নাছির উদ্দিন শোয়েব

মধ্যপ্রাচ্যে দখলদার ইসরাইল দিন দিন মিত্র হারাচ্ছে। শুধু মিত্র হারাচ্ছে এমনই নয়, ইসরাইলের প্রতি ক্ষোভও বাড়ছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করায় দখলকৃত ভুখণ্ডটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র। নেতানিয়াহুর খামখেয়ালির কারণে বিশ্বের কাছে একটি ঘৃণিত এবং মানবাধিকার লংঘিত দেশ হিসেবে পরিচিত পেয়েছে ইসরাইল। যে যুক্তরাস্ট্রের প্রভাবে এতদিন নিজেকে ক্ষমতাবান বলে দাবি করে এসেছিল সে মোড়ল রাষ্ট্রটির সাথেও সম্পর্ক আগের মত গভীর নেই। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতো নেতানিয়াহুকে আর অন্ধভাবে সমর্থন দিচ্ছেন না। ট্রাম্পের চাপেই গাজায় যুদ্ধ বিরতিতে বাধ্য হয়েছেন যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহু।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচারে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে এখন পর্যন্ত ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এর বেশির ভাই শিশু ও নারী। আহত হয়েছেন পৌনে দু’লাখ ফিলিস্তিনী। এ অবস্থার মধ্যে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের নিয়ে ট্রাম্পের যৌথ চাপ প্রয়োগে ইসরাইলী যুদ্ধ বিরতিতে বাধ্য হয়। এরপরও গোপনে গাজার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলী সেনাবাহিনী। এরপর থেকে ফ্রান্সসহ আরও কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৫৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা সমগ্র সদস্য দেশের প্রায় ৮১ শতাংশ। এর মধ্যে এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন ও মধ্য আমেরিকার দেশই বেশি। এর মাধ্যমে অধিকাংশ দেশই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে এসে গেল, যা নেতানিয়াহুর ইচ্ছার বাইরে।

একসময়ের মিত্র বলে পরিচিত তুরস্কও ছেড়ে দিয়েছে ইসরাইলকে। শুক্রবার গাজায় গণহত্যার অভিযোগে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সরকারের ৩৭ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে তুরস্ক। ইস্তাম্বুলের আদালতের এ পরোয়ানায় যেসব ইসরাইলী কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে: প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ, জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির, সেনাপ্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল ইআয়াল জামির, নৌবাহিনী কমান্ডার ডেভিড স্যার সালামা। তবে পরোয়ানাভুক্ত সবার নাম প্রকাশ করেনি তারা। তবে শিগগিরই তুরস্ক পরোয়ানা জারি করা অন্যদের নামও প্রকাশ করবে। তুরস্ক এ ইসরাইলী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ও ধারাবাহিকভাবে’ গাজায় ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ চালানোর অভিযোগ এনেছে।

গত মার্চে গাজা ভূখণ্ডে ‘তুর্কি-ফিলিস্তিনী মৈত্রী হাসপাতালে’ বোমাবর্ষণসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ইসরাইলী হামলায় প্রাণহানি, চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতি, অবরোধ ও গাজাবাসীর জন্য মানবিক সহায়তা আটকে দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডকে অভিযযোগের পক্ষে যুক্তি হিসেবে হাজির করেছে আঙ্কারা। এ ‘তুর্কি-ফিলিস্তিনী মৈত্রী হাসপাতালটি’ তুরস্ক বানিয়ে দিয়েছিল। দেশটি অভিযোগ করেছে যে, ইসরাইল ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে গাজায় ধারাবাহিকভাবে জাতি হত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। গাজায় তুরস্কের নির্মিত আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে হামলায় ৫০০ জন নিহত হন; ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ইসরাইলী সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে চিকিৎসার সরঞ্জাম ধ্বংস করে; গাজাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা হয়। তুরস্কের এ ঘাষণায় আরও উৎসাহ পেয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সংগঠনটি তুরস্কের এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ও প্রশংসা করেছে। হামাস বলেছে, এ ঘোষণা তুর্কি জনগণ ও তাদের নেতাদের আন্তরিক অবস্থান নিশ্চিত করে। হামাস আরও বলেছে, তুরস্ক ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সুবিচার করেছে। তুরস্কের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রায় এক বছর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে) নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। তুরস্ক সেখানেও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ইউরোপের দেশ তুরস্কের ইসরাইলের ব্যবসায়কি মিত্র বলে পরিচিতি থাকলেও সে সম্পর্ক আর এখন নেই। ইসরাইলের সঙ্গে তুরস্কের অস্ত্র কেনাবেচার চুক্তি ছিল। বিশেষ করে তুরস্কের বিশ্ববিখ্যাত ড্রোন কিনতো ইসরাইল। এই ড্রোন দিয়ে যখন গাজায় হামলা চালাতে সহায়তা নিয়েছে, এরপর থেকে তুরস্ক ইসরাইলের কাছে ড্রোন বিক্রি থেকে ফিরে আসতে শুরু করে।

