॥ এম এ খালেক ॥

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বিশে^র বিভিন্ন দেশের আমদানি পণ্যের উপর উচ্চ হারে বাড়তি শুল্কারোপের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ১০০টি দেশের রপ্তানি পণ্যের উপর উচ্চহারে অতিরিক্ত শুল্কারোপ করেছে। যেসব দেশের রপ্তানি পণ্যের উপর বাড়তি শুল্কারোপ করা হয়েছে তার প্রায় সবগুলো দেশের সঙ্গেই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিকূলে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্যাম্প মূলত একজন জাত ব্যবসায়ী। দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনের ডোনাল্ড ট্র্যাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আগের বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর ডোনাল্ড ট্র্যাম্প ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিমালা ঘোষণা করেছিলেন। অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি শীর্ষ অবস্থানে দেখতে চেয়েছিলেন। অনেকেরই নিশ্চয়ই মনে আছে আগের বার ডোনাল্ড ট্র্যাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবার অভিযোগ করে আসছিল, চীন ইচ্ছে করেই তার স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হার কমিয়ে রাখছে যাতে চীনা পণ্য রপ্তানিকারকগণ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভালো অবস্থানে থাকতে পারে। চীন বরাবরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের পণ্যের আধিক্য প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে চেষ্টা করেও স্থানীয় বাজারে নিজস্ব উৎপাদিত পণ্য নিয়ে চীনা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারছে না।

দ্বিতীয়বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর ডোনাল্ড ট্র্যাম্প আগের মতোই আমেরিকা ফার্স্ট নীতিমালা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবার শুধু চীনের বাণিজ্যিক প্রাধান্য খর্ব করতে সচেষ্ট হন নি। তিনি অন্যান্য দেশের পণ্য রপ্তানি সীমিত করার জন্য সচেষ্ট হয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশে^র এক নাম্বার অর্থনৈতিক শক্তি। অনেক দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহানুভূতির উপর নির্ভর করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত এপ্রিল মাসে অনেকটাই হঠাৎ করেই বিভিন্ন দেশের রপ্তানি পণ্যের উপর উচ্চ হারে বাড়তি শুল্কারোপ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণার পর সারা বিশ^ব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে তিন মাসের জন্য বাড়তি শুল্কারোপ স্থগিত রাখা হয়। এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশ তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক হার যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের উপর ৩৭ শতাংশ হারে বাড়তি শুল্কারোপ করা হয়েছিল।

এতে বাংলাদেশের পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১৫ শতাংশসহ মোট ৫২ শতাংশ শুল্ক প্রদানের বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে। অন্যান্য দেশের রপ্তানি পণ্যের উপর কত হারে বাড়তি শুল্কারোপ করা হলো সেটা তেমন একটা বিবেচ্য বিষয় নয়। কিন্তু আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয় ছিল ভিয়েতনাম এবং ভারতীয় পণ্যের উপর কত হারে বর্ধিত শুল্কারোপ করা হলো। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দি হচ্ছে ভিয়েতনাম ও ভারত। প্রাথমিক পর্যায়ে ভিয়েতনামি পণ্যের উপর ৪৬ শতাংশ বাড়তি শুল্কারোপ করা হয়েছিল। আর ভারতের পণ্যের উপর ২৬ শতাংশ বাড়তি শুল্কারোপ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ভিয়েতনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতে তাদের রপ্তানি পণ্যের উপর আরোপিত বাড়তি শুল্ক হার ৪৬ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সমর্থ হয়। আর বাংলাদেশের বাড়তি শুল্ক হার ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশে নির্ধারণ করে। ভারতের ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্কহার এক শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়।

এ অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক সামগ্রি বাজার হারানোর আশঙ্কার মধ্যে পতিত হয়। কারণ যদি দ্বিতীয় পর্যায়ের সংশোধিত মার্কিন বাড়তি শুল্ক অব্যাহত থাকতো তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক আন্তর্জাতিক বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতো। আরো সুস্পষ্টভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক শিল্প বাজার হারানোর সঙ্কট সৃষ্টি হতো। ভারতীয় ব্যবসায়ী ও তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকগণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি শুন্যস্থান পূরণের জন্য সচেষ্ট হয়েছিল। তারা মনে করছিলেন, বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হারাতে চলেছে এবং সেই হারানো বাজার তাদের দখলে চলে আসবে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সিদ্ধান্ত ভারতীয় রপ্তানিকারকদের আশার গুড়ে বালি ঢেলে দিয়েছে। মার্কিন যুুক্তরাষ্ট্র চূড়ান্ত পর্যায়ে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের উপর আরোপিত বাড়তি শুল্ক হার ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। পাশাপাশি ভারতের রপ্তানি পণ্যের উপর আরোপিত ২৫ শতাংশের পাশাপাশি আরো ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্কারোপ করেছে।

