বর্ষপরিক্রমায় আবারও আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে আত্মোৎসর্গ ও ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল পবিত্র ঈদুল আজহা। আরবী পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতিবছর ১০ জিলহজ্জ বিশ্ব মুসলিম পশু কুরবানির মাধ্যমে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেন। বস্তুত, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য, রবের প্রকৃত সন্তুষ্টি ও মানবকল্যাণে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগই ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা। বস্তুত এ আনন্দ ভোগের নয়; বরং ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের। পবিত্র ঈদুল আজহা আমাদেরকে এ শিক্ষা দেয় যে, প্রকৃত সুখ আর আনন্দের উৎস প্রাচুর্যে বা সম্পদে নয় বরং ত্যাগ ও কুরবানির মধ্যেই রয়েছে অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। তাই ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা ধারণ করে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তার যথাযথ প্রতিফলন ঘটাতে হবে। তাহলেই সফল ও স্বার্থক হয়ে উঠবে মানুষের ইহলৌকিক ও পরলৌকিক জীবন।
মূলত, ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছর ১০ জিলহজ ঈদুল আজহা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে হাজির হয় আনন্দ সওগাত ও ত্যাগের উজ্জ্বল মহিমা নিয়ে। এ মর্মে পবিত্র কালামে হাকীমে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘তোমার প্রতিপালকের জন্য নামাজ পড় এবং কুরবানি কর।’ (সুরা আল কাউসার, আয়াত-২)। হাদিসে রাসূল (সা.)-এ এসেছে, সাহাবায়ে কেরাম হুজুর (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোরবানি কী? তিনি জবাবে বললেন, ‘তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের সুন্নাত।’ (ইবনে মাজা : ৩১২৫)।
ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ পালনের সঙ্গে একটি অনন্য ঐতিহাসিক পরীক্ষার ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে। আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ.)-এর মাধ্যমে এ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বস্তুত, হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর জানমাল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে নিবেদিত করেছিলেন। তিনি সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু কুরবানি করার জন্য আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে আদেশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এটি ছিল হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর জীবনের কঠিনতম অগ্নিপরীক্ষা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এমন নির্দেশের মাধ্যমে হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর আল্লাহপ্রেম, তাক্বওয়া ও নিষ্ঠা যাচাই করতে চেয়েছিলেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.), বিবি হাজেরা ও ইসমাইল (আ.) আল্লাহপ্রেম ও আত্মত্যাগের এ চরম পরীক্ষায় পরিপূর্ণভাবে সফলকাম হয়েছিলেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, ‘নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও মৃত্যু সব কিছুই বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য নিবেদিত।’ সুরা আনআম : ১৬২)। যা প্রগৈতিহাসিক কাল থেকেই মানবসভ্যতায় অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।
মূলত মুসলিম উম্মাহ সে বিরল ও ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণ করে প্রতিবছর ঈদুল আজহা উদযাপন করে থাকে। জিলহজ মাসের দশ তারিখে জামায়াতে ঈদুল আজহার নামাজ সমাপনের পর সামর্থবান মুসলমানরা গরু, ছাগল, ভেড়া, উট বা দুম্বা প্রভৃতি পশু কুরবানি করেন। বিত্তশালী মুসলমানরা গরিব-মিসকিনদের সম্পদের অনুপাতে নির্ধারিত পরিমাণ জাকাত দিয়ে থাকেন। ঈদের দিন গরীব, অনাথ-ইয়াতিমদের আপন দুঃখ-অভাব সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে যায়। এ পবিত্র ঈদ উপলক্ষে মুসলিম জাতি শুধু আনন্দ উপভোগ করে না বরং দীন-দুঃখীদের নির্দিষ্ট পরিমাণ কুরবানির গোশত, অকাতরে অন্ন ও অর্থ দান করে প্রচুর পুণ্য অর্জন করে। সমাজের অসহায় দুঃখীদের মন সেদিন আনন্দে আহ্লাদিত হতে থাকে।
মোমিন জীবনে আল্লাহ এবং তার নির্দেশকে সর্বাগ্রে স্থান দেওয়ার শিক্ষা রয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহার মধ্যে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির জন্য জীবনের প্রিয়তম বস্তুকে হারাতে হলেও তা থেকে পিছিয়ে যাওয়া যাবে না-এ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে কুরবানির মাধ্যমে। এ মহান আত্মত্যাগের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই মুসলিম উম্মাহর মাঝে কুরবানির প্রচলন হয়। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ তথা আল্লাহ প্রেম বিরোধী রিপুগুলোকে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ ও দমন করার শিক্ষা রয়েছে এ কুরবানিতে। প্রতিবছর ঈদুল আজহা মুসলিম জাতির ঈমানী দুর্বলতা, চারিত্রিক কলুষতা দূর করে ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জল ঈমানী শক্তিকে বলিয়ান ও মজবুত করে। মুসলমান জাতি এ কুরবানির মাধ্যমে সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার দীক্ষা গ্রহণ করে, সমাজে থেকে অসত্য, অন্যায়, দুর্নীতি ও অশান্তি দূর করার জন্য নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়ার প্রেরণা লাভ করে।
