দেশপ্রেম এবং আত্মমর্যাদাবোধ স্বাধীন সার্বভৌম যে কোনও দেশের জন্য একটি সম্পদ। দেশের সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী, সরকারি কর্মকতা-কর্মচারী এবং রাষ্ট্রনায়কদের দেশপ্রেম দেশের অস্তিত্ব, সমৃদ্ধি এবং অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। এদের যে কোন একটি শ্রেণীর দেশপ্রেমে ঘাটতি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব এবং সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে তুলতে পারে। এ প্রেক্ষিতে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে দেশ প্রেমকে সর্বত্র সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। দেশপ্রেমিকরা শ্রদ্ধার পাত্র হন এবং যাদের দেশপ্রেম নাই তাদের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরা সর্বকালে, সর্বযুগে নিন্দার পাত্র। আত্মমর্যাদাবোধ দেশপ্রেমিকদের সহজাত বৈশিষ্ট্য। এ দু’য়ের সমন্বয় মানুষকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখায় এবং আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদকে মোকাবেলা করতে উজ্জীবিত করে। দেশপ্রেম ছাড়া মুসলিম মিল্লাতের ঐক্য কল্পনা করা যায় না। একটি আরবী প্রবচনে বলা হয়েছে ‘হববুল ওয়াতন মিনাল ঈমান’ অর্থাৎ দেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ। বিগত শতাব্দীগুলোতে এ উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলিম জনগোষ্ঠী তাদের প্রতিকূল শক্তির মুকাবিলায় দেশপ্রেম ও ঈমানী দায়িত্ব পালনের বহু অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং এখনো স্থাপন করে চলেছে। তাদের সাফল্য গাথার বহু চিত্র ইতিহাস গ্রন্থ ও সাহিত্যের পাতায় ছড়িয়ে আছে এবং যুগে যুগে নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করছে। ভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতিতেও দেশ প্রেমের অনুরূপ নজির পাওয়া যায়।

রামায়নের একটি আখ্যানকে কেন্দ্র করে কবি মধুসুদন দত্ত প্রণীত রূপকাশ্রয়ী কাহিনী মেঘনাদবধ কাব্যেও এর নজির রয়েছে। এ কাব্যে কুসুমদাম সজ্জিত দীপাবলী তেজে/উজ্জলিত নাট্যশালা সম আছিল এ মোর সুন্দরী পুরী- অর্থাৎ রাবণের সোনার লংকা বহিরাগত শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে লণ্ডভণ্ড ও ধ্বংস প্রাপ্ত হতে দেখি, কিন্তু রাবণ-এর প্রতিকার করতে পারছেন না। তার দেশপ্রেম শোর্যবীর্য কোনও কাজে আসছেনা। এ যুদ্ধে জয়লাভের জন্য অস্ত্রবল, সৈন্যবল ও অর্থবলের তার কোনও কমতি ছিলনা। কিন্তু তা সত্বেও লংকায় ‘একে একে শুকাইছে ফুল, নিভিছে দেউটি’। শত্রুর আক্রমণ আর তারই পিতৃব্য ঘরের শত্রু বিভীষণ রাবণের কপালে কলংকতিলক পরিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায়ও রাবন ভাঙছে কিন্তু মচকাচ্ছেনা। তারস্বরে সে জানিয়ে দিচ্ছে যে, পরবশ্যতা সে কিছুতেই মানবেনা। দেশপ্রেম তার এতই শাণিত এবং উচ্চকিত, আত্ম-মর্যাদাবোধ তার এতই প্রবল যে, কোনভাবেই সে তা বিসর্জন দেবেনা, ব্যক্তিস্বার্থে তো নয়ই। এখানে আত্ম-মর্যাদাবোধ ও দেশ প্রেমকে এ কাহিনীর মর্মবাণী হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আজ থেকে প্রায় ৫৪ বছর আগে, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে। এর আগে ১৯৪৭ সালে আগষ্ট মাসে আমরা বৃটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে প্রথম বারের মতো পাকিস্তানের অংশ হিসেবে স্বাধীনতা অর্জন করি এবং ২৪ বছর পর্যন্ত পাকিস্তানী হিসেবে আমাদের পরিচয় ছিল। কিন্তু যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমাদের পূর্ব পুরুষরা রক্ত দিয়ে পাকিস্তান অর্জন করেছিলেন তা অর্জিত না হওয়ায় এবং শাসক শ্রেণীর অবিমৃশ্যকারিতায় ঐ দেশটি টিকেনি। তার ধ্বংসস্তুপের উপর লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার গত ৫৪ বছরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়ে এখনো প্রশ্ন উঠছে এবং পাশাপাশি এ দেশের নাগরিকদের দেশ প্রেম নিয়েও বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে এবং এ প্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবে স্বাধীনতার হেফাজতের পন্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