ফলে ভারতকে আগামীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানি করার জন্য মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরো হুশিয়ারি দিয়েছে, ভারত যদি রাশিয়া থেকে জ¦ালানি তেল এবং অস্ত্র আমদানি বন্ধ না করে তাহলে তাদের রপ্তানি পণ্যের উপর আরো শাস্তিমূলক শুল্কারোপ করা হতে পারে। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শূন্যস্থান পূরণের যে স্বপ্ন দেখেছিল তা এখন তাদের জন্য দু:স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক সামগ্রির সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দি হচ্ছে ভিয়েতনাম। আন্তর্জাতিক তৈরি পোশাক বাজারে বাংলাদেশের অংশিদারিত্ব হচ্ছে ৬ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর ভিয়েতনামের অংশিদারিত্ব হচ্ছে ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ। ভারতের অবস্থান বর্তমানে পঞ্চম। কাজেই ভারত চাইলেই খুব সহসা বাংলাদেশের অবস্থানকে দুর্বল করতে পারবে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুবই চমৎকার। ডোনাল্ড ট্র্যাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব গ্রহণের পর হোয়াইট হাউসের আমন্ত্রণে নরেন্দ্র মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। সে সময় তিনি ট্রাম্পকে ‘মহৎ বন্ধু’ হিসেবে সম্বোধন করেছিলেন। নরেন্দ্র মোদি ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ দু’টির মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ভলিউম ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে এক হাজার বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উন্নীত করার প্রত্যয় ব্যক্তি করেছিলেন। আগামী ২৭ আগষ্ট থেকে বাড়তি নতুন শুল্কারোপ শুরু হবে। বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি অনেকটাই কমে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরো হুশিয়ারি দিয়েছে ভারত যদি রাশিয়া থেকে জ¦ালানি তেল আমদানি বন্ধ না করে। তাহলে আগামীতে ভারতের রপ্তানি পণ্যের উপর অতিরিক্ত শাস্তিমূলক শুল্কারোপ করা হতে পারে। বর্তমানে ভারত তার মোট ৩৬ শতাংশ জ¦ালানি তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করে। অথচ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে ভারত তার মোট জ¦ালানি তেল চাহিদার মাত্র শুন্য দশমিক ২ শতাংশ রাশিয়া থেকে আমদানি করতো। বর্তমানে ভারত রাশিয়া থেকে তুলনামূলক সস্তা মূল্যে অপরিশোধিত জ¦ালানি তেল আমদানি করে তা পরিশোধনের পর উচ্চ মূল্যে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে থাকে। ভারতের মোট জ¦ালানি তেল চাহিদার ৮০ শতাংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশিদার। ভারত প্রতি বছর গড়ে ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করে থাকে। এ অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্য রপ্তানি নিশ্চিতভাবেই ব্যাপক মাত্রায় কমে যাবে।

ভারতীয় রপ্তানিকারকগণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুন্যস্থান পূরণের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা তাদের জন্য আতঙ্কময় দু:স্বপ্নে পরিণত হতে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকগণ ভারতীয় উদ্যোক্তাদের সম্ভাব্য ক্ষেত্রে তাদের শিল্প-কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরে পরমার্শ দিয়েছেন। এদিকে বাণিজ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন,বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের উপর আরোপিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ শুল্কহার আরো কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা যাতে ১৫ শতাংশে নির্ধারণ করা হয় সেই চেষ্টা চলছে। যদি সত্যি সত্যি বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে সফল হতে পারে তাহলে আগামীতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে অভূতপূর্ব গতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে।

এ অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরের(২০২৫-২০২৬) জন্য রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চলতি অর্থবছরে মোট ৬৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৬ হাজার ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের বছর পণ্য রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি খাতে প্রায় ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করে মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ বিলিয়ন মর্কিন ডলার। সেবা খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সেবা রপ্তানি করা হবে ৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরে পণ্য খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর বাস্তব অর্জন হয়েছিল ৪৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৭ শতাংশ। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে তুলনায় এটা প্রায় ৮দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।

সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধির কারণ বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। অর্থ বছরের একটি বড় অংশ জুড়ে দেশে রাজনৈতিক আন্দোলন চলমান ছিল। তারপরও রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায়। এটি বিস্ময়কর ব্যাপারই বটে। চলতি অর্থবছরের জন্য রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অনেকের কাছেই উচ্চাভিলাষি মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এটা মোটেও উচ্চাভিলাষি নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী আয় কাঙ্খিত মাত্রায় দেশে না আসার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ববর্তী ম্যানেজমেন্টের ভুল সিদ্ধান্তই দায়ি ছিল। সরকার সমর্থক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে অনৈতিক সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ফিক্সড করে রেখেছিল। প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকা নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল। অথচ সে সময় কার্ব মার্কেটে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১২২/১২৩ টাকায় উঠানামা করছিল। প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্থানীয় মুদ্রায় বেশি অর্থ পাবার প্রত্যাশায় তারা হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ দেশে প্রেরণ করতেন। রপ্তানিকারকগণ তাদের উপার্জিত আয় বিদেশেই রেখে দিতেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন ম্যানেজমেন্ট দায়িত্ব পাবার পর তারা পর্যায়ক্রমে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজার ভিত্তিক করে। এতে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের তৎপর তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। বর্তমানে উপার্জিত প্রবাসী আয় বৈধ চ্যানেলে দেশে আসছে। গত অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছে ৩০ দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়।

চলতি অর্থবছরের জন্য যে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা খুব সহজেই অতিক্রম করে যাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পণ্যের উপর বাড়তি শুল্ক এবং শাস্তিমূলক শুল্কারোপের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

আগামীতে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি কার্যক্রম আরো গতিশীল করার জন্য স্থানীয় কাঁচামাল নির্ভর অধিক মূল্য সংযোজনকারি পণ্য রপ্তানি তালিকায় স্থান দিতে হবে। একই সঙ্গে নতুন নতুন রপ্তানি গন্তব্য খুঁজে বের করতে হবে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।