DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

কলাম

সুইস ব্যাংক উপাখ্যানে নতুন মাত্রা

সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক তথা সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থের পাহাড় জমার খবর অনেকবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২১ সালে এ অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ ফ্র্যাংক। স্থানীয় মুদ্রায় যা

Printed Edition
DailySangram-Logo

সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা

সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক তথা সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থের পাহাড় জমার খবর অনেকবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২১ সালে এ অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ ফ্র্যাংক। স্থানীয় মুদ্রায় যা ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। সূত্রমতে, ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের আমানতের স্থিতি ৮৭ কোটি ১১ লাখ ফ্র্যাংক। আগের বছর তথা ২০২০ সালে ছিল যা ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ফ্যাংক। ২০১৯ সালে ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৮ সালে ৬১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৭ সালে ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৬ সালে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৫ সালে ৫৫ কোটি ০৮ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৪ সালে যা ছিল ৫০ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংক।

নিকট অতীতে দেশ থেকে টাকা পাচার এবং সুইস ব্যাংকে জমার পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছিল। কয়েকটি মাধ্যমে টাকা পাচার হওয়ার বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশও হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে-আমদানিতে মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রপ্তানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ভয়েসিং), হুন্ডি, ভিওআইপি ব্যবসা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরাসরি বিদেশে ডলার নিয়ে যাওয়ার তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্থ পাচারকারীদের বিশেষ সুযোগ দিয়েছিলো সরকার। ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে এনে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো। মূলত, এর মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচারকে রীতিমত উৎসাহিত করা হয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমানো অর্থের পাহাড় জমেছে মর্মে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যখন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছিল ঠিক সে মুহূর্তে গত বছরের জুন মাসে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদনে এক ব্যতিক্রমী তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশীদের অর্থের পরিমাণ অনেকটাই কমে এসেছে। জানা যায়, ২০২৩ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বাংলাদেশীরা প্রায় পৌনে চার কোটি সুইস ফ্রাঁ তুলে নিয়েছেন বা অন্যত্র সরিয়েছেন। এসএনবির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৫৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ। ২০২৩ সালে তা কমে হয়েছে ১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দু’বছর ধরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমা অর্থের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থ কমে যাওয়ার একাধিক কারণের কথা বলছেন স্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে জমা হয়। আন্তর্জাতিক নানা চুক্তির কারণে এখন সুইজারল্যান্ড বিভিন্ন দেশের সরকারের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করে। এ কারণে যারা পাচারের অর্থ আগে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে জমা রাখতেন, তারা এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। সুইজারল্যান্ডের বাইরে এখন পাচারের অর্থ গোপন রাখার সুবিধা অন্য অনেক দেশে পাওয়া যাচ্ছে। সেসব দেশেই এখন পাচারের অর্থের বড় অংশ চলে যাচ্ছে।

সুইজারল্যান্ড যেহেতু এখন পাচার হওয়া অর্থের তথ্য সরবরাহের আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় এসেছে, তাই পাচারকারীরা তাদের গন্তব্য বদলিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এখন দুবাই, পানামাসহ বিশ্বের অন্য অনেক দেশ ও আইল্যান্ড আছে, যেখানে এখন পাচারের অর্থ বেশি যাচ্ছে। এসএনবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৮ বছরে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশীদের সবচেয়ে কম অর্থ ছিল গত বছর। আর সর্বোচ্চ ৮৭ কোটি ফ্রাঁ ছিল ২০২১ সালে।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থের পাহাড় এবং পরবর্তীতে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ার খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর নতুন একটি খবর আবারো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ২০২২ সালে ফাঁস হওয়া সুইস সিক্রেটসে বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে বেশ কিছু বাংলাদেশীর সুইস ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমার তথ্য প্রকাশ্যে আসে। সুইস সিক্রেটস নামে বহুল পরিচিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত ওসিসিআরপি (অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট) হতে প্রাপ্ত তথ্যে বাংলাদেশ অংশের নথি পর্যালোচনা করে ব্যাংকটিতে বাংলাদেশের ৮ পরিবারের প্রায় ৩৬০০ কোটি টাকা জমা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। যা অতীতের সকল হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে এবং জন্ম দিয়েছে এক নতুন উপাখ্যানের। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্যাংকটিতে এসব পরিবারের অন্তত ৬৮টি একাউন্ট রয়েছে। এসব ব্যাংক হিসাবে ২৬১.৯ মিলিয়ন ডলার (২৬.১৯ কোটি) সুইস ফ্রাঁ বিভিন্ন সময়ে গচ্ছিত ছিল। পাশাপাশি ব্যাংক হিসাবগুলো থেকে মাঝেমধ্যে টাকা উত্তোলন ও জমাদানের তথ্যও পাওয়া গেছে। অধিকাংশ হিসাবই ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে খোলা হয়। কিছু হিসাব বন্ধও করে দেয়া হয়। এ বিপুল পরিমাণ টাকা জমা রাখা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে সামদানি পরিবারের নাম। এ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রাজীব সামদানি, তার স্ত্রী নাদিয়া সামদানি, ছোট ভাই মেহেদী সামদানি ও তার কোম্পানি গোল্ডেন হারভেস্ট পরিচালক মহিয়াস সামাদ চৌধুরী সুইস ব্যাংকে হাজার কোটির বেশি গচ্ছিত রেখেছেন।