বক্ষ্যমান নিবন্ধে দেশপ্রেমের সংজ্ঞা, অর্থ, তাৎপর্য, গুরুত্ব ও প্রকারভেদ, দেশপ্রেম উজ্জীবনে রাষ্ট্রীয় ভূমিকা, দেশপ্রেমের অপব্যবহার, বিভিন্ন দেশে দেশপ্রেমের মাত্রা, ইসলামের দৃষ্টিতে দেশপ্রেমের মাপকাঠি, বাংলাদেশে দেশপ্রেমের অবস্থা এবং স্বাধীনতা সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে।

দেশপ্রেমের সংজ্ঞা অর্থ তাৎপর্য গুরুত্ব ও প্রকারভেদ : দেশপ্রেমের ইংরেজী প্রতিশব্দ Patriotism. গ্রীক Patria শব্দ থেকে Patriotism. শব্দের উৎপত্তি। Patria অর্থ হচ্ছে The land of one's fathers, কোনও ব্যক্তির পিতৃপুরুষদের জন্মভূমি। Patriotism বা দেশপ্রেমের বিভিন্ন সংজ্ঞা আছে। Weebies এর সংজ্ঞা অনুযায়ী দেশ প্রেম হচ্ছে, Love for or devotion to one’s country. আবার Mike Wasdin নামক প্রখ্যাত রাজনীতি বিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে Patriotism বা দেশপ্রেম হচ্ছে “a feeling of love and devotion to one's own homeland ” এখানে হোমল্যান্ড বলতে পিতৃভূমিকে বুঝানো হয়েছে। দেশ প্রেমের প্রজ্ঞা নিয়ে খুব কম লোকই প্রশ্ন তোলেন। এটা থাকা উচিত কিনা, থাকলে এর ধরন প্রকৃতি কী হওয়া উচিত এ ধরনের প্রশ্ন সচরাচর দেখা যায় না।

