খালিদ বেগ

কয়েক বছর আগে টাইম ম্যাগাজিনের একজন ভারতীয় রিপোর্টার ভারতের বিশিষ্ট পণ্ডিত ও গ্রন্থকার মাওলানা ওয়াহিদ উদ্দিন খানের কাছে উপস্থিত হন এবং ইসলামে নারীর মর্যাদা বিষয়ে তার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। তিনি মাওলানা সাহেবকে সাধারণ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন এবং প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর রেকর্ড করেন।

কয়েক সপ্তাহ পর তিনি আরো কিছু ফলোআপ প্রশ্ন নিয়ে মাওলানার কাছে ফিরে আসেন। এসব ফলোআপ প্রশ্নে তিনি মূল প্রশ্নগুলোকে ভিন্ন অর্থে অনেকটা পেঁচালো ও বিকৃতভাবে উত্থাপন করেন এবং মাওলানার দেয়া জবাবগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর ওই সাংবাদিক তৃতীয়বার মাওলানার কাছে এলে তিনি বিস্মিত হয়ে তার এ কাজের উদ্দেশ্য কী তা জানতে চান। জবাবে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার অহঙ্কারের সাথে বলেন, ‘আপনার কাছে এতবার আসার কারণ হচ্ছে আমরা কোনো ভুল করতে চাই না।’

জবাবে মাওলানা সাহেব এতই সন্তুষ্ট হয়েছিলেন যে, সত্যান্বেষণে এবং নিখুঁত পেশাগত মান অর্জন করার জন্য মুসলমানদের কাছে তিনি এ ঘটনাটি একটি অনুসরণযোগ্য উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। অবশ্য ইসলামে নারীর মর্যাদাবিষয়ক নিবন্ধটি যখন চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয় তখন দেখা যায়-নিবন্ধটিতে নারীদের প্রতি ইসলামের আচরণের ব্যাপারে সচরাচর যেসব দোষারোপ করা হয়ে থাকে সেগুলোর সবই বিদ্যমান রয়েছে। টাইম ম্যাগাজিনের রিপোর্টার উল্লেখিত মুসলিম পণ্ডিত ব্যক্তিটির কাছ থেকে যত্নসহকারে যেসব উত্তর সংগ্রহ করেছিলেন তার কোনোটিই নিবন্ধটিতে স্থান পায়নি। টাইম ম্যাগাজিন হয় তো ‘প্রথমত, সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করো-এবং এরপর সেগুলোকে যত বেশি সম্ভব বিকৃত কর’ এই প্রচারণা বা রটনা নীতি অনুসরণ করতে থাকে।

আসলে এ ঘটনার পুরোটাই অত্যন্ত বিচিত্র এবং কৌতূহলউদ্দীপক। বর্তমানে টাইম বিশ্বের অত্যন্ত সফল ম্যাগাজিনগুলোর একটি। এ ম্যাগাজিনটি ইসলাম বিরোধী প্রচারণায় লিপ্ত থাকলেও মুসলিম দেশগুলোতেও এটাকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এখানকার একটি অনুচ্ছেদ বা একটি নিবন্ধের সাথে হয়তো মুসলমানদের বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু তারা এখনও পত্রিকাটিকে সাংবাদিকতার মূল আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করে। কী হচ্ছে?

‘দি নিউজ অব দ্য ডে’ : উত্তরের জন্য আমাদের শিল্প সমাজে সাংবাদিকতার বিবর্তনের বিষয়টি জানার জন্য প্রয়োজনে আমরা ব্রিটানিকায় গভীরভাবে নজর দিতে পারি। আধুনিক সাংবাদিকতা দুটি প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে শুরু হয়: ছাপাখানা এবং টেলিগ্রাফ। এ দুটি প্রযুক্তি একত্রে অবিশ্বাস্য গতিতে বিশাল দূরত্বের তথ্যসম্ভার নিয়ে সংবাদপত্র প্রকাশকে সম্ভব করে তোলে। এ ধরনের প্রথম ঘটনা ঘটে জার্মানিতে এবং অন্য ঘটনা ঘটে যুক্তরাষ্ট্রে। নেইল পোস্টম্যান, ‘Amusing our-selves to death’ বইয়ে (১৯৮৫)-এ বর্ণনা দেন।

