সুলতান মাহমুদ সরকার

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের হতভাগ্য এক নদীর নাম তিস্তা। নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জীবনের গল্প, বেঁচে থাকার ইতিহাস, কৃষির প্রাণ, মানুষের হাসি-কান্না, আশা ও বেদনার দীর্ঘ অধ্যায়। কিন্তু আজ এ নদী যেন হয়ে উঠেছে অভিশাপের প্রতীক। একসময় যার প্রবাহে মানুষ বাঁচত, ফসল ফলত, জীবিকা চলত, সেই নদী আজ শুষ্ক মাটির মতো নিস্তেজ। তিস্তা কেবল একটি নদী নয়; এটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের অস্তিত্ব, স্বপ্ন ও বেঁচে থাকার প্রতিচ্ছবি। সে স্বপ্ন আজ ভেঙে পড়েছে রাজনৈতিক স্বার্থ, কূটনৈতিক অচলাবস্থা এবং বৈষম্যের নির্মম বাস্তবতায়।

তিস্তা নদীর জন্ম হিমালয়ের কোলে, ভারতের সিকিম রাজ্যের গ্লেসিয়ার থেকে। পর্বত বেয়ে নামা এ নদী পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার অতিক্রম করে প্রবেশ করে বাংলাদেশের লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলায়। তারপর এটি ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিশে যায়। প্রাচীন দলিলপত্রে দেখা যায়, তিস্তা একসময় গঙ্গার উপনদী ছিল, কিন্তু ১৭৮৭ সালের এক ভয়াবহ বন্যায় নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে উত্তরবঙ্গের দিকেই স্থায়ীভাবে বয়ে যেতে শুরু করে। তখন থেকেই নদীটি উত্তরবঙ্গের জীবন-রেখা হিসেবে পরিচিত হয়।

এ নদী একসময় ছিল উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র। নদীর দু’তীরে বিস্তৃত ফসলি জমি, ধান, পাট, গম, ভুট্টা সবকিছুই তিস্তার পানির কল্যাণে সমৃদ্ধ ছিল। কৃষকরা সারা বছর সেচের পানি পেতেন, মাছ ধরার মৌসুম ছিল প্রাণবন্ত, জীবিকা ছিল নির্ভরযোগ্য। তিস্তার জল তখন উত্তরবঙ্গের জনজীবনের অক্সিজেন। কিন্তু সে তিস্তা আজ যেন এক মৃতপ্রায় স্রোতধারা। কোথাও কোথাও মাইলের পর মাইল জুড়ে শুকনো বালুচর, ভাঙা চরের পর চর, ধুলা ও ধ্বংসের এক অনন্ত দিগন্ত।

তিস্তা নদী নিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক জটিলতার নাম হলো “তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি”। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি হয়েছিল। তাতে বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছিল নদীর ৩৬ শতাংশ এবং ভারতকে ৩৯ শতাংশ পানি ব্যবহারের অনুমতি, বাকি ২৫ শতাংশ রাখা হয়েছিল নদীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায়। কিন্তু সে চুক্তি কখনোই কার্যকর হয়নি। তার পরের কয়েক দশকে বহুবার আলোচনা হয়েছে, বিশেষত ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকায় আসার সময় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে চুক্তিটি শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে যায়। তারপর থেকে তিস্তা যেন দুদেশের কূটনীতির গোপন পৃষ্ঠায় বন্দি এক নাম হয়ে আছে যার মুক্তি কেউ চায় না।

বাংলাদেশের দৃষ্টিতে তিস্তার পানি ন্যায্য হিস্যায় পাওয়া আমাদের পাপ্য অধিকার। আন্তর্জাতিক নদী আইনও সে কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের অংশে পানি আসেই না। ভারতের গজলডোবা ব্যারাজ থেকে পানি আটকে দেওয়ার ফলে শুষ্ক মৌসুমে নদীটি প্রায় মরে যায়। ডিসেম্বর থেকে মে পর্যন্ত সময়ে তিস্তার বুক জুড়ে পড়ে থাকে ধুলা-বালি। কোথাও কোথাও মানুষ হেঁটে নদী পার হয়। ফসলি জমি শুকিয়ে ফেটে যায়, পুকুর-খাল মরে যায়, কৃষকের চোখে ভেসে ওঠে অনিশ্চয়তার ছায়া।

রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম জেলার লক্ষাধিক পরিবার তিস্তার পানির ওপর নির্ভরশীল। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষি আজ একপ্রকার অপমৃত্যুর মুখে। যে জমিতে একসময় বছরে তিন মৌসুমে ফসল হতো, সেখানে এখন এক মৌসুমেও ভাল ফলন পাওয়া যায় না। সেচের পানি না থাকায় কৃষকেরা বিকল্প হিসেবে ডিপ টিউবওয়েল কিংবা কৃত্রিম সেচের ওপর নির্ভর করছে, কিন্তু ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাওয়ায় সে পথও বন্ধ হয়ে আসছে। ফলে কৃষি উৎপাদন কমছে, কর্মসংস্থান হ্রাস পাচ্ছে, দারিদ্র্য বাড়ছে একইসাথে উত্তরবঙ্গের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ক্রমে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ছে।

তিস্তার শুষ্কতা শুধু কৃষি ধ্বংস করেনি, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রভাব ফেলেছে। ফসল হারানো কৃষকরা শহরমুখী হচ্ছে, জমি বিক্রি করে দিচ্ছে, দিনমজুরে পরিণত হচ্ছে। পরিবারে অনটন, ঋণের বোঝা, অভাবের চক্র তাদের গ্রাস করছে। একসময় সবুজ শস্যের ঢেউ খেলত যে অঞ্চলে, আজ সেখানে অনিশ্চয়তা আর বেকারত্বের কালো ছায়া। তিস্তার এক সময়ের প্রানবন্ত জনপদ এখন বিষণ্ন বালুচরে পরিণত হয়েছে।

তিস্তার নদীপথে আরও এক বড় বিপর্যয় হলো অসময়ে বন্যা। উজানে ভারত যখন ইচ্ছেমতো গজলডোবা ব্যারাজ খুলে দেয়, তখন হঠাৎ বন্যা এসে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আবার যখন পানি দরকার, তখন তারা এক ফোঁটাও ছেড়ে দেয় না। এই অস্বাভাবিক ওঠানামা শুধু ফসল ধ্বংস করে না, মানুষের জীবনও বিপর্যস্ত করে তোলে। জুন-জুলাই মাসে আকস্মিক বন্যায় হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন হয়, ঘরবাড়ি, পশুপাখি, ফসল সব হারায়। তারপর যখন পানি সরে যায়, তখন শুরু হয় অনাবৃষ্টির খরা। প্রকৃতি যেন এই এলাকার মানুষগুলোর সঙ্গে নির্মম খেলা খেলছে।

তিস্তা চুক্তি নিয়ে সমস্যা শুধু পানির অভাব নয়, এর পেছনে লুকিয়ে আছে রাজনীতির জটিল সমীকরণ। ভারত বলে, নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সম্মতি প্রয়োজন। রাজ্য সরকার বলে, তারাও কৃষির প্রয়োজনে পানি আটকে রাখতে বাধ্য। এমন কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের স্বার্থ বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, তিস্তা একটি আন্তঃসীমান্ত নদী তাই এর পানি উভয় দেশের ন্যায্য অধিকারের মধ্যে পড়ে। কিন্তু ভারতের রাজনৈতিক কাঠামোর ভেতর সেই ন্যায্যতা আজও কার্যকর হয়নি।

