DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

কলাম

মাহে রমযানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম পালন অত্যাবশ্যকীয় করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের

Default Image - DS

মুসফিকা আন্জুম নাবা

মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম পালন অত্যাবশ্যকীয় করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর অত্যাবশ্যকীয় ছিল; যেন তোমরা খোদাভীতি তথা তাকওয়া অর্জন করতে পার’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)। বস্তুত, পবিত্র মাহে রমযান একনিষ্ঠভাবে সিয়াম ও কিয়াম পালনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি, প্রশিক্ষণ, আত্মগঠন ও তাকওয়া অর্জনের মাস।

পবিত্র কুরআন ও হাদিসে আরবী শব্দ রমযান বা রামাদানের নির্দেশনামূলক ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আরবী আভিধানে শব্দটি উত্তাপ, তাপের উচ্চমাত্রা, দগ্ধ করা ও তাপদগ্ধ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। রমযানকে এসব অর্থে এজন্যই ব্যবহার করা হয়েছে যে, রমযানে সিয়াম ও কিয়াম সাধনা, সিয়াম পালনকারী সবর ও সহিষ্ণুতার অগ্নি দহনে, সংযমের উত্তাপে ষড়রিপুকে দগ্ধ করে কুপ্রবৃত্তির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন এবং নিজেকে পরিশোধিত ও পরিশীলিত মানুষরূপে গড়ে তোলার সুযোগ পান। আরবী সাওম শব্দের অর্থ বিরত থাকা। সিয়াম তার বহুবচন। শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার, কামাচার ও পাপাচার বিরত থাকার নাম সাওম। শুধুমাত্র পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত থাকার নাম সিয়াম পালন নয় বরং নিজের নফসের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে জাগতিক লোভ লালসা থেকে মুক্ত থেকে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জন রমযান ও সিয়ামের প্রকৃত শিক্ষা।

হাদিস শরীফে এ মাসের প্রথম দশকে রহমত, দ্বিতীয় দশকে মাগফিরাত ও শেষ দশককে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তাই এ মাসকে গোনাহ মাফ ও মুক্তির মাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিখ্যাত সাহাবী হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে রমযানে সিয়াম পালন করবে তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে রমযান মাসের রাত্রিতে এবাদত করবে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে কদরের রাত্রি এবাদতে কাটাবে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম)।

পবিত্র রমযান ক্ষমা লাভের মাস। এ মাস পাওয়ার পরও যারা নিজেদেরকে পুত-পবিত্র, অন্যায়-অনাচার, পাপ-পঙ্কিলতা মুক্ত করতে পারলো না রাসূল (সা.) তাদেরকে ধিক্কার দিয়ে বলেছেন, ‘ঐ ব্যক্তি ধ্বংস হোক যার কাছে রমযান মাস আসলো অথচ তার গোনাহগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারল না।’ (তিরমিযী) এ মহিমান্বিত ও মোবারক মাসেই বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল করা হয়। এ মাসে কুরআন নাযিল হয়েছিল বলেই কুরআনের বিশেষ মর্যাদা। মূলত কুরআনের বিশেষ মর্যাদার কারণেই এ মাস মহিমান্বিত ও বরকতময়। সুরা বাকারার ১৮৫ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘রমযান মাস, যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে’। এই মাসেই ‘লাইলাতুল ক্বদর’ নাম এক মহিমান্বিত রজনী রয়েছে। কালামে পাকে সে রাতকে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সুরা আল ক্বদরের আয়াত ৩ এ বলা হয়েছে, ‘ক্বদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম’।

রমযান মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। একটি হাদিসে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, রোজা ও কুরআন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমযানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে (এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে)। বায়হাকী। লেখক : শিক্ষার্থী, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ।