মরহুম ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক একজন প্রথিতযশা আইনজীবী। কিংবদন্তী আইনজ্ঞ। একজন সফল মানুষ। আমি আমার শৈশব থেকেই এ মানুষটির নাম শুনে অভ্যস্ত। তবে খুব সম্ভবত প্রথম তার নাম শুনি আমার পিতার মুখেই, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম (রহ.)-এর নাগরিকত্ব মামলার সময়ে। সে মামলায় অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ ছিল। সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ ছিল, সিনিয়র কোনো আইনজীবী মামলাটি করতে রাজি হচ্ছিলেন না। এ কারণে মামলায় কিছু দুর্বলতাও তৈরি হয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে এ মামলায় সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন মরহুম ব্যারিস্টার এ আর ইউসুফ। তাকে জুনিয়র হিসেবে এ্যাসিস্ট করতেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। আর সংগঠনের পক্ষ থেকে মামলা মনিটর ও সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করতেন আমার বাবা। এ সূত্রেই আমি ব্যারিস্টার এ আর ইউসুফ ও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের নাম বহুবার শুনেছি।
আইনঙ্গনে বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ মামলার আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আমি পরিণত বয়সে আসার পর বহুবার আদালত অঙ্গনে গিয়েছি। হাইকোর্ট ভবনের ৩৫২ নং রুমে ব্যারিস্টার চাচার রুম ছিল। এ রুমটি দু’জন রাজ্জাকের জন্য বরাদ্দ ছিল। একজন হলেন সাবেক স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলী, আর অপরজন আমাদের ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। শেখ রাজ্জাক সাহেব অনেক আগে ইন্তিকাল করায় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকই ছিলেন এ রুমের সিনিয়র। তার অনুপস্থিতিতে তার সন্তানেরা এবং জুনিয়র আইনজীবীরা এ রুমটি ব্যবহার করতেন। আমি এ রুমে নানা মতের আইনজীবী, সাংবাদিকসহ নানা ব্যক্তিত্বকে আসতে দেখেছি। সবার চোখেই ব্যারিস্টার চাচার প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধাবোধ অবলোকন করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক তাদের কাছে নিছক আইনজীবী নন, বরং একটি ভরসার নাম।
২০০০ সালের পর জামায়াতের আমীর পদে পরিবর্তন আসলে দায়িত্বে আসা নতুন নেতৃত্ব অনেকটা আউটসাইড দ্য বক্স দৃষ্টিভঙ্গির অংশ হিসেবে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে ফ্রন্টে নিয়ে আসা হয় এবং দলের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। পদটি জামায়াতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যারিস্টার রাজ্জাক চাচা কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদেরও সদস্য ছিলেন। আউটসাইড দ্য বক্স দৃষ্টিভঙ্গি বললাম কেননা এর আগ পর্যন্ত সাধারণত ফুলটাইম সংগঠনে সময় দিতে পারবেন এমন দায়িত্বশীলদেরকেই কেন্দ্রীয় পদে দায়িত্ব দেয়া হতো। ব্যারিস্টার চাচা সে অনুযায়ী একদমই ভিন্ন অবস্থানের। তিনি পেশাগতভাবে ভীষণেই সাউন্ড ছিলেন। আর জামায়াতের নেতৃত্ব তার পেশাগত উৎকর্ষতাকে মূল্যায়ন করেছিল। আরেকটি বিষয় হলো, রাজ্জাক চাচা নিজেও এ কাজের জন্য যোগ্য ছিলেন। পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি তিনি ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের নিবেদিত প্রাণ। তার প্রতিটি মুহূর্তের চিন্তায় ইসলামী আন্দোলনের জন্য অবদান রেখে যাওয়া ছাড়া ভিন্ন কিছু ছিল না। তিনি ছিলেন তাকওয়াবান ও আমলদার একজন মানুষ।
বাবার সাথে তার অসংখ্য স্মৃতি আছে। অধ্যাপক সাহেবের নাগরিকত্ব মামলার আইনজীবী থেকে শুরু করে দলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে বা বিভিন্ন সফরে তাদের একসাথে কাজ করার স্মৃতি রয়েছে। এখনো যখন বিভিন্ন আলোচনায় বা সেমিনারে দু’জনের পাশাপাশি বসে থাকা ছবিগুলো দেখি, তখন তাদের সুসম্পর্কের বিষয়টি অনুধাবন করতে পারি। ২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের দেশজুড়ে সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রেক্ষিতে সে নির্বাচনটি বাতিল হয়ে যায়। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। ঘরোয়া রাজনীতি হয় নিষিদ্ধ। সে সময়ের একটি ঘটনা বেশ মনে পড়ে। দলীয় অফিস বন্ধ। তাই আব্বা বাসাতেই সময় অতিবাহিত করতেন। বাকি সময় চেয়ারম্যান হিসেবে দৈনিক সংগ্রামে সময় দিতেন। এভাবেই চলছিল সব। এরই মধ্যে আব্বা একটি বই লিখে ফেললেন। বইটির উপজীব্য ছিল জামায়াতে ইসলামী আর বইটির নাম ‘একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক রাজনৈতিক দল।’ বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর বেশ সমাদৃত হলো। একদিন আব্বা আমাকে ডাকলেন এবং বললেন, “এ বইটি যারা পড়ছেন তাদের একটি চাওয়া হলো, বইটির ইংরেজি অনুবাদ হওয়া উচিত। তুই কি করতে পারবি?”