অপরদিকে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা রেখেছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই, তার বোন নূরজাহান হুদা ও জামাতা হুদা এল ইদ্রোস। এছাড়া আলোচিত-সমালোচিত মিরালী গ্রুপের সদস্যদেরও সুইস ব্যাংকে অঢেল টাকা জমা রয়েছে। এরমধ্যে মুবারক আলী, সকিনা নাসরুল্লাহ মিরালী, সামাদ নাসরুল্লাহ মিরালীর নামে বিপুল অর্থ গচ্ছিত রয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে হিসামুদ্দিন সালেহ, ফাতেমা সালেহ, আমিন সালেহ, রহিমা ফুড কর্পোরেশনের আব্দুর রউফ চৌধুরী, রবি রউফ চৌধুরী, রাফিয়া চৌধুরী, মাসুক হক, আফরোজা হক, সিলেটের সাবেক এক এমপি’র পরিবার, আরবান রেসিডেনসিয়াল চেয়ারম্যান খন্দকার ফিরোজ কাইয়ূম, ক্লিপ অ্যান্ড ফিক্স লিমিটেডের পরিচালক হীরা রাজ্জাক, প্রয়াত একজন অর্থনীতিবিদ, ফার্মাসিউটিক্যাল ব্যবসায়ী মনসুর ইয়াজদানির ব্যাংক হিসাবেও। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখা বাংলাদেশীদের সকলের জমার পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছেন রাজীব সামদানি পরিবার। রাজীব সামদানি গোল্ডেন হার্ভেস্ট গ্রুপের কর্ণধার। আরও বড় পরিচয়- তিনি বিশ্বখ্যাত মূল্যবান শিল্পকর্ম সরবরাহকারী। গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী নেতা, এমপি, মন্ত্রীদের বাসায় সোভা পাওয়া কোটি কোটি টাকার দুর্লভ শিল্পকর্ম এ রাজীবের সরবরাহ করা। প্রতি বছর ঢাকা আর্ট সামিটের নামে দেশী-বিদেশী শতকোটি টাকার শিল্পকর্ম প্রদর্শন করেন সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন। এ মেলার আয়োজকও তিনি।