গত ১৩ জুন বিনা উসকানিতে ইরানে হামলা ভয়াবহ হামলা শুরু করে ইসরাইল। হামলার প্রথম দিনই ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল, পরমাণু বিজ্ঞানী ও অনেক বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। জবাবে ইসরাইলে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে যোগ দেয়। ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। তবে ১২ দিনের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলই মূলত পরাজিত হয়েছে। ইরানের সেনাবাহিনীর সমন্বয়বিষয়ক উপপ্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল হাবিবুল্লাহ সাইয়ারি বলেছেন, ইরানি সশস্ত্র বাহিনী ১২ দিনের আরোপিত যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে পরাজিত করেছে। ইসরাইল এখন ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো অবস্থায় নেই। ১২ দিনের আরোপিত যুদ্ধের প্রসঙ্গে ইরানি এক কর্মকর্তা বলেছেন, যুদ্ধের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র তার ক্রীড়নককে ইরানের বিরুদ্ধে পাঠায়, কিন্তু জায়নিস্ট শত্রু একা কিছুই করতে পারেনি। শেষে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই যুদ্ধে নেমেছিল-তবু পরাজয় বরণ করতে হয়।

এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের বিরুদ্ধে অঘোষিত ও উসকানিমূলক হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশ নেয়া এবং ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালানোর ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত। এর জবাবে ইরানি সশস্ত্র বাহিনী অধিকৃত ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডের বিভিন্ন কৌশলগত স্থাপনা ও কাতারের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটি-যা পশ্চিম এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি-লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালায়।

শুধু ইরানে হামলা নয়, গত সেপ্টেম্বরে মাত্র ৭২ ঘণ্টায় কাতার, লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনে হামলা চারায় ইসরাইল। গত ৮ সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস নেতাদের একটি বৈঠক লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। ওই বৈঠকটি গাজা যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করার জন্য আহ্বান করা হয়েছিল। হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ছয়জন- যাদের মধ্যে ছিলেন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা খালিল আল-হায়্যার ছেলে, তার কার্যালয়ের পরিচালক, তিনজন দেহরক্ষী এবং একজন কাতারি নিরাপত্তাকর্মী। তবে শীর্ষ নেতারা বেঁচে গেছেন। কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরাইলী হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানায় সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। সৌদি আরব একে ‘নিষ্ঠুর ইসরাইলী আগ্রাসন’ এবং ‘ভ্রাতৃপ্রতিম কাতারের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে আখ্যা দিয়েছে। দেশটি সতর্ক করে বলেছে, ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন ও সব ধরনের বৈশ্বিক নীতিমালা অমান্য করছে। তবে কাতারের দোহায় বোমা হামলার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন নেতানিয়াহু। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে যুক্তরাষ্ট্রের ওভাল অফিস থেকে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফোন করেন এবং নেতানিয়াহু টেলিফোনে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। হোয়াইট হাউস বলেছে, নেতানিয়াহু আশ্বস্ত করেছেন, ইসরাইল ভবিষ্যতে আর কখনো এই ধরনের আক্রমণ পরিচালনা করবে না।

গাজায় হামলার কারণে ইসরাইলী ক্রীড়াবিদদের ভিসা দেয়নি ইন্দোনেশিয়া। কারণ গাজায় ইসরাইলী হামলার প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন না করার ইন্দোনেশিয়ার নীতির সাথে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ সিদ্ধান্তের কারণে তারা জাকার্তায় বিশ্ব জিমন্যাস্টিকস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এর আগে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে ইসরাইলকে নিষিদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন আহ্বান জানায়। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এ আহ্বানের ক্ষেত্রে অন্যতম নেতা, যিনি ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে এমন আহ্বান জানিয়েছেন।