আমার বয়স তখন খুব বেশি নয়। আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম। বললাম, ‘এত বড়ো কাজ আমার করা কি ঠিক হবে?” তিনি বললেন, ‘তুই করে দিলেই তো আর আমি প্রেসে দেবো না। ইংরেজিতে অনেক দক্ষ এমন কাউকে দিয়ে দেখিয়ে প্রয়োজনে এডিট করে তারপর প্রকাশ করবো?” কৌতুহল থেকেই আমি জানতে চাইলাম, “আপনি কার কথা ভাবছেন?” তিনি বললেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ভাই।” আমি সে কাজটি করেছিলাম আর বইটিও প্রকাশিত হয়েছিল। এভাবেই ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মতো কীর্তিমান একজন মানুষের সাথে আমার একটি যৌথ কাজ হয়ে যায় আলহামদুলিল্লাহ।
ব্যারিস্টার চাচার সাথে আমার সখ্যতা বেড়ে যায় ২০১০ সালের পর থেকে। ততদিনে আমি বয়সেও কিছু অগ্রসর হয়েছি। আর ঐ সময় থেকেই আমার বাবাসহ তার সহকর্মীদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার ও জুলুম শুরু হয়। জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বকে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসানো হয়। প্রথম দিকে ব্যারিস্টার চাচা ট্রাইবুনালে যাননি। কেননা, তখনও মামলাগুলো বিক্ষিপ্ত ও অপরিণত অবস্থায় ছিল। কিছুদিন যাওয়ার পর যখন সকল দায়িত্বশীলের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা করে মামলা রুজু করা হয়, তখন থেকে তিনি নিয়মিত ট্রাইবুনালে যাতায়াত শুরু করেন। পরবর্তীতে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
মামলা যতদিন ট্রায়াল স্টেজে যায়নি, ততদিন নিজে একহাতে তিনি সবগুলো মামলা পরিচালনা করেছেন। আমার এখনো মনে পড়ে, আমাদের মামলায় তিনি কী অসাধারণ ডিসচার্জ হিয়ারিং করেছিলেন। আমাদের মামলাটি প্রথমে ছিল ট্রাইবুনাল ওয়ানে। তিনি যখন ডিসচার্জ হিয়ারিং-এর শেষদিকে, তখন মামলাটি স্থানান্তর করা হয় ট্রাইবুনাল-২ এ। সেখানে ব্যারিস্টার চাচা আবারও ডিসচার্জ হিয়ারিং করেছিলেন। একই শুনানি তিনি দুবার করলেন, তাও দুবার এবং দুটো ট্রাইবুনালে; এরপরও তাকে কোনোদিন আমি বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখিনি।
প্রতিটি শুনানির দিন লাঞ্চ ব্রেকে তিনি কাস্টডিতে গিয়ে দায়িত্বশীলদের সাথে দেখা করতেন। আমি সে সময়ে কাস্টডিতে ঢুকে আব্বাকে খাবার দিতাম। সে সুবাদে আমি দেখেছি, আমাদের সকল দায়িত্বশীল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে অসম্ভব পছন্দ করতেন এবং ব্যারিস্টার চাচার ওপর তাদের নজিরবিহীন আস্থা ছিল। মানুষ যেহেতু সবাই আলাদা ছিলেন। প্রত্যেকেরই স্বাভাবিকভাবেই আলাদা আলাদা অবজারভেশন ছিল। দু’ একবার হয়তো এমনও হয়েছে যে, অনেকে হয়তো এমন কোনো আবদার করে ফেলেছেন যা পূরণ হওয়ার নয়। কিন্তু ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক চাচা সকলের কথা শুনতেন। কাউকে নিরাশ করতেন না। না করতেন না।
