এন্ড্রু রথ
শুক্রবার সকালে ইরানে ইসরাইলী বিমান হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দ্রুতই বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর এ সিদ্ধান্ত থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।
এই একতরফা হামলা ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টার ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়। পাশাপাশি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রের সন্ধান থেকে বিরত রাখতে চুক্তি নিয়ে আলোচনার ট্রাম্পের প্রচেষ্টা প্রায় নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ করে দিয়েছে।
এ হামলা সম্ভবত ইরানকে প্রতিশোধের দিকে পরিচালিত করবে, যা ইসরাইল এবং ইরানের মধ্যে একটি বৃহত্তর যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। তেহরানে হামলার ধুলো উড়তে থাকা অবস্থায়ই ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা ইসরাইলী হামলাকে “একতরফা” পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন এবং তেহরানকে এই অঞ্চলে মার্কিন দূতাবাস এবং ঘাঁটির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে বলেন “শুক্রবার রাতে ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে একতরফা পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা ইরানের বিরুদ্ধে কোনও হামলায় জড়িত নই এবং আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হল এই অঞ্চলে আমেরিকান বাহিনীকে রক্ষা করা।
ওয়াশিংটনের কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকরা আশা করেছিলেন যে, ইরানের সাথে চুক্তির জন্য আমেরিকার প্রচেষ্টা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইল হামলা চালানো বন্ধ রাখবে। সোমবার এক ফোনালাপের সময় ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে ইরানে আক্রমণ না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন বলে জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। কিন্তু বুধবারের মধ্যে ট্রাম্প ইরানের কাছাকাছি মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত দূতাবাস এবং ঘাঁটিগুলি থেকে অপ্রয়োজনীয় কর্মীদের সরিয়ে নিতে শুরু করেন।
ট্রাম্প প্রশাসন যদি নেতানিয়াহুকে স্পষ্টভাবে লাল সংকেত দিত তবে ইরানে হামলা চালানোর সম্ভাবনা কম ছিল বলে মনে করেন আটলান্টিক কাউন্সিলের রফিক হারিরি সেন্টার এবং মধ্যপ্রাচ্য প্রোগ্রামের সিনিয়র পরিচালক উইলিয়াম ওয়েচসলার। “অন্তত, এটি একটি অসঙ্গত মার্কিন প্রতিক্রিয়া বলে মনে হচ্ছে” বলে মনে করেন তিনি।
বিভ্রান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে নেতানিয়াহু সরকারের ঘনিষ্ঠ একজন ইসরাইলী সংবাদকর্মী। বৃহস্পতিবার তিনি জানান যে, ইরানে হামলাগুলো ওয়াশিংটনের সাথে সম্পূর্ণ সমন্বয় করেই চালানো হবে।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ রবিবার ইরানের সাথে ষষ্ঠ দফা আলোচনার জন্য ওমানের মাস্কাটে যাওয়ার কথা ছিল, যা কূটনীতির শেষ সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছিল। আর ট্রাম্প নেতানিয়াহু সরকারকে ইরানে আক্রমণ না করার জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানানোর কয়েক ঘন্টা পরেই এই হামলা চালানো হয়। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন- ইসরাইলী আক্রমণ ইরানের সাথে আলোচনাকে “নস্যাৎ করে দেবে”।
কিন্তু, আমেরিকা ইচ্ছাকৃতভাবে ইরানের বিরুদ্ধে আসন্ন আক্রমণের ইঙ্গিত দিচ্ছে এমন জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনি উল্লেখ করেন যে, একটি হামলা ইরানকে এমন একটি চুক্তি করতে বাধ্য করতে পারে যা পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের প্রচেষ্টাকে সীমিত করবে।
এটি এখন বাস্তবতা। সমালোচকরা বলেছেন যে প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন নামে পরিচিত ইরানি পারমাণবিক চুক্তি ত্যাগ করার ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ফলে এই অঞ্চল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এই অঞ্চলে সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
কানেকটিকাটের সিনেটর ক্রিস মারফি বলেন, “এই আক্রমণটি স্পষ্টতই ইরানের সাথে ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনাকে ব্যর্থ করার জন্য করা হয়েছে” এবং এটি “আমাদের নিজস্ব মিত্রদের সহ বিশ্বশক্তিগুলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি কতটা কম সম্মান করে তার আরও একটি প্রমাণ”। তিনি আরও বলেন, “এটি ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহুর তৈরি একটি নিজস্ব বিপর্যয় এবং এখন এই অঞ্চলটি একটি নতুন, মারাত্মক সংঘাতের দিকে ঝুঁকছে।”
সিনেটর ক্রিস মারফির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, “ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহু যদি আমেরিকাকে পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য না করতেন তবে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের এত কাছাকাছি থাকত না। ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষা সফলভাবে দমাতে সম্ভাব্য চুক্তির আশায় ইউরোপ, রাশিয়া এবং চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিছনে একত্রিত হয়েছিল।”
* দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর করেছেন: তাইয়েব তালহা