে। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারিদের আকর্ষণের জন্য বিনিয়োগের বাস্তব পরিবেশ উন্নত করা ছাড়া কোনো গত্যান্তর নেই। এক্ষত্রে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপের মাধ্যমে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। নবায়নযোগ্য জ¦ালানি খাতে বিনিয়োগ করা হলে তাতে লোকসানের কোনো আশঙ্কা থাকবে না। কারণ জ¦ালানি এমনই এক উপকরণ যা ছাড়া মানুষের জীবন অচল। কোনো উৎপাদন কার্যও জ¦ালানি ছাড়া চলতে পারে না।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সঠিকভাবে সমন্বয় করা হলে জ¦ালানি তেলের মূল্য লিটারপ্রতি ৭ থেকে ৮ টাকা কমানো সম্ভব। আমরা মনে করি,এটা করা সম্ভব। সর্বশেষ লিটারপ্রতি জ¦ালানি তেলের মূল্য যখন ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয় তখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেলের মূল্য রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। সে সময় অভ্যন্তরীণ বাজারে জ¦ালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করার সময় বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেলের মূল্য হ্রাস পেলে অভ্যন্তরীণ বাজারের মূল্য সমন্বয় করা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে তা করা হয়নি। এখন জ¦ালানি তেলের সঠিকভাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে লিটারপ্রতি ৭/৮ টাকা কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসান পুষিয়ে নেবার জন্য জ¦ালানি তেলের মূল্য বাড়ানো হয়। কিন্তু লোকসানের জন্য তো সাধারণ মানুষ দায়ি নন। কী কারণে বিপিসি লোকসান দিচ্ছে তা খতিয়ে দেখে নিরসনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্তু তা না করে জ¦ালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে গণদুর্ভোগ সৃষ্টির কোনো মানে থাকতে পারে না।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।