এছাড়াও নেতানিয়াহু নিজের দেশেই দুর্নীতি মামলায় প্রচন্ড চাপে আছেন। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩টি দুর্নীতির মামলা চলছে। তার বিরুদ্ধে ঘুষ, জালিয়াতি ও আস্থাভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে তার ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। অন্যদিকে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার নিরাপত্তা ব্যর্থতা নিয়েও বিপাকে রয়েছেন নেতানিয়াহু। সম্প্রতি ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত রায় দেন যে, তদন্ত বিলম্বের কোনো যৌক্তিক কারণ আর নেই। ২০২৬ সালে ইসারইলের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত নেতা নিয়াহু। নির্বাচনে হারলে নিশ্চত দুর্ণীতি মামলায় জেলে যেতে হবে। গাজায় যুদ্ধবিরতির কারণে ব্যাপক চাপে রয়েছেন। সরকারে নিজ জোটের অনেক মিত্রই এখন তার বিরোধিতা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতা হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে তার। নেতানিয়াহু পিঠ বাঁচাতে আগাম নির্বাচনের দিকে নজর দিচ্ছেন। বর্তমানে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে নেতানিয়াহুর কট্টরপন্থী জোট সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। পার্লামেন্টে ১২০ আসনের ঠিক অর্ধেক-৬০ আসন রয়েছে তাদের। ফলে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আনা হলে তা থেকে বাঁচার সুযোগ কম।

এরই মধ্যে জোট থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি দিয়ে রেখেছেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামান বেন-গভির। আরেক কট্টরপন্থী দল সেফারডিক শাস পার্টির ১১ আইনপ্রণেতা সরকার থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। এর আগে ইউনাইটেড তোরাহ জুদাইসম নামে আরেকটি জোট নিজেদের সরকার ও জোট-দুটি থেকেই সরিয়ে নিয়েছে। নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অমিত সেগালসহ কয়েকজন সাংবাদিকের তথ্য অনুযায়ী, এমন পরিস্থিতিতে ২০২৬ সালের জুন মাসে আগাম নির্বাচনের আয়োজন করতে পারেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। তবে এর আগপর্যন্ত সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য জোটসঙ্গীদের সঙ্গে নেতানিয়াহুকে কোনো না কোনো কূটকৌশল খাটিয়ে চলতে হবে। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন মামলা চলছে। এরপরও তাকেই আবার দলের প্রধান নির্বাচিত করতে যাচ্ছে লিকুদ পার্টি। কারণ, দলটির হাতে বিকল্প কোনো প্রার্থী নেই। যদিও গাজা ইস্যুতে ইসরাইলের ভেতরে লিকুদ পার্টি নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, ইসরাইলের অবস্থা কি তবে ‘দক্ষিণ আফ্রিকার’ মতো হচ্ছে? যেভাবে এক সময় রাজনৈতিক চাপ, অর্থনৈতিক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বয়কটের সম্মিলিত চাপ প্রিটোরিয়াকে বর্ণবাদ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল, ইসরাইলও কি একইভাবে কোণঠাসা হবে? ইসরাইলকে কি দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কোণঠাসা করা সম্ভব? না কি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডানপন্থী সরকার সে দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না করেই এ কূটনৈতিক ঝড়ের সম্মুখীন হতে পারবে? সম্ভবত নেতানিয়াহু আর যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় নামতে পারবে না। কারণ মুসলিম বিশ্ব এখন আর আগের অবস্থায় নেই। গাজা দখল এবং ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করা নিয়ে আরবলীগ এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) বর্তমানে শক্ত অবস্থানে আছে। ৫৭ সদস্যের ওআইসি ও আরবলীগের যৌথ প্রচেষ্টায় যুক্ত রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থায় দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা দখলদার ইসরাইলকে যুদ্ধ থামাতে বাধ্য করেছে। বর্তমানে গাজা পুনর্গঠনের কাজ নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে। এ অবস্থায় ক্রমে গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে ইসরাইলী বাহিনীকে সরে যেতে বাধ্য করা হবে। এছাড়াও আইসিজে ও তুরস্কের গ্রেফতারি পরোয়ানায় বাড়তি চাপ রয়েছে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।