আন্তর্জাতিক আইন স্পষ্টভাবে বলে- কোনো দেশই একতরফাভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারী নদীর প্রবাহে হস্তক্ষেপ করতে পারে না, যা অন্য দেশের ক্ষতি করে। জাতিসংঘের ১৯৯৭ সালের “Convention on the Law of the Non-Navigational Uses of International Watercourses” এ বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা দেয়। সেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক তীরবর্তী দেশকে নদীর পানি “ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গতভাবে” ব্যবহার করতে হবে। তবুও বাস্তবে ভারত উজানে ব্যারাজ তৈরি করে যে পরিমাণ পানি আটকে রাখছে, তা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করছে। এটি আন্তর্জাতিক ন্যায্যতার পরিপন্থী এবং মানবিক দিক থেকেও অগ্রহণযোগ্য।

তিস্তা চুক্তির নতুন বন্দোবস্ত হওয়া উচিত বৈজ্ঞানিক ও বাস্তবতার ভিত্তিতে। নদীর বার্ষিক প্রবাহ, মৌসুমি পরিবর্তন, উভয় দেশের কৃষি চাহিদা এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বিশ্লেষণ করে নতুন করে হিস্যা নির্ধারণ করা যেতে পারে। শুধু পানি ভাগাভাগি নয়, নদী ব্যবস্থাপনা, সেচ অবকাঠামো উন্নয়ন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণেও দুই দেশের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। একটি স্থায়ী যৌথ পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করে উজান-ভাটির তথ্য বিনিময়, জলবায়ু প্রভাব মূল্যায়ন এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সমন্বিত পরিকল্পনা নেওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশের উচিত এখন তিস্তা ইস্যুকে শুধু দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুবিস্তারে তুলে ধরা। দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতা সংস্থা (SAARC), বিমসটেক (BIMSTEC), কিংবা জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে এ বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করা দরকার। একই সঙ্গে দেশের ভেতরে বিকল্প পানি ব্যবস্থাপনা, নদী খনন, খাল পুনঃখনন, সেচ অবকাঠামো উন্নয়ন ও কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

তিস্তা ইস্যুকে বুঝতে হলে গঙ্গা-পদ্মার সঙ্গে তুলনা করাও জরুরি। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হয়, যা দুদেশের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর বাস্তবায়িত হয়। যদিও সেটিতেও নানা সীমাবদ্ধতা আছে, তবু সেটি একটি কার্যকর কাঠামো তৈরি করেছে। অন্যদিকে তিস্তা চুক্তি আজও অমীমাংসিত। গঙ্গা চুক্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছিল, কিন্তু তিস্তার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের আপত্তিই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ তুলনা থেকে স্পষ্ট হয়, যেখানে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে, সেখানে সমাধানও সম্ভব; আর যেখানে রাজনীতির বাধা, সেখানে নদীও শুকিয়ে যায়।

সম্প্রতি তিস্তা নদী পুনর্বাসন প্রকল্পে চীনের আগ্রহ নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষ নুতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। চীন প্রায় একশ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে তিস্তা নদী খনন, সেচব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও বাঁধ নির্মাণে। যদি এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়, তাহলে উত্তরবঙ্গের কৃষি আবার প্রাণ ফিরে পেতে পারে। নদীর দুতীরে আধুনিক সেচনেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে, নতুন শিল্প এলাকা গড়ে উঠবে, মৎস্যচাষ ও পর্যটনের সম্ভাবনাও সৃষ্টি হবে। কিন্তু ভারতের ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ এ প্রকল্পে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা আশঙ্কা করছে, চীনের ই উপস্থিতি বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তে নতুন প্রভাব সৃষ্টি করবে। ফলে তিস্তা এখন কেবল একটি নদীর সংকট নয়, এটি পরিণত হয়েছে আঞ্চলিক শক্তির প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও।

