কলাম
প্রাসঙ্গিক ভাবনা
আমার উত্তর বাংলা সফর ও গ্রামগঞ্জের অবস্থা
গত বৃহস্পতিবার দু’দিনের সংক্ষিপ্ত সফরে উত্তর বাংলার তিনটি জেলার বেশ কিছু কাজ কর্ম দেখে এলাম। জেলা তিনটি হচ্ছে- রংপুর, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও। রমযানভিত্তিক কিছু দায়িত্ব পালন বিশেষ করে দুস্থ ও দরিদ্র পরিবার, এতিম শিশু কিশোর কিশোরীদের
Printed Edition
গত বৃহস্পতিবার দু’দিনের সংক্ষিপ্ত সফরে উত্তর বাংলার তিনটি জেলার বেশ কিছু কাজ কর্ম দেখে এলাম। জেলা তিনটি হচ্ছে- রংপুর, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও। রমযানভিত্তিক কিছু দায়িত্ব পালন বিশেষ করে দুস্থ ও দরিদ্র পরিবার, এতিম শিশু কিশোর কিশোরীদের পরিবারসমূহের মধ্যে পুরো রমযান মাসে চলার উপযোগী ফুড প্যাকেট বিতরণ, ইফতার মাহফিল আয়োজন, এতিমখানা ও মাদরাসা শিক্ষকদের সেলারী সাপোর্ট প্রদান প্রভৃতিই ছিল প্রধান। একজন মানবদরদী ও জনহিতৈষী ইসলামী দায়ী জনাব সা’দ নিজামীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত এইড ফর হিউম্যানিটিজ নামক একটি অনন্য সেবা সংস্থার উদ্যোগ ও অনুরোধে তাদের দু’জন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাসহ এ সফরটির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রওনা হয়ে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে প্রায় ১০টায় পৌঁছি এবং সেখান থেকে পূর্ব নির্ধারিত গাড়িযোগে রংপুরের পীরগঞ্জে পৌঁছি। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছেন পুচারপাড়া হাফেজিয়া কওমী মাদরাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষ। এতিমখানাটি দু’ভাগে বিভক্ত। মহিলাদের জন্য স্বতন্ত্র ভবন এবং ছেলেদের জন্যও আলাদা। মেয়েরা (শিশু ও কিশোরী) কঠোরভাবে পর্দা মেনে চলে, হাত মোজা, পা মোজা ও বোরকার সাথে হিজাব ও নেকাব পরা। পাঞ্জাবী টুপি ছেলেদের ইউনিফরম। মেয়েরা সওদী টাইপের পর্দা করেন। ছেলে মেয়েদের কুচকাওয়াজ থেকে বোঝা যায় যে, তারা অত্যন্ত সুশৃংখল, তেলাওয়াত বিশুদ্ধ ও সুমধুর। শিক্ষক শিক্ষিকারাও নিবেদিতপ্রাণ।
রমযান ফুড প্যাকেট, ইফতার সামগ্রী এবং সেলারী সাপোর্ট ও সাদাকার অর্থ পেয়ে সবার মুখেই তৃপ্তির হাসি দেখে খুবই ভাল লাগলো। মাদরাসা, এতিমখানা ও মসজিদ কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠায় অনবদ্য অবদানের জন্য এইড ফর হিউম্যানিটিজ প্রশংসা পাবার যোগ্য। সদ্য নির্মিত তাদের মসজিদটিতে জোহরের নামায আদায় করলাম। এ উপলক্ষে মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন ও মাদরাসা শিক্ষকদের সাথে আলোচনা হলো। মসজিদ পরিচালনার জন্য কোন কমিটি আছে কিনা এক প্রশ্নের জবাবে জানতে পারলাম যে, মসজিদের জন্য এখানে কোনও কমিটি নেই। তারা জানালেন এ মসজিদের ইমাম এবং মাদরাসার শিক্ষকসহ যেহেতু সবাই আলেম সেহেতু তারা মসজিদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন করে কমিটি গঠনের প্রয়োজনবোধ করেননি, যদিও এতিমখানা ও মাদরাসা সন্নিহিত এলাকাবাসীও এই মসজিদে নামাজ পড়েন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের সুরা আত তাওবার ১৮নং আয়াতটির প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এতে বলা হয়েছে, “আল্লাহর মসজিদ সংরক্ষণ ও পরিচালনা করবেন তারাই শুধু যারা আল্লাহ ও কেয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না।” আমি আলেম নই। তবে মনে করি মসজিদ কমিটি না করার ফলে সুরা আত তাওবার ১৮নং আয়াতে প্রদত্ত আল্লাহর নির্দেশনা লংঘন করা হচ্ছে কিনা তা বিজ্ঞ আলেমরা ভেবে দেখতে পারেন।
