আর্থিক সঙ্কটে থাকা সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের তারল্য প্রবাহ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ দু’টি ব্যাংকের জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা অনুমোদন দিয়েছে। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের অনুকূলে তারল্য সহায়তা বাবদ ২৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা সহায়তা প্রদান করলো। মূলত নতুন করে টাকা ছেপেই এ আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করলে কারো কিছু বলার ছিল না। কিন্তু নতুন করে টাকা ছেপে যদি তারল্য সঙ্কট সহায়তা দেয়া হয় তাহলে আপত্তি করার অনেক কিছুই আছে। কারণ টাকা ছাপার কিছু নিয়ম-নীতি আছে। সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস আছে বলেই যে কোনো সময় নতুন টাকা ছেপে বাজারে ছাড়া হবে এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। নতুন করে টাকা ছেপে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা প্রদান করলে এর বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতির উপর। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে চলেছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। গত প্রায় তিন বছর ধরে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতা বিরাজ করছে। নানাভাবে অঙ্গীকার করেও কোনোভাবেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতা কমানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় টাকা ছেপে যদি দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা প্রদান করা হয় তাহলে সেই অর্থ বিভিন্ন উপায়ে বাজারে চলে আসবে। ফলে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যেতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতা সৃষ্টি হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ৭৭টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি রেট বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি রেট বাড়ালেও একই সঙ্গে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজার ভিত্তিক না করে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে সীমাবদ্ধ করে রাখে। ফলে বাজারে অর্থ প্রবাহ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের অনুগত কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাকে সুবিধা দেবার জন্যই এটা করেছিল।
এ মুহূর্তে যদি ব্যাংকিং সেক্টরের সমস্যা এবং তার ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করতে চাই তাহলে প্রথমেই ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে তৎপ্রেক্ষিতে প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশ্বে দু’ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং এবং অন্যটি ইউনিট ব্যাংকিং। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশ ইউনিট ব্যাংকিং সিস্টেমে চলে। ইউনিট ব্যাংকিং হচ্ছে সেই ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেখানে সামান্য কয়েকটি শাখা নিয়ে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউনিট ব্যাংকিং ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো কোনো কারণে এক বা একাধিক শাখা বিপর্যয়ের মধ্যে পতিত হলে পুরো ব্যাংক ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যাংক দেউলিয়া হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আর যুক্তরাজ্য যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনুসরণ করে তা হচ্ছে ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং। এ ব্যবস্থায় সামান্য কিছু সংখ্যক ব্যাংক শত শত এমন কি হাজার হাজার শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ব্যাংক দেউলিয়া হবার আশঙ্কা থাকে খুবই কম। বৃটিশ উত্তরাধিকারী হিসেবে বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং কার্যক্রম অনুসরণ করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে বিশুদ্ধ ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং বলা যাবে না। বাংলাদেশে বর্তমানে ৬১টি ব্যাংক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাংলাদেশের মতো একটি ছোট দেশ, যার অর্থনীতির পরিধিও খুব একটা বড় নয় সে ধরনের একটি দেশে ৬১টি ব্যাংক যে কোনো বিচারেই অধিক বলে মনে করার কারণ রয়েছে। ভারতের মতো বিশাল দেশ যার জনসংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি এবং অর্থনীতির আকারও বিশাল তাদের দেশে যে সংখ্যক ব্যাংক রয়েছে তা আনুপাতিক হারে বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। বাংলাদেশে যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনুসরণ করা হচ্ছে তা বিশুদ্ধ ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং নয়, আবার ইউনিট ব্যাংকিংও নয়। এক ধরনের মিশ্র ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি বলেছেন, দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বাঁচানোর জন্য সরকার চেষ্টা করছে। তবে কিছু ব্যাংক আছে যেগুলোকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। তিনি এটা বলেননি যেসব ব্যাংক বাঁচানো যাবে না তাদের পরিণতি কী হবে? এখানে আরো একটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাহলো, বাংলাদেশ ব্যাংক বললেই কিন্তু দুর্বল ব্যাংকের ব্যাপারে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে না। কারণ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় একটি অলঙ্ঘনীয় জটিল সমস্যা হচ্ছে দ্বৈত শাসন। বাংলাদেশে যেসব ব্যাংক ব্যবসায় পরিচালনা করছে তাদের সবার উপর বাংলাদেশ ব্যাংকের একক কর্তৃত্ব নেই। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের উপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের উপর বাংলাদেশ ব্যাংকের তেমন কোনে নিয়ন্ত্রণ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলেই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অথবা চেয়ারম্যান বা পুরো পরিচালনা বোর্ড বাতিল করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতি তাকিয়ে থাকতে হয়। কারণ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সিদ্ধান্তে ভিন্নমত প্রকাশ করে তাহলে বাংলাদেশ করণীয় কিছুই থাকে না। বিগত সরকারের আমলে সর্বশেষ ব্যক্তি মালিকানায় ৯টি ব্যাংকের অনুমোদনদানকালে বাংলাদেশ ব্যাংক আপত্তি উত্থাপন করেছিল। কিন্তু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তিকে কোনো গুরুত্ব দেয় নি। ব্যাংকিং খাত সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণের আগে প্রথমেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বিলুপ্তি ঘটাতে হবে। দ্বৈতশাসন কখনোই ভালো ফলাফল দিতে পারে না। নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা, বিএনপি আমলে অর্থমন্ত্রী থাকাকালে এম সাইফুর রহমান এক সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করেছিলেন। সেই ব্যবস্থা আবারো অনুসরণ করা যেতে পারে।
