আন্তর্জাতিক নাট্য ব্যক্তিত্ব হেনরিক ইবসেন বলেছেন, ঋণগ্রস্ত জাতির না থাকে কোনো মর্যাদা, না থাকে কোনো স্বাধীনতা। পদে পদে তাকে হতে হয় লাঞ্ছিত-অপমানিত। তাই যতটা সম্ভব বিদেশি ঋণনির্ভরতা কাটিয়ে আত্মনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। হেনরিক ইবসেনের এ বক্তব্য নির্মম কিন্তু নিরর্থক নয়। আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে বুঝতে পারবো বিদেশি ঋণ নির্ভর একটি জাতি কখনোই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। তাকে নানাভাবে ঋণদানকারী দেশের আজ্ঞাবহ হয়ে টিকে থাকতে হয়। ইচ্ছার বাইরেও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অনেক সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত প্রকাশ করতে হয়। বিদেশি ঋণ গ্রহণ খারাপ কিছু নয়।

অধিকাংশ দেশ, এমনকি যাদের আমরা উন্নত দেশ হিসেবে জানি তারাও প্রাথমিক পর্যায়ে বিদেশি ঋণ গ্রহণ করেছে। সে ঋণের অর্থ সঠিকভাবে পরিকল্পিত উপায়ে ব্যবহার করার মাধ্যমে তারা জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সমর্থ হয়েছে। কিন্তু আমাদের মতো দেশগুলোর সমস্যা হচ্ছে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হন তাদের মধ্যে দেশের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ বড় হয়ে উঠে। তারা বিদেশি ঋণ গ্রহণ করে দেশের উন্নয়নের নামে কিন্তু তার একটি বড় অংশই চলে যায় তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধির কাজে। উন্নয়ন এবং জাতীয় স্বার্থের নামে তারা যে ঋণ গ্রহণ করেন তা থেকে কমিশন এবং অন্যভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। এ অর্থ দেশে যেহেতু প্রশ্নাতীতভাবে ব্যবহার করা যায় না, তাই তারা সুযোগ পেলেই বিদেশে পাচার করে। বিদেশে পাচারকৃত ঋণের অর্থ দিয়ে তারা তারা সম্পদ গড়ে তোলে।

বিগত সরকার আমলে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি কীভাবে উন্নয়নের নামে বিদেশ থেকে ঋণ এনে তার একটি বিরাট অংশ আত্মসাৎ করে আবারো তা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে যারা ঋণদান করে তাদের ঋণের অর্থের একটি বড় অংশই পুনরায় বিদেশে চলে যায়। মাঝখান থেকে ঋণ গ্রহীতা দেশকে কিস্তি এবং সুদের বোঝা টানতে হয়। বিদেশি ঋণ গ্রহণের সুবিধা হলো এতে ঋণের দায়ভার তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট দেশের সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না। কোন দেশের সরকার যদি তার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ট্যাক্সের হার বাড়িয়ে দেয় তাহলে সে দেশের জনগণ নিশ্চিতভাবেই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদি হয়ে উঠবে এবং সরকারের পতন চাইতে থাকবে। কিন্তু সে সরকারই যদি জনগণের উপর আরোপিত ট্যাক্সের হার না বাড়িয়ে বিদেশ থেকে দ্বিগুন পরিমাণ অর্থ ঋণের মাধ্যমে যোগার করে তাহলে জনগণ কোন প্রতিবাদ করবে না। জনগণ মনে করবে, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সরকার বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণ করতেই পারে। তাদের তো কোন অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু সাধারণ মানুষ এটা বুঝতে পারে না যে, গৃহীত ঋণের কিস্তি এবং সুদের অর্থ পরিশোধের দায় শেষ পর্যন্ত তাদের উপরই বর্তাবে। মানুষের একটি সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে তাদের পিঠ দেয়ালে না ঠেকলে তারা প্রতিবাদ করে না।