বর্তমান দুনিয়ায় রাষ্ট্র হচ্ছে দেশপ্রেমের সবচেয়ে বড় সংগঠক। রাজনীতিবিদরা দেশাত্মবোধক বক্তৃতা বিবৃতি দিতে পছন্দ করেন, দেশের প্রতি কর্তব্য পালনের জন্য সাধারণ নাগরিকদের পরামর্শ দেন এবং নিজেদের শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক হিসেবে উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমসমূহ সরকারি আমলাদের পরিচালনায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় তোতা পাখির ন্যায় দেশ প্রেমের বুলি আওড়ায়, সরকারের বা সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের দেশ প্রেমকে মানুষের দরজা পর্যন্ত পৌছিয়ে দেয়। অবশ্য খুব কম ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ দেশ প্রেমের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন; শাসক দলের প্রচারধর্মী বক্তৃতা বিবৃতি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ডকুমেন্টারী, গান বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিদেশী কালচার ও কুরুচিপূর্ণ নাটক সিনেমার প্রচার আদৌ দেশ প্রেম অথবা তাদের বৃহত্তর স্বার্থের অনুকূল কিনা সে সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে অবাঞ্ছিত বলে বিবেচিত কোন কোন বিষয়ে মতামত রাখার ব্যাপারে বাক ও লিখনীর স্বাধীনতাকে সীমিত বা খর্ব করার বাহানা হিসেবে দেশপ্রেমকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সরকারী নীতি-পলিসির সমালোচনা বা বিরোধিতাকে দেশপ্রেমের পরিপন্থী বা বিশ্বাসঘাতকতা বলে গণ্য করা হয়। এ অবস্থার প্রেক্ষাপটেই সম্ভবত স্যামুয়েল জনসন বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, “ Patriotism is the last refuge of a scoundrel” অর্থাৎ দেশপ্রেম হচ্ছে পাজি-বদমাশদের সর্বশেষ আশ্রয়। তার এ উক্তির মমার্থ তাৎপর্যপূর্ণ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে দেশের প্রতি ভালবাসা বা আসক্তি থাকার প্রয়োজন আছে কিনা। কেউ কেউ মনে করেন যে, একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে জন্ম গ্রহণ করার ব্যাপারে কোনও ব্যক্তির সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছা অনিচ্ছা কাজ করেনা। কোনও দেশ বা এলাকায় জন্ম গ্রহণের বিষয়টি নিতান্তই আল্লাহর ইচ্ছার ব্যাপার। ব্যক্তির নিজের প্রতি, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি নিষ্ঠা ও ভালবাসা থাকার যৌক্তিকতা বোধগম্য। কিন্তু দেশের প্রতি অনুরূপ নিষ্ঠা ও ভালবাসা ব্যক্তিস্বার্থের কতটুকু অনুকূল তা খুঁজে দেখা প্রয়োজন। সমতল ভূমি ও পাহাড়িয়া অঞ্চল কিংবা উপকূলের বাসিন্দা ও সীমান্ত অঞ্চলে বসবাসকারীদের দেশপ্রেমের মিটার এক রকম নয়। দেশপ্রেমে ঝুঁকি আছে। এ ঝুঁকি এবং স্বার্থের মিল না ঘটলে দেশ প্রেম ফলপ্রসূ হয় না। আবার জাতীয় পর্যায়ে স্বার্থের বিভিন্নতা এতবেশি যে অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রতি ভালবাসা ও আনুগত্য ব্যক্তির স্বার্থের অনুকূল প্রমাণিত হয় না। কেননা এ ক্ষেত্রে তাকে নিজের স্বার্থের চিন্তা না করে এমন নীতি ও পলিসির প্রতি সায় দিতে হয় যা তার পছন্দ নয়। উইবিজ এর ভাষায়, “Patriotism is just a cover for collective thinking. It promotes the idea that the nation is responsible for any good that happens to the individual and the individual owes his life to the nation. Patriotism tries to assign any benefit that an individual receives not to the individualsÕacts of people, but because of the collective good of the nation. Patriotism demands that the individual subjugate his desires to the collective interest of the nations, even to sacrificing himself, family and friends. Patriotism advocates group responsibility over individual responsibility .”

কেউ কেউ মনে করেন যে, দেশকে ভালবাসার যৌক্তিক কারণ থাকুক বা না থাকুক, দেশপ্রেম অধিকাংশ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ প্রবৃত্তি বা দেশের প্রতি আনুগত্য ও ভালবাসা তারা কিভাবে প্রকাশ করেন। দেশ প্রেম প্রকাশের বাহন কি এবং কিভাবে দেশ প্রেমিকরা প্রমাণ করেন যে অন্যদের তুলনায় তারা উত্তম এবং ভিন্ন দেশের নাগরিকদের চেয়ে তারা বেশি অধিকার ভোগ করেন। এ বিষয়টি নিয়ে যেমন বিতর্ক আছে তেমনি দেশের মানুষ এবং বিদেশীদেরই বা তারা কোন দৃষ্টিতে দেখেন তাও গবেষণার বিষয়।

গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে অনেক সময় দেশ প্রেমকে (Patriotism) যুদ্ধরত জাতীয়তাবাদের একটা অংশ বলে মনে হয়। জর্জ আরওয়েলের ভাষায় Nationalism বা জাতীয়তাবাদ হচ্ছে Loyalty and devotion to a nation; especially: a sense of national consciousness exalting one nation above all others and placing primary emphasis on promotion of its culture and interests as opposed to those of other nations and supernational groups.

অপরাপর জাতিসমূহকে ছোট গণ্য করে নিজের পিতৃভূমির শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের মধ্যে কেউ কেউ দেশপ্রেমের অভিব্যক্তি দেখতে পায়। তাদের দৃষ্টিতে বিদেশীরা মনুষ্য পদ বাচ্য নয় অথবা তারা মানুষ হলেও অস্পৃশ্য বা ছোট জাতের। অতীতে দেশপ্রেমের এ বর্ণবাদী ধারণা বিশ্বে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। ইহুদী ও নাৎসিরা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সাম্প্রতিককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক দেশ প্রেমিকের মধ্যেও এ ধরনের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। বস্তুত নিজ দেশের প্রতি আসক্তি বা ভালবাসা এবং ভিনদেশের প্রতি ঘৃণা অথবা নিজ দেশের যারা সরকারি দলের লুটপাট কিংবা বিতর্কিত রাষ্ট্রীয় নীতির বিরোধিতা করে তাদের শত্রু গণ্য করার নাম দেশ প্রেম নয়। Edward Abbey'i অননবু’র মতে If patriotism has any value it would be as a friendly competition between equals who have the same rights where one hopes that all competetors do well but hopes that his side does the best. A patriot must always be readz to defend his country not only against foreign aggressors but also against his government.

রাষ্ট্র ও দেশপ্রেম : কোন কোন দেশের দেশপ্রেমের লালন ও পরিপুষ্টির জন্য রাষ্টীয়ভাবে Senator Carl Schulz এ ধারণাটিকে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করা হয়। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত জওহর লাল নেহেরু এ অঞ্চলে এই মতামতের উদ্ভাবক ছিলেন। নীতি ও নৈতিকতার দিক থেকে এ মতবাদটি সর্বজন গ্রাহ্য নয়। রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ একে বিকারগ্রস্ততা বলে অভিহিত করেন। ঝবহধঃড়ৎ ঈধৎষ ঝপযঁষু এই শূণ্যগর্ভ মতবাদের বিপরীতে দেশ প্রেমের আরেকটি ধারণা পেশ করেছেন। তার ধারণাটি হচ্ছে My country right or wrong, if right, to be kept right, if wrong to be set right.

ন্যায়-অন্যায় যা করি আমরাই সঠিক, আমাদের যারা বিরোধিতা করে তারা দেশের শত্রু, আমাদের শত্রু এ ধারণাটি সুস্থ মস্তিষ্ক প্রসূত নয়। এর ফলে ধ্বংস ও বিপর্যয় নেমে আসে, মানবতার অবমাননা হয়। জাতীয় গণ্ডি পেরিয়ে এ ধারণাটি যখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপ্তি লাভ করে তখন মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস হয়ে যায়, লক্ষ লক্ষ নিরাপরাধ মানুষ প্রাণ হারায়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ কর্তৃক ঘোষিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকার দেশগুলোর প্রতি You are either with us or against us ধরনের হুমকীমূলক আহবান এবং এর পরিণতিতে মার্কিন নেতৃত্বে মিত্র দেশগুলো কর্তৃক আফগানিস্তান ও ইরাকের ন্যায় মুসলিম অধ্যুষিত দু’টি দেশে ধ্বংসযজ্ঞের অনুষ্ঠান অন্ধ দেশ প্রেমের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

সাধারণ মানুষকে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্র কর্তৃক বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে, এর মধ্যে সরকারের প্রতি আনুগত্যের শপথ, পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের এসেমব্লি, স্থানীয় শাসন প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে পার্লামেন্ট পর্যন্ত নির্বাচিত প্রতিনিধি, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার, প্রেসিডেন্ট এবং শাসনতান্ত্রিক পদধারী ব্যক্তিরা রাষ্ট্র, সংবিধান ও আইনের প্রতি অনুগত থাকার যে শপথ বাক্য পাঠ করেন তা দেশ প্রেম বহাল রাখারই একটা পদ্ধতি বা কৌশল।