পীরগঞ্জ রংপুরের একটি বহুল আলোচিত উপজেলা। এখানে পলাতক শেখ হাসিনার স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার পৈত্রিক বাড়ি তথা হাসিনার শ্বশুর বাড়ি। তবে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ আলোচনায় যা জানলাম তাতে দেখা যায়, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার প্রতি মানুষের যে শ্রদ্ধা ভালবাসা থাকার কথা তা মোটেই নেই। তার ছেলে- মেয়েদের প্রতিও। তাদের আক্ষেপ ওয়াজেদ মিয়া স্বামী ও পিতা হিসেবে যথাক্রমে শেখ হাসিনা ও তার পুত্র সজিব ও কন্যা পুতুলের কাছ থেকে যে শ্রদ্ধা ভালবাসা ও সেবা পাবার কথা তার কোনটাই পাননি, পেয়েছেন অবজ্ঞা, অবহেলা ও ঘৃণা বিদ্বেষ। মৃত্যুর পূর্বে তিনি হাসপাতালে চরম দুর্ভোগের মধ্যে ছিলেন। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে কেউই তাকে দেখতে যাননি, এমনকি তার পুত্র কন্যাও মৃত্যুর পর তার মুখ দেখা বা দাফনের খবর নেননি। পীরগঞ্জে ওয়াজেদ মিয়ার নামে একটি টেক্সটাইল মিল এখনো চালু অবস্থায় আছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কোনও কর্মকাণ্ড নেই, বিএনপির আছে। তবে তাদের বেশির ভাগ নেতানেত্রী চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত এবং উপদলে বিভক্ত ও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী জালেমদের রক্ষার নানা কৌশলে লিপ্ত হওয়ায় তাদের প্রতি মানুষ বীতশ্রদ্ধ। জামায়াত ও ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ অত্যন্ত বেশি বলে মনে হয়েছে। প্রায় ২৫ বছর আগে পীরগঞ্জের খালাসপীর এলাকায় ভূতাত্ত্বিক জরিপে একটি বিশাল কয়লা খনির সন্ধান পাওয়া গেছে। এখানে ১২ থেকে ২৫ কিলোমিটার এলাকার মাটির নিচে ২০০ থেকে ৩০০ মিটারের মধ্যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানের ৫০ কোটি মেট্রিক টন কয়লার মওজুদ রয়েছে বলে জানা গেছে। একইভাবে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া ও ফুলবাড়িতেও বিশাল এলাকায় যে কয়লার মওজুদ রয়েছে তা বাংলাদেশের সামগ্রিক জ্বালানি চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানিরও প্রচুর সম্ভাবনাসম্পন্ন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ কয়লা উত্তোলনের বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা এ যাবৎ গ্রহণ করা হয়নি। জামালগঞ্জ কয়লাখনির কথা আমরা অনেকটা ভুলেই গেছি। বার বার কয়লা উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবেশী দেশের ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। বড় পুকুরিয়ায় কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছিল এবং এখানে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও চালু হয়েছিল। কিন্তু উত্তোলনের কাজ Open pit System bv Tunnel system এ হবে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে ধূম্রজাল সৃষ্টি করে ২০০৫ সালে ফুলবাড়ীসহ দিনাজপুরের বিশাল এলাকায় অব্যাহত হরতাল অবরোধ দিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ কয়লা উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। এখন আমাদের অবস্থা হয়েছে, কয়লা সম্পদের পাহাড়সম মালিকানা নিয়ে আমরা ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কয়লা আমদানি করছি।
এখন মূল প্রসঙ্গে আসি। পীরগঞ্জ থেকে নবাবগঞ্জ ও ফুলবাড়ী হয়ে ৬ তারিখে আমরা দিনাজপুরের বিরামপুরে পৌঁছি। সেখানে দিনাজপুরের সাবেক জেলা আমীর ও বর্তমানে অঞ্চল সদস্য জনাব আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত আল মারুফ ট্রাস্টের দাতব্য ডায়াবেটিস হাসপাতাল পরিদর্শন করি। এখানে তারা দুস্থ ও দরিদ্র রোগীদের ডায়াবেটিস সেবা দিয়ে থাকেন। দু’জন এমবিবিএস ডাক্তার ও একজন হোমিও ডাক্তার এখানে সার্বক্ষণিক সেবায় নিয়োজিত আছেন এবং তারা পুরুষ ও মহিলা রোগীদের জন্য স্বতন্ত্র চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করেছেন। ওষুধ কোম্পানিগুলো ডাক্তারদের সৌজন্যমূলক যে ওষুধগুলো দিয়ে থাকেন এ হাসপাতালে তারা সেগুলো বিনামূল্যে রোগীদের মধ্যে বিতরণ করেন, এমনকি ইনস্যুলিনও। তাদের একটি ডায়গনস্টিক ল্যাবরেটরীও আছে। তিনজন টেকনিশয়ান এখানে নিয়োজিত রয়েছেন। ভর্তি ফিস বাবত রোগীদের কাছ থেকে তারা সামান্য ফি গ্রহণ করেন। শিগরিগই তারা গুরুতর রোগীদের জন্য ইনডোর চিকিৎসার ব্যবস্থা শুরু করবেন বলে জানালেন। এজন্য দেলওয়ার হোসেন নামক এক দানশীল ব্যক্তি ৫ শতাংশ জমির উপর তৈরি করা একটি ৫ তলা ভবনও ট্রাস্টকে সাফ কবলামূলে দান করে দিয়েছেন। তাদের চিকিৎসা সেবাটি অনুকরণীয়। স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে আমরা ট্রাস্ট পরিচালিত একটি শিক্ষা কমপ্লেক্স পরিদর্শনে যাই। এ কমপ্লেক্সে রয়েছে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল, প্রাইমারী স্কুল, হাইস্কুল, একটি মাদরাসা, একটি কলেজ ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানগুলো দিনাজপুর এলাকার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিষ্ঠিত পারিবারসমূহের ছেলেমেয়েদের ভর্তির জন্য নিয়মিত প্রতিযোগিতা হয়। ইসলামী আকিদা বিশ্বাস, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে ছেলেমেয়েদের সমৃদ্ধ করে তোলা এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হাইস্কুলটিতে প্রায় ৭০০ ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে। ভবনটি তিনতলা বিশিষ্ট। সহশিক্ষা নেই। তিন তলাটি মেয়েদের জন্য নির্ধারিত এবং তাদের জন্য স্বতন্ত্র ক্লাসের ব্যবস্থা আছে। স্কুলের পাশেই তিনতলা বিশিষ্ট একটি মসজিদ এবং এর ৩ তলাটি মেয়েদের জন্য নির্ধারিত। স্কুল থেকে মসজিদে যাবার জন্য তৈরি একটি করিডোর দিয়ে মেয়েরা মসজিদে যায় এবং নামায পড়ে। স্কুল পরিদর্শন শেষে আল হুজায়ফা নামক একটি এতিমখানা ও মাদরাসা পরিদর্শনে যাই। সেখানকার দানশীল এক ধনাঢ্য ব্যক্তি তার কবরের জায়গাটুকু রেখে বাড়িসহ বাকি প্রায় ৪ একর ৬২ শতক জমি এতিমখানা ও মাদরাসার জন্য দান করে দিয়ে এখন এতিমখানার একটি কক্ষে বসবাস করেন। সর্বস্ব দানের এটি একটি অনন্য নজির। মাদরাসা সংলগ্ন অনেক খালি জমি আছে এবং এখানে অবকাঠামো ও আরো কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য অনুদান প্রয়োজন। মাদরাসাটির অদূরেই দিনাজপুর বণিক সমিতির সভাপতি মাওলানা আশ্রাফ বিরাট একটা মসজিদ করেছেন। তবে অজুখানা করতে পারেননি। তিনি অজুখানা তৈরিসহ দুটি টয়লেট ও মসজিদের উপর তলায় মেয়েদের নামায পড়ার সুবিধার্থে কিছু নির্মাণ সহযোগিতার অনুরোধ করেছেন। তার মসজিদেরই অদূরে একট মাদরাসায় আমরা একটি ইফতার মাহফিলে যোগ দেই। এতে এতিম ছেলেমেয়ে ও তাদের মা এবং এলাকার লোকজনসহ প্রায় ৭০০ রোজাদার অংশগ্রহণ করেন। নামায শেষে সেখান থেকে আমরা রাত ৮টার দিকে ঠাকুরগাঁয়ের বানিয়াডাঙ্গি উপজেলার জমিরিয়া ইয়াহইয়া উল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানার উদ্দেশে যাত্রা করে রাত বারোটায় সেখানে পৌঁছি। এ মাদরাসা ও এতিমখানাটি এইড ফর হিউমিনিটের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় মাওলানা শরীফ হোসেন সাহেব প্রতিষ্ঠা করেছেন। মাওলানা শরীফের নাম যেমন শরীফ আচার ব্যবহার কাজকর্মেও তার মধ্যে শরাফতের লক্ষণ পাওয়া যায়। রাতে মাদরাসার মেহমানখানায় ছিলাম এবং পরদিন সকালে এতিম পরিবারসমূহের মধ্যে ফুড প্যাকেট ও ইফতারসামগ্রী, সাদাকার অর্থ বিতরণ ও ক্যাম্পাস পরিদর্শন করি। মাদরাসার পাশেই জামায়াতের উপজেলা আমীরের বাসস্থান বলে শরীফ সাহেব জানালেন। এলাকার রাজনীতির অবস্থা মোটামুটি ভালো। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে এবং আসন্ন নির্বাচনে ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক আমীর মাওলানা আবদুল হাকিমকে এ এলাকা থেকে নির্বাচন প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এখানেও গ্রামের অবস্থা ভালো তবে চাঁদাবাজি-দখলবাজিতে আওয়ামীদের বিকল্প একটি দল বেশ দুর্নাম রটিয়েছে।
