DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

কলাম

দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা

মহান আল্লাহতায়ালা সমস্ত সৃষ্টি জগতের মহান সৃষ্টিকর্তা ও মালিক। দুনিয়াতে মানবজাতির নিরাপদে বসবাসের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে সকল প্রকার চাহিদা পূরণের নিমিত্তে অফুরন্ত নিয়ামত দান করেছেন।

Printed Edition
Default Image - DS

অধ্যক্ষ ডা. মিজানুর রহমান

মহান আল্লাহতায়ালা সমস্ত সৃষ্টি জগতের মহান সৃষ্টিকর্তা ও মালিক। দুনিয়াতে মানবজাতির নিরাপদে বসবাসের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে সকল প্রকার চাহিদা পূরণের নিমিত্তে অফুরন্ত নিয়ামত দান করেছেন। মানুষের কিসে কল্যাণ কিসে অকল্যাণ তা একমাত্র আল্লাহতায়ালাই সবচেয়ে ভাল জানেন এবং বুঝেন। যেহেতু মহান আল্লাহ অদৃশ্য সুতরাং তাঁর পরিচয় ও অসীম ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে অগণিত বার্তাবাহক নির্বাচন করে তাদের মাধ্যমে তাঁর মহত্ত্ব ও বড়ত্ব এবং সমকালীন মানবজাতির দায়িত্ব ও কর্তব্য, করণীয় বর্জনীয় বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণার পয়গাম প্রচার প্রসারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

পরিশেষে বিশ্বনবী সা.কে বিশ্ববাসীর রহমতস্বরূপ সর্বশেষ বার্তাবাহক হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরণ করে নবুয়তের পরিসমাপ্তি করেছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তিনি চল্লিশ বছর বয়সে নবুয়াত প্রাপ্তির পর সুদীর্ঘ তেইশ বছর তার রিসালাতের দায়িত্ব ও কর্তব্য সার্থকভাবে প্রতিপালন করে বিশ্ববাসীর দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভের জীবন বিধান মহাগ্রন্থ আল-কুরআন উপহার দিয়ে ওফাত করেন। এ এমন একটি গ্রন্থ যার মধ্যে মানবজাতির ইহকালীন ও পরকালীন সব সমস্যার সমাধান নিহিত রয়েছে। যারা এ কুরআনের বিধান ও রাসূলের আদর্শ মেনে চলবে, তাদের জন্য দুনিয়াতে যেমন শান্তি আখিরাতে রয়েছে মহাপুরস্কার। আর যারা এ দুটি আদর্শ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখবে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা আর আখিরাতে কঠিন শাস্তি। এটিই ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি।

আল কুরআনের বুনিয়াদী শিক্ষা হলো মানবজাতির কিসে শান্তি আর কিসে অশান্তি তা বিস্তারিত বর্ণনা। মানবজাতিকে তার ইচ্ছা চিন্তা বিবেক বুদ্ধি দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অল্যাণ তা বেছে নেয়ার ক্ষমতা দান করা হয়েছে। বিশেষ করে ৩০টি পারায় ১১৪ টি সুরা নাযিলের মাধ্যমে তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত, তাকওয়া, তামান্না, কিয়ামত, জান্নাত-জাহান্নাম এর বর্ণনাসহ জীবন প্রকৃতির নানা বিষয়ে নীতিমালাসহ, অতীত ইতিহাস, ভবিষ্যতের পরিণতি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে মহাগ্রন্থ আলকুরআনে। মানুষ এ গ্রন্থ পাঠ করে দার্শনিক মানদণ্ডে জীবনের মূল্যায়ন করার সুযোগ পাচ্ছে এবং পাবে কিয়ামত পর্যন্ত ।

দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার গ্যারান্টি নিশ্চিত করতে হলে আল কুরআন থেকে হক আর বাতিলের পার্থক্য বিষয়ক পরিষ্কার জ্ঞান লাভ করা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো অতীব জরুরি। তাগুত হলো আল্লাহ প্রদত্ত বিধানের বিপরীত মতাদর্শ ও কর্মকাণ্ড। তাগুত সম্পর্কে আল কুরআনে মোট ৮ স্থানে পরিষ্কার বর্ণনা রয়েছে। সুরা বাকারা: ২৫৬ ও ২৫৭, সুরা মায়েদা : ৪৪, ৪৫, ৪৭ ও ৬০, সুরা জুমার : ১৭, সুরা নিসা: ৫১, ৬০, ৬৫ ও ৭৬, সুরা নাহল: ৩৬ এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে। ‘সৃষ্টি যার আইন চলবে তার’ এর বিপরীত যাকিছু লেখা, বলা, প্রচার ও বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকুক না কেন, তার সবই তাগুত বা ভ্রান্ত পথ। সুরা আরাফ: ৫৪, সুরা ইউসুফ: ৪০, সুরা তাওবা: ৩১ নম্বর আয়াতে এ বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে। মুসলমানরা দৈনিক ৫ বার যে সালাত আদায়ের সময় প্রত্যেক রাকায়াতে তাসাহুদে যে শাহাদাত আঙ্গুল উঠানোর আদর্শ প্রচলিত রয়েছে , তাতে এক আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ইলাহ বা আইনদাতা, রিযিকদাতা, পালনকর্তা হিসেবে না মানার স্বীকৃতিই দিয়ে থাকেন। কালিমায়ে তাইয়্যেবাসহ অন্যান্য কালিমাতে এক ইলাহকেই জানা ও মানার উপদেশ, পরামর্শ ও আদেশ রয়েছে।

সুতরাং এর বাইরে দুনিয়াতে যত প্রকার মানবরচিত তন্ত্র-মন্ত্র বাদ বা ইজম মানার আর কোন সুযোগ মুসলমানদের রাখা হয়নি। আনুষ্ঠানিক ইবাদতে ইসলাম আর সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন বিধানের অনুসরণ ও অনুকরণ করা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে হারাম বা নিষিদ্ধ। তবে ইলামে জবরদস্তি নেই, কেউ যদি অন্য কোন ধর্ম পালন করতে চায় সে ক্ষেত্রে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করাও মুসলমানদের প্রতি ইসলামের আদেশ।

কিন্তু নিজেকে মুসলমান দাবি করে অন্য কোন জীবনাদর্শ মানার বিষয়ে ইসলাম কঠোরতা অবলম্বন করে। তাদেও পরিণাম বিষয়ে উপদেশ, সতর্কতা ও আদেশমূলক অনেক বাক্য আল কুরআনে বিদ্যমান রয়েছে। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, ইসলাম ছাড়া এ বিশ্বকে বৈষম্যমুক্ত করা আদৌ সম্ভব নয়। স্রষ্টাভীতি ছাড়া মানুষ প্রকৃত জ্ঞানী মানুষ হতে পারে না। সৃষ্টিকর্তার নাযিলকৃত সর্বজনীন বিধান আল কুরআনেই রয়েছে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার একমাত্র গ্যারান্টি।

মানবতা, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্যই ইসলামের আগমন ঘটেছে। ইসলাম এটাকে প্রতিষ্ঠিত করে প্রমাণ করেছে। ইসলাম সমগ্র বিশ্বকে একটানা ৫শ’ বছর শাসন করে দেখিয়ে দিয়েছে এর মধ্যেই দুনিয়াতে শান্তি ও আখিরাতে সফলতা সম্ভব। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় কালের বিবর্তনে মুসলমানদের অদূরদর্শীতা, লোভ ও অমিতাচারের কারণে সেই সোনালী সালতানাত হাত ছাড়া হয়ে পড়েছে। এককালে যারা শাসক ছিল তারা আজ শাসিত। আশার কথা হলো বিশ্বব্যাপী আবার ইসলামের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে বলা যায় বিশ্বের তাগুত পরাশক্তি যেভাবে একের পর এক পরাজয় বরণ করছে, তাতে করে ইসলামের বিজয় আসতে আর বেশি দিন বাকী নেই। যে ইসলাম অর্ধ পৃথিবী শাসন করেছে, এবার ইসলামের বিজয় সাধিত হলে সমগ্র বিশ্বকে ইসলামই শাসন করবে ইনশাআল্লাহ। আমরা সেই দিনের প্রহর গুনছি আর চেষ্টা অব্যাহত রাখছি।

আল কুরআনে আসর, নূর, নহল, সফ, রাহমান, হাশর ও হজ¦সহ অন্যান্য সুরাতে উপরোক্ত বিষয়সমূহের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। অর্থবহ ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজ জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন এবং আন্তর্জাতিক জীবনসহ পরকালীন জীবনের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে এ কুরআনে। লেখক : সাংবাদিক।