রাষ্ট্রীয় ভূমিকার প্রেক্ষাপটে দেশপ্রেম সম্পর্কে স্যামুয়েল জনসন অত্যন্ত তিক্ত মন্তব্য করেছেন, তার ভাষায়, “ The merits of patriotism are dubious at best. As practiced the kindest description is that patriotism is a national Psychosis where those who suffer from it can no longer determine right from wrong, and advocate that the state commit barbaric atrocities in their name. As with all other mental derangements, those who suffer from its delusional effects should not be encouraged to continue or spread their disease but seek qualified help to overcome their impairment.”

স্যামুয়েল জনসনের হতাশার কারণ সুস্পষ্ট। কোন কোন রাষ্ট্র দেশপ্রেমকে অন্যায়-অবিচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। কোনও বিশেষ ইস্যু সম্পর্কিত সরকারের নীতি-পলিসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-সমালোচনা বন্ধ করার জন্য দেশ প্রেমকে ব্যবহার করা হয়। বিদ্যমান অবস্থায় অনেকেই মনে করেন যে দেশপ্রেম স্বাধীনতা ও অবাধে মতামত প্রকাশের শত্রু। তবে প্রকৃত দেশপ্রেম ও দেশ প্রেমিকরা এ ধরনের সমালোচনার উর্ধ্বে। একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক তার দেশের সরকার এবং নেতৃবৃন্দের কাজ কর্মের ব্যাপারে সর্বদা প্রশ্ন তুলবেন। স্বাধীনতা প্রিয় প্রত্যেকটি মানুষ অবহিত রয়েছেন যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারই হচেছ স্বাধীনতার বড় হুমকী; চলা ফেরা, সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা, চিন্তা বিবেক ও বাক স্বাধীনতা তার হাতেই বেশি বিপন্ন হয়, বিদেশী রাষ্ট্রের কোনও নাগরিকদের হাতে নয়। আবার ক্ষমতায় থাকার জন্য কিংবা সংকীর্ণ দলীয় ও আর্থিক স্বার্থে এ ধরনের সরকারই বিদেশী শক্তির হাতে দেশের সার্বভৌমত্ব তুলে দিতে কুণ্ঠিত হয় না।

মোদ্দা কথা হচ্ছে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর, স্বার্থহীন যে কোনও কর্মকাণ্ড দেশপ্রেমের অন্তর্ভুক্ত। যুদ্ধ ক্ষেত্রে দেশের জন্য জীবনের ঝুঁকি নেয়া, সৈন্যদের রসদ ও অস্ত্র যোগানে সাহায্য করা এবং তাদের মনোবল অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা চালানো প্রভৃতি হচ্ছে দেশ প্রেমের উল্লেখযোগ্য কিছু দিক ।

দেশপ্রেমের রাজনৈতিক অপব্যবহার কিভাবে বিপদ ডেকে আনে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে এডলফ হিটলার। ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনে তিনি ক্ষমতা দখল করেন এবং ডিক্টেটারে পরিণত হন। তার দেশপ্রেমের অন্ধত্ব, জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের মতবাদ এবং সম্প্রসারণ ও আধিপত্যবাদী ধ্যান ধারণা ও অহংবোধ, প্রতিবেশী দেশসমূহের উপর আক্রমণ ও জবর দখল সারা দুনিয়াকে যুদ্ধ ও ধ্বংসযজ্ঞের দিকে ঠেলে দেয়। নিজ দেশের ভূখণ্ড সম্প্রসারণ আধিপত্য বিস্তার অথবা সম্পদ বা বাজার দখলের জন্য অন্য দেশের উপর হামলা দেশপ্রেম নয়। মাইক ওয়াজদিনের ভাষায়,