তার সংগ্রহে রয়েছে দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান থেকে শুরু করে কোরীয় ভাস্কর হেগুয়ে ইয়াংয়ের শিল্পকর্মও। ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে শেখ রেহানার গাজীপুরের বাড়ি ও গুলশানে একজন উপদেষ্টার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। তখন সেখান থেকে মূল্যবান শিল্পকর্ম লুট হয়। এসব শিল্পকর্ম রাজীব সামদানির সরবরাহ করা ছিল। এছাড়া পতিত শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবন, শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতেও রাজীবের সরবরাহ করা প্রায় হাজার কোটি টাকার শিল্পকর্ম ছিল। যা লুট হয়ে যায়। তিনি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। জানা গেছে, রাজীবের প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ২১৫ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুইস ব্যাংকে সামদানি পরিবারের মোট ১১টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এসব ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি ৬১ লাখ ৪২ হাজার ৭৭১ সুইস ফ্রাঁ গচ্ছিত আছে। বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ ৭৫৭ কোটি ৯২ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫ টাকা। এর মধ্যে রাজীব সামদানির ব্যাংক হিসাবে রয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ, ৯৩ হাজার ৫৯ সুইস ফ্রাঁ, স্ত্রী নাদিয়া সামদানির ব্যাংক হিসাবে আছে ১ কোটি ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯ সুইস ফ্রাঁ, গোল্ডেন হারভেস্টের পরিচালক মহিয়াস সামাদের ব্যাংক হিসাবে আছে ২ কোটি ২৩ লাখ ৮৬ হাজার ১১৮ সুইস ফ্রাঁ, ছোট ভাই মেহেদী সামদানির ব্যাংক হিসাবে আছে ১ কোটি ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯ সুইস ফ্রাঁ। আলোচিত সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখায় পিছিয়ে নেই আজিজ মোহাম্মদ ভাইর পরিবার।

ব্যাংকটিতে এ পরিবারের ১২টি হিসাব রয়েছে। এসব ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪১ সুইস মুদ্রা জমা আছে। যা বাংলাদেশী টাকায় ৭২০ কোটি ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৫৩৫ টাকা। এরমধ্যে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ব্যাংক হিসাবে ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ৭২৯ সুইস ফ্রাঁ। তার ছোট বোন নূরজাহান হুদার ব্যাংক হিসাবে আছে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ সুইস ফ্রাঁ। বোনজামাই হুদা এল ইদ্রোসের ব্যাংক হিসাবে আছে ৯১ লাখ ১৯ হাজার ৪০ সুইস ফ্রাঁ। এছাড়া বিদেশী কোম্পানিতে গোপন বিনিয়োগকারীদের তথ্য প্রকাশ করে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসা প্যানডোরা পেপার্সের চূড়ান্ত তালিকায় নাম এসেছিল বাংলাদেশী মিরালী পরিবারের। সুইস ব্যাংকে আলোচিত এ পরিবারের ৯টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এসব ব্যাংক হিসাবে ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার ৬০ সুইস মুদ্রা রয়েছে। বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৯৮ হাজার ১০০ টাকা। এর মধ্যে মোবারক আলীর ব্যাংক হিসাবে আছে ১ কোটি ১০ হাজার ৩৫০ সুইস ফ্রাঁ, স্ত্রী সকিনা নাসরুল্লাহ মিরালীর ব্যাংক হিসাবে আছে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ সুইস ফ্রাঁ, ছেলে সামাদ নাসরুল্লাহ মিরালীর ব্যাংক হিসাবে আছে ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৩৮ সুইস ফ্রাঁ। বেঙ্গল গ্লাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসামুদ্দিন সালেহ পরিবারের সুইস ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা রয়েছে। ব্যাংকটিতে এ পরিবারের অন্তত ১৮টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে।

এসব ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৮২৯ সুইস ফ্রাঁ গচ্ছিত আছে। বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৮০ কোটি ১৪ লাখ ১১ হাজার ৯১৫ টাকা। এরমধ্যে হিসামুদ্দিন সালেহর ৯টি ব্যাংক হিসাবে আছে ২ কোটি ৩১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮১ সুইস ফ্রাঁ, স্ত্রী ফাতেমা সালেহর ৬টি ব্যাংক হিসাবে আছে ১ কোটি ৯৩ লাখ ২৩ হাজার ৪৬৯ সুইস ফ্রাঁ, ছেলে আমান সালেহর ৩টি ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ২৯ লাখ ৭০ হাজার ৯৬৮ সুইস ফ্রাঁ। রহিমা ফুড কর্পোরেশন ও সিটি সুগার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরী পরিবারের ৩টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এসব ব্যাংক হিসাবে ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ৮৮৯ সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ ৫১ কোটি ৭১ লাখ ৭০ হাজার ১৫ টাকা। এরমধ্যে আব্দুর রউফ চৌধুরীর ছেলে রবি রউফ চৌধুরীর ১টি ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ ৭৩ হাজার ১৭৫ সুইস মুদ্রা, স্ত্রী রাফিয়া চৌধুরীর ২টি ব্যাংক হিসাবে ২৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭১৩ সুইস ফ্রাঁ। এছাড়া সুইস ব্যাংকে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সানমার প্রপার্টিজ এর মালিক মাসুক হক ও তার স্ত্রী আফরোজা হকের দু’টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এতে ৫৪ লাখ ৬৬ হাজার ৮৮৪ সুইস ফ্রাঁ রয়েছে। বাংলাদেশী টাকার যার পরিমাণ ৭৩ কোটি ৮০ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ টাকা। এছাড়া এ দম্পত্তি ২০১১ সালে সুইস ব্যাংকে দু’টি একাউন্ট খুলে তাতে ৫৪ লাখ ৬৬ হাজার ৮৮৪ সুইস ফ্রাঁ জমা রেখে ২০১৪ সালে তা তুলে নেন।