তবুও, যদি বাংলাদেশ কূটনৈতিক প্রজ্ঞা ও জাতীয় স্বার্থে অটল থাকে, তবে তিস্তা পুনর্জাগরণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে পারে। তিস্তা ব্যারাজ, খাল পুনঃখনন, নতুন সেচ নেটওয়ার্ক, ও নদীর পাড়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা গেলে রংপুর অঞ্চল এক নতুন কৃষি বিপ্লবের সাক্ষী হতে পারে। এ অঞ্চলের উৎপাদন বেড়ে গেলে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা মজবুত হবে, দারিদ্র্য কমবে, আঞ্চলিক বৈষম্য দূর হবে। কৃষি আবার জীবনের প্রাণ ফিরিয়ে আনবে, মানুষ আবার আশার আলো দেখবে।

বাংলাদেশের মোট কৃষি উৎপাদনের একটি বড় অংশ আসে উত্তরাঞ্চল থেকে। তিস্তার পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে দেশের সার্বিক কৃষি প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে যেতে পারে। সেচনির্ভর ফসলের পাশাপাশি ফসল বৈচিত্র্য, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও পানি সাশ্রয়ী চাষপদ্ধতি চালু করা গেলে তিস্তা অঞ্চলের কৃষি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। কৃষকরা আত্মনির্ভর হবে, গ্রামের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হবে, এবং দারিদ্র্য চক্র ভেঙে পড়বে।

তিস্তা পাড়ের মানুষের চাওয়া খুব বড় কিছু নয় তারা শুধু চায় ন্যায্য অধিকার। তারা চায় সে নদীটিকে ফিরিয়ে পেতে, যা একসময় তাদের জীবন দিয়েছিল। রাষ্ট্রের উচিত তাদের এ আকুতির প্রতি সাড়া দেওয়া। পদ্মা সেতু যেমন দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের প্রতীক, তেমনি তিস্তা পুনর্জাগরণ প্রকল্প হতে পারে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের নতুন প্রতীক। সরকার যদি তিস্তা পুনর্বাসনকে জাতীয় অগ্রাধিকারের অংশ করে নেয়, তবে উত্তরবঙ্গ আর অবহেলিত থাকবে না।

তিস্তা আজ অভিশপ্ত, কিন্তু অভিশাপ চিরস্থায়ী নয়। ইতিহাস বলে, নদী যেমন প্রাণ দিতে পারে, তেমনি সময়ের প্রবাহে সে আবার নতুন জীবনও ফিরিয়ে দিতে পারে। প্রয়োজন শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছা, বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা, আর মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা। তিস্তা যদি আবার বয়ে চলে, তবে এই দেশের উত্তর প্রান্তে কৃষি, শিল্প, ও জীবনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

আজ যখন আমরা উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি ও টেকসই ভবিষ্যতের কথা বলি, তখন তিস্তা নদীর কথা না বললে তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কারণ এ নদী শুধু পানি নয় এটি আশা, জীবন, অস্তিত্বের প্রতীক। তিস্তা বাঁচলে বাঁচবে উত্তরবঙ্গ; তিস্তা বাঁচলে বাঁচবে বাংলাদেশের কৃষি। তিস্তা বাঁচানো মানে কোটি মানুষের মুখে হাসি ফিরিয়ে আনা, মরুভূমির বুক জুড়ে আবার সবুজের তরঙ্গ তোলা।

অতএব সময় এসেছে অভিশাপকে আশীর্বাদে রূপান্তর করার। তিস্তা যেন আর না থাকে অযুত সম্ভাবনার অপমৃত্যুর প্রতীক; বরং হোক বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পুনর্জাগরণের নতুন নাম, জীবনের নতুন উৎস, প্রগতি ও ন্যায্যতার প্রতীক। তিস্তা ফিরে এলে উত্তরবঙ্গের মাটিতে আবার জন্ম নেবে সবুজ, মানুষের মুখে ফিরবে হাসি, আর বাংলাদেশ তার ভৌগোলিক পূর্ণতাকে নতুনভাবে চিনে নেবে।

তিস্তা একদিন আবার বয়ে যাবে- জীবন হয়ে, ভালোবাসা হয়ে, ন্যায্যতার নদী হয়ে।

লেখক : কলামিস্ট, এমফিল গবেষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।