॥ এ্যাডভোকেট আবু হাসিন ॥
‘বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী’ একটি আধাসামরিক বাহিনী। বাহিনীটি দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও স্থাপনার নিরাপত্তা, মোবাইলকোর্ট পরিচালনা, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার ও অন্যান্য বাহিনীকে সহায়তা প্রদান করে। অঙ্গীভুত আনসার এবং ভিডিপি সদস্য ও ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়ে বাংলাদেশ আনসার বাহিনী গঠিত। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, এ বাহিনীর সদস্যরা দেশ ও জাতির কল্যাণে ঐতিহাসিক ও অসামান্য অবদান রাখলেও রাষ্ট্র কোন সময়ই তাদেরকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করেনি।
একথা কারো অজানা নয় যে, বাহিনীর সফলতার স্বীকৃতি হিসাবে ১৯৯৮ সালে সরকার এ বাহিনীকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা প্রদান করে। ইতিপূর্বে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি) নামে আনসার বাহিনীর নতুন একটি ইউনিট গঠন করা হয়। যারা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা এবং সরকারের বিশেষ বিশেষ কাজে নিয়োজিত থাকে। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান আনসার আইন দ্বারা আনসার বাহিনী পূর্ব পাকিস্তান আনসার হিসাবে গঠিত এবং ১৯৪৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, আনসারের বেশির ভাগ সদস্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তি সংগ্রামে যোগদান করেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ আইন দ্বারা আনসার বাহিনী আবার পুনর্গঠিত হয়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকার আনসার বাহিনীর ভূমিকাকে গুরুত্ব দিয়ে আনসার বাহিনীকে জনগণের প্রতিরক্ষা বাহিনী হিসেবে মনোনীত করেন।
আনসার বাহিনীর গৌরবোজ্জল ইতিহাস রয়েছে। দেশ জাতির যেকোন ক্রান্তিকালে এ বাহিনী অসামান্য ও ঐতিহাসি ভূমিকা রেখেছে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তেও আনসার বাহিনী রেখেছে উল্লেখযোগ্য অবদান। মহান ভাষা আন্দোলনে ময়মনসিংহের আনসার প্লাটুন কমান্ডার আব্দুল জব্বার শহিদ হন। স্বাধীনতা যুদ্ধেও এ বাহিনী বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণকালে আনসার প্লাটুন কমান্ডার ইয়াদ আলীর সাথে ১২ জন বীর আনসার সদস্য ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করেন।
মূলত, ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর ১৯৪৮ সালে উপমহাদেশে আনসার বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছেন আনসার বাহিনীর সদস্যরা। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় দেশের সীমান্ত ফাঁড়িগুলোতে তৎকালীন ইপি-আর-এর সাথে আনসার বাহিনীকে বিওপি প্রতিরক্ষা নিয়োজিত করা হয়। ১৯৭০ সালের প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড়ে আনসার বাহিনী ত্রাণ ও পূনর্বাসন কাজে দায়িত্ব পালন করে। মহান ভাষা আন্দোলনের সময়, ময়মনসিংহের আনসার প্লাটুন কমান্ডার আব্দুল জব্বার শহীদ হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৯ জন কর্মকর্তা, ৩ জন কর্মচারী ও ৬৫৮ জন আনসার সদস্য শহীদ হন। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃত স্বরূপ এ বাহিনীর ১ জন সদস্য বীর বিক্রম এবং ২ জন সদস্য বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আইন প্রয়োগ ও সংরক্ষণের জন্য ভিডিপি (গ্রাম প্রতিরক্ষা দল) ১৯৭৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কর্তৃক প্রণীত সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বাংলাদেশ আনসার বাহিনীর সাথে একই প্রশাসনিক কাঠামোর অধীনে আসে। বর্তমানে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিনটি শাখার (আনসার, ব্যাটালিয়ন আনসার, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দল) একটি। যা দেশের গ্রামীন জনগোষ্ঠীর মধ্যে শৃংখলা উন্নয়ন ও নিরাপত্তামূলক কজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
