॥ এম এ খালেক ॥

গত বছর ৫ আগস্ট দেশের সরকার পরিবর্তিত হবার পর অর্থনীতির ভগ্নদশা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। অন্তর্বর্র্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রায় এক বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। কিন্তু অর্থনীতির অধিকাংশ সূচক এখনো নিম্নমুখী রয়েছে। এর মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং পণ্য রপ্তানি খাত। এ দু’টি খাতের ইতিবাচক প্রবণতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণও আশাব্যাঞ্জকভাবে বাড়ছে। ২৭ জুন গ্রস বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) এর হিসাব পদ্ধতি বিপিএম মোতাবেক রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার। পরবর্তী তিনদিনে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আরো বেড়েছ। একই সময়ে বাংলাদেশের অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর আগে আর কখনোই একক বছরে এত বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আসেনি। এর আগে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছিল। প্রবাসী আয় ইতিবাচক ধারায় প্রবাহমান থাকা,পণ্য রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাওয়া এবং সর্বোপরি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ঋণের কিস্তি ছাড় করার কারণেই মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ এভাবে ইতিবাচক ধারায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রশ্ন উঠতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার কী এমন জাদুকরি ব্যবস্থা নিলেন যে কারণে প্রবাসী আয় এভাবে রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে? আর প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দেশের প্রতি এত আন্তরিক হলেন কেনো? যে কোনো দেশের রিজার্ভ গঠনে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স এবং পণ্য রপ্তানি আয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তাই সব দেশই চেষ্টা করে কিভাবে প্রবাসী আয়ের স্বাভাবিক গতি প্রবাহ ঠিক রাখা যায় এবং পণ্য রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পায়। গত সরকার আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত ভুলনীতির কারণেই মূলত রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গিয়েছিল। পণ্য রপ্তানি আয়ও আশাব্যাঞ্জকভাবে বাড়ছিল না। একটি কুচক্রি মহল বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে কিভাবে দেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ রেমিট্যান্স প্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল তা জানতে হলে আমাদের একটু পিছন ফিরে তাকাতে হবে।

কোনো কারণে একটি দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর মধ্যে একটি কমন ব্যবস্থা হচ্ছে পলিসি রেট বৃদ্ধি করা। সিডিউল ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আপদকালীন সময় ঋণ বা ধার গ্রহণের সময় যে সুদ প্রদান করে তাকেই পলিসি রেট বলা হয়। যদিও পলিসি রেটকে নানা নামে আখ্যায়িত করা হয়। পলিসি রেট বৃদ্ধি করলে সিডিউল ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের অর্থ উদ্যোক্তা ও সাধারণ ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ দানের সময় সুদের হার আনুপাতিকভাবে বৃদ্ধি করে। করোনা উত্তর বিশ^ অর্থনীতি যখন উত্তরণের পর্যায়ে ছিল সে সময় শুরু হয় ইউক্রেন যুদ্ধ। বিশ^বাজারে জ¦ালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। বিশ^ব্যাপী সাপ্লাই চেইন ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশে^র শ্রেষ্ঠ অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির হার ৪০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়। বিনিয়োগ বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্থবিরতা নেমে আসার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা বারবার পলিসি রেট বৃদ্ধি করে। এতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার আগের তুলনায় ব্যয় বহুল হয়ে পড়ে। ঋণ প্রত্যাশিরা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে দেয়। আরো নানা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তারা উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়। এখন আবার তারা পলিসি রেট বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের অনুকরণে পলিসি রেট একাধিকবার বৃদ্ধি করেছে। আগে পলিসি রেট ছিল ৫ শতাংশ এখন তা ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিগত বছরগুলোতে পলিসি রেট বার বার বৃদ্ধি করলেও ব্যাংক ঋণের সুদের হার (ব্যাংক ঋণগ্রহীতাদের ঋণদানের সময় যে সুদ চার্জ করে) বাড়ানোর সুযোগ দেয়নি। ফলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার তুলনামূলক সস্তা হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশে নির্ধারণ করে রাখে। ফলে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদের ঋণ আনলেও তা বিনিয়োগের সময় তুলনামূলক কম সুদ আরোপ করতে বাধ্য হয়। এটি ছিল একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। সিডিউল ব্যাংকগুলো সংকোচন নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু সরকারের সমর্থক প্রভাবশালী গোষ্ঠী নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে ব্যাংক থেকে ঋণ বের করে নেয়। এক মুদ্রানীতিকালে ব্যক্তিখাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ১ শতাংশের স্থলে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছিল। অথচ সে সময় শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল,ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিল। ব্যাংকে থেকে ঋণ নিয়ে একটি মহল তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে। এমনকি দেশের বাইরে পাচার করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