ঈদুল আজহা মুসলমানদের জাতীয় জীবনে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। লোভ-লালসায় জর্জরিত এ মোহময় পৃথিবীতে ত্যাগের সুমহান আদর্শে উজ্জীবিত হতে না পারলে কেউ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবে না। কুরবানির মহান স্মৃতি মানুষের মনে ত্যাগের মহান স্পৃহাকে নবরূপে জাগ্রত করে তোলে। প্রকৃতপক্ষে কুরবানির শিক্ষা এবং তাৎপর্য ও ত্যাগ মানুষের মন থেকে পশু প্রবৃত্তির বিনাশ সাধন করে এবং বৃহত্তর মানবপ্রেমের শিক্ষায় উজ্জীবিত করে। ঈদুল আজহার তাৎপর্য ও কুরবানির মাহাত্ম্যের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না, সে যেন ঈদগাহের কাছে না আসে।’ (ইবনে মাজা : ৩১২৩ )। মূলত, এটি একটি আবশ্যকীয় তথা ওয়াজিব ইবাদাত।
মূলত, নিজের পশুপ্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপই পশু কুরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার তাকওয়ার পরীক্ষা গ্রহণ করেন। এ পরীক্ষায় যারা কৃতকার্য হোন আল্লাহ তাদেরকে ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আল্লাহ বলেন, ‘কুরবানির পশুর রক্ত, গোশত কোন কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে কেবল তোমাদের তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি’ (সুরা হজ্জ, আয়াত-৩৭)। তাই কুরবানির শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আত্মগঠন ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আর্ত-মানবতার মুক্তির জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
মূলত, পবিত্র ‘জিলহজ্ব’ মাস এক মহামহিমান্বিত ও বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসেই মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ পালনার্থে নিজ পুত্র হযরত ঈসমাইল (আ.)কে কুরবানি করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর আদর্শ অনুসরণেই মুসলিম উম্মাহ দিবসটিকে পবিত্র ঈদুল আজহা হিসাবে পালন করে আসছে। তিনি মহিমান্বিত এই মাসে প্রিয় পুত্র ঈসমাঈল (আ.)কে কুরবানি করতে গিয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে যে ত্যাগের নজরানা পেশ করেছিলেন তা শত-সহস্র বছর পরেও মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত আছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।
বস্তুত, জাগতিক লোভ-লালসা ও কামনা-বাসনার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে পশু প্রবৃত্তির উপর বিজয় অর্জনই ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা। অন্যায়-অসত্য, অনাচার-পাপাচার, হিংসা-বিদ্বেষ, জুলুম-নির্যাতন, বিভেদ-বিসংবাদ বন্ধ করে সমাজ-রাষ্ট্রে সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবজাতির প্রকৃত কল্যাণ সাধন করা পবিত্র ঈদুল আজহার উদ্দেশ্য। কুরবানি হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণময় নিদর্শন। তাই আল্লাহর দেয়া কল্যাণ আমাদেরকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে কুরবানির ত্যাগের মহিমাকে সমুজ্জ্বল করে তুলতে হবে।
দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর এক মহাক্রান্তিকালে এবারের ঈদুল আজহা পালিত হতে যাচ্ছে। আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীশক্তির পতন হলেও পরিপূর্ণ বিজয় এখনো আসেনি বরং পতিতদের প্রতিভূরা দেশকে অস্থিতিশীল করে অর্জিত বিজয় বিতর্কিত, নস্যাৎ ও অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য নানাবিধ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। দেশ ও জাতি যখন ঈদুল আজহার উদযাপনের জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছে, তখন তখন ফ্যাসিবাদীদের দোসররা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সঙ্গত কারণেই দেশে এখনো লাগামহীন চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। সরকারি কর্মচারীদের অনায্য দাবি আদায়ের কথিত আন্দোলনে পুরো জনপ্রশাসনই স্থবির হয়ে পড়েছে। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি আগের তুলনায় ইতিবাচক হলেও পুরোপুরি স্বস্তিদায়ক নয়। স্বৈরাচারের পতনের পর অর্থনীতিতে গতি ফিরে আসলেও এখনো তা মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নিকট অতীতে দেশ থেকে অবাধে অর্থপাচার করা হলেও তা ফিরিয়ে আনা যায়নি। খেলাপি ঋণের পাহাড় জমলেও এক্ষেত্রে আহামরী কোন অর্জন নেই। বিগত স্বৈরাচারি আমলের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ উম্মুক্ত রাখায় অবৈধ উপার্জনকারীরা অতিমাত্রায় বেপরোয় হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এসব কালো টাকার মালিকদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই। এসব কালো টাকার অপব্যবহার করেই পতিতরা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। মূলত, অতীতে অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়া ও সুশাসনের অভাবেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে এজন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় অর্জিত বিজয়ের সুফল পুরোপুরি ঘরে উঠবে না। ঈদ আনন্দঘন হবে না বরং ব্যর্থ হবে ঈদুল আজহার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