১৯৭৬ সালে ভিডিপি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ বাহিনী হাঁটি হাঁটি পা পা করে বিস্তৃত হয়েছে। গ্রাম প্রতিরক্ষা তৃণমূল পর্যায়ে প্রায় ৬০ লক্ষ ভিডিপি টিডিপি সদস্য রয়েছে। যারা মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হলে, নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক সক্ষমতা, বয়স সীমা ঠিক থাকতে হবে। এ প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হলো, সদস্যদের দক্ষ করে তোলা যাতে তারা স্থানীয়ভাবে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা উন্নয়নমূলক কাজে সহায়তা এবং জরুরী প্রয়োজনে দায়িত্ব পালন করতে পারে। শুধু তাই নয় নির্বাচিত সদস্যদের সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রাপ্ত তথ্যমতে, তৃণমূল পর্যায়ে প্রায় ৬০ লাখ ভিডিপি-টিডিপি সদস্য রয়েছেন। এ তৃণমূল পর্যায়ে এদেরকে সঠিক ভাবে দিক নির্দেশনা দেওয়ার দায়িত্ব পরে একজন ইউনিয় ও ওয়ার্ড দলনেতা-দলনেত্রীদের উপরে। তারা ভিডিপির নেতা হিসেবে পাঠ পর্যায়ে কাজ করে এবং বাহিনীর নীতিমালা ও (ভিডিপি) সদস্যদের সংগঠিত ও নির্দেশনা প্রদান করা এবং স্থানীয় পর্যায়ে শান্তি-শৃংখলা রক্ষা করার গুরুদায়িত্ব তারা পালন করে থাকেন।
ভিডিপি ও ওয়ার্ড দলনেতা-দলনেত্রীদের প্রধান দায়িত্ব ও কাজ হলো-
১. সংগঠন ও নির্দেশনা : নিজের ওয়ার্ডে ভিডিপি সদস্যদের সংগঠিত করা এবং তাদের দলীয় কার্যক্রম যেমন প্রশিক্ষণ, সভা বা অন্যান্য কার্যক্রমে অংশগ্রহনে উৎসাহিত করা। ২. স্থানীয় পর্যায়ে বাহিনীর বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্থবায়ন করা এবং সদস্যদের সুসংগঠিত করা। ৩. শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় সহায়তা : স্থানীয় শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় আনসার বাহিনীর সদস্যদে নিয়ে কাজ করা এবং প্রয়োজনে পুলিশ ও প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করা। ৪. বাংলাদেশের অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, ইউনিয়ন ও পৌরসভা সহ যে কোন নির্বাচন ও শারদীয় দূর্গার্পূজায় সুষ্টভাবে সম্পূর্ণ করতে নিজেদেরকে নিয়জিত রাখা এবং প্রয়োজনে প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে সহায়তা করা। ৫. সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধ : বাল্যবিবাহ রোধ, মাদক নির্মূল এবং অন্যান্য সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা। ৬. উন্নয়নমূলক কাজে সহায়তা : স্থানীয় উন্নয়নমূলক কাজে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী উদ্দ্যোগকে সমর্থন জানানো। ৭. প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিঃ সদস্যদের ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা, যাতে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ৮. নীতিমালা বাস্থবায়ন : আনসার ও ভিডিপি বাহিনীর প্রনিত নীতিমালা ও নির্দেশনাবলী ওয়ার্ড পর্যায়ে কার্যকর করা এবং বাহিনীর ভাবমূর্তি রক্ষা করা। ৯. সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা : বাহিনীর কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সাথে ওয়ার্ডে সদস্যদের যোগাযোগ স্থাপন করা এবং তাদের মধ্যে সুস্পর্ক বজায় রাখা।
একথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর তৃণমূলকে শক্তিশালী করা, দেশের আপদকালীন সময়ে তৃণমূলকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো এবং বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জল করার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড দলনেতা- দলনেত্রীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সারাদেশে প্রায় ১৬ হাজার ১শ ১২ জন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড দলনেতা দলনেত্রী আছেন, যারা এমন অতিগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসতে পারে তাদের এ দায়িত্ব পালনে কত টাকা বেতন প্রদান করা হয়? মূলত, তাদেরকে কোন বেতন দেয়া হয় না বরং তাদেরকে সম্মানী ভাতা প্রদান করা হয়। যার পরিমাণ অতিসামান্য। মাত্র মাসিক ৩,০০০/- তিন হাজার টাকা দিয়ে তারা এমন গুরুদায়িত্বগুলো পালন করে থাকেন। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে সামান্য কিছু টাকা যা বৈষম্যমূলক বলে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড দলনেতা-দলনেত্রীগণ দাবি করে আসছেন। এ বৈষম্য দূর করার জন্য ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে সাড়া বাংলাদেশ থেকে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড দলনেতা-দলনেত্রী চাকুরী জাতীয়করণের এক দফা এক দাবি আদায়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনে সকল ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড দলনেতা-দলনেত্রীগণের পক্ষ থেকে নি¤েœাক্ত দাবি জানানো হয়-
১। ভিডিপি আইন ১৯৯৫ পুন:সংস্কারের মাধ্যমে স্বেচ্ছাশ্রম, ভাতা ও পাঁচ বছরের জন্য অস্থায়ী নিয়োগ নীতিমালা বাতিল করে সকল ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড দলনেতা-দলনেত্রীদের স্থায়ীকরণ/ জাতীয়করণ করতে হবে।
২। সকল ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড দলনেতা-দলনেত্রীদের ১৬ তম গ্রেডে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে স্থায়ীকরণ/জাতীয়করণ করা সহ জাতীয়করণ প্রক্রিয়া চলমান অবস্থায়, যে সকল দলনেতা দলনেত্রীগণ চাকুরীর বয়স সীমা শেষে অবসরে যাবেন, তাদেরকে এককালীন ৫,০০,০০০/ (পাঁচ লক্ষ) টাকা নগদ প্রদান করতে হবে।
৩। যতদিন এ বাহিনীর অন্য সকল স্থায়ীসদস্যদের ন্যায় দলনেতা- দলনেত্রীদের সাথে বৈষম্য ও পুন:সংস্কার না করা হয় ততদিন পর্যন্ত ভাতা হিসাবে নয় বেতন হিসাবে সর্বনি¤œ ১০,০০০/- (দশ হাজার) টাকা, ২ (দুই) ইউনিট রেশন, ২(দুই) টি ঈদ উৎসব বোনাস, বৈশাখী ভাতা, গ্রাম প্রশিক্ষণে দলনেতা- দলনেত্রীদের সম্মানীভাতা বৃদ্ধি, চিকিৎসাভাতা ও সন্তানদের শিক্ষা ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। ২০১০ সালের নিয়োগ নীতিমালা বাতিল করে, পূর্বের ন্যায় (১৯৭৬-২০০৬) যোগ্যতাসম্পূর্ণ দলনেতা- দলনেত্রী হতে শতভাগ, উপজেলা/থানা প্রশিক্ষক/ প্রশিক্ষিকা নিয়োগ প্রদান করা। একই সাথে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সকল প্রকার ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে যোগ্যতাসম্পূর্ণ দলনেতা-দলনেত্রী হতে শতভাগ নিয়োগ প্রদান সহ দলনেতা-দলনেত্রীদের বয়স সীমা ৪০ (চল্লিশ) বছর পর্যন্ত শিথিল করতে হবে।
৫। দলনেতা-দলনেত্রীদের হয়রানি বন্ধ করা এবং ৫ (পাঁচ) বছরের জন্য নিয়োগ নীতিমালা স্থগিত করত: দলনেতা-দলনেত্রী নিয়োগ ও অব্যাহতী নীতিমালা ২০২৪ বাতিল করতে হবে। ভিডিপি-টিডিপিকে নিয়ে কাঠামোগত ও যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে আধুনিক বাহিনীতে রুপান্তরিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে, সকল সরকারি জরিপের দায়িত্ব ভিডিপি-টিডিপিকে দিতে হবে এবং জরিপের বরাদ্দকৃত অর্থ দলনেতা- দলনেত্রী ও সদস্যদের মধ্যে প্রদান করতে হবে। জরিপের ধরন যেমন- আদমশুমারি, গৃহগণনা, টিকাদান কর্মসূচি, কৃষি, মৎস, ভোটার হালনাগাদসহ ইত্যাদি জরিপ।