মুক্তবাজার অর্থনীতিতে নিয়ন্ত্রণ চলে না। বাজার চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই সব কিছুর মূল্য নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর একটি বড় ভুল ছিল মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করে রাখা। অনেক দিন পর্যন্ত প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারিত ছিল ১১০ টাকা। কেউ কেউ যুক্তি দিতেন, যদি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হয় তাহলে স্থানীয় মুদ্রা টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ঘটবে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে। এ ধারণা আংশিক সত্যি হলেও পুরোপুরি নয়। বরং মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারিত করে রাখার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। বাজারে মার্কিন ডলারের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় কার্ব মার্কেট চাঙ্গা হয়ে উঠে। ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও কার্ব মার্কেটে প্রতি মার্কিন ডলার ২২/২৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্থানীয় মুদ্রায় বেশি অর্থ পাবার প্রত্যাশায় হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করতে থাকে। প্রতি মার্কিন ডলারের স্থানীয় মুদ্রায় ১০/১২ টাকা বেশি পাওয়া সাধারণ ব্যাপার নয়। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা যদি বৈধ চ্যানেলে অর্থ দেশে প্রেরণ করতে চান তাহলে তাদেরকে কর্মস্থল থেকে স্বল্পকালীন ছুটি নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে অর্থ দেশে প্রেরণ করতে হবে। আর হুন্ডি ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে আবাসস্থলে গিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে থাকে।