বিগত সরকার আমলে সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অবকাঠামোগত খাতে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। দৃশ্যমান এ উন্নয়নের বিষয়টি কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। সরকার তার উন্নয়ন কার্যক্রমে এতটাই আত্ম সুখ অনুভব করতেন যে, এক সময় শ্লোগানও দেয়া শুরু করেছিলেন,‘উন্নয়ন নাকি গণতন্ত্র। উন্নয়ন উন্নয়ন।’ তার অর্থ হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্র না হলেও চলবে কিন্তু এ উন্নয়ন কিভাবে সাধিত হলো তা কি আমরা একবারও ভেবে দেখি? বিগত সরকার আমলের শেষের দিকে এসে দেশের রাজস্ব আহরণের হার সাংঘাতিকভাবে কমে যায়। বর্তমানে দেশের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ৭ শতাংশের মতো। অর্থাৎ আমাদের দেশের জিডিপি’র আকার যদি ১০০ টাকা হয় তাহলে ট্যাক্স আদায় হচ্ছে মাত্র ৭ টাকা। অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ব্যবহারযোগ্য অর্থ আহরণের হার এবং পরিমাণ কমে যাবার পর সরকারের সামনে দুটি রাস্তা খোলা ছিল, তাকে উন্নয়ন কার্যক্রম সংকুচিত করতে হতো। অথবা বিদেশ থেকে ঢালাও ঋণ গ্রহণ করে তা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার করা। বিগত সরকার দ্বিতীয় পন্থা অবলম্বন করেন। এতে সুবিধা ছিল এ যে, দলীয় এবং গোষ্ঠীগত স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হয়। আর সাধারণ মানুষকে এই বলে প্রবোধ দেয়া যায় যে, আমরা দেশের উন্নয়নের জন্য কতই না কাজ করছি। বিদেশি ঋণের এ অর্থ নানাভাবে আত্মসাৎ করে সরকারের মন্ত্রী এবং সমর্থক গোষ্ঠী তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছেন। যেহেতু দেশের আইনে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ প্রশ্নাতীতভাবে ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই, তাই উপার্জিত অর্থ নানা প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে গঠিত শ্বেতপত্র কমিটি তাদের প্রতিবেদেনে উল্লেখ করেছিল, বিগত সরকার আমলে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার সমতুল্য ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়। অর্থাৎ প্রতি বছর বিদেশে পাচার হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এ পাচার কাজের সঙ্গে বিগত সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং সমর্থকগোষ্ঠী জড়িত ছিলেন। তবে এটা মনে করার কোন কারণ নেই যে, বিগত সরকার আমলে দুর্নীতির মাধ্যমে শুধু ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার লুটে নেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও অনেক টাকা লুট নিয়ে স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কারণ অর্থ পাচারের সুযোগ সবার থাকে না।

বিগত সরকার আমলে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের গৃহীত বিদেশি ঋণের স্থিতি ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার অতিক্রম করে গেছে। বাংলাদেশকে ঋণদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থানে রয়েছে বিশ্বব্যাংক, ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ), এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), জাপানি সংস্থা জাইকা, চীনের এক্সিম ব্যাংক, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) ইত্যাদি। চায়না লোন ট্রাপ বলে একটি কথা আছে। এর অর্থ হচ্ছে, কোন দেশের সরকার চাইলেই চীন ঋণ প্রদান করে। সে ঋণের অর্থ কিভাবে ব্যবহার করা হলো, ঋণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশটির কোন উন্নতি হলো কিনা এসব বিষয় তারা ভাবে না।

যেহেতু চীনের কাছে চাইলেই ঋণ পাওয়া যায় তাই দরিদ্র দেশগুলোর সরকার চীনের ঋণের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। চীনের ঋণের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে। এর আগে ঋণদানের ক্ষেত্রে অন্য সংস্থাগুলোর প্রাধান্য পরিলক্ষিত হতো। বিশেষ করে বিদেশি ঋণের প্রসঙ্গ এলেই বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র কথা মনে হতো।

১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রেটন উডস সম্মেলনের মাধ্যমে আইএমএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধোত্তর বিশ্ব অর্থনীতিকে পুনর্গঠিত করা। বর্তমানে আইএমএফ সদস্য সংখ্যা ১৯১টি। সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আইএমএফ’র বার্ষিক সম্মেলন। এ সম্মেলনে আইএমএফ’র নিকট থেকে ঋণ গ্রহণকারি দেশগুলোর সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, আইএমএফ’র সদস্যভুক্ত ১৯১টি দেশের মধ্যে ৮৬টি দেশ সংস্থাটি থেকে ব্যাপক মাত্রায় ঋণ গ্রহণ করেছে। এসব দেশের নিকট আইএমএফ’র পাওনা ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঋণ গ্রহীতা দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় তিনটি দেশের নিকট সংস্থাটির পাওনা রয়েছে মোট প্রদত্ত ঋণের অর্ধেক। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার কাছে পাওনা রয়েছে ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইউক্রেনের নিকট পাওনা রয়েছে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মিশরের নিকট পাওনা ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দশটি দেশে রয়েছে আইএমএফ’র মোট ঋণের ৭৩ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ গঠিত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্ব অর্থনীতি ও অবকাঠামোগত পুনর্গঠনের জন্য। কিন্তু কার্যত এই দু’টি সংস্থা সাম্রাজ্যবাদি চক্রের স্বার্থ উদ্ধার করে চলেছে। তারা ঋণদান করে কিন্তু সেই ঋণের জন্য বিভিন্ন ধরনের শর্ত চাপিয়ে দেয়া হয়। বিশেষ করে আইএমএফ শর্তযুক্ত ঋণ প্রদান করে। কিন্তু তাদের দেয়া ঋণের শর্ত দেশ ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। যেসব দেশ অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তিতে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকে তাদের ক্ষেত্রে তুলনামূলক সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হয়। কিন্তু উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশের ক্ষেত্রে আইএমএফ’র ঋণের শর্ত থাকে কঠিন। তারা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কৃষি খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করার জন্য পরামর্শ দেয়। কিন্তু উন্নত দেশগুলো তাদের কৃষি খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি প্রদান করে। কিন্তু এক্ষেত্রে আইএমএফ কিছু বলে না।

আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক ব্যাপক মাত্রায় ঋণদানের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কার্যত তাদের আজ্ঞাবাহী করে ফেলে। এসব দেশ চাইলেও আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ঋণের শর্তের বাইরে যেতে পারে না। কয়েক বছর আগে একটি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে চমকপ্রদ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। এতে বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশগুলো প্রতি বছর যে পরিমাণ ঋণ অনুমোদন পায় তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ পূর্বে গৃহীত ঋণের সুদ এবং কিস্তি বাবদ ঋণদানকারী সংস্থাগুলোকে প্রদান করে। তার অর্থ হচ্ছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে নতুন করে ঋণ গ্রহণ করে আগের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তাগণ সরাসরি বিদেশি ঋণ গ্রহণ করছে। বিগত সরকার আমলে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে সীমিত পরিসরে বিদেশি ঋণ গ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। সে সময় দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে উদ্যোক্তাদের চাহিদা মতো ঋণ দান করতে পারছিল না। এছাড়া স্থানীয় সূত্র থেকে গৃহীত ঋণের সুদের হার ছির অস্বাভাবিক রকম বেশি। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ গ্রহণ করতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের নানা ধরনের হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছিল। তাই স্থানীয় উদ্যোক্তারা বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণের সুযোগ দানের জন্য সরকারের নিকট আবেদন করেছিল। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বিদেশি সূত্র থেকে ঋণ গ্রহণের অনুমতি প্রদান করে। বিদেশি ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পরোক্ষভাবে গ্যারান্টি প্রদান করতো। অনেকেই হয়রানিমুক্তভাবে তুলনামূলক সুলভ সুদে ঋণ পাবার জন্য বিদেশি সূত্র থেকে ঋণ গ্রহণ করতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বিদেশি সূত্র থেকে ঋণ গ্রহণের মাত্রা কমে গেছে।

কেউ কেউ বলছেন, বাজারে মার্কিন ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাবার কারণে বিদেশি সূত্র থেকে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ঋণ গ্রহণের মাত্রা কমেছে। কিন্তু এ ধারণা মোটেও ঠিক নয়। বাজারে মার্কিন ডলারের উপস্থিতি হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে বিদেশি সূত্র থেকে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ঋণ গ্রহণের কোন সম্পর্ক নেই। দেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে। যারা শীর্ষ স্থানীয় উদ্যোক্তা তাদের অনেকেই এখন জেলে আছেন অথবা বিদেশে পলাতক আছেন। তারা প্রকাশ্যে তাদের ব্যবসায়িক তৎপরতা চালাতে পারছেন না। শীর্ষস্থানীয় এসব উদ্যোক্তা সরকারের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক তৈরি করে দেশের ব্যাংক থেকে যেমন ঋণ গ্রহণ করে অন্য খাতে প্রবাহিত করেছেন। ঠিক তেমনি বিদেশি সূত্র থেকেও ব্যাপক হারে ঋণ গ্রহণ করেছেন। ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের বিদেশি সূত্র থেকে ঋণ গ্রহণের সুযোগ দেয়া হলেও তা সবার ভাগ্যে জোটেনি। স্থানীয় ব্যাংক থেকে ব্যক্তি খাতে ঋণদানের প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বিনিয়োগ পরিবেশ এখন ভালো নেই। এর প্রভাব পড়েছে ব্যক্তি খাতে বিদেশি সূত্র থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রেও। সব মিলিয়ে এখন ব্যক্তি খাতে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। গত আগস্ট মাসে ব্যক্তিখাতে বিদেশি ঋণের স্থিতির পরিমাণ ছিল ৯৫৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত ৫৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বল্প মেয়াদি বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৯১৯ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থনীতিবিদগণ মনে করছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতাসীন হলেই দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। তখন এমনিতেই ব্যক্তি খাতে বিদেশি ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। তাই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই।

তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রীয়ভাবেই হোক আর ব্যক্তি পর্যায়েই হোকÑ গৃহীত বিদেশি ঋণ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে তা জাতির জন্য ভয়াবহ এক বিপদ ডেকে আনতে পারে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।