বলা বাহুল্য ঠাকুরগাঁও-১ আসনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন প্রার্থী। একই আসনে আবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তরফ থেকে তরুণ, সৎ ও নিষ্ঠাবান সাবেক শিবির নেতা জনাব দেলাওয়ার হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো ক্ষুব্ধ বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। তাদের ধারণা অতীতে এ এলাকার উন্নয়ন কাজ ও চাষিদের সমস্যা সমাধানে বিএনপির লক্ষ্যণীয় অবদানের অনুপস্থিতি এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগ প্রীতির কারণে আগামী নির্বাচনে তাদের বিরাট আকারে খেসরাত দেয়ার সম্ভাবনা বেশি। তা মোকাবেলা করার জন্য তাদের উগ্রপন্থী নেতা-নেত্রীদের অনেকেই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলবাজিকে পুঁজিভুক্ত করতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। এখন গ্রামীণ অর্থনীতি সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করতে চাই। সফরকৃত এলাকাসমূহ বিশেষ করে রংপুর, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য রাজধানীর তুলনায় অনেক সহনীয়। তরিতরকারী ও চালের দাম অপেক্ষাকৃত কম। আলু ৫ থেকে ৬ টাকা কেজি। এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কোল্ডস্টোরেজসমূহ আলু সংরক্ষণে হিমশিম খাচ্ছে। হাজার হাজার আলু ভর্তি ট্রাক মাইলের পর মাইল সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে, খালাসের গতি অত্যন্ত মন্থর। রংপুর এলাকায় এখনো প্রচুর তামাক চাষ করা হয়। নিকোটিনসমৃদ্ধ এ ফসলটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিকল্প হিসেবে গম, ভুট্টা, যব ও বার্লির চাষকে উৎসাহিত করা দরকার। উত্তরবঙ্গের প্রায় প্রত্যেকটি জেলার ক্যাশ ক্রপ হিসেবে ভুট্টা ও বার্লির চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভুট্টা দেশে-বিদেশে পোল্ট্রি ফিড ও ফিসমিল তৈরির অপরিহার্য উপাদানে পরিণত হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের জেলাসমূহ আমার আবেগের অঞ্চল। এ অঞ্চলে সেচ ব্যবস্থার প্রচলন, বিশেষ করে গভীর ও অগভীর নলকূপ খনন, সেচ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণ প্রদান প্রভৃতি কাজের সাথে সরকারি পর্যায়ে আমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। সেচ ব্যবস্থা প্রচলনের আগে জেলাগুলো শুকনো মওসুমে প্রায় মরুভূমির মতো ছিল। এখন এসব অঞ্চলে সবুজের সমারোহ। তবে দুর্ভাগ্যজনক বিষয়টি হচ্ছে, সেচযন্ত্র বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেয়ার পর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাবার ফলে অনেক গভীর ও অগভীর নলকূপ অচল হয়ে পড়েছে, আবার সমবায় মালিকানাধীন যন্ত্রগুলো অসৎ স্ক্রিম ম্যানেজারদের কব্জায় চলে যাওয়ায় বোরো চাষিদের কাছ থেকে তারা ইচ্ছামতো সেচ চার্জ আদায় করছে। এদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের পাতি নেতা। ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর, রানীশংকইল, পীরগঞ্জ, সদর ও পীরগঞ্জে নর্থ বাংলাদেশ ডিপ টিউবওয়েল নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন ছিল। এ প্রকল্পের ১৪৫টি নলকূপের প্রত্যেকটির কম্যান্ড এরিয়ায় পাকা নালা তৈরি করে দেয়া হয়েছিল। এই প্রজেক্টটি এখন বরেন্দ্র প্রকল্প এলাকাভুক্ত এবং অব্যবস্থাপনার ফলে কৃষকরা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ও শোষণের শিকার। এ ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।