প্রবাসী বাংলাদেশিরা বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি খুশি হয়ে বৈধ চ্যানেলে অর্থ দেশে প্রেরণ করছেন এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে কার্ব মার্কেটের মতো রেট পাবার কারণেই বৈধ চ্যানেলে অর্থ দেশে প্রেরণ করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক যখন প্রথমবারের মতো ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করে তখন মাত্র এক রারের ব্যবধানে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকা থেকে ১১৭ টাকায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এরপর প্রতি মার্কিন ডলার ১২২/১২৩ টাকায় উঠানামা করতে থাকে। এরপর ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রলিং পেগ পদ্ধতির পরিবর্তে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করে। কিন্তু বাজারভিত্তিক করার পরও মুদ্রা বাজারে তেমন কোনো অস্থিতিশীলতা দেখা দেয় নি। প্রতি মার্কিন ডলার এখনো ১২৩/১২৪ টাকায় বিনিময় হচ্ছে। মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার ফলে লাভ হয়েছে। কারণ এর ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ বৈধ চ্যানেলে দেশে প্রেরণ করছেন। রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আহরণের এটাই মূল কারণ। একই সঙ্গে রপ্তানিকারকগণ তাদের পণ্যের মূল্য দ্রুত দেশে আনছেন। মূলত এসব কারণেই রিজার্ভও দ্রুত বাড়ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার বিদেশি ঋণের অনেকগুলো কিস্তি পরিশোধ করেছেন। সাধারণ একটি উদ্দেশ্যমূলক ভুল সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতির জন্য কতটা ক্ষতি করতে পারে তার প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ হচ্ছে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করে রাখা। এতে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হলেও মহল বিশেষ সরকারি আনুকূল্যে ব্যাংক থেকে তুলনামূলক কম মূল্যে মার্কিন ডলার ক্রয় করে তাদের চাহিদা পূরণ করতে পেরেছেন। মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারিত থাকলেও আমদানিকারকগণ কিন্তু আমদানি পণ্যের মূল্য কমায়নি। তারা উচ্চ মূল্যে পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ অতীতের চেয়ে অনেকটাই কমে গেছে। এর কারণ হচ্ছে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার ৯শতাংশে ক্যাপ প্রত্যাহার করায় ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়িয়েছে। বর্তমানে দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের সুদের হার ১৪/১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও অনেক উদ্যোক্তা ও সাধারণ ঋণ গ্রহীতার পক্ষে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কিছুদিন আগে ব্যক্তিখাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৭ শতাংশের নিচে। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ ব্যতীত কোনো দেশের টেকসই উন্নয়ন অর্জিত হতে পারে না। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকৃতি তাতে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ জিডিপির অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ হওয়া উচিত। কিন্তু ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার ছিল জিডিপি’র ২৪ দশমিক ৫২ শতাংশ,যা সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৮৮ হাজার ০০১ কোটি টাকা। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে তা ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। পণ্য আমদানির পরিমাণ ছিল ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৮ হাজার ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার, যা সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ৫ হাজার ৪৮০ কোটি মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। বিগত সরকার আমলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণের পরিবর্তে ভুল তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। আমদানি ব্যয়ের কথাই ধরা যেতে পারে। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে আমদানি ব্যয় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ কি আমদানি কমিয়ে দিয়েছে? না বাংলাদেশ আমদানি করেছে ঠিকই কিন্তু আমদানির নামে অর্থ পাচার আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। ফলে আমদানি ব্যয় কম দেখা যাচ্ছে। বিগত সরকার আমলে অর্থনীতির অধিকাংশ ইতিবাচক পরিসংখ্যান অতিরঞ্জিত করে দেখানো হতো। এখন সে পরিসংখ্যানগত অতিরঞ্জন কিছুটা বন্ধ হয়েছে। ফলে কোনো কোনো পরিসংখ্যান হ্রাস পেয়েছে।

জনশক্তি রপ্তানি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কিন্তু বিগত সরকার আমলে এ খাতের উন্নয়নে তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। উপরন্তু মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির জন্য সরকার সমর্থক ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়িত্ব দেবার ফলে এ খাতে এক ধরনের সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। তারা নানাভাবে প্রবাস গমনেচ্ছুক বাংলাদেশিদের হয়রানি করছে। বিদেশে যেসব বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন তারা নানা কারণেই হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করে। দেশের অভ্যন্তরে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারিত করে রাখার কারণে কার্ব মার্কেটে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। ফলে স্থানীয় মুদ্রায় বেশি অর্থ পাবার প্রত্যাশায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করতো। এছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ করতে হলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কর্মস্থল থেকে সাময়িক ছুটি নিয়ে ব্যাংকে যেতে হয়। কিন্তু হুন্ডি ব্যবসায়ীরা প্রবাসী কর্মীদের বাসায় গিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে থাকেন। স্থানীয় বেনিফিশিয়ারিদের ব্যাংকে গিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে হয় না। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা প্রবাসী বাংলাদেশির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে রেমিট্যান্স পৌঁছে দেয়। এসব কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিরা হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণ করতেন। সরকার সমর্থক গোষ্ঠীকে বিশেষ সাশ্রয়ী মূল্যে মার্কিন ডলার যোগান দেবার জন্যই মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারিত করে রেখেছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই পর্যায়ক্রমে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে এবং কার্ব মার্কেটে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার প্রায় সমান। মূলত একারণেই রেমিট্যান্স আহরণের ক্ষেত্রে এমন বিস্ময়কর সাফল্য অর্জিত হচ্ছে।