হাফেজ মাওলানা গোলাম মোস্তফা

গত ৩ জুলাই ছিলো নবাব সিরাজউদ্দৌলার শাহাদাত বার্ষিকী। ১৭৫৭ সালে ইতিহাসের এ দিনেই বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে শহীদ করা হয়। তার শাহাদাত নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে। সিরাজকে সত্যিই দানাশাহ ফকির ধরিয়ে দিয়েছিলেন কিনা, এ বিষয়ে রয়েছে বিস্তর বিতর্ক। ইতিহাসবিদদের একটি অংশ মনে করেন, সে সময় দানশাহ ফকির জীবিতই ছিলেন না।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে মীর মদন নিহত হলেও যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ তখনো রাজা মোহনলালের হাতে। কিন্তু সে সময় দেশীয় বিশ্বাসঘাতক আর নবাবের পরম আত্মীয় মীর জাফরের নির্দেশে নবাব যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করেন। মেঘ-বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে যুদ্ধের গোলা-বারূদ সহ সবকিছু নষ্ট হয়ে যায়। মূলত, কতিপয় সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই পলাশী যুদ্ধে নবাজ সিরাজ পরাজয় বরণ করেন। এমতাবস্থায় তিনি রণাঙ্গণ থেকে হাতির পিঠে চেপে রাজধানী মুর্শিদাবাদ ফেরেন। তারপর নৌকায় করে পাটনার দিকে রওনা দেন।

শহীদ নবাব সিরাজউদ্দৌলা মালদার মহানন্দা নদীর স্রোত অতিক্রম করে এলেও তাতে জোয়ার ভাটার ফলে হঠাৎ করে পানি কমে যাওয়ায় নাজিমপুরের মোহনায় এসে তাঁর নৌকা চড়ায় আটকে যায়। তিনি নৌকা থেকে নেমে খাবার সংগ্রহের জন্য একটি মসজিদের নিকটবর্তী বাজারে আসেন। সেখানে কিছু লোক তাঁকে চিনে ফেলে অর্থের লোভে সৈন্যবাহিনীকে খবর দেয়। তারা এসে সিরাজউদ্দৌলাকে বন্দি করে রাজধানী মুর্শিদাবাদে পাঠিয়ে দেয়। এটাকেই অনেকেই বলছেন যে, দানাশাহ ফকির নাকি তাকে ধরিয়ে দেন। এটা নিয়েও বিস্তর বিতর্ক ও মতবিরোধ রয়েছে। বন্দী হবার সময় নবাবের সাথে ছিলেন তার স্ত্রী লুৎফা বেগম এবং চার বছর বয়সী শিশু কন্যা উম্মে জহুরা।

৩ জুলাই মীর জাফরের আদেশে তার পুত্র মিরনের তত্ত্বাবধানে মুহাম্মদি বেগ নামের এক ঘাতক সিরাজউদ্দৌলাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ মহম্মদী আলীবর্দীর নুন খেয়েও সব ভুলে যান। কথিত আছে, সিরাজের মৃত্যুর পর তার মৃতদেহ হাতির পিঠে চড়িয়ে সারা শহর ঘোরানো হয়। মুর্শিদাবাদের খোশবাগে নবাব আলিবর্দী খানের কবরের কাছে তাকে দাফন করা হয়। আর এভাবেই বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়।

লেখক : খতিব ও প্রাবন্ধিক।

পীরতলা, লালগোলা, মুর্শিদাবাদ, ভারত।