“Patriotism embodies two things: selflessness, which virtually everyone admires, plus a belief that we owe a greater allegiance to our fellow citizens than to ourselves, or a foreign countrymen”, অর্থাৎ দু’টি উপাদান নিয়ে দেশপ্রেম গঠিত। একটি হচ্ছে, নিঃস্বার্থপরতা যা কার্যত সকলেই ভালবাসেন। আরেকটি হচ্ছে এ বিশ্বাস বা ধারণা যে আমাদের নিজের বা বিদেশীদের তুলনায় আমাদের দেশের মানুষের প্রতি অধিকতর আনুগত্য এবং দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। বিদেশীদের তুলনায় দেশের মানুষ অধিকতর প্রিয় ও কাছের কিনা বাস্তব জীবনে প্রায়শই এ প্রশ্নটির মুখোমুখী হতে হয়। এর অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। অনেক দেশের অভিবাসন আইন অনুযায়ী নিছক জন্ম সূত্রেই কোনও ব্যক্তি একটি দেশের নাগরিক হতে পারেন এবং সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা পাবার যোগ্য বিবেচিত হন। কিন্তু বিদেশীরা তা পান না। অবশ্য রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য এবং দেশের মানুষের প্রতি আনুগত্য ও দায়িত্ব কর্তব্যের ব্যবধান নিয়ে সর্বত্র বিতর্ক রয়েছে। এর অবসানের চেষ্টাও চলছে।

সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ডে জন্ম না হলেও কোনও ব্যক্তি সে দেশের প্রেক্ষাপটে দেশপ্রেমিক হতে পারেন না অথবা সে দেশের জন্য প্রাণ দিতে পারেন না তা নয়। ভিন দেশে জন্মগ্রহণ করেও অন্য দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় লড়াই করেছেন অথবা প্রাণ দিয়েছেন ইতিহাসে এর অনেক নজির রয়েছে। Marquis de Lafayette নামক একজন ফরাসী বীর আমেরিকার ১৩টি বৃটিশ কলোনীর স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন। দেশাত্মবোধক কাজকে দু’ভাগে দেখা যায়, বিস্তৃত অর্থে এ হচ্ছে এমন একটি কাজ যার মধ্যে ব্যক্তির নিজস্ব স্বার্থ নেই এবং যা থেকে রাষ্ট্র উপকৃত হয়। সংকীর্ণ অর্থে বিশেষভাবে দেশপ্রেমের অনুভুতি থেকে উৎসারিত নিঃস্বার্থ যে কোন কাজই হচ্ছে দেশাত্মবোধক কাজ।

দেশপ্রেমের অনুভূতি সম্পর্কে দার্শনিক Alasdair MacIntyre 'Is Patriotism a Virtue শীর্ষক গবেষণা পত্রে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার ভাষায় One explanation that has been proposed is that such feelings result in the long run, from kin selection. Our ancestors certainly lived in small groups of genetically related individuals. Feelings of intense loyalty to one's own group might have led individuals to take actions that were poorly justified on grounds of self interest but helped the group as a whole. Since genes tend to have been shared by the entire group, and cooperation likely was critical to group survival, a propensity to experience feelings of loyalty to the group was probably favoured by natural selection.'Alasdair- ” অষধংফধরৎ-এর এ ব্যাখ্যাটিতে ডারউইনের থিওরীর উপাদান পাওয়া যায়। এখানে রক্ত ও আত্মীয়তার সম্পর্ক দেশপ্রেমের মানদণ্ড। এর বাইরে আদর্শের সম্পর্ক যে দেশপ্রেমের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক তা তার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে বলে মনে হয়।

দেশপ্রেমের পরিমাপ : বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে দেশপ্রেম পরিমাপের লক্ষ্যে বিভিন্ন সমীক্ষা পরিচালনার নজির রয়েছে। সরকারের নীতি পলিসির সংস্কার বা পুনর্গঠন ছিল এ সমীক্ষাসমূহের মূল উদ্দেশ্য। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর The Correlates of War Project নামক ইউরোপীয় দেশসমূহের একটি প্রকল্পের তরফ থেকে এ ধরনের একটি সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এ সমীক্ষা যুদ্ধের তীব্রতার সাথে দেশপ্রেমের একটা সম্পর্ক চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়।

আবার এও দেখা গেছে যে, সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমীক্ষার ফলাফল পরিবর্তন হয়। এক সমীক্ষা অনুযায়ী প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানদের দেশপ্রেম ছিল তুঙ্গে কিন্তু সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী তাদের অবস্থা এখন সর্ব নিম্নে এসে পৌঁছেছে। World Value Survey এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দেশপ্রেমের স্কোর বা মাত্রা সম্পর্কে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। ‘‘আপিন কি আপনার দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে গর্বিত’’? এ প্রশ্নের উত্তরকে ভিত্তি করে এ রিপোর্টটি তৈরী করা হয়েছে এবং এর স্কোর সর্ব নিম্ন ১ (গর্বিত নই) থেকে সর্বোচ্চ ৪ (অত্যন্ত গর্বিত) পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সমীক্ষায় প্রাপ্ত গড় দেশওয়ারী ফলাফল নিম্নরূপ :

দেশের নাম ১৯৯০-১৯৯২ দেশের নাম ১৯৯৫-১৯৯৭

  • সালের সমীক্ষার সালের সমীক্ষার
  • স্কোর স্কোর

আয়ারল্যান্ড ৩.৭৪ ভেনেজুয়েলা ৩.৯২

যুক্তরাষ্ট্র ৩.৭৩ দক্ষিই আফ্রিকা ৩.৭৩

ভারত ৩.৬৭ ভারত ৩.৭২

দক্ষিণ আফ্রিকা ৩.৫৫ যুক্তরাষ্ট্র ৩.৭০

কানাডা ৩.৫৩ পেরু ৩.৬৮

স্লোভেনিয়া ৩.৪৬ স্লেভেনিয়া ৩.৬৪

স্পেন ৩.২৮ পোল্যান্ড ৩.৫৫

ডেনমার্ক ৩.২৭ ডেনমার্ক ৩.২৭

ইতালি ৩.২৫ অষ্ট্রেলিয়া ৩.৫৪

সুইডেন ৩.২২ স্পেন ৩.৪০

ফ্রান্স ৩.১৮ চিলি ৩.৩৮

ফিনল্যান্ড ৩.১৭ আর্জেন্টিনা ৩.২৯

মলডোভা ২.৯৮ সুইডেন ৩.১৩

বেলজিয়াম ৩.০৭ জাপান ২.৮৫

নেদারল্যান্ড ২.৯৩ রাশিয়া ২.৬৯

  • সুইজারল্যান্ড ২.৫৯

জার্মানী ২.৭৫ লিথুয়ানিয়া ২.৪৭

গড় ৩.২৬ লাটভিয়া ২.১০

  • জার্মানী ১.৩৭
  • গড় ৩.১২

উপরোক্ত রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থা সম্পর্কে কোনও পরিসংখ্যান নেই। এ প্রেক্ষিতে এদেশের মানুষের দেশপ্রেমের স্কোর সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করা কঠিন। তবে যেহেতু সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অগণিত মানুষের জীবন, সম্পদ ও ইজ্জতের বিনিময়ে এ দেশটি অর্জিত হয়েছে সেহেতু স্বাভাবিকভাবে ধরে নেয়া যায় যে, আমাদের দেশপ্রেমে খাদ বা ঘাটতি নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন প্রথম ওপি ওয়ানের মাধ্যমে অভিবাসন কর্মসূচী শুরু করেছিল তখন বাংলাদেশ থেকে এক কোটি যুবক সে দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিল। এ অবস্থা দেখে কেউ কেউ তাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। আমি তাদের এ আচরণকে দেশপ্রেম বর্জিত কোনও পদক্ষেপ বলে মনে করি না বরং জীবিকা অর্জনের উৎস সন্ধানের প্রয়াস হিসেবে দেখি। অভিবাসন পেলেও তারা জন্মভূমির খেদমত করতে পারেন। এতে কোনও বাধা থাকার কথা নয়।