ব্যারিস্টার চাচার চেম্বার ছিল সিটিহার্টে। আমরা যারা পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা পরিচালনা করতাম, তারা এবং সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা এ চেম্বারে বহুবার মিটিং করেছি। সে স্মৃতিগুলো মনে করলে এখন কেবল কান্নাই আসে। ব্যারিস্টার চাচা এতটা আন্তরিকতার সাথে মিটিংগুলো করেছেন যার প্রশংসা করার সাধ্য আমার নেই। আমাদের বুকের ভারটা কমানোর জন্য তিনি মাঝে মাঝে রসিকতাও করতেন। তার আরেকটি গুণ ছিল, তিনি পরামর্শ করে কাজ করতেন। আমি এ ধরনের মিটিংয়ে কোনোদিন তাকে সিনিয়রিটির সুযোগ নিয়ে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দেখিনি। তার ইন্তিকালের কয়েকদিন আগেও আমরা একটি মিটিং করলাম। সেদিনও দেখলাম, ওনার এই অভ্যাসটি চেইঞ্জ হয়নি। যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তিনি তার দু’ব্যারিস্টার ছেলেসহ অন্যান্য সব আইনজীবীর মত শুনতেন এবং পালাক্রমে। এমনকী আমরা যারা আইন প্র্যাকটিস করি না; আমাদের কথাও তিনি শুনতেন। তারপর সিদ্ধান্ত দিতেন।
অনেক সময় স্পর্শকাতর সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আমাকে তিনি একান্তে ডেকে নিয়ে বুঝিয়েছেন। আমার বা ক্লাইন্টের ইচ্ছেগুলো কেন পূরণ করা সম্ভব নয়-তা বুঝিয়েছেন। আমি তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার স্নেহ পেয়েছি। আমার পরিবারের মধ্যে সবার আগে আমি বেকার হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি অনুভব করতেন, সাহস দিতেন। পরিবারের কনিষ্ঠ হওয়ার পরও মামলায় আমি যেভাবে সময় দিচ্ছিলাম, তিনি তার প্রশংসা করতেন। আমাদের মামলায় এমন কোনো বৈঠক হয়নি, যেখানে আইনজীবীদের পাশাপাশি আমাকেও তিনি ডাকেননি। আমাদের মামলার ওপর আমার যে দখল ছিল, তার ওপর তিনি আস্থা রাখতেন।
বিশেষ করে আমাদের যুক্তিতর্কের সময়গুলোর কথা মনে পড়ে। দিনের পর দিন আমি তার সাথে কাটিয়েছি। তার চেম্বারে গিয়ে একসাথে পড়েছি। এরপর তার বাসায় গিয়েছি। বাসায় একটি চেয়ারে অ্যাডভোকেট শিশির ভাই আর অন্য চেয়ারে আমি। আর উনি রেজিস্ট্রার্ড খাতার মতো একটি খাতা নিয়ে বসতেন। আমরা কেস সম্বন্ধে যা বলতাম তিনি চোখ বন্ধ করে শুনতেন। আমাদের যুক্তিগুলো নিজের মতো করে নোট করতেন। আবার কোনো যুক্তির বেলায় যদি তার খটকা লাগতো, তাহলে তিনি প্রশ্ন করতেন। কীভাবে বললে আদালত গ্রহণ করবেন- তা জানতে চাইতেন। এভাবে প্রতিটি পয়েন্ট তিনি লিখে নিতেন। পড়তে পড়তে নামাজের ওয়াক্ত হলে বাসার নিকটবর্তী মসজিদে তাকওয়ায় গিয়ে জামাআতে নামাজ পড়তেন। আবার বাসায় এসে আমাদের মামলা নিয়ে পড়াশুনা শুরু হতো। এভাবে চাচার সাথে আমার অনেকদিন ও রাতের স্মৃতি আছে।
চাচার সবচেয়ে অসাধারণ গুণ ছিল তার প্রস্তুতি নেয়ার ব্যাপারটা। কোন মিটিংয়ে যাওয়ার আগে তিনি প্রস্তুতি নিতেন। আর মামলার শুনানির প্রস্তুতির তো আমিও কিছুটা সাক্ষী যা মাত্রই বর্ণনা করলাম। প্রস্তুতির সময় তো আর বোঝা যায় না যে, তার ডেলিভারি কেমন হবে। তাই আমাদের মামলার সময় আমি রীতিমতো উদ্বিগ্নই থাকতাম। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ। পরের দিন শুনানির সময় মনে হতো, আমরা চাচাকে যেভাবে নোট লিখে দিয়েছিলাম বা তথ্য দিয়েছিলাম, তিনি তার চেয়েও শতগুণ ভালো করে উপস্থাপন করছেন। মামলার ফ্যাক্ট কীভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হয় তিনি এর সবগুলো কৌশল রপ্ত করতে পেরেছিলেন। আমার ধারণা, শুধু আমি নই, এমন কোনো মক্কেল পাওয়া যাবে না, যিনি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে আইনজীবী হিসেবে নিয়েছেন কিন্তু তার সাবমিশনে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। বরং সবাই তার আর্গুমেন্টে মোর দ্যান স্যাটিসফাইড হতেন।
তার সম্মোহনী ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। আমি দেখেছি, তিনি যখন সাবমিশন রাখতেন, আদালতে তখন পিনপতন নীরবতা বিরাজ করতো। কেউ কোনো শব্দ করতো না। এমনকী সাংবাদিকরাও মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। বিচারকরা তন্ময় হয়ে শুনতেন। প্রতিপক্ষের আইনজীবীরা মাথা নীচু করে শ্রবণ করে যেতেন। আমি বহুবার ওপেন কোর্টে বিচারকদের বলতে শুনেছি, “রাজ্জাক সাহেব আপনি একটু বেশি বেশি আসবেন। আমরা আপনার জন্য অপেক্ষায় থাকি। কেননা আপনি সাবমিশন দিলে আমরা সবাই শেখার সুযোগ পাই।” মনে রাখা দরকার, আমি যে বিচারকদের কথা বলছি বা যে সময়ের কথা বলছি, এগুলোর সবই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী আমলের স্মৃতি। তখন নির্বাহী বিভাগের নির্দেশনায় বিচারকার্য পরিচালনা হতো। রায়গুলো পূর্ব নির্ধারিত ছিল। বিচারক বা প্রসিকিউটরগণও দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। কিন্তু এরকম একটি প্রতিকূল পরিবেশেও আমি কাউকে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে অসম্মান করতে দেখিনি। বরং সবাই তাকে সমীহ করতেন এমনটাই দেখেছি।
সর্বশেষ দেশে ফেরার পর শহীদ পরিবার ও ভিকটিম পরিবারগুলোর সদস্যদের তিনি চেম্বারে ডাকলেন। চাচার ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা সবাই উপস্থিত হলাম। চাচা দোয়া চাইলেন। তিনি জানালেন, লন্ডনে তার শরীর এতটাই ভেঙে পড়েছিল যে, তিনি দেশে ফিরতে পারবেন- এমনটাও কেউ ভাবতে পারেননি। কিন্তু দেশে যখন আল্লাহ তাকে নিয়ে এসেছেন, তিনি আইনাঙ্গনে হিস্টোরিক কিছু কাজ করতে চান। তার জীবনের শেষ দুটো ইচ্ছের কথা তিনি আমাদের শেয়ার করেছিলেন।
একটি হলো, এটিএম আজহারুল ইসলাম সাহেবের মামলার শুনানি করে তাকে তিনি মুক্ত করতে চান। আর দ্বিতীয়টি হলো, তার নির্দোষ সব সহকর্মীকে তিনি আইনের মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণ করে যেতে চান। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক তার ইচ্ছে দুটো পূরণ করার সুযোগ পাননি। তাই আমাদের ওপর এ দায়িত্বটি চলে এসেছে এবং আমাদেরকেই তার এ স্বপ্নগুলো পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সে সক্ষমতা দান করুন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের অসংখ্য নেক কর্মকাণ্ড, নির্বাসিত জীবন ও কুরবানি এবং এদেশের ইসলামী আন্দোলনের সংকটকালীন মুহূর্তগুলোতে তার অসামান্য অবদানগুলো কবুল করে তাকে জান্নাত নসীব করুন। আমিন।