৬। আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক-এর শেয়ারের লভ্যাংশ প্রদান সহ বিনা জামানতে সুদ মক্ত লোন দেয়ার ব্যবস্থা এবং আনসার-ভিডিপি ব্যাংক কে আধুনিকায়ণ করে বাণিজ্যিক ব্যাংকে রূপান্তরিত করার দাবি জানানো। সে সাথে ভিডিপি দলনেতা-দলনেত্রী ন্যায় টিডিপি ওয়ার্ড দলনেতা-দলনেত্রীদের পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনের কার্যালয় কক্ষ বরাদ্দ দেয়ার ব্যবস্থা করার দাবি তারা জানান।
৭। সকল ক্ষেত্রে পোশাকের বৈষম্য দূরীকরণকল্পে ভিডিপি- টিডিপি সদস্যদের নিজস্ব পোষাক পরিধান করে ডিউটি করার অনুমোদনের দাবি জানান। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচন ও পূজা সহ সকল প্রকার ডিউটিতে সদস্যদের দৈনিক ৯৫০/ (নয় শত পঞ্চাশ) টাকা এবং পিসি এপিসিদের ১০৫০/ (এক হাজার পঞ্চাশ) টাকাসহ আনুষাঙ্গিক ভাতা প্রদানের দাবি জানান।
সর্বশেষ তাদের স্মারকলিপিতে মহাপরিচালক মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন করেন, বর্তমান দেশের দিনমজুর প্রতিদিন পারিশ্রমিক পান ৬০০/(ছয় শত) টাকা। সেখানে তারা পান ১০০ (একশত) টাকা। নেই কোন রেশনের ব্যবস্থা ও উৎসব ভাতা। এক কথায় তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে বিশে^র বুকে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের এ দেশ। ১৯৭৬ সালে ভিডিপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গ্রামীন আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য। সময় পারি দিয়ে এখন চলছে ২০২৫ সাল। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী দেশের শান্তি শৃংখলা উন্নয়নের জন্য সরকার বদ্ধপরিকর ও পরিস্থিতি অনুযায়ী যোগপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। (ভিডিপি) বাংলদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি অংশ, যারা আইন-শিংঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তায় সার্বিক অবস্থায় সরকারকে সহযোগিতা করে, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচন ও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে সহায়তা, সামাজিক উন্নয়ন ও দূর্যোগ মোকাবেলায় সরকারকে সহায়তা পাশাপাশি, চুরি, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকা- দমনে ভূমিকা রাখে। এমন জনবহুল একটি দেশে তাদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদেরকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে অর্থাৎ কাজের গুরুত্ব, মূল্য, অবস্থা যত্ম সহকারে নির্ণয়, তাদের কার্যকারিতা যাচাই, তারা মানগত ভাবে কতটা কার্যকর বা প্রয়োজনীয় তার ফলাফল নির্ণয় করে, যুগপোযোগী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো সরকার সু-নজরে দেখবেন আশা রাখছি।
মূলত, ভিডিপি ও টিডিপি’র সদস্য সহ দলনেতা ও দলনেত্রীরা দেশ ও জাতির যেকোন ক্রান্তিকালে অসামান্য অবদান রাখলেও কোন সরকারই তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করেনি। তাই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও তাদেরকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় তাদের যৌক্তিক দাবিগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সরকাকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। অন্যথায় তাদের ভাগ্যবিড়ম্বনার পরিসমাপ্তি ঘটবে না।
লেখক : আইনজীবী ও প্রাবন্ধিক।