পরিকল্পনাবিদ মো: সিরাজুল ইসলাম
রাগ! মানুষের সহজাত। সবারই রাগ থাকে; এটি একটি পরীক্ষার উপাদান। রাগকে কন্ট্রোল না করতে পারলে, গোলযোগ বেধে যায়। রাগকে যে যত ম্যানেজ করতে পারে, সে মানুষ হিসেবে তত যথার্থ ভূমিকা পালন করতে পারে। মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তারাই যারা তাকওয়াবান। এ তাকওয়াবানদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে আল্লাহ তায়ালা সূরা আ’লে ইমরানের ১৩৪ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন : “যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে দেয়।”
রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্ষমাশীলতা সহায়ক বৈশিষ্ট্য। মানুষকে ক্ষমা করার প্রবণতা আপনার রাগ সংবরণের জন্য টেন্ডেন্সী তৈরি করবে।
দাওয়াতী কাজ প্রত্যেক মু’মিনের জন্য আবশ্যকীয়। আপনি সফল দা’য়ী হতে চাইলে, কুরআনিক গাইডলাইন ফলো করতে হবে। আপনি যতবেশি প্রতিশোধপরায়ণ হবেন, আপনার প্রতি মানুষ তত কম আকৃষ্ট হবে বলে আশঙ্কা করা যায়। বিপরীতপক্ষে আপনি যতবেশি ক্ষমাশীল হবেন, আপনার দাওয়াতী গুণ ততবেশি কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, ইনশাআল্লাহ। “ভালো আচরণ আর মন্দ আচরণ এক নয়। মন্দ আচরণকে অতি উত্তম আচরণ দ্বারা মোকাবিলা করো। তাহলে আশা করা যায়, চরম শত্রু তোমার পরম বন্ধুতে রূপান্তরিত হবে।” (সূরা ফুসসিলাত ৩৪) এক্ষেত্রে অতি উত্তম আচরণ করার জন্য অতীব জরুরি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ধৈর্য্য।
ইসলামী আন্দোলনের একজন কর্মী যেমন মাঠে-ময়দানে আন্দোলনের কর্মী, তেমনই সোশ্যাল মিডিয়ায় কাজ করার সময়ও তাকে নিজের আদর্শিক পরিচয় চেতনায় জাজ্জ্বল্যমান রাখতেই হবে। বরং, এখানে তাকে আরও বেশি সাবধান থাকতে হবে। কারণ, তার অনলাইনের বহিঃপ্রকাশ অফলাইনের চেয়ে অনেক বেশি লোকের কাছে পৌঁছায়।
দাওয়াতী কাজের সময়, তর্কের পরিবেশ তৈরি হলে, আমাদেরকে বুঝে নিতে হয় যে, সেখানে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিচ্ছে। তাই কুরআনের নির্দেশনা অনুসারে আমাদেরকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হয়। অহেতুক তর্ক মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়। উত্তম পন্থায় বিতর্ক করতে হবে; কিন্তু অহেতুক তর্ককে “না” বলে দিতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনাকে কেউ গালি দিতে পারে, প্রচণ্ড আঘাত করতে পারে, আপনার সংগঠনকে অহেতুক দোষারোপ করতে পারে; ফলে আপনার মধ্যে রাগ তৈরি হতে পারে। সেটা স্বাভাবিক। আপনার সেটার যৌক্তিক জবাবও দেয়া প্রয়োজন হতে পারে; কিন্তু রাগ সংবরণ, ধৈর্য্য, মন্দের বিপরীতে অতি উত্তম আচরণের নসিহাহ এখানেও কার্যকর রাখতে পারলেই আপনি তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ করতে পারলেন। ফলে, আপনার দৃষ্টিতে চরম শত্রুকে, পরম বন্ধুতে রুপান্তরিত করে দিতে পারেন আল্লাহ তায়ালা।
সাহাবীদের একটি বড় গুণ ছিলো, তাঁরা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) যেকোন কাজে উদ্যোগী হলে, সেটার বিপরীতে কেউ কুরআনের আয়াত বা রাসূলের হাদীস স্মরণ করিয়ে দিলে, তাঁরা সাথে সাথে কুরআন ও হাদীসের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করতেন, এক মুহূর্তও দেরি না করে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কুরআন সুন্নাহর শিক্ষাকে সদা কাজে লাগানোর তৌফিক দিন। আমীন।