এটা ছিল আমেরিকায় সংবাদপত্র বিষয়ক অগ্রগতি (১৮৪৪)। এর মাধ্যমে বিশাল সার্কুলেশনের দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়। গোটা বিশ্বের খবরাখবর লিখে এই পত্রিকা প্রকাশ করা হয়, যেটাকে ‘দি নিউজ অব দ্য ডে’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। নেইল পোস্টম্যান যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘কনটেক্সট ফ্রি ইনফরমেশনের ধারণার প্রতি টেলিগ্রাফ বৈধতা দিয়েছে। অর্থাৎ তথ্যমূল্য বা তথ্যের গুরুত্ব যেকোনো অনুষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত বা সংশ্লিষ্ট করার প্রয়োজন নেই। যাতে সামাজিক এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কার্যক্রমের ক্ষেত্রে তথ্য ভূমিকা রাখতে পারে। তবে কেবল এর মহানুভবতা, আগ্রহ এবং কৌতূহল সংযুক্ত করা যেতে পারে। আমাদের দৈনন্দিন সংবাদের সাথে এমন সব সমন্বিত তথ্য থাকে যা আমাদের কিছু বিষয়ে কথা বলতে অনুপ্রাণিত করে; কিন্তু কোনো অর্থবহ কার্যক্রম গ্রহণের দিকে পরিচালিত করে না।’

টেলিগ্রাফ সম্পর্কে এখানে কিছু জোরালো প্রযুক্তিগত বিতর্কের বিষয় তুলে ধরা হলো। পত্রিকাটি প্রচুর অপ্রাসঙ্গিক বা অবান্তর তথ্যের মাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন করে। পোস্টম্যান যেটা এড়িয়ে গেছেন সেটা হচ্ছে, টেলিগ্রাফ এমন একটা সমাজে বিকশিত হয় এবং প্রথম কাজ শুরু করে যেখানে ইনফরমেশন অ্যাকশন রেশিয়ো’র (Information Action Ratio) ব্যাপারে কোনো পুরস্কার দেয়া হতো না এবং সেখানে গল্পগুজব, বাজে কথা, স্ক্যান্ডাল এবং কুৎসা রটনার বিষয় নিয়ন্ত্রণে রাখার কোনো ব্যবস্থা ছিল না বরং সেখানে এসব পণ্যের জন্য অসংখ্য চমকপ্রদ বাজার রয়েছে, সমাজ যেসব কাজ যে কোনোভাবে করতে চায় টেলিগ্রাফ কেবল সেগুলোকে সহজতর করেছে। যারা এ পথ প্রদর্শন করেছেন তারাই এ মার্কেট নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। তাদের একজন হচ্ছেন জোসেফ পুলিৎজার। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিৎজার পুরস্কার হচ্ছে একজন সাংবাদিকের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক পুরস্কার। পুলিৎজার তিন বছরের মধ্যে নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের সার্কুলেশন ১৫ হাজার থেকে ২ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত করেছিলেন। এটা ছিল সে সময়ে বিশ্বের সর্বাধিক সার্কুলেশন। তিনি কিভাবে সেটা করেছিলেন? ব্রিটানিকা থেকে জানা যায়, ‘পুলিৎজার সেনসেশনালিজম ও আইডিয়ালিজমের প্রতিষ্ঠিত ফর্মুলাগুলো পুনরুজ্জীবিত করেন এবং ব্যাপকভাবে চটকদার ও তাক লাগানো পন্থায় প্রচারণা চালান। এ কাজের ক্ষেত্রে আরো একজন পথ প্রদর্শক ও অত্যন্ত সফল ব্যক্তি হলেন উইলিয়াম হেয়ার্স্ট। ব্রিটানিকার মতে, তিনি যেকোনো মূল্যে সার্কুলেশন বৃদ্ধি করা সংক্রান্ত সেনসেশনে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি সম্পূর্ণ মিথ্যা কাহিনীকেও বিশেষভাবে সাজিয়ে সংবাদ হিসেবে পরিবেশন করতেও তিনি দ্বিধা করতেন না।’ নজিরবিহীন বাণিজ্যিক সফলতা অর্জনের জন্য ‘দি পেনি প্রেস অ্যান্ড দ্য ট্যাবলয়েড’ একই ফর্মুলা ব্যবহার করে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এজেন্ডা বলবৎ করার জন্য প্রযুক্তির হাতে রয়েছে নতুন পথ। এ ক্ষেত্রে এয়ারহোস্টেস তথা বিমানবালাদের কথা বলা যায়। তাদেরকে বিমানে নিয়োগ দেয়ার পর কোনো প্রতিবন্ধকতা বা প্রশ্ন উত্থাপন ছাড়াই মুসলিম বিশ্ব এটা অনুমোদন করে নিয়েছে। পত্রিকাটিকেও অন্ধসমর্থক গোষ্ঠী ও ভক্তরা স্বাগত জানিয়েছে।