মুসলিম উম্মাহ যখন ঈদুল আজহা যখন উদযাপনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তখন ফিলিস্তিনের গাজায় জয়নবাদী দখলদার ইহুদী বাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত মজলুম মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে গাজার রাজপথ। কিন্তু জাতিসংঘ ও ওআইসি সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ বিষয়ে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। তারা মাঝে মাঝে কিছু চটকদার কথা বললেও তা তাদের কথামালার ফুলঝুড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছে। ফলে পুরো গাজা নগরী এখন ধ্বসের নগরী ও মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। যা হালাকু খানের বাগদাদ ধ্বংসের নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতাকে হার মানিয়েছে। কিন্তু বিশ^ সম্প্রদায়ের মজলুম ফিলিস্তিনীদের বাঁচাতে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই বরং সবকিছুই রয়েছে কথামালার ফুলঝঁড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফলে গাজা নগরী এখন পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়তই প্রলম্বিত হচ্ছে মজলুম গাজাবাসীর লাশের মিছিল। স্বজনহারাদের আর্তনাদে পুরো গাজা এখন আহাজারীর নগরীতে পরিণত হয়েছে। ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভূগছেন নিরন্ন গাজাবাসীরা। এমতাবস্থায় মজলুম ফিলিস্তিনীদের পাশে দাঁড়াতে বিশ^ মুসলিমকে এক প্লাটফরমে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যথায় জায়নবাদী বর্বরতা থামানো যাবে না। শান্তি ফিরে আসবে না মধ্যপ্রাচ্যে।
দেশ ও জাতি যখন ঈদুল আজহা উদযাপনে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তখন দেশে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি করা হচ্ছে। সংস্কার, নির্বাচন ও পতিত স্বৈরাচারের বিচার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পর বিরোধী অবস্থান নেওয়ার কারণে ক্রমেই পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। একই সাথে আমাদের নিকট প্রতিবেশী দেশ, যারা আমাদের দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হত্যা ও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলো তারাও আমাদের দেশে নির্বাচন নিয়ে কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন দিতে শুরু করেছে। অথচ তারাই এদেশে গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনী সংস্কৃতি ধ্বংসের মোক্ষম ভূমিকা পালন করেছিলো। তারা এখন বাংলাদেশে অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচন দাবি করলেও বিগত ৩ টি একদলীয় নির্বাচনের শুধু সমর্থকই নয়; বরং প্রকাশ্য কুশীলবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলো। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের বৃহত প্রতিবেশী যা চায় তার মধ্যে আমাদের কোন কল্যাণ নেই বরং তারা নিজেদের স্বার্থেই এদেশে একটি আজ্ঞাবাহী সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যই এসব তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তাই এসব অপতৎরতা রোধে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।
একথা স্মরণ রাখা দরকার যে, শুধুমাত্র ক্ষমতার হাতবদল বা একটি দায়সারা নির্বাচন করার জন্য আগস্ট বিপ্লব হয়নি বা আমাদের নতুন প্রজন্ম রাজপথে বুকের তাজা রক্ষ ঢেলে দেয়নি বরং রাষ্ট্রের সকল ক্ষেতেই ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তাই যেনতেনভাবে দায়সারা গোছের নির্বাচন করলেই আমাদের সমস্যা শেষ হবে না বরং আসন্ন নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রের যত ধরনের সংস্কার করা দরকার সবকিছুই করতে হবে। আর পতিত স্বৈরাচারের বিচার করতে না পারলে দেশে নির্বাচন অবাধ করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না। তাই আসন্ন নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পতিতদের দৃশ্যমান হওয়ার পর অতিদ্রুততার সাথে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর জরুরি।
দেশ ও জাতির এমন ক্রান্তিকালে ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা ধারণ করে দেশ জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে সকল বিভেদ ও বৈরিতা একদফায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এক্ষেত্রে কোন কিছুই আমাদের প্রতিবন্ধক নয় বরং সদিচ্ছায় এক্ষেত্রে মূখ্য। সবার আগে রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও গণহত্যার কুশীলবদের বিচারকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ বের করতে পারলেই পবিত্র ঈদুল আজহা সর্বজনীন ও আনন্দঘন হয়ে উঠবে অর্থবহ। তাই ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জল এবারের ঈদ যাতে ব্যক্তি কেন্দ্রীক বা গোষ্ঠী কেন্দ্রীক না হয়ে সর্বজনীন হয়ে ওঠে এবং আসন্ন ঈদুল আজহার শিক্ষা যাতে জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রতিফলন ঘটে সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া দরকার। অন্যথায় ঈদ জাতীয় জীবনে অর্থবহ হয়ে উঠবে না।