সিলেটের সাবেক একজন এমপি পরিবারের ১টি জয়েন্ট ব্যাংক হিসাব রয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত পরিবারটির হিসাবে ১ কোটি ৭০ লাখ ৫ হাজার ৩০৭ সুইস ফ্রাঁ গচ্ছিত আছে। বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২২৯ কোটি ৫৭ লাখ ১৬ হাজার ৪৪৫ টাকা। এছাড়া প্রয়াত একজন অর্থনীতিবিদের সুইস ব্যাংকে ১টি হিসাবে ৭ লাখ ১৭ হাজার ১ সুইস ফ্রাঁ, হিরা রাজ্জাকের ব্যাংক হিসাবে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৮০ সুইস ফ্রাঁ, খন্দকার ফিরোজ কাইয়ূমের ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮৬২ সুইস ফ্রাঁ, মনসুর ইয়াজদানি খানের ব্যাংক হিসাবে ৪১ লাখ ১৩ হাজার ৪৬২ সুইস ফ্রাঁ জমা রয়েছে। বাংলাদেশী টাকায় এর পরিমাণ ২৬৯ কোটি ৪১ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৫ টাকা। এছাড়া এর আগে ২০১০ সালে দু’টি হিসাব খুলে ২০১২ সালে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে ওই হিসাবে ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৯৪০ সুইস ফ্রাঁ লেনদেন করা হয়। অবশ্য সুইস ব্যাংকে বৈধ উপায়ে যে কোনো দেশের নাগরিকরাই আর্থিক লেনদেন করতে পারেন। তবে উল্লেখিত পরিবারগুলো সুইস ব্যাংকে কীভাবে হিসাব পরিচালনা করছেন বা তারা কেন দেশ বাদ দিয়ে বিদেশে নিজেদের অর্থ সঞ্চয় করছেন তা রীতিমত রহস্যজনক। তাই বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত হওয়া দরকার।

নিকট অতীতেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থের পাহাড় জমানোর খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিলো। বিশেষ করে ২০২১ সালে এসে তা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিলো। কিন্তু ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে এর ছন্দপতন হয়েছে। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমানো অর্থের স্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এতে কেউ কেউ উল্লোসিত হলেও ভেতরের খবর ছিল আরো ভয়াবহ। কারণ, সুইস ব্যাংক বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে তাদের নাগরিকদের জমানো অর্থের তথ্য দিতে শুরু করার পরই বাংলাদেশের আমানতকারীরা সেখান থেকে পুঁজি স্থানান্তর করে অন্যকোন নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে শুরু করে। আর এতেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থের জমানো অর্থের স্থিতি উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পায়।

তাই পতিত স্বৈরাচার আমলে আমাদের দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে সুইস ব্যাংক সহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়েছে তা তদন্তে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন হওয়া দরকার। একই সাথে অর্থপাচারকারীদের আয়ের উৎস ও বিদেশে স্থানান্তরের বৈধতাও খতিয়ে দেখা জরুরি। অবৈধভাবে অর্থবিত্ত অর্জন এবং তা বিদেশে পাচার করার সাথে জড়িতদের নিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক-এ প্রত্যাশা সকল আত্মসচেতন মানুষের।