পয়সা আখবার এবং : দি পেনি প্রেস ব্রিটিশ ভারতে পয়সা আখবারকে অনুপ্রাণিত করে। গোটা মুসলিম বিশ্বে মুসলমানরা কেবল প্রিন্টিং প্রেস এবং অয়ার সার্ভিসই (এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি) অর্জন করেনি- বরং তারা তাদের সংবাদপত্রের জন্য পশ্চিমাদের কাছ থেকে সংবাদপত্রের নাম এবং দৃষ্টিভঙ্গিও গ্রহণ করেছে। অধিকন্তু তারা পশ্চিমাদের কাছ থেকে ‘সংবাদের’ সংজ্ঞা কি তাও গ্রহণ করেন। এটা বলা যায় যে, পশ্চিমাদের কাছে কিছু নতুনত্ব বা অভিনবত্ব ছাড়া সংজ্ঞা দেয়ার মতো বেশি কিছু নেই। ‘(মানুষ কুকুরকে কামড়ায়)’ অথবা ঔৎসুক্য ‘(আমরা আজকে যা জানি গতকাল তা জানতাম না।)’

ভিকটিম হচ্ছে সংবাদপত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি রিপোর্ট সঠিক হলেও যদি দেখা যায়, সেটি প্রকাশ হলে সমাজের স্বার্থহানি তথা সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাহলে সেটা প্রকাশ করা উচিত নয়। শরিয়ত কর্তৃক কোনো আইটেম নিষিদ্ধ হওয়ার প্রশ্ন দেখা দিলে সে সংক্রান্ত কোনো পণ্য বা সার্ভিসের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা যাবে না।

এসব জোরালো দাবি বা দৃঢ়প্রত্যয়ী বক্তব্যগুলো যাচাই করার জন্য বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে যেসব পত্র-পত্রিকা এবং নিউজ ম্যাগাজিন আছে সেগুলোর ওপর একবার চোখ বোলানোই যথেষ্ট। আমরা দেখতে পাই, এসব পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনগুলো মুসলমানদের খুশি করার জন্য কেবল কিছু ধর্মীয় নিবন্ধ এবং কিছু রাজনৈতিক কমেন্ট্রি প্রকাশ করে থাকে। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি ইসলামী কাঠামোর সম্পূর্ণ অনুপস্থিতির বিষয়টি উপলব্ধি করতে হলে অবশ্যই এর উদ্দেশ্য এবং দর্শনের ব্যাপারে গভীরতর প্রশ্নগুলোকে বিবেচনায় আনতে হবে। যেমন এ ইনস্টিটিউশনের আত্মা কী? কী কারণে এটা পরজীবী কীটে পরিণত হয়েছে? এর লক্ষ্য কী? ইসলামিক স্কিমে এর স্থান কোথায়? লেখালেখি এবং প্রকাশনার উদ্দেশ্য কী? সংবাদ কী সেটা কিভাবে নিরূপণ বা নির্ধারণ করা হবে? প্রিন্ট বা ছাপার উপযোগী নির্ধারণ করা হবে কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে? একটি মুসলিম সমাজে সাংবাদিকদের কী অধিকার ও দায়দায়িত্ব রয়েছে? সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কী? ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্ধশত বছরেরও আগে পাকিস্তানের গ্র্যান্ড মুফতি মোহাম্মদ শফি ‘আদাবুল আখবার’ (দি নিউজ প্রটোকল) শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি ইসলামী কাঠামো গড়ে তোলার ব্যাপারে এটা ছিল একটি ব্যতিক্রমী প্রয়াস। তিনি তার সময়ের মুসলিম পত্রপত্রিকায় এ পেশায় হালাল ও হারাম সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করার ব্যাপারকে যারা হারাম বলে মনে করতেন তাদের ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেন।