দেশপ্রেমের ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি : ইসলামের দৃষ্টিতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত ইনসাফভিত্তিক শাসন প্রতিষ্ঠা, উলুল আমর এর আনুগত্য, পারস্পরিক সহযোগিতা ও ভ্রাত্ত্বৃ প্রতিষ্ঠা, জনগণের সংশোধন এবং আমর বিল মা’রুফ ও নেহি আনিল মুনকারের নীতিমালার প্রয়োগ, ইসলামী আইন ও দণ্ডের বিধান কার্যকরকরণ এবং জ্বিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ প্রভৃতি হচ্ছে ঈমানদার প্রত্যেকটি মানুষের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য একটি ভূখণ্ডের প্রয়োজন। এটি পিতৃভূমি, মাতৃভূমি অথবা Place of domicile হতে পারে। এ ভূখণ্ডের প্রতি ভালবাসা, তার বিরুদ্ধে পরিচালিত সকল প্রকার সামরিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসন প্রতিরোধ করা প্রত্যেকটি মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে এটাই হচ্ছে দেশপ্রেম। এ দেশপ্রেমের ভিত্তি আল্লাহর মহববত, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অপরের প্রতি মহববত (হুববুন ফীল্লাহ), আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শরিয়া নির্ধারিত পন্থায় অপরের প্রতি শত্রুতা পোষণ (বুগদুন ফীল্লাহ), রাসূল (সা:)-এর মহববত, রাসূল (সা:)-কে শ্রেষ্ঠ জানা এবং উসওয়ায়ে হাসানা বলে মানা, ইখলাস বা আন্তরিকতা ও একনিষ্ঠতা, আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা, সবর এবং আল্লাহভীরুতা। এখানে অন্ধ প্রেমের কোনও সুযোগ নেই।

এ ব্যাপারে সূরা আল আনয়ামের ১৬২ নং আয়াত প্রণিধানযোগ্য। এতে বলা হয়েছে, ‘‘বলো : আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ শুধু আল্লাহ রাববুল আলামীনের জন্য, তার কোনও শরীক নেই।’’ সূরা আল-বাকারার ১৬৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘মুমিনদের বৈশিষ্ট্য এ যে, তারা আল্লাহকে সর্বাপেক্ষা বেশি ভালবাসে। এ ভালবাসা এত প্রবল ও সুদৃঢ় যে অন্য কোনও ভালবাসা অথবা ভীতি তাদেরকে এক বিন্দুও টলাতে পারেনা।’’

কুরআন মাজীদে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। সূরা আল মুজাদিলার ২২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘তুমি (মুহাম্মাদ) আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী লোকদের এমন কখনও দেখতে পাবেনা যে, আল্লাহ ও রাসূলের বিরোধিতাকারীদের প্রতি তারা ভালবাসা পোষণ করে। যদিও (ঐ সব বিরোধিতাকারীরা) তাদের পিতা-মাতা হোক, সন্তানাদি হোক, ভাই-বেরাদার হোক কিংবা বংশ পরিবারের লোক হোক। এরা সে সমস্ত লোক যাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমানকে সুদৃঢ় করেছেন এবং নিজের তরফ থেকে একটা রুহ দান করে তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন। ........ এরাই হচ্ছে আল্লাহর দলের লোক।’’ সূরা আলে ইমরানের ২৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এ যে, তারা অপর মুমিন ছাড়া কাফিরদের কখনো পৃষ্ঠপোষক বানায় না।’’

সূরা আল হুজুরাতের ১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘প্রকৃত মুমিন তারাই যারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর আর সন্দেহে পড়ে না এবং নিজেদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। এরাই (তাদের ঈমানের দাবীতে) সত্যবাদী।’’

সূরা আত তাওবার ৭১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘মুমিন নারী ও পুরুষের আরো বৈশিষ্ট্য এই যে, তারা পরস্পরের বন্ধু, সাহায্যকারী। তারা একে অপরকে ভাল কাজের নির্দেশ দেয়, অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামাজ কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা:)-এর আনুগত্য করে.......।’’ (চলবে)