বিগত সরকারের আমলে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে পুরোপুরি দলীয়করণ করা হয়েছিল। আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে এশিয়ার অন্যতম সফল ব্যাংক ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে রাতের আঁধারে বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে একটি হোটেলে অবরুদ্ধ করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ইসলামি ব্যাংকের মালিকানা সরকারের অনুগত বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল। একইভাবে আরো ৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা এই শিল্পগোষ্ঠীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল। এ ধরনের অন্যায় কাজ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
শোনা যাচ্ছে, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ অথবা আত্মীকরণের মাধ্যমে কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। বিগত সরকার আমলের শেষের দিকে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল বটে। কিন্তু তা ছিল বিতর্কে ভরা। প্রথমেই আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে আমরা কি সত্যি ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে চাই, নাকি চমক সৃষ্টি করতে চাই মাত্র? যদি সত্যি আন্তরিকভাবে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনা উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ বা কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। প্রথমেই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে নির্মোহভাবে বাছাই করতে হবে। পরবর্তীতে তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে দিতে হবে। এ সময়সীমা হয়তো দুই বছর নির্ধারণ করা হলো। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বলতে হবে তোমরা এ দু’বছর সময় সীমার মধ্যে সরকারের সহায়তা ব্যতীত নিজস্ব ক্ষমতা বলে টিকে থাকার মতো অবস্থায় যেতে হবে। কোনো কারণে তারা যদি ব্যর্থ হয় তাহলে তুলনামূলক শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে তাদের একীভূত করে দেয়া যেতে পারে। অথবা শক্তিশালী কোনো ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংকটিকে অধিগ্রহণের অনুমতি প্রদান করা যেতে পারে। আর তৃতীয় ব্যবস্থাটি হলো ব্যাংকটিকে অবসায়ন করা। আমাদের অনেকের মধ্যেই একীভূতকরণ এবং অধিগ্রহণ নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে। কোনো দু’টি ব্যাংক যখন একত্রিত হয়ে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরু করতে চায় সেই অবস্থাকে একীভূতকরণ বলা যেতে পারে। একীভূতকরণকৃত বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করে। একীভূতকরণের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে দু’টি ব্যাংকের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে নতুন নামে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করে। আর অধিগ্রহণ হচ্ছে কোনো একটি ব্যাংকের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। তারা শক্তিশালী ব্যাংকের অধীনে কাজ করবে। একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে দু’টি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে রেষারেষি চলতে থাকে অনেক দিন পর্যন্ত। কিন্তু অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে এ অসুবিধা তুলনামূলকভাবে কম। এ দু’পদ্ধতির পাশাপাশি যেসব ব্যাংক তাদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে ব্যর্থ হবে তাদের অবসায়ন করা যেতে পারে। অর্থাৎ ব্যাংক বন্ধ ঘোষণা করা যেতে পারে। কৃত্রিমভাবে ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের শেয়ার বাজারে ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্র দায়মুক্তি নিতে পারে। কোনো রাষ্ট্রীয় ব্যাংক দিনের পর দিন লোকসান দেবে অথবা কাক্সিক্ষত মাত্রায় মুনাফা অর্জন করতে পারবে না এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কোনো প্রতিষ্ঠানকে কোরামিন দিয়ে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখার সুযোগ নেই। ব্যাংকগুলোকে তাদের নিজস্ব যোগ্যতা এবং সক্ষমতা বলে টিকে থাকতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছাড়কৃত ঋণের ১০ শতাংশে উন্নীত হবে তারা কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারবে না। আগামীতে কোনো ব্যাংক মূলধন ঘাটতি অথবা প্রভিশন ঘাটতি থাকা অবস্থায় লভ্যাংশ দিতে পারবে না। একটি ভালো ব্যাংকও কোনো অবস্থাতেই পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশের বেশি অথবা নিট মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব সিদ্ধান্ত নিশ্চিতভাবেই ইতিবাচক কিন্তু এতে কোনোই কাজ হবে না, যদি আসল সমস্যার প্রতি দৃষ্টি দেয়া না হয়। বিগত সরকার আমলে আ হ ম মোস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী থাকাকালে ব্যাংকিং সেক্টরে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক মানের আইনগুলো যেভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে তা এখনই বাতিল করার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। আর্থিক খাতের কতিপয় দুষ্কৃতকারীর চাপে অর্থমন্ত্রী ব্যাংকিং সেক্টরে প্রচলিত আন্তর্জাতিক মানের আইনগুলো পরিবর্তন করে খেলাপি ঋণকে কিস্তি আদায় না করেই কমিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা প্রদর্শন করা হচ্ছে। কিন্তু কৃত্রিমভাবে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ যদি প্রকাশ্যে আনা হয় তাহলে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করে যাবে।
এমতাবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যাংকিং সেক্টরের একক নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্তিশালীকরণ সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। এতে যারা কর্মরত থাকবেন তাদের নৈতিকতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে হতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে এস কে সুরের মতো অনেক কর্মকর্তা আছেন যারা অর্থের বিনিময়ে নানা অপকর্ম করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাই পিকে হালদারকে আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্য সহায়তা করেছেন এবং ভারতে পালিয়ে যাবার ব্যবস্থা করেছেন। পিকে হালদারের পিছনে কারা কলকাঠি নেড়েছেন তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পিছনে শত্রু রেখে যুদ্ধ যাত্রা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবে ততই মঙ্গল।