ইসলামিক ভিত্তি : এসব বিষয়ে যারা উদ্বিগ্ন, তার নিবন্ধ তাদের জন্য কিছু গাইডলাইন (দিক নির্দেশনা) প্রদান এবং এ প্রভাবশালী পেশার একটি ইসলামী কাঠামো তৈরি করতে ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। ইসলামে সাংবাদিকতার ভিত্তি তৈরির জন্য মুফতি মোহাম্মদ শফি দুটি হাদিসের উদ্ধৃতি দেন। প্রথমটি তিরমিজি শরিফে সংগৃহীত একটি দীর্ঘ হাদিস থেকে নেয়া হয়েছে। এতে মহানবী হজরত মোহাম্মদ সা:-এর দৈনন্দিন রুটিন বা কার্যক্রমের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। জনৈকা সাহাবা হিন্দ বিন হালার বরাত দিয়ে বলেন- ‘আমি জিজ্ঞেস করলাম ঘর থেকে বের হয়ে আল্লাহর রাসূল কী করতেন বা সে সময় তিনি সাধারণত কী কী কাজ করতেন? হিন্দ বিন হালা জবাবে বলেন, তিনি কোনো কিছু বলা কল্যাণকর এবং প্রয়োজনীয় মনে না করা পর্যন্ত নীরব থাকতেন’ এবং তিনি সাধারণত তার সঙ্গীসাথীদের কল্যাণের বিষয়ে খোঁজখবর নিতেন এবং জনগণের মধ্যকার সাধারণ ঘটনাবলির ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। এরপর তিনি এসব রিপোর্টের ব্যাপারে কোনটা ভালো কোনটা খারাপ সাধারণত সে ব্যাপারে মন্তব্য করতেন।

মূলনীতি : মুফতি শফি একটি মৌলিক ইসলামী নিয়মবিধিরও বর্ণনা দিয়েছেন, যা সাংবাদিকতাবিষয়ক সব ধরনের আলাপ-আলোচনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মুখের শব্দ বা বক্তব্যকে যে আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয় সে একই আইন দ্বারা লিখিত বক্তব্য তথা লেখাকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কোনো ভালো কাজ বা ধর্মীয় কাজ হলে তা লিখে প্রকাশ করা যায়। প্রকৃতপক্ষে, লিখিত শব্দ তথা লিখিত বক্তব্য বা বিষয়ের স্থায়িত্ব হয় দীর্ঘ এবং বৃহত্তর পরিসরে সেটা পৌঁছতে পারে। তাই লেখার মাধ্যমে বড় ধরনের ভালো বা বড় ধরনের মন্দ কাজ সম্পন্ন করা যায় এবং এ জন্য আনুপাতিকভাবে বৃহত্তর পুরস্কার অথবা শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে।

যাহোক, ইসলামী শরীয়তে সাংবাদিকদের জন্য সাধারণ আচরণবিধি থেকে খুব কমই অব্যাহতি রয়েছে যা অন্য সকলের জন্য প্রযোজ্য। উদাহরণস্বরূপ, এটি এমন নয় যে একজন সাধারণ মানুষের জন্য গীবত নিষিদ্ধ, তবে একজন সাংবাদিকের জন্য এটি কোনওভাবে অনুমোদিত। মনে রাখা উচিত যে, শরিয়া একজন মুসলিমের সমস্ত আলোচনা পরিচালনা করার নিয়মগুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে। উদাহরণস্বরূপ, কুরআন অন্য লোকেদের নিয়ে মজা করা নিষিদ্ধ করে। ‘হে ঈমানদারগণ, পুরুষরা যেন অন্য পুরুষদের বিদ্রƒপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। আর মহিলারাও যেন অন্য মহিলাদের বিদ্রƒপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরকে বিদ্রƒপ করো না এবং পরস্পরকে খারাপ নামে ডেকো না।’ (আল হুজরাত ৪৯:১১) এটা হচ্ছে একটা সাধারণ প্রয়োজন এবং কোনো ব্যক্তি কলামিস্ট হওয়ার কারণেই কেবল তাকে এ নিয়মবিধির বাইরে রাখা যায় না। একজন কলামিস্ট আরও অধিক পরিমার্জিত ভাষায় বৃহত্তর পরিসরে এই দায়িত্ব পালন করতে পারেন। অধিকন্তু প্রাইভেসি বা গোপনীয়তার অধিকার হচ্ছে একটি পবিত্র মানবাধিকার। সাংবাদিকসহ যে কেউ এটা লঙ্ঘন করতে পারে না। আল্লাহর আইন রাজকুমারী অথবা ভিখারি যেই হোক না কেন সবার ওপর প্রযোজ্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না যতক্ষণ না গৃহবাসীদের সম্মতি লাভ করো এবং তাদেরকে সালাম করো। এটিই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম পদ্ধতি, আশা করা যায় তোমরা এদিকে নজর রাখবে।’ (আন নূর ২৪ : ২৭)

অন্যান্য গাইডলাইন

আদাবুল আখবারে- অন্যান্য গাইড লাইনও রয়েছে। কোনো ব্যক্তি সে মুসলিম অমুসলিম যাহোক না কেন তাকে অন্যায়ভাবে দোষারোপ বা অভিযুক্ত করা যাবে না। ভিক্টিম বা অন্যায়ভাবে দুঃখকষ্টের শিকার কোনো ব্যক্তির তার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করার এবং আগ্রাসী শক্তিকে অভিযুক্ত করার অধিকার রয়েছে। পবিত্র কুরআনে (আন-নিসা ৪:১৪৮) সুস্পষ্টভাবে এর অনুমতি দেয়া হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘মানুষ খারাপ কথা বলে বেড়াক এটা আল্লাহ পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি জুলুম করা হলে তার কথা স্বতন্ত্র। আর আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন। সুতরাং, দুঃখ-দুর্দশা বা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করার অনুমতি রয়েছে।

সাংবাদিকতার জন্য একটি ইসলামিক সেন্টার

সামান্য একটি ঘটনা বা বিষয় দিয়ে টাইম অথবা পশ্চিমা মিডিয়ার প্রতি মুসলমানদের ভালোবাসা বা ঘৃণা যে ধরনের সম্পর্কই হোক না কেন তা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যেমন পশ্চিমারা সাংবাদিকতাকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করে সেটাকেই সাংবাদিকতার সর্বোত্তম উদাহরণ হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে। মুসলমানরা যখন আঘাত পায় তখন ব্যথা অনুভব করে। কিন্তু সাংবাদিকতার জন্য তাদের নিজেদের কোনো কাঠামো, সংবাদকে সংজ্ঞায়িত করার কোনো পদ্ধতি এবং সংবাদ প্রকাশের বিষয়টিকে যাচাই করার জন্য নিজস্ব কোনো মানদণ্ড বা ক্রাইটেরিয়া নেই। তারা এসব কিছু পশ্চিমাদের কাছ থেকে ধার করেছে। তারা বুঝতে পারে কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে কিন্তু সেটা চিহ্নিত করতে পারে না। কারণ তারা যেসব মানদণ্ড ব্যবহার করে সেগুলোর সবই ধার করা। এ প্রেক্ষাপটে এটা হচ্ছে সমসাময়িক মুসলিম সমাজের বৃহত্তর সমস্যার অংশ। এ অবস্থায় অন্যান্য ক্ষেত্রে যেখানে অগ্রগতি হয়েছে সেখান থেকে আমরা কিছু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, ইসলামী অর্থনীতির কথা বলা যায়। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও একই ধরনের কিছু করা প্রয়োজন। আলেম সমাজ এবং ইসলামের ব্যাপারে আন্তরিক সাংবাদিকদের দ্বারা ইসলামী সাংবাদিকতা বিষয়ক একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা যায়। এভাবে ইসলামী চিন্তাবিদ বা পণ্ডিত ব্যক্তি এবং পেশাজীবী সাংবাদিকদের মধ্যে ইতিবাচক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ইসলামী সাংবাদিকতা বিষয়ক একটি কাঠামোর উন্মেষ ঘটানো যায়। এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ না করা পর্যন্ত মুসলমানরা সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিন প্রকাশ করলেও তারা একটি ইসলামী মিডিয়া গড়ে তুলতে পারবে না এবং এ কারণে গোটা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সূত্র: https://www.ilmgate.org/the- news-protocol-towards-an-islamic- framework/#main

অনুবাদ : মুহাম্মদ আবুল হোসাইন