॥ হাফসা সারোয়ার রুনি ॥

পৃথিবীতে নারী-পুরুষ উভয়ই মর্যাদাশীল। উভয়ের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একটি সমাজের ভীত। নারীরা সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ কারণ তারা সমাজ বিনির্মাণ করেন। তাদের হাতে গড়ে ওঠে একটা জাতির ‘প্রজন্ম’। তাই একজন ‘মা’ কে শিক্ষিত, জ্ঞানী এবং অধিকার সচেতন হতে হয় কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই নারীর একটি বিরাট অংশ অধিকার বঞ্চিত হন এবং নানা ভায়োলেন্সের শিকার হন।

অনেক সম্মানহানি ঘটে তাদের জীবনে। এর মূল কারণই হচ্ছে শিক্ষা, সচেতনতা, মুসলিম নারী হিসেবে তার প্রজ্ঞা ইসলাম তথা কুরআনে বর্ণিত নারীর মর্যাদা ও সার্বিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব। নারী যখন তার সম্মান এবং অধিকার টুকুই জানে না বঞ্চিত সে হবেই!

ইসলাম রাষ্ট্রের মূল ইউনিট পরিবারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। পরম করুণাময় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে অত্যন্ত দয়া-মায়ার ভিত্তিতে পরিচালনার নির্দেশ দেয়। তারা কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। বলা হয়েছে-তোমরা পরস্পর সহযোগী এবং সহমর্মিতার ভিত্তিতে জীবন যাপন করবে আর এতেই রয়েছে কল্যাণ। মানবরচিত কোন মতাদর্শই চিরস্থায়ী হয়নি, মানবকল্যাণ বয়ে আনেনি যুগে যুগে তা প্রমাণিত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ‘নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট’ কিসের ইঙ্গিত বহন করছে? কী আইন তারা পাস করতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কেন এতে সংকিত? রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিয়ে-তালাক উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার। মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। সকল ধর্মের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ণের সুপরিশ করা হয়েছে। যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান ইত্যাদি ইত্যাদি।

প্রথমত, প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের এ দেশ ৯০% মুসলিম অধ্যুষিত। ১০ জন নিয়ে নারীর সংস্কার কমিশন গঠিত হলো কিন্তু কোন মুসলিম স্কলার এখানে নেই। তারা চান মুসলিম পারিবারিক আইন ভেঙে দিতে এবং পৈতৃক সম্পদে নারী-পুরুষের সমান অধিকার। তাদের স্লোগান-‘নারী-পুরুষের ক্ষমতা ভেঙে গড় সমতা’। বাহ্যত এসব শ্লোগান চমকপ্রদ শোনা গেলেও এসবের কোন যৌক্তিকতা নেই। কারণ স্বয়ং আল্লাহপাকই দিয়েছেন নারী পুরুষের অধিকার এবং সম্পদের ন্যায্যতা। ভাবুন নারী ছয়টি খাত থেকে সম্পদ পাচ্ছে এটা তার অধিকার।

১। মোহরানা, ২। নিজ উপার্জিত সম্পদ, ৩। পিতার সম্পদ (ভাই যা পাবে বোন তার অর্ধেক ), ৪। মাতার সম্পদ (কোনো নির্দিষ্ট নেই মা চাইলে কন্যাটিকে বেশিও দিতে পারেন), ৫। স্বামীর সম্পদ ও ৬। পুত্রের সম্পদ। অথচ পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়নি চাইলে। সে করতে পারে নাও পারে। হিসেবে গেলে বোধ হয় নারীকে একটু বেশিই দেয়া হয়েছে।

বাহ্যত পুরুষ ‘শক্তিশালী’ এটা স্বীকার করতেই হয়। তিনি কর্মঠ এবং কঠিন পরিশ্রমী। তিনি পরিবারকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে চান, তার কষ্ট উপার্জিত সম্পদ নিজ পরিবার, পিতা-মাতা ভাই বোনের জন্য খরচ করেন এটা তার ন্যাচার। কঠিন দায়িত্ব পালন করে তিনি শান্তি পান। তাই যুক্তিসঙ্গতভাবে পিতার সম্পদে তিনি তো ডাবল পেতেই পারেন এবং এটাই ইনসাফ।

একজন নারীর সবচেয়ে আপন তার বাবা, ভাই, স্বামী এবং পুত্র। এখানে সে নিরাপদ এবং প্রশান্তি লাভ করে। নারী কোমল, তার ধৈর্য, সন্তান প্রতিপালনে তার ‘দক্ষতা’ পুরুষ হার মানে। তাই নারী-পুরুষ কখনো এক নয়। তার দৌহিক গঠন, ক্ষমতা, সম্পূর্ণ আলাদা। যার যার ক্ষেত্রে সে গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাশীল। তাই সমতা না এনে যার যার অবস্থানে ন্যায্যতা এবং তার বাস্তবায়ন সবচেয়ে জরুরী। পারিবারিক আইনে নারী তার সম্পদ সঠিকভাবে বুঝে পেল কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।

নারী পুরুষ দ্বারা নিগৃহীত হলে বা অর্থনৈতিকভাবে তাকে বঞ্চিত করা হলে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। উত্থাপিত হয়েছে সকল ধর্মের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন। ৯০% মুসলমানের দেশে মুসলিম পারিবারিক আইনই বলবৎ থাকবে এটাই যৌক্তিক। বাকি ১০% ধর্মাবলম্বীরা যেভাবে চান তাদের সম্পদ বন্টন করতে পারেন, এটা তাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। কেউ তো বাধা দিচ্ছে না কিন্তু আইন একটাই থাকবে।

তারা যৌনকর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা চান পৃথিবীর কোথাও এ পেশার স্বীকৃতি নেই। এরা সমাজেরই কারো মেয়ে, কারো বোন অধিকাংশই ফাঁদে পড়ে এ পেশায় আসে । ক্লাইন্টরা এদের দায়িত্ব নেয় না। এদেরকে পুনর্বাসিত করা যেতে পারে।

নারীদের তারা অবাধ স্বাধীনতা চান। যেকোনো সময় যেকোনো পোশাকে তারা চলাফেরা করবে, সিগারেট খাবে, কেউ বাধা প্রদান করবে না। পিতা-মাতা তার পুত্রকে মধ্যরাতে প্রয়োজনে বাইরে দেবেন কিন্তু কন্যা কি নিরাপদ? নারী মূল্যবান! উশৃংখলতা কোন ভাবেই স্বাধীনতা হতে পারে না। সিগারেট নারী পুরুষ উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। নারীর জন্য আরো ক্ষতিকর কারণ তারা সন্তান ধারণ করেন। এসব চিন্তা জাতির জন্য আত্মঘাতী।

এভাবে নানা বিতর্ক প্রকট হয়েছে। দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধ রয়েছে একে উপেক্ষার কোন সুযোগ নেই। তাই নারীর সংস্কার কমিশনকে সার্বজনীন করতে এর পুনর্গঠন এবং সার্বিক